শরণার্থী সমস্যা প্রকট হচ্ছে
২৩ জুন ২০২৩, ০৭:৩০ পিএম | আপডেট: ২৪ জুন ২০২৩, ১২:০১ এএম
সাধারণত নির্যাতন, সংঘাত, যুদ্ধ বা সহিংসতার হাত থেকে বাঁচতে নিজ ঘরবাড়ি ও দেশ থেকে পালাতে বাধ্য হওয়া মানুষকে শরণার্থী বা উদ্বাস্তু বলে। জাতিসংঘের মতে, কোনো ব্যক্তির বর্ণ, ধর্ম, জাতীয়তা, নির্দিষ্ট কোনো সামাজিক গোষ্ঠীর সদস্যপদ থাকা অথবা রাজনৈতিক মতাদর্শ থাকার কারণে যদি তার ওপর নির্যাতনেরসমূহ সম্ভাবনা থাকে, তবে নিজ ঘরবাড়ি ও দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া সেসব জনগোষ্ঠী শরণার্থী হিসেবে গণ্য হয়। এর সাথে নতুন করে যোগ হয়েছে জলবায়ু শরণার্থী। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যারা বাস্তুচ্যুত হচ্ছে, তারাই জলবায়ু শরণার্থী।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর তথ্য অনুযায়ী ২০২২ সালের শেষ নাগাদ পর্যন্ত নিপীড়ন, সংঘাত, সহিংসতা এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন থেকে বাঁচতে সারা বিশ্বের জোরপূর্বক বাস্তচ্যুতদের সংখ্যা ১০৮.৪ মিলিয়ন অতিক্রম করেছে। এই নতুন রেকর্ড সুদান এবং ইউক্রেন যুদ্ধসহ অন্যান্য সংঘাতের কারণে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা এত বেড়েছে বলে মনে করছে ইউএনএইচসিআর। বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা ২০২২ সালের শেষ নাগাদ ১০ কোটির মতো ছিল। ইউক্রেন, ইথিওপিয়া, বুরকিনা ফাসো, মিয়ানমার, নাইজেরিয়া, আফগানিস্তান এবং কঙ্গোতে সংঘাতের কারণে মূলত সংখ্যাটি বাড়ছিল। তবে চলতি বছরের এপ্রিল মাস থেকে সুদানের যুদ্ধ শুরু হলে বাস্তুচ্যুত মানুষের সংখ্যা বাড়তে শুরু করে। ১০ কোটির বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হওয়ার অর্থ হচ্ছে বিশ্বের মোট জনসংখ্যার এক শতাংশের অধিক মানুষ আর নিজের ঘরে থাকতে পারছে না। এই সংখ্যার মধ্যে শরণার্থী, আশ্রয়প্রার্থী এবং নিজের দেশেই ঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হওয়া ছয় কোটির মতো মানুষও রয়েছে।
বাংলাদেশ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে আশ্রয়দানকারী একটি দেশ। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে মিয়ানমার তার নাগরিক হিসেবে স্বীকার না করায় বিশ্বসম্প্রদায়ের কাছে তারা স্টেটলেস (রাষ্ট্রহীন)। আশ্রিত রোহিঙ্গাদের কারণে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ‘রাষ্ট্রহীন’ এখন বাংলাদেশে। ইউএনএইচসিআরের হিসাবে ২০২২ সাল শেষে বাংলাদেশে রাষ্ট্রহীন মানুষের সংখ্যা ৯ লাখ ৫২ হাজার ৩শ’। সম্পূর্ণ মানবিক কারণে মিয়ানমারের এই বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশ সাময়িকভাবে আশ্রয় দিয়েছে এবং মানবিক সহায়তা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ২০১৭ সালে ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বড়ো অংশকে বাংলাদেশে চলে আসতে বাধ্য করে মিয়ানমার। বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী বাংলাদেশে প্রথম আশ্রয় নিয়েছিল ১৯৭৮ সালে।
শরণার্থীদের অধিকার সুরক্ষায় বড়ো মাধ্যম হলো ১৯৫১ সালের শরণার্থী কনভেনশন এবং ১৯৬৭ সালের প্রটোকলের সঠিক ব্যবহার। এছাড়া ১৯৪৮ সালের মানবাধিকারের সার্বজনীন ঘোষণাপত্র (ঞযব টহরাবৎংধষ উবপষধৎধঃরড়হ ড়ভ ঐঁসধহ জরমযঃ) এর বাস্তবায়ন। বর্তমানে বিশ্বের ৩৫.৩ মিলিয়ন উদ্বাস্তু বা শরণার্থীদের মানবাধিকার নিশ্চিত করতে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ একান্ত জরুরি। ইউএনএইচসিআর শরণার্থী অধিকার বাস্তবায়নের নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। শরণার্থীদের নিরাপত্তা অধিকার ফিরে পাওয়ার মাধ্যম হচ্ছে নিরাপদ আবাসস্থল, জাতি পরিচয় এবং পাশাপাশি মৌলিক ও মানবাধিকার অধিকার ফিরে পাওয়া। জাতিসংঘের ঘোষণা অনুযায়ী, ২০০১ সাল থেকে প্রতিবছর বিশ্ব শরণার্থী দিবসটি পালিত হয় এক একটি প্রতিপাদ্য ধরে। বিশ্ব শরণার্থী দিবস ২০২৩ এর মূল প্রতিপাদ্য: ঐড়ঢ়ব ধধিু ভৎড়স ঐড়সব. অ ড়িৎষফ যিবৎব ৎবভঁমববং ধৎব ধষধিুং রহপষঁফবফ. ঘর হতে সুদূরে আশা, এমন একটি বিশ্বের যেখানে শরণার্থীরা নিয়তই অন্তর্ভুক্ত।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা বিরূপ পরিস্থিতির কারণে কোনো স্থানের মানুষ যখন নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে বসবাস করতে বাধ্য হয়, তখন তাদের বলা হয় জলবায়ু শরণার্থী। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্থানীয় জনগোষ্ঠীরা। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বিশ্বের বহু অঞ্চল বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ছে। এসকল অঞ্চলের অনেক পরিবার ঘর ও বসবাসের জায়গা হারাচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের ধারণা অনুযায়ী, আগামী ২৫ বছরের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বে ২০ কোটিরও বেশি মানুষ নিজ বাড়ি ছেড়ে দেশের মধ্যেই অন্য স্থানে যেতে বাধ্য হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সবচেয়ে বেশি বাস্তুচ্যুতি ঘটেছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ একটি। বাংলাদেশে বেড়ে চলছে জলবায়ু শরণার্থীর সংখ্যা। বাংলাদেশের জলবায়ু শরণার্থীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি উপকূলীয় অঞ্চলের বাসিন্দারা। বাংলাদেশ সরকার জলবায়ু শরণার্থীদের জন্য অশ্রয়ণ প্রকল্প তৈরি করছে। ২০২০ সালের জুলাই মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারে জলবায়ু শরণার্থীদের জন্য বিশ্বের বৃহত্তম পুনর্বাসন প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন। বৃহৎ এ প্রকল্পে নির্মিত ২০টি পাঁচতলাবিশিষ্ট ভবনে ৬০০টি জলবায়ু শরণার্থী পরিবার নতুন ফ্ল্যাট পেল। প্রতিটি পাঁচতলা ভবনে থাকছে ৪৫৬ বর্গফুট আয়তনের ৩২টি করে ফ্ল্যাট। পর্যায়ক্রমে ৪ হাজার ৪০৯টি পরিবার এখানে ফ্ল্যাট পাবে।
ইউএনএইচসিআরের প্রধান ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি বলেন, জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির নতুন রেকর্ডের জন্য সংঘাত, নিপীড়ন, বৈষম্য, সহিংসতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের মতো কারণগুলো দায়ী। শরণার্থী ও অভিবাসী বিশেষজ্ঞগণ বলছেন, বর্তমান সময়ে জলবায়ু শরণার্থী বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে দেখতে হবে। কেননা, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত নেতিবাচক প্রভাব বেড়েই চলছে, তার সাথে জলবায়ু শরণার্থীর সংখ্যাও। আমরা আশা করি, সংঘাত, নিপীড়ন, বৈষম্য, সহিংসতা মতো জলবায়ু পরিবর্তনজনিত শরণার্থী বা জলবায়ু শরণার্থী যেন একটি স্থায়ী বিষয় না হয়। বিশ্বের শরণার্থীদের মৌলিক ও মানবাধিকার ফিরিয়ে দিতে রাষ্ট্রসমূহ আরও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে, এটাই আমরা কামনা করি।
লেখক: সিনিয়র সহকারী সচিব, জনকূটনীতি অনুবিভাগ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ঢাকা
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
জনগণের প্রত্যাশা পূরণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ধীর গতিতে চলছে: আমিনুল হক
বঙ্গবাজার পুড়ে যাওয়া মামলায় একজন গ্রেফতার
মানিকগঞ্জের ঘিওরে ছাত্রদল নেতা লাভলু হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন
সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনিকে স্বারষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বদলী
৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কারের প্রস্তাব জমা হবে : বদিউল আলম মজুমদার
সাকাকে হারিয়ে চিন্তিত আর্সেনাল কোচ
সরকারের আশ্বাসে শাহবাগ থেকে সরে গেলেন বিএসএমএমইউ ট্রেইনি চিকিৎসকরা
মোহনপুর উপজেলা বিএনপি দ্বি-বার্ষিক কাউন্সিলে সভাপতি মুন সাধারণ সম্পাদক মাহবুব বিএনপি নির্বাচন ছাড়া ক্ষমতায় আসতে চায় না:সালাম
ডিসেম্বরে রেমিট্যান্স শূন্য যে ১০ ব্যাংকে
নরসিংদীর শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই
দিনাজপুর জেলা শিক্ষা অফিসারের বিদায়ী সংবর্ধনা
ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন
হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে
আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?
এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ
নির্বাচনে কারা যোগ্য, সে সিদ্ধান্ত নেবে ইসি: বদিউল আলম মজুমদার
মেটলাইফ বাংলাদেশের গ্রাহকরা ডিসকাউন্ট পাবেন ওশান প্যারাডাইস হোটেলস ও রিসোর্টে
রেমিট্যান্সে সুবাতাস: ডিসেম্বরের ২১ দিনেই এলো ২০০ কোটি ডলার
প্রশাসন ক্যাডারের ‘ইয়াং অফিসার্স’ ফোরামের সভাপতি শুভ, সাধারণ সম্পাদক জয়
ইউনিলিভার বাংলাদেশ ও কেওক্রাডং বাংলাদেশ’র উদ্যোগে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে হলো ‘কোস্টাল ক্লিনআপ’