ঢাকা   শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৫ আশ্বিন ১৪৩১

অ্যাম্বুলেন্স দুর্ঘটনা: সেতু ও সড়ক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে

Daily Inqilab ইনকিলাব

২৫ জুন ২০২৩, ০৮:২৪ পিএম | আপডেট: ২৬ জুন ২০২৩, ১২:০২ এএম

স্বপ্নের পদ্মাসেতু উদ্বোধনের এক বছর পূর্ণ হয়েছে গতকাল রোববার। ওইদিনই পদ্মাসেতুকেন্দ্রিক বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেস-ওয়েতে এক মর্মান্তিক অ্যাম্বুলেন্স দুর্ঘটনায় চালকসহ একই পরিবারের সাতজনের মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হয়েছে। এক্সপ্রেসওয়ের ভাঙ্গা উপজেলার চন্দ্রা ইউনিয়নের মালিগ্রাম উড়াল সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে। অ্যাম্বুলেন্সটি উড়াল সড়কের বিভাজন রেখায় ধাক্কা খায় এবং সঙ্গে সঙ্গে তাতে আগুন ধরে যায়। চালক বের হতে পারলেও যাত্রী সাতজন আগুনে দগ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। অগ্নিদগ্ধ চালককে প্রথমে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং পরে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটে ভর্তি করা হলে সেখানেই তার মৃত্যু হয়। মৃত্যু সব সময়ই শোকাবহ, বেদনাদায়ক। কিন্তু এ ধরনের মৃত্যু তারও অধিক। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, অ্যাম্বুলেন্সটিতে এত দ্রুত আগুন লেগে যায় যে, যাত্রীদের কেউই বের হওয়ার সুযোগ পায়নি। সেখানেই দগ্ধ হয়ে তাদের মৃত্যু হয়। ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অ্যাম্বুলেন্সের চালক পুলিশকে জানান, উড়াল সড়কে ওঠার সময় বেশ কয়েকজন তরুণ চার-পাঁচটি মোটরসাইকেল এলোমেলোভাবে চালাচ্ছিলেন। এতে তিনি গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। পরে অ্যাম্বুলেন্সের সামনের দিক সজোরে ডান পাশের বিভাজনকে গিয়ে আঘাত করে। এ সময় মুহূর্তের মধ্যে আগুন ধরে যায়। উল্লেখ করা যেতে পারে, অ্যাম্বুলেন্সটি গ্যাসচালিত হলেও হাইওয়ে পুলিশের মাদারিপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, গ্যাস সিলিন্ডারের কোনো বিস্ফোরণ ঘটেনি। তার মতে, ইঞ্জিন বিস্ফোরণই আগুনের কারণ।

এক্সপ্রেসওয়ে, এমন কি পদ্মাসেতুর রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা ও নজরদারি যথেষ্ট কার্যকর নয়, গত এক বছরে এই মহাসড়কে একের পর এক ঘটা ভয়াবহ দুর্ঘটনা তার প্রমাণ। মহাসড়কে তো বটেই, সেতুতে পর্যন্ত দুর্ঘটনা ঘটেছে। পদ্মাসেতু একটি স্পর্শকাতর জাতীয় স্থাপনা। এর নিরাপত্তা জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পর্কিত। সেতুর ওপর সর্বদা তীক্ষ্ম দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখার বিকল্প নেই। অথচ এই সেতুতে নির্বিবাদে প্রায় সব ধরনের যানবাহন চলাচল করছে। প্রথম দিকে সেতুতে মোটরসাইকেলের এত ভীড় ও দুর্ঘটনাও ঘটতে দেখা যায়। এ পরিপ্রেক্ষিতে সেতুতে মোটরসাইকেল ওঠা নিষিদ্ধ করতে হয়। গত ঈদে অবশ্য এই বিধিনিষেধ তুলে দেয়া হয়। এক্সপ্রেসওয়েতে লাগাতার দুর্ঘটনা ঘটতে থাকায় স্থানীয় থানা পুলিশসহ হাইওয়ে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন রয়েছে। মহাসড়কের ডিজাইন ও নির্মাণে কোনো ত্রুটি আছে কিনা, সে প্রশ্নও এ প্রসঙ্গে অবান্তর নয়। এক্সপ্রেসওয়ে ও পদ্মাসেতু ব্যবহারে শৃংখলা বিধান করার দায়িত্ব সেতু কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের। যানবাহন চলাচলে বিশৃংখলা ও যানজট যাতে কোথাও সৃষ্টি না হয়, সেটা তাদেরই দেখার কথা। অথচ মাঝে মাঝেই সেতুর এপার-ওপারে যানজট সৃষ্টি হতে দেখা যায়। পর্যবেক্ষকদের মতে, সেতু কর্তৃপক্ষসহ অন্যান্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ সতর্ক, সচেতন ও দায়িত্বনিষ্ঠ হলে কোথাও যানবাহন বিভ্রাট ও দুর্ঘটনা ঘটার কথা নয়। এক্সপ্রেসওয়ে ও পদ্মাসেতু যে কোনো মহাসড়ক ও সেতু থেকে স্বতন্ত্র। এক্সপ্রেসওয়ে যে কোনো দিকের বিবেচনায় আন্তর্জাতিকমানের মহাসড়ক। পদ্মাসেতু শুধু দেশের নয়, এই অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যেও গুরুত্বপূর্ণ সড়কসেতু। এই মহাসড়ক ও সেতুতে এত ঘন ঘন দুর্ঘটনা কেন ঘটবে? এই যে একটি গোটা পরিবার শেষ হয়ে গেলো, তার দায় কি সেতু ও এক্সপ্রেসওয়ে কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারবে? দুর্ঘটনা কবলিত অ্যাম্বুলেন্সের মৃত্যু পথযাত্রী চালক যে বিবরণ দিয়েছেন, তাতে এটা স্পষ্টভাবে বলা যায়, উড়াল সড়কটি ভালোভাবে দেখভাল করা হলে ওইভাবে কথিত তরুণরা মোটরসাইকেল ‘এলোমেলো’ চালাতে পারতো না।

পদ্মাসেতু ও এক্সপ্রেসওয়ে কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা নিয়ে অনেক কথাবার্তা হয়েছে। তাতে তাদের এতটুকু টনক নড়েছে বলে মনে হয় না। থানা পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশের দায়িত্বে অবহেলা নিয়েও কথা কম হয়নি। তাতেও কাজ হয়নি। সেখানে যার যে দায়িত্ব, সেখানে সে সেই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করলে সড়কে অনেক অনাকাক্সিক্ষত, মর্মন্তুদ দুর্ঘটনা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হতো। আমাদের দেশে যে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সর্বাগ্রে গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। সেই তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আর লোকসমক্ষে প্রকাশ পায় না। দায়ীদের বিচার ও শাস্তি হয় না। এ কারণে সব ক্ষেত্রে দুর্ঘটনা বাড়ছে। সড়ক দুর্ঘটনার তো কথাই নেই। সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিবছর কত মানুষ যে মারা যায়, আহত হয়, কত পরিবার অবলম্বনহীন হয়ে পড়ে, তার ইয়ত্তা নেই। বিচারহীনতার এই সংস্কৃতি চালু থাকায় দুর্ঘটনা বাড়ছে, কমছে না। গত মে মাসে দেশে সড়ক দুর্ঘটনার ৪৬৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রতি মাসেই মৃত্যুর এই সংখ্যা বাড়ছে। দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক আইনী ব্যবস্থা নেয়া না হলে দুর্ঘটনা ও মৃত্যু কমবে না।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ইয়ামালের মাইলফলকের রাতে হারের তেতো স্বাদ বার্সার

ইয়ামালের মাইলফলকের রাতে হারের তেতো স্বাদ বার্সার

আর্সেনালের স্বস্তির ড্র,অ্যাটলেটিকোর দারুণ জয়

আর্সেনালের স্বস্তির ড্র,অ্যাটলেটিকোর দারুণ জয়

হেডের বিধংসী শতকে লন্ডভন্ড  ইংল্যান্ড

হেডের বিধংসী শতকে লন্ডভন্ড  ইংল্যান্ড

পয়েন্ট হারিয়েও শীর্ষে আর্জেন্টিনা,অবনতি বাংলাদেশের

পয়েন্ট হারিয়েও শীর্ষে আর্জেন্টিনা,অবনতি বাংলাদেশের

বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি

বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি

ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী

ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী

সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু

সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু

রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে

রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে

বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত

বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে

বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা

বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা

লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই

লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই

রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে

রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে

দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা

দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা

জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ

জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ

উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী  প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন

উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন

সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।

পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।

ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ৫ শিক্ষার্থী গ্রেফতার

ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ৫ শিক্ষার্থী গ্রেফতার

রাজউক চেয়ারম্যানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল

রাজউক চেয়ারম্যানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল