শান্তি ও স্থিতিশীলতার প্রশ্নে চীন-মার্কিন সমঝোতার গুরুত্ব
২০ জুন ২০২৩, ০৮:০৩ পিএম | আপডেট: ২১ জুন ২০২৩, ১২:০২ এএম
ইউক্রেন যুদ্ধসহ চলমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে পরাশক্তিগুলোর বিপরীতমুখী অবস্থান পুরো বিশ্বে অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টি করেছে। ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়া ও আমেরিকা মুখোমুখী অবস্থানে দাঁড়ানোর প্রেক্ষাপটে চীনের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। একদিকে ইউক্রেনে চীনের নিরপেক্ষতা, অন্যদিকে একচীন নীতিকে সামনে রেখে তাইওয়ানে যুক্তরাষ্ট্রের উস্কানিমূলক তৎপরতা নিয়ে একটি সমঝোতায় পৌঁছানোই এই সময়ে চীন-মার্কিন দ্বিপাক্ষিক আলোচনা ও সম্পর্কের মূল ভিত্তি হয়ে উঠেছে। দীর্ঘদিন পর মার্কিন সেক্রেটারি অব স্টেট অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেনের বেইজিং সফরে সেই প্রত্যাশারই প্রতিফলন দেখা গেছে। জো বাইডেন প্রশাসনের পক্ষ থেকে এটাই কোনো মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রথম যুক্তরাষ্ট্র সফর। গত ফেব্রুয়ারিতে এই সফরের কথা থাকলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আকাশে চীনের কথিত গোয়েন্দা বেলুন গুলি করার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্লিঙ্কেনের সফর স্থগিত হয়ে যায়। গত ৬ মাসে আরো অনেক অর্থ ও অস্ত্রের চালান দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্ব ইউক্রেনে রাশিয়ার অগ্রযাত্রা ঠেকানোর সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়েও তেমন কোনো সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। এ কারণে ব্লিঙ্কেনের বেইজিং সফরে ইউক্রেন যুদ্ধে চীনের নিরপেক্ষ ভূমিকার উপর গুরুত্ব দিতে দেখা গেছে। একইভাবে চীনও তাইওয়ানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার প্রশ্নে চীনের আপসহীন নীতির কঠোর বার্তা দিয়েছে। সর্বশেষ খবর অনুসারে, ব্লিঙ্কেনের চীন সফরে দীর্ঘ দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় দুই পক্ষের মতৈক্য বা লক্ষ্য অর্জনের মধ্য দিয়ে একটি উইন উইন সিচুয়েশন সৃষ্টি হয়েছে।
আন্তর্জাতিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা অর্জনের পথে চীন-মার্কিন সমঝোতা যেকোনো বিচারেই একটা বড় অর্জন বলে বিবেচিত। ব্লিঙ্কেনের সফরের আগে চীনের পক্ষ থেকে তাইওয়ান প্রশ্নে যে বার্তা দেয়া হয়েছিল তা হচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ‘সংলাপ কিংবা সংঘাত, সহযোগিতা অথবা বৈরীতা’ দু’টির যেকোনো একটি বেছে নিতে হবে। ব্লিঙ্কেনের নেতৃত্বাধীন মার্কিন প্রতিনিধির সাথে চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিন গ্যাংয়ের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদলের দীর্ঘ ১০ ঘন্টাব্যাপী আলোচনার অগ্রগতি ও প্রাথমিক মতৈক্যের পর চীনের গ্রেট হলে প্রেসিডেন্ট শি জিন-পিংয়ের সাথেও বৈঠক করেছেন ব্লিঙ্কেন। তবে চীন-মার্কিন আলোচনার অগ্রগতি ও সমঝোতার প্রাথমিক অর্জন, নাকি ইন্দোনেশিয়ার বালিতে অনুষ্ঠিত জি-২০ সম্মেলনে শি-বাইডেনের মধ্যে অনুষ্ঠিত সাইড লাইনের বৈঠকই চীন-মার্কিন নীতি কৌশলের গুরুত্বপূর্ণ মতৈক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বলে ব্লিঙ্কেনকে প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং জানিয়েছেন। বিশ্বের দুই প্রধান পরাশক্তি সংঘাত ও সমঝোতার প্রশ্নে সমঝোতাকেই বেছে নিয়েছে। চীন-মার্কিন সমঝোতা বা মতৈক্য আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বৈরীতার কুশীলবরা ইতিবাচক দৃষ্টান্ত হিসেবে গ্রহণ করতে পারে। আমাদের আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পক্ষগুলোও এ থেকে শিক্ষা নিতে পারেন।
চীন-রাশিয়ার কৌশলগত সম্পর্ক মার্কিন নেতৃত্বাধীন বিশ্বব্যবস্থার জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে। পশ্চিমারা যদি জেলেনস্কির কিয়েভ বাহিনীকে শত শত কোটি ডলারের বাজেট, এফ-সিক্সটিন যুদ্ধবিমান, আব্রাম ট্যাঙ্কসহ অত্যাধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম সরবরাহ অব্যাহত রেখে যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করার কৌশল গ্রহণ করে, সেখানে রাশিয়ার মিত্র হিসাবে পাশে দাঁড়ানোর চীনা প্রতিশ্রুতিকে সীমিত রাখার কৌশল ব্লিঙ্কেনের সফরের বড় অর্জন বলে বিবেচিত হতে পারে। ইউক্রেন যুদ্ধে চীন রাশিয়াকে প্রাণঘাতী অস্ত্র সরবরাহ না করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে চীন। তাইওয়ান প্রণালীতে উত্তেজনাকে সামনে রেখে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা দীর্ঘদিন ধরেই একটি চীন-মার্কিন যুদ্ধের আশঙ্কার কথা বলছিলেন। সাম্প্রতিক সময়ে মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকায় চীনের মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকার কারণে এসব অঞ্চলে মার্কিন আধিপত্য হ্রাসের আলামত স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সেই সাথে ডলারের একাধিপত্য কমিয়ে বিকল্প মুদ্রার উপর জোর দিতে চীন-রাশিয়ার নেতৃত্বাধীন ব্রিক্স সদস্য দেশগুলোর নানা পদক্ষেপ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিপরীতে একটি ভারসাম্যপূর্ণ ব্যবস্থার সম্ভাবনা ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে। এহেন বাস্তবতায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সবকিছুর উপর ইউক্রেন যুদ্ধের ফলাফলকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে বলে ধরে নেয়া যায়। সামগ্রিক প্রেক্ষাপটে, রাশিয়ার পশ্চাদপসারণ ও বা পরাজয় মেনে নেয়ার কোনো সুযোগ কিংবা সম্ভাবনা নেই। ইউক্রেনে রাশিয়াকে প্রাণঘাতী অস্ত্র সরবরাহ না করার প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে যুদ্ধ বন্ধে আলোচনা ও রাজনৈতিক সমঝোতার চাপ দেয়ার সুযোগ শুধুমাত্র চীনের হাতেই রয়েছে। এই যুদ্ধ অনিশ্চিতকাল পর্যন্ত চলতে পারেনা। রাশিয়ার নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার প্রশ্নে ইউক্রেনের অবস্থান খুব গুরুত্বপূর্ণ হলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীন এখানে নিজের যৌক্তিক অবস্থান নিশ্চিত করতে পারলে শান্তি ও সমঝোতায় পৌঁছানো অসম্ভব নয়। বিশ্বের শান্তি, স্থিতিশীলতার প্রশ্নে এটা খুবই জরুরি ইস্যু। এতে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ইয়ামালের মাইলফলকের রাতে হারের তেতো স্বাদ বার্সার
আর্সেনালের স্বস্তির ড্র,অ্যাটলেটিকোর দারুণ জয়
হেডের বিধংসী শতকে লন্ডভন্ড ইংল্যান্ড
পয়েন্ট হারিয়েও শীর্ষে আর্জেন্টিনা,অবনতি বাংলাদেশের
বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি
ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী
সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু
রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে
বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে
বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা
লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই
রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে
দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা
জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ
উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন
সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।
ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ৫ শিক্ষার্থী গ্রেফতার
রাজউক চেয়ারম্যানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল