চামড়া শিল্পকে আরো জোরদার করতে হবে

Daily Inqilab ড. অজয় কান্তি মন্ডল

২৫ জুন ২০২৩, ০৮:২৪ পিএম | আপডেট: ২৬ জুন ২০২৩, ১২:০২ এএম

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একটি খাত চামড়া শিল্প। গুণগতমানের চামড়া, স্বস্তা দরের শ্রমিক, কাঁচামালের সহজ প্রাপ্যতাসহ দেশে বিদ্যমান আনুষঙ্গিক অন্যান্য সুবিধাজনক ইন্ডিকেটর দিনকে দিন চামড়া শিল্পের সম্ভাবনার দিকটি জোরালোভাবে জানান দিচ্ছে। চামড়া শিল্প একদিকে যেমন দেশের বৃহৎ একটি জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ করেছে, অন্যদিকে ঠিক তেমনি এই শিল্প থেকে প্রতিবছর সরকারের কোষাগারে জমা পড়ছে প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা। বাংলাদেশি চামড়ার মান অন্যান্য দেশের থেকে উন্নত হওয়ায় ইউরোপ, আমেরিকা, আফ্রিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে চামড়া এবং চামড়াজাত পণ্যের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। সেকারণে, দেশের অর্থনীতিতে চামড়া শিল্পের অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য বলা যায়।

পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশের চামড়া রফতানির বাজার প্রতিবছর শতকরা ১০ থেকে ১৫ ভাগ হারে বাড়ছে এবং টাকার অঙ্কে যেটা বছরে গড়ে ৩০ মিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ও প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় তৎকালীন চামড়া শিল্পের গতি কিছুটা মন্থর হলেও বর্তমানে সেটা কেটে গেছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত দ্রব্যের রপ্তানির পরিমাণ তার আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৯৪১.৬ মিলিয়ন ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরে এ খাত থেকে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে রেকর্ড হয়। ওই বছর এই খাতে মোট রপ্তানি ছিল ১.২৫ বিলিয়ন ডলার, যা পূর্ববর্তী বছরের চেয়ে ৩২ শতাংশ বেশি। ওই সময়ে পণ্য রপ্তানি হয়েছিল ৪২৮.৫ মিলিয়ন ডলারের, যা তার পূর্ববর্তী অর্থবছরের একই সময় ছিল ৩৬৪.৯ মিলিয়ন ডলার। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরেও ঊর্ধ্বমুখী ধারায় চামড়া ও চামড়াজাত দ্রব্য রপ্তানি। গ্র্যান্ড ভিউ রিসার্চের একটি নতুন প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৮ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী চামড়াজাত পণ্যের বাজারের আকার ৬২৪.০৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে পারে। সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য থেকে বার্ষিক রপ্তানি আয় ১ বিলিয়ন থেকে বাড়িয়ে ১০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার চেষ্টা করছে।

ঈদুল আজহা হচ্ছে দেশের চামড়া ব্যবসায়ীদের কাঁচা চামড়া সংগ্রহের প্রধান মৌসুম। গেল ঈদুল আজহায় সারাদেশে প্রায় ১ কোটি পশু কোরবানি হয়। ওই বছর ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে সবচেয়ে বেশি পশু কোরবানি হয়। ঈদুল আজহায় এত বেশি পশু কোরবানি হয়, যার থেকে প্রাপ্ত চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণে হিমশিম খায় ট্যানারি শিল্পগুলো। ট্যানারি শিল্পগুলোর দাবি, ঈদুল আজহায় খুব অল্প সময়ের মধ্যে প্রাপ্ত অধিক চামড়ার সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ বা প্রক্রিয়াজাতকরণে তাদের উপর অনেক বেশি চাপ পড়ে যায়। চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল ও জনবলের ঘাটতি পড়ে। ট্যানারিগুলোর ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বহুগুণ বেশি চামড়া আসায় সেগুলো সংরক্ষণে যথোপযুক্ত পদ্ধতি অনুসরণ করা দুরহ হয়ে পড়ে। কিন্তু যদি এই পরিমাণ চামড়া পুরো বছর ক্রমান্বয়ে পাওয়া যেত তাহলে সেগুলোর সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের পর্যাপ্ত সুযোগ পাওয়া যেত। চামড়া শিল্পকে আরও বেশি মজবুত করা যেত। তাই অল্প সময়ের ব্যবধানে প্রাপ্ত অধিক চামড়া সকল সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনাকে একটু হলেও নড়বড়ে করে দেয়, যার প্রভাব গিয়ে পড়ে মাঠপর্যায়ের চামড়া ব্যবসায়ীদের উপর। এক দশক আগেও যেখানে একটি গরুর চামড়া আকারভেদে ১২০০ থেকে ৩০০০ টাকায় বিক্রি করা যেত, সেখানে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা সেই একই চামড়া ৫০০ টাকাতেও বিক্রি করতে পারছে না। ব্যবসায়ীদের গঠিত সিন্ডিকেট এবং সৃষ্টিকৃত নানা ধরনের কৃত্রিম সঙ্কট চামড়া ক্রয়ে অনেক প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে বলে প্রতীয়মান হয়। একারণে পরপর কয়েক বছর কাঁচা চামড়ার বাজারে নানা ধরনের অসঙ্গতি ও অস্থিরতা দেখা দিলে সরকারের পক্ষ থেকে চামড়ার দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার রীতি শুরু হয়। কিন্তু তারপরও নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক কম দামে কাঁচা চামড়া ক্রয় করে ট্যানারিগুলো। প্রতিবাদ স্বরূপ অনেক চামড়া ব্যবসায়ীদের পানির দরে বিক্রি না করে অসংখ্য চামড়া ফেলে দেয়ার ঘটনাও ঘটেছে। যেটা আর্থিক ক্ষতিসহ পরিবেশ দূষণে বড় ভূমিকা পালন করে।

চামড়া শিল্প থেকে পরিবেশ দূষণ তথা এই শিল্পে জড়িত শ্রমিকদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তার বিষয়টিও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ২৩০টির অধিক ট্যানারি রয়েছে। এসব ট্যানারিতে কর্মরত আছে অন্ততপক্ষে ২৫ হাজার শ্রমিক। ঈদুল আজহার পর পরই এসব ট্যানারিতে দেশের বিভিন্ন এলাকার আড়তদার ও মৌসুমি কাঁচা চামড়া ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে লবণযুক্ত চামড়া ধাপে ধাপে ক্রয় করা হয়। এরপর শুরু হয় চামড়ার মূল প্রক্রিয়াজাতকরণের বিভিন্ন ধাপ। চামড়ার প্রাথমিক প্রক্রিয়াজাতকরণে লবণ ব্যবহৃত হলেও চামড়ার দীর্ঘমেয়াদী সংরক্ষণ তথা প্রক্রিয়াজাত এবং ব্যবহার উপযোগী ফিনিশড প্রোডাক্ট বানাতে পরবর্তীতে বিভিন্ন ধাপে ব্যবহৃত হয় ক্রোমিয়াম, এসিড, খারসহ নানাধরনের রাসায়নিক দ্রব্য। ট্যানারিগুলোতে কর্মরত শ্রমিকরা কোনো ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াই খালি পায়ে এবং খালি হাতে এই প্রক্রিয়াজাতের কাজ করে। ফলে চর্মরোগ, ফুসফুসজনিত নানা ধরনের জটিলতা, ক্যানসারসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হয় এসব শ্রমিক, যা পরবর্তীতে তাদেরকে অকালমৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর এক গবেষণা থেকে জানা যায়, ট্যানারি শিল্পে কর্মরত শ্রমিকরা নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বিশেষ করে শিশুরা, যারা এ শিল্পে কাজ করছে, তাদের অবস্থা খুবই খারাপ। কারখানায় ব্যবহৃত সালফিউরিক অ্যাসিড, ক্রোমিয়াম, খার এবং সিসা স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

এছাড়া ট্যানারিগুলো থেকে অত্যাধিক পরিমাণে তরল ও কঠিন বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এই বর্জ্য আশপাশের পরিবেশকে ব্যাপকভাবে দূষিত করে। সাভারের হেমায়েতপুরে স্থাপিত ট্যানারির কেন্দ্রীয় বর্জ্য পরিশোধনাগারের (সিইটিপি) তরল বর্জ্য ধারণক্ষমতা ২৫ হাজার ঘনমিটার। তরল বর্জ্যের পরিমাণ যদি ধারণক্ষমতার বেশি হয় তাহলে সেগুলো পরিশোধন ছাড়াই পরিবেশে উন্মুক্ত হবে। দূষিত করবে আশপাশের নদ-নদী, ট্যানারি এলাকার মাটি ও বায়ুকে। করেও তাই। ঈদুল আজহার সময় অত্যাধিক লোড পড়ায় সিইটিপিতে শোধন ছাড়াই তরল বর্জ্য পাশের নদীতে উন্মুক্ত হয়। যেটা জলজ প্রাণী থেকে শুরু করে মানবকূলের জন্য হুমকি। আবার কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত মাত্রায় লোড হলে সেগুলোও কোনরকম পরিশোধন ছাড়াই পরিবেশে উন্মুক্ত হবে। যেগুলো প্রতিবার ঈদুল আজহার পরবর্তী সময়ে হয়ে থাকে। ট্যানারি শিল্পনগরের ডাম্পিং ইয়ার্ড এলাকায় বিভিন্ন ট্যানারি থেকে কঠিন বর্জ্য ওই এলাকায় ফেলা হয়। উন্মুক্ত স্থানে এ বর্জ্য ফেলায় বাতাসে তীব্র ঝাঁঝাল গন্ধ ছড়ায়। এছাড়া কঠিন বর্জ্যের বাড়তি চাপ সামাল দিতে ডাম্পিং ইয়ার্ডে গর্ত খুঁড়ে রাখা হয়, যে বর্জ্যের সুষ্ঠু কোনরকম ব্যবস্থাপনা নেই। একারণে প্রতিবছর ঈদুল আজহার পর ট্যানারিগুলোতে আসা চামড়া প্রক্রিয়াকরণ শুরু হলে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। ট্যানারি বর্জ্যের বিষক্রিয়া শুধুমাত্র ট্যানারিতে কর্মরত শ্রমিক ছাড়াও ঐ এলাকার বাসিন্দাদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। অনেক কারখানায় ট্যানারির কঠিন বর্জ্য, যেমন টুকরো চামড়া, গরুর হাড়, চর্বি, দাঁত এগুলো পুড়িয়ে পোলট্রি ফিডসহ আরো নানা জিনিস তৈরি করা হয়। এসব কারখানার বিষাক্ত ধোঁয়া পুরো এলাকাকে আচ্ছন্ন করে ফেলে। ট্যানারি এবং ওইসব ছোট ছোট কারখানার কারণে পুরো এলাকার মানুষ, মাটি, পানি এবং বাতাস এখন বিষে আক্রান্ত, যা প্রাণী ও উদ্ভিদকূলের জন্য বেশ উদ্বেগের বিষয়। চামড়া শিল্পের উন্নয়নের পাশাপাশি ট্যানারি থেকে উৎপন্ন বর্জ্যের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার প্রতি অধিক গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। এই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা তথা পরিবেশ বান্ধব গ্রিন এন্ড ক্লিন টেকনোলজি নিয়ে বিস্তর গবেষণার সুযোগ রয়েছে। গবেষণার সুযোগ রয়েছে ক্রোমিয়ামের বিকল্প ট্যানিং ম্যাটেরিয়াল খুঁজে বের করার। দেশের লেদার টেকনোলজি কিংবা লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটসমূহ এসকল বিষয় আমলে নিয়ে পরিবেশ দূষণরোধে সুষ্ঠু সমাধান ও বিকল্প ব্যবস্থা বের করতে পারে।
এবারের ঈদুল আজহায় যে পরিমাণ চামড়া পাওয়া যাবে সেগুলোর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিয়েও তেমন কোনো আশার সংবাদ ট্যানারিগুলো থেকে পাওয়া যায়নি। একারণে বরাবরের মতো সংকট থেকেই যায়। আমাদের জানা জরুরি, কাঁচা চামড়া সংগ্রহ থেকে ট্যানারিজাত হয়ে জুতা, জ্যাকেট, ব্যাগসহ বিভিন্ন ব্যবহার উপযোগী পণ্য তৈরি পর্যন্ত প্রায় ৫০ লাখ মানুষ এই খাতের সঙ্গে জড়িত। দিন দিন এই খাতে যে অভিজ্ঞতা, দক্ষ শ্রমিক ও কর্মী তৈরি হচ্ছে তা নিঃসন্দেহে আশা জাগানোর জায়গা। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, স্বচ্ছতা ও সদিচ্ছা বাংলাদেশের ট্যানারি শিল্পকে অতি অল্প সময়ে একটি নির্ভরযোগ্য স্থানে নিয়ে যেতে পারে বলে আশা করা যায়।

বিশেষ করে চামড়া ক্রয়ে নিয়োজিত ব্যবসায়ীরা ও প্রতিষ্ঠানসমূহ যাতে কোরবানির চামড়া সংগ্রহ করতে পারে সেজন্য পর্যাপ্ত ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। দেশের বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত ছোট ছোট ট্যানারি যাতে ফিনিশ্ড লেদার তৈরি করতে পারে, সে উদ্দেশ্যে এসকল প্রতিষ্ঠানকে অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা প্রদানের জন্য ফিনিশিং ফ্যাসিলিটিজ সেন্টার চালু করতে হবে। বিদেশের বাজারে আমাদের চামড়াজাত দ্রব্যের চাহিদা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মেলা ও প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করতে হবে। এ বিষয়ে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আমাদের দূতাবাসগুলো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারে। কাঁচা চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণে বেশ কিছু রাসায়নিক দ্রব্যের প্রয়োজন পড়ে। এসব প্রয়োজনীয় রাসায়নিক দ্রব্য দেশের অভ্যন্তরেই উৎপাদনের ব্যবস্থা করতে হবে। কাঁচা চামড়াকে পাকা করতে ট্যানিং করার প্রয়োজন পড়ে। যেখানে অনেক বেশি পরিমাণ ক্রোমিয়াম ব্যবহার করা হয়। এই ক্রোমিয়াম পরিবেশ তথা সমগ্র প্রাণীকূল ও উদ্ভিদকূলের জন্য অত্যন্ত ভয়াবহ। ক্রোমিয়ামে অনেক বেশি স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে। ট্যানারিসমূহে কর্মরত শ্রমিকদের পাশাপাশি ট্যানারির আশাপাশে বসবাসকৃত মানুষের জন্য এই ক্রোমিয়াম ভয়াবহ। তাই ট্যানিং ম্যাটেরিয়াল হিসেবে ক্রোমিয়াম ধাতুর বিকল্প ব্যবস্থা চিন্তা করতে হবে। এ লক্ষ্যে দক্ষ জনশক্তি তথা উপযুক্ত গবেষক যোগান বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ কলেজ অব লেদার টেকনোলজির আধুনিকীকরণের ব্যবস্থা গ্রহণসহ এ ধরনের আরও প্রতিষ্ঠান স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। পর্যায়ক্রমে দেশের প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে লেদার টেকনোলজি বিষয়ে বিভাগ খোলা যেতে পারে। চামড়া শিল্পের জন্য দক্ষ জনশক্তি প্রয়োজন, কিন্তু আমাদের দেশে এ ধরনের দক্ষ জনশক্তির বেশ অভাব রয়েছে। দক্ষ জনশক্তির অভাবে চামড়া শিল্পের উৎপাদন ক্ষমতা ব্যহত হচ্ছে। তাই চামড়া শিল্পকে আরও মজবুত করতে দক্ষ জনশক্তির যোগান নিশ্চিত করতে হবে। পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখার উদ্দেশ্যে লোকালয় থেকে দূরে চামড়া শিল্পের জন্য পৃথক শিল্পনগরী স্থাপন করা দরকার এবং এসব শিল্প এলাকায় রাস্তাঘাট নির্মাণ, ইফুলিয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপন, কাঁচা চামড়ার আড়ৎ নির্মাণ, আড়ৎগুলোতে পর্যাপ্ত পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। এসব চামড়া শিল্পনগরীর নির্গত বর্জ্য থেকে পরিবেশ দূষণরোধ করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। চামড়া শিল্প নগরীতে স্থাপিত সিইপিটি এর সক্ষমতা বৃদ্ধি ও চামড়া শিল্প খাতে উৎপন্ন কঠিন বর্জ্যের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। ট্যানারি শিল্পে গ্রিন ও ক্লিন টেকনোলজির ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে। কাঁচা চামড়া গুদামজাতকরণের জন্য যে পরিমাণ আড়ৎ দরকার তারও যথেষ্ট অভাব রয়েছে। বিদ্যমান এসকল নানাবিধ সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো আশু সমাধানের ব্যবস্থা গ্রহণ করলে চামড়া শিল্পের অপার সম্ভাবনাকে পুরোপুরি কাজে লাগানো সম্ভব হবে।

বাংলাদেশকে বাইরের দেশে একটি নির্ভরযোগ্য রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত করতে চামড়া শিল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। কেননা আমদানি নির্ভর এদেশের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য রফতানি আয় বৃদ্ধি ছাড়া বিকল্প কোন পথ নেই। সেই কারণে চামড়াশিল্পকে একটি সম্ভাব্য নির্ভরযোগ্য রফতানিমুখী ও বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত হিসেবে গড়ে তোলার জন্য গুণগত মানের চামড়া উৎপাদন এবং সেগুলোর বাজারজাতকরণে নিয়োজিত বিভিন্ন সংস্থা এবং সরকারের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা একান্ত প্রয়োজন। এ শিল্পের সাথে জড়িত গবেষক, শিক্ষক, ট্যানারি মালিক, মাঠ পর্যায়ের ব্যবসায়ী, ট্যানারিতে কর্মরত শ্রমিকদের সাথে সময়ে সময়ে দেশের নীতি নির্ধারকদের মত বিনিময়ের ব্যবস্থা করে সকলের সমস্যা নিরূপন করে সেগুলোর সঠিক ও টেকসই ব্যবস্থাপনা করে এই শিল্পকে আরও বেশি বেগবান করা যেতে পারে।

লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট।
[email protected]


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

বিহারিরা কেমন আছে
আসাদ সরকারের পতন : নতুন সিরিয়ায় ইসরাইলি আগ্রাসন
আবাসন ও গার্মেন্ট খাতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে
ভ্রমণকারীদের সচেতন হতে হবে
নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে নানা কথা
আরও

আরও পড়ুন

ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন

ব্র্যাক ব্যাংকের রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অর্জন

হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে

হাসিনা পরিবারের নামে ১৩ বিশ্ববিদ্যালয়, ইউজিসি তাকিয়ে আছে সরকারের দিকে

আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?

আমার খাবার কি ফর্টিফায়েড?

এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ

এনার্জিপ্যাকের বার্ষিক সাধারণ সভায় ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনার ওপর গুরুত্বারোপ

মেটলাইফ বাংলাদেশের গ্রাহকরা ডিসকাউন্ট পাবেন ওশান প্যারাডাইস হোটেলস ও রিসোর্টে

মেটলাইফ বাংলাদেশের গ্রাহকরা ডিসকাউন্ট পাবেন ওশান প্যারাডাইস হোটেলস ও রিসোর্টে

রেমিট্যান্সে সুবাতাস: ডিসেম্বরের ২১ দিনেই এলো ২০০ কোটি ডলার

রেমিট্যান্সে সুবাতাস: ডিসেম্বরের ২১ দিনেই এলো ২০০ কোটি ডলার

প্রশাসন ক্যাডারের ‘ইয়াং অফিসার্স’ ফোরামের সভাপতি শুভ, সাধারণ সম্পাদক জয়

প্রশাসন ক্যাডারের ‘ইয়াং অফিসার্স’ ফোরামের সভাপতি শুভ, সাধারণ সম্পাদক জয়

ইউনিলিভার বাংলাদেশ ও কেওক্রাডং বাংলাদেশ’র উদ্যোগে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে হলো ‘কোস্টাল ক্লিনআপ’

ইউনিলিভার বাংলাদেশ ও কেওক্রাডং বাংলাদেশ’র উদ্যোগে সেন্ট মার্টিন দ্বীপে হলো ‘কোস্টাল ক্লিনআপ’

তথ্য উপদেষ্টার সঙ্গে পাকিস্তানের বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী রাহাত ফাতেহ আলী খানের সৌজন্য সাক্ষাৎ

তথ্য উপদেষ্টার সঙ্গে পাকিস্তানের বিশিষ্ট সংগীত শিল্পী রাহাত ফাতেহ আলী খানের সৌজন্য সাক্ষাৎ

রক্তের বিনিময়ে অর্জিত ছাত্র জনতার  বিজয়কে নস্যাৎ হতে দেয়া যাবে না

রক্তের বিনিময়ে অর্জিত ছাত্র জনতার বিজয়কে নস্যাৎ হতে দেয়া যাবে না

বিপিএল মিউজিক ফেস্ট: যান চলাচলে যে নির্দেশনা ডিএমপির

বিপিএল মিউজিক ফেস্ট: যান চলাচলে যে নির্দেশনা ডিএমপির

গাজীপুরের শ্রীপুরে মেঘনা গ্রুপের একটি বাটন তৈরির কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড

গাজীপুরের শ্রীপুরে মেঘনা গ্রুপের একটি বাটন তৈরির কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড

সোনারগাঁওয়ে ছেলের ছুরিকাঘাতে বাবা নিহত

সোনারগাঁওয়ে ছেলের ছুরিকাঘাতে বাবা নিহত

আনজার গ্রুপের আয়োজনে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠকদের সংবর্ধনা

আনজার গ্রুপের আয়োজনে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠকদের সংবর্ধনা

মির্জাপুরে রাস্তায় বাঁশের বেড়া দেয়ায় জনদুর্ভোগ এলাকাবাসির মানববন্ধন

মির্জাপুরে রাস্তায় বাঁশের বেড়া দেয়ায় জনদুর্ভোগ এলাকাবাসির মানববন্ধন

মেধা বৃত্তির ফলাফল ঘোষণা করলো উষা

মেধা বৃত্তির ফলাফল ঘোষণা করলো উষা

পাহাড় কাটা, বায়ুদূষণ ও নিষিদ্ধ পলিথিনের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান জোরদার করা হবে: পরিবেশ উপদেষ্টা

পাহাড় কাটা, বায়ুদূষণ ও নিষিদ্ধ পলিথিনের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান জোরদার করা হবে: পরিবেশ উপদেষ্টা

ফুলপুরে অবৈধ ইট ভাটায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, এক লাখ টাকা জরিমানা

ফুলপুরে অবৈধ ইট ভাটায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, এক লাখ টাকা জরিমানা

মিরপুরে বেড়েছে চুরি ছিনতাই

মিরপুরে বেড়েছে চুরি ছিনতাই

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে ভাইয়ের হাতে ভাই খুন

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে ভাইয়ের হাতে ভাই খুন