সুনীল অর্থনীতির সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবে
২২ জুন ২০২৩, ০৮:১৭ পিএম | আপডেট: ২২ জুন ২০২৩, ১১:৩৯ পিএম
ডলার সংকট ও মূল্যস্ফীতির জেরে দেশের অর্থনীতি যখন টালমাটাল, অর্থাভাবে গ্যাস ও কয়লা আমদানি দায় পরিশোধ করতে না পারায় বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ রেখে সারাদেশে লোডশেডিং দিতে হচ্ছে, তখন দেশের সমুদ্র সম্পদ আহরণের প্রয়োজনীয়তা নতুনভাবে পর্যালোচিত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন সময়ে দেশের ব্লু ইকোনমির সম্ভাবনার কথা বলেছেন। সমুদ্রসম্পদ আহরণ ও সুরক্ষায় কোষ্টগার্ড, নৌবাহিনী এবং বাপেক্সের সক্ষমতা বৃদ্ধির নানা উদ্যোগের কথা শোনা গেলেও গত ১৪ বছরে এ ক্ষেত্রে বাস্তব উন্নয়ন এখনো দৃশ্যমান হয়নি। গত বুধবার বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের জন্য ৫টি আধুনিক জাহাজের ভার্চুয়াল উদ্বোধন উপলক্ষে দেয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব জাহাজ সুনীল অর্থনীতি সুরক্ষায় কোস্টগার্ডের সক্ষমতা বৃদ্ধি করেছে বলে উল্লেখ করেন। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুসারে, গত ১৪ বছরে কোস্টগার্ডের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বর্তমান সরকারের আমলে বিভিন্ন আকৃতির দেড়শতাধিক দ্রুতগতির আধুনিক জাহাজ সংযুক্ত করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, কোস্টগার্ডে সংযুক্ত এসব আধুনিক নৌযানের বেশিরভাগই দেশীয় শিপইয়ার্ডে নির্মিত হয়েছে। আগামী এক দশকের মধ্যে কোস্টগার্ডের জন্য সর্ব আবহাওয়ায় ব্যবহারযোগ্য অফশোর পেট্টোল ভেসেল (ওপিভিএস), হাসপাতাল সুবিধাযুক্ত জাহাজ, হোভারক্রাফ্টসহ বেশ কিছু উচ্চগতির আধুনিক প্রযুক্তিসমৃদ্ধ জাহাজ সংযুক্তির কথা রয়েছে।
বিগত দশকের শুরুর দিকে আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে ভারত ও মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের অমিমাংসিত নৌসীমা বিরোধের নিস্পত্তি হয়। সেখানে বাংলাদেশের নৌসীমার টেরিটোরিয়াল আয়তন দাঁড়ায় ১,১৮,৮১৩ বর্গকিলোমিটার। এই আয়তন বাংলাদেশের মূল ভ’খন্ডের আয়তনের প্রায় কাছাকাছি। ২০০ নটিক্যাল মাইলের একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল, ৩৫৪ নটিক্যাল মাইলের মহীসোপানের উপরে ও ভ’মির তলদেশের যে সম্পদ তা আমাদের ব্লু ইকোনমির অন্তর্গত। সমুদ্রসীমা নির্ধারিত হলে এই বিশাল অঞ্চলের প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ করে বাংলাদেশের অর্থনীতির চেহারা আমূল বদলে যাবে, এমনটাই বলা হয়েছিল। কিন্তু সমুদ্রসীমা বিরোধ নিস্পত্তির পর ইতিমধ্যে এক দশক পেরিয়ে গেলেও এ ক্ষেত্রে কোনো বাস্তব অর্জন দেখা যাচ্ছে না। পক্ষান্তরে সমুদ্রসীমা বিরোধ নিস্পত্তির আগে থেকেই ভারত ও মিয়ানমার তাদের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল থেকে গ্যাস ও পেট্টোলিয়ামের মত প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ করতে শুরু করেছিল। সমুদ্রসীমা নির্ধারিত হওয়ার পর তা আরো ত্বরান্বিত হয়েছে। ‘সমুদ্র জয়’ উৎযাপনসহ ব্লু ইকোনমি নিয়ে দেশের মানুষের মধ্যে ব্যাপক আশা জাগিয়ে এক দশকেও সমুদ্রের ২৬টি ব্লকের কোনোটিতেই পরিপূর্ণ জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করে বিদেশি কোম্পানির সাথে লিজ চুক্তি কিংবা দেশীয় কোম্পানী বাপেক্সের মাধ্যমে অগভীর ব্লক থেকে জ্বালানি সম্পদ আহরণের কোনো উদ্যোগ নিতে পারেনি সরকার।
সুনীল অর্থনীতির পরিসর ব্যাপক ও বৈচিত্র্যপূর্ণ। এই বিশাল সম্ভাবনাময় সম্পদ সমৃদ্রের নিচে ফেলে রেখে আমরা জ্বালানি খাতকে ক্রমবর্ধমান আমদানি নির্ভরতার দিকে এগিয়ে যেতে দেখেছি। এরই ধারাবাহিকতায় আজকে শুধুমাত্রা আমদানিকৃত জ্বালানির মূল্য পরিশোধে ব্যর্থতার কারণে বিদ্যুত উৎপাদনে অভাবনীয় সক্ষমতা অর্জন সত্ত্বেও এখন সারাদেশে দিনেরাতে ঘন্টার পর ঘন্টা লোডশেডিংয়ের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এখনো আমাদের ব্লু ইকোনমি মূলত মৎস্য সম্পদ আহরণের উপর নিবদ্ধ রয়েছে। সেখানেও দেখা যাচ্ছে নানা বিপত্তি। ভারতীয় জেলেরা আমাদের নৌসীমায় অনুপ্রবেশ করে ব্যাপকহারে মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি তারা বাংলাদেশী জেলেদের উপর দস্যুতা, লুণ্ঠন ও অপহরণের মধ্য দিয়ে বঙ্গোপসাগরে এক বিভীষিকাময় অবস্থা তৈরী করেছে। ভারতীয় জেলেরা জিপিএস সিস্টেমসহ অপেক্ষাকৃত দ্রুত গতির ফিশিংবোট ব্যাবহার করে আমাদের জেলেদের উপর আধিপত্য বিস্তার করে চলেছে। আমাদের নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের টহল ও সক্ষমতা নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ। কোস্টগার্ডের জন্য অত্যাধুনিক নৌযান সংযোজনসহ সরকারের সাম্প্রতিক ও চলমান উদ্যোগে দেশের জেলেদের নিরাপত্তা ও সমুদ্রসম্পদ রক্ষায় নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের শক্তি ও সক্ষমতা নিশ্চিতভাবেই বাড়ছে। বিশাল সমুদ্র এলাকার নিরাপত্তা ও সমুদ্র সম্পদ আহরণ ও রক্ষণাবেক্ষণের বড় দায়িত্ব দেশের কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর। এ দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সমুদ্রের ব্লকগুলোতে ত্রিমাত্রিক জরিপ কার্যক্রম সম্পন্ন করে গ্যাস ও পেট্রোলিয়ামসহ সমুদ্রসম্পদ আহরণের সুবিশাল কর্মযজ্ঞ এখনই শুরু করা বাঞ্ছনীয়। কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর জন্য প্রয়োজনীয় ভেসেল নির্মাণে আমাদের ডকইয়ার্ডগুলোর বিশ্বমানের সক্ষমতা অনেক বড় অর্জন। বিশেষত: নৌবাহিনী নিয়ন্ত্রিত খুলনা শিপইয়ার্ডের নির্মিত অত্যাধুনিক চারটি জাহাজ কোস্টগার্ডের কাছে হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে আত্মনির্ভরতার পথে আমাদের নৌবাহিনীর সক্ষমতা খুবই আশাব্যঞ্জক। এ জন্য খুলনা শিপইয়ায়ার্ড কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাই। এই অর্জনকে কাজে লাগিয়ে সমুদ্র সুরক্ষা ও ব্লু ইকোনমির সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর বাস্তব সম্মত পদক্ষেপ নিতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ইয়ামালের মাইলফলকের রাতে হারের তেতো স্বাদ বার্সার
আর্সেনালের স্বস্তির ড্র,অ্যাটলেটিকোর দারুণ জয়
হেডের বিধংসী শতকে লন্ডভন্ড ইংল্যান্ড
পয়েন্ট হারিয়েও শীর্ষে আর্জেন্টিনা,অবনতি বাংলাদেশের
বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি
ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী
সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু
রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে
বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত
যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে
বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা
লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই
রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে
দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা
জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ
উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন
সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।
ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ৫ শিক্ষার্থী গ্রেফতার
রাজউক চেয়ারম্যানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল