অ্যাম্বুলেন্স দুর্ঘটনা: সেতু ও সড়ক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে
২৫ জুন ২০২৩, ০৮:২৪ পিএম | আপডেট: ২৬ জুন ২০২৩, ১২:০২ এএম
স্বপ্নের পদ্মাসেতু উদ্বোধনের এক বছর পূর্ণ হয়েছে গতকাল রোববার। ওইদিনই পদ্মাসেতুকেন্দ্রিক বঙ্গবন্ধু এক্সপ্রেস-ওয়েতে এক মর্মান্তিক অ্যাম্বুলেন্স দুর্ঘটনায় চালকসহ একই পরিবারের সাতজনের মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হয়েছে। এক্সপ্রেসওয়ের ভাঙ্গা উপজেলার চন্দ্রা ইউনিয়নের মালিগ্রাম উড়াল সড়কে দুর্ঘটনাটি ঘটে। অ্যাম্বুলেন্সটি উড়াল সড়কের বিভাজন রেখায় ধাক্কা খায় এবং সঙ্গে সঙ্গে তাতে আগুন ধরে যায়। চালক বের হতে পারলেও যাত্রী সাতজন আগুনে দগ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায়। অগ্নিদগ্ধ চালককে প্রথমে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং পরে ঢাকার শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটে ভর্তি করা হলে সেখানেই তার মৃত্যু হয়। মৃত্যু সব সময়ই শোকাবহ, বেদনাদায়ক। কিন্তু এ ধরনের মৃত্যু তারও অধিক। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, অ্যাম্বুলেন্সটিতে এত দ্রুত আগুন লেগে যায় যে, যাত্রীদের কেউই বের হওয়ার সুযোগ পায়নি। সেখানেই দগ্ধ হয়ে তাদের মৃত্যু হয়। ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অ্যাম্বুলেন্সের চালক পুলিশকে জানান, উড়াল সড়কে ওঠার সময় বেশ কয়েকজন তরুণ চার-পাঁচটি মোটরসাইকেল এলোমেলোভাবে চালাচ্ছিলেন। এতে তিনি গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। পরে অ্যাম্বুলেন্সের সামনের দিক সজোরে ডান পাশের বিভাজনকে গিয়ে আঘাত করে। এ সময় মুহূর্তের মধ্যে আগুন ধরে যায়। উল্লেখ করা যেতে পারে, অ্যাম্বুলেন্সটি গ্যাসচালিত হলেও হাইওয়ে পুলিশের মাদারিপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, গ্যাস সিলিন্ডারের কোনো বিস্ফোরণ ঘটেনি। তার মতে, ইঞ্জিন বিস্ফোরণই আগুনের কারণ।
এক্সপ্রেসওয়ে, এমন কি পদ্মাসেতুর রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা ও নজরদারি যথেষ্ট কার্যকর নয়, গত এক বছরে এই মহাসড়কে একের পর এক ঘটা ভয়াবহ দুর্ঘটনা তার প্রমাণ। মহাসড়কে তো বটেই, সেতুতে পর্যন্ত দুর্ঘটনা ঘটেছে। পদ্মাসেতু একটি স্পর্শকাতর জাতীয় স্থাপনা। এর নিরাপত্তা জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে সম্পর্কিত। সেতুর ওপর সর্বদা তীক্ষ্ম দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখার বিকল্প নেই। অথচ এই সেতুতে নির্বিবাদে প্রায় সব ধরনের যানবাহন চলাচল করছে। প্রথম দিকে সেতুতে মোটরসাইকেলের এত ভীড় ও দুর্ঘটনাও ঘটতে দেখা যায়। এ পরিপ্রেক্ষিতে সেতুতে মোটরসাইকেল ওঠা নিষিদ্ধ করতে হয়। গত ঈদে অবশ্য এই বিধিনিষেধ তুলে দেয়া হয়। এক্সপ্রেসওয়েতে লাগাতার দুর্ঘটনা ঘটতে থাকায় স্থানীয় থানা পুলিশসহ হাইওয়ে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন রয়েছে। মহাসড়কের ডিজাইন ও নির্মাণে কোনো ত্রুটি আছে কিনা, সে প্রশ্নও এ প্রসঙ্গে অবান্তর নয়। এক্সপ্রেসওয়ে ও পদ্মাসেতু ব্যবহারে শৃংখলা বিধান করার দায়িত্ব সেতু কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্টদের। যানবাহন চলাচলে বিশৃংখলা ও যানজট যাতে কোথাও সৃষ্টি না হয়, সেটা তাদেরই দেখার কথা। অথচ মাঝে মাঝেই সেতুর এপার-ওপারে যানজট সৃষ্টি হতে দেখা যায়। পর্যবেক্ষকদের মতে, সেতু কর্তৃপক্ষসহ অন্যান্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ সতর্ক, সচেতন ও দায়িত্বনিষ্ঠ হলে কোথাও যানবাহন বিভ্রাট ও দুর্ঘটনা ঘটার কথা নয়। এক্সপ্রেসওয়ে ও পদ্মাসেতু যে কোনো মহাসড়ক ও সেতু থেকে স্বতন্ত্র। এক্সপ্রেসওয়ে যে কোনো দিকের বিবেচনায় আন্তর্জাতিকমানের মহাসড়ক। পদ্মাসেতু শুধু দেশের নয়, এই অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যেও গুরুত্বপূর্ণ সড়কসেতু। এই মহাসড়ক ও সেতুতে এত ঘন ঘন দুর্ঘটনা কেন ঘটবে? এই যে একটি গোটা পরিবার শেষ হয়ে গেলো, তার দায় কি সেতু ও এক্সপ্রেসওয়ে কর্তৃপক্ষ এড়াতে পারবে? দুর্ঘটনা কবলিত অ্যাম্বুলেন্সের মৃত্যু পথযাত্রী চালক যে বিবরণ দিয়েছেন, তাতে এটা স্পষ্টভাবে বলা যায়, উড়াল সড়কটি ভালোভাবে দেখভাল করা হলে ওইভাবে কথিত তরুণরা মোটরসাইকেল ‘এলোমেলো’ চালাতে পারতো না।
পদ্মাসেতু ও এক্সপ্রেসওয়ে কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতা নিয়ে অনেক কথাবার্তা হয়েছে। তাতে তাদের এতটুকু টনক নড়েছে বলে মনে হয় না। থানা পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশের দায়িত্বে অবহেলা নিয়েও কথা কম হয়নি। তাতেও কাজ হয়নি। সেখানে যার যে দায়িত্ব, সেখানে সে সেই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করলে সড়কে অনেক অনাকাক্সিক্ষত, মর্মন্তুদ দুর্ঘটনা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হতো। আমাদের দেশে যে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সর্বাগ্রে গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। সেই তদন্ত কমিটির রিপোর্ট আর লোকসমক্ষে প্রকাশ পায় না। দায়ীদের বিচার ও শাস্তি হয় না। এ কারণে সব ক্ষেত্রে দুর্ঘটনা বাড়ছে। সড়ক দুর্ঘটনার তো কথাই নেই। সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিবছর কত মানুষ যে মারা যায়, আহত হয়, কত পরিবার অবলম্বনহীন হয়ে পড়ে, তার ইয়ত্তা নেই। বিচারহীনতার এই সংস্কৃতি চালু থাকায় দুর্ঘটনা বাড়ছে, কমছে না। গত মে মাসে দেশে সড়ক দুর্ঘটনার ৪৬৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রতি মাসেই মৃত্যুর এই সংখ্যা বাড়ছে। দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক আইনী ব্যবস্থা নেয়া না হলে দুর্ঘটনা ও মৃত্যু কমবে না।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মেধা বৃত্তির ফলাফল ঘোষণা করলো উষা
পাহাড় কাটা, বায়ুদূষণ ও নিষিদ্ধ পলিথিনের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান জোরদার করা হবে : পরিবেশ উপদেষ্টা
ফুলপুরে অবৈধ ইট ভাটায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, এক লাখ টাকা জরিমানা
মিরপুরে বেড়েছে চুরি ছিনতাই
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে ভাইয়ের হাতে ভাই খুন
পালিয়ে গিয়ে হাসিনা ভারত থেকে ষড়যন্ত্র করছে: মির্জা ফখরুল
মাগুরায় দলকে গতিশীল করতে কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত
মৌলভীবাজারে সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে শ্রমিকের মৃত্যু, জিরো লাইন থেকে লাশ উদ্ধার
মাদারীপুরে ভুয়া সমন্বয়কদের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্র জনতা
সেনবাগে ট্রাক্টর চাপায় ১ শিশু মৃত্যু : আহত ১
আ.লীগের নিবন্ধন বাতিলসহ ৩ দফা দাবিতে ৭ দিনের আল্টিমেটাম ইনকিলাব মঞ্চের
ঢাকা ফাইট নাইট ৪.০-এ জয়ী মোহাম্মদ ‘রয়্যাল বেঙ্গল’ ফাহাদ
শহীদ আবু সাঈদকে কটূক্তি, ক্ষমা চাইলেন কিশোরগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিছ আলী ভূঁইয়া
মোরেলগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাবের বার্ষিক কমিটি গঠন
টাঙ্গাইলে কাকুয়ায় সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর পক্ষ থেকে সুবিধা বঞ্চিত গরীব অসহায়দের শীতবস্ত্র বিতরণ
নোয়াখালীকে বিভাগ ঘোষণার দাবিতে মানববন্ধন
রাজশাহীর আদালতে আ:লীগের সাবেক এমপি আসাদের রিমান্ড মঞ্জুর
বগুড়ায় পুলিশের উদাসীনতায় রাতের আঁধারে জবর দখল করে ছাদ ঢালাই
লাকসামে সরকারি খাল পাড়ের মাটি বিক্রি হচ্ছে ইটভাটায়
কালিহাতীতে মারামারির সন্ধিগ্ধ মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেপ্তার