যত গতি তত ক্ষতি
২৭ জুন ২০২৩, ০৮:০৯ পিএম | আপডেট: ২৭ জুন ২০২৩, ১১:৪৩ পিএম
পৃথিবীতে এখন গতি নিয়ে কথা হচ্ছে। জাতিসংঘ একটি সপ্তাহ পালন করেছে সেখানে তাদের ¯ে¬াগান ছিলো ‘কিল স্পীড, নট লাইভস’Ñ গতিকে মারো, মানুষকে নয়। গতি খুবই বিপজ্জনক। আমরা বন্দুকের গুলির কথা বলি, এই গুলিটা কিন্তু অনেক ছোট। অথচ ঐ ছোট গুলির জন্যই কিন্তু মানুষ মারা যায়। কেন মারা যায়? কারণ হলো গতি। বন্দুক থেকে যখন গুলিটি বের হয়, তখন এর গতি থাকে প্রচ-। একারণে এই ছোট গুলিটির কারণে মানুষ আহত হয় বা মারা যায়। এরপর দেখা যায়, ঘূর্ণিঝড়ের সময় বাতাসের গতি যখন ১০০/১৫০/২০০ কিলোমিটার অতিক্রম করে তখন আবহাওয়া অফিস মহাবিপদ সংকেত জারি করে। ঝড় যেখানে ১৫০/২০০ কি.মি বেগে যায় সেখানে মহাবিপদ সংকেত দেয়া হয়। বৃষ্টি আর বাতাস, এই দুইটির বেগের কারণে বিপদ সংকেত দেয়া হয়। বৃষ্টি বা বাতাস কিন্তু লোহার কোন বস্তু নয়, তারপরও এর গতিবেগের কারণে মহাবিপদ সংকেত দেয়া হয়। এখন ভেবে দেখুন, সড়কে যখন লোহার একটি বস্তু অর্থাৎ একটি গাড়ি ১০০/১৫০ কি.মি বেগে চলে এবং সেটা যদি কাউকে আঘাত করে, তাহলে সেখানে কি অবস্থা দাঁড়াতে পারে? সেখানে বাঁচার কিন্তু কোন সম্ভবনাই থাকে না। এ কারণে বলা হচ্ছে, গাতি সড়ক দুর্ঘটনার জন্য অন্যতম একটি কারণ। বাংলাদেশে ৯০% মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়, এই গতির কারণে।
অতিরিক্ত গতিতে যখন কোন গাড়ি চলাচল করে তখন রাস্তার দুই পাশের কোন কিছু ঠিক মতো দেখা যায় না। খুব দ্রুত পাশের বস্তুগুলো পার হয়ে যায়। যদি কোন মানুষ রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে, সে যখন দৌড় দেবে কি হাঁটবে, এসব বিষয় ঠিক মতো লক্ষ্য করা যায় না। যে কারণে দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। সরকারিভাবে যে আইন করা হয়েছে সেখানে বলা হয়েছে, বিআরটিএ যানবাহনের গতি নির্ধারণ করবে। কেউ যদি নির্ধারিত গতি অতিক্রম করে, তাকে জরিমানা করা হবে। তবে কোন সড়কে কত গতি, কোন গাড়ির কত গতিতে চলবে বা চলবে না, এর কোন গাইড লাইন সেখানে নেই। আমরা এই বিষয়ে সরকারের সাথে বিশেষ করে বিআরটিএ’র সাথে কথা বলেছি। সরকার সকলকে নিয়ে বসে এই গাইড লাইন তৈরীর কাজ করছে এবং এর দায়িত্ব বুয়েটের অ্যাকসিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এআরআই)- এর কাছে দেয়া হয়েছে। আমরাও তাদের সাথে কাজ করছি। সেইসাথে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’( নিসচা)-এর পক্ষ থেকে চালকদের ট্রেনিং- এর মাধ্যমে বোঝাচ্ছি, গতি আমাদের জন্য, সড়কের জন্য কতটা ক্ষতিকর। আমরা যদি গতিকে নিয়ন্ত্রনের মধ্যে রেখে গাড়ি চালাতে পারি, তাহলে দুর্ঘটনা অনেকটা কমে আসবে।
দেশে এত অবকাঠামো হচ্ছে, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন হচ্ছে, এরপরও আমরা কতটা দুর্ঘটনারোধ করতে পারছি? পারছি কি? পারছিনা। উন্নয়ন হলেও সুদূরপ্রসারী চিন্তা না থাকার কারণে উত্তরণ ঘটাতে পারছি না। সড়ক দুর্ঘটনা নিরসনে জাতিসংঘ যে ৫টি পিলারের কথা বলেছে, তা মেনে সুইডেন কিন্তু তাদের দুর্ঘটনার হার শূন্যতে নামিয়ে এনেছে। কোন কোন দেশ ৯০%, কোন দেশ ৮০%-এ নামিয়ে এনেছে দুর্ঘটনার হার। আমরা কেন কমাতে পারছিনা? এর কারণ হচ্ছে, আমাদের প্রথম দিকে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে যে ধারনা, সেই ধারনাটাই ঠিক মতো ছিলোনা। আমাদের ধারনা ছিলো, সড়ক দুর্ঘটনারোধে আমাদের করণীয় কিছু নেই। এটা আল্লাহ’র হাতে। এমন ধারনা ছিলো অনেকের। এজন্য অনেক সময় আমি বলি, আমরা একটি দেশ পেয়েছি, কিন্তু দেশ পরিচালনার অভিজ্ঞতা সে সময় আমাদের ছিলো না। যে কারণে, সঠিক পরিকল্পনার অভাব ছিলো। সরকারের নীনির্ধারকদের কেউ কেউ বলেছেন, সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষের কোনো হাত নেই। এখানে ¯পষ্ট বোঝা যায়, আমাদের দেশ পরিচালনা করার অভিজ্ঞতায় ঘাটতি ছিল। আমরা এখনো শিখছি। এই শিখতে শিখতে মাঝখান থেকে অনেক মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছে। আমাদের চিন্তা-চেতনায় সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে আধুনিকতার ঘাটতি রয়েছৈ। এক্ষেত্রে অনেকটা উদাসীন হয়ে রয়েছি। একটি উদাহরণ দেয়া যাক। যেমন রাজধানীর নবাবপুর সড়কটি ছিলো একটু বড়। সেটা নিয়ে অনেকে সমালোচনা করেছে, এত বড় রোড অযথা কেন করা হয়েছে। এই ধারণা থেকে দেখা যায়, ঢাকা শহরের অনেক জায়গায় সড়ক ছোট রয়ে গেছে। কারণ, তখন তারা ভাবেনি, আজ যেখানে ১০ টি গাড়ি চলাচল করছে, ১০ বছর পর সেখানে কয়টি গাড়ি চলবে? এই সুদূরপ্রসারী চিন্তা ছিল না। এই যে সুদুর পরিকল্পনার দৃষ্টি যদি আমাদের না থাকে, তাহলে আমরা উন্নয়নের সেই যায়গাটায় কখনোই পৌঁছতে পারবনা। সুতরাং সড়ক দুর্ঘটনারোধে প্রয়োজন সঠিক ব্যবস্থাপনা। জাতিসংঘ ঘোষিত সেইফটি সিস্টেম অ্যাপ্রোচ মাথায় রেখে কাজ করতে হবে। আমরা এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে জাতিসংঘের দেয়া প্রথম দশক বাস্তবায়ন করতে পারিনি। এখন দ্বিতীয় দশক যাতে আমরা ফেল না করি, সে লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। জাতিসংঘ কর্তৃক যে দশক ঘোষণা করা হয়েছে, তা হচ্ছে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের সড়ক দুর্ঘটনার হার অর্ধেকে নামিয়ে আনতে হবে। তার মধ্যে জাতিসংঘের দেয়া ৫টি পিলার ও ৫টি রিক্স ফ্যাক্টর চিহ্নিত করা হয়েছে। এই জায়গাগুলো ধরে ধরে কাজ করতে হবে। এর ভেতর অগ্রাধিকার দিতে হবে গতিকে। কারণ সড়ক দুর্ঘটনারোধে পরিকল্পনা, তথা চিন্তার গতি দ্রুত বাড়াতে হবে এবং সড়কের গতিকে দ্রুত ম্যানেজমেন্টের আওতায় আনতে হবে। গতিকে ম্যারনজম্যান্টের ভেতর রেখে পরিচালনা করতে হবে। এই চিন্তাগুলো এখন আমাদের মাথায় রাখতে হবে।
সড়কের বিভিন্ন রকম চরিত্র আছে। কোন সড়কে গাড়ি কত গতিতে চলবে, সেটি যেমন নির্ধারণ করতে হবে, তেমনি যানবাহনের প্রকারভেদে গতিও নির্ধারণ করে দিতে হবে। সড়কের ব্ল্যাক¯পট বা দুর্ঘটনাপ্রবণ স্থানগুলোকে ট্রিটমেন্টের আওতায় এনে সংশোধন করে যানবাহন যেন নির্বিঘেœ নিরাপদে সঠিক গতিতে চলতে পারে, সে ব্যবস্থা করে দিতে হবে। এটির জন্য উদ্যোগ নিতে হবে সরকারকে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বা সংগঠন এই বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলতে পারে। বিষয়গুলো তুলে ধরে দেখিয়ে দিতে পারে। তবে উন্নয়নের যে গতিতে বাংলাদেশ আছে, সে গতি ধরে রাখতে হলে সরকারকেই পদক্ষেপ নিতে হবে। এছাড়া এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা যদি অর্জন করতে হলে জাতিসংঘের দেয়া দ্বিতীয় দশক যেন আমরা ফেল না করি, সে লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। উল্লেখ করা প্রয়োজন, সড়ক দুর্ঘটনার জন্য বছরে জিডিপি’র ক্ষতি হয় প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। এই ৫০ হাজার কোটি টাকা যদি সড়কে ক্ষতি না হতো, তাহলে দেশের উন্নয়ন আরও গতিশীল হতো। মানুষের জীবনমান আরো উন্নত হতো। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে অগ্রাধিকারভিত্তিতে কাজ করতে হবে। সরকারকে দ্রুত উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ, গতি এখন সড়ক দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণ। পাশাপাশি গাড়ির ফিটনেস, চালকের দক্ষতা মোটরসাইকেলে হেলমেট ব্যবহার, চালক ও যাত্রীদের সিটবেল্ট ব্যাবহার, শিশুদের জন্য আসন ব্যবস্থা- এসব বিষয় নিয়েও কাজ করতে হবে।
লেখকঃ চেয়ারম্যান, নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
রক্তের বিনিময়ে অর্জিত ছাত্র জনতার বিজয়কে নস্যাৎ হতে দেয়া যাবে না
বিপিএল মিউজিক ফেস্ট: যান চলাচলে যে নির্দেশনা ডিএমপির
গাজীপুরের শ্রীপুরে মেঘনা গ্রুপের একটি বাটন তৈরির কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড
সোনারগাঁওয়ে ছেলের ছুরিকাঘাতে বাবা নিহত
আনজার গ্রুপের আয়োজনে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠকদের সংবর্ধনা
মির্জাপুরে রাস্তায় বাঁশের বেড়া দেয়ায় জনদুর্ভোগ এলাকাবাসির মানববন্ধন
মেধা বৃত্তির ফলাফল ঘোষণা করলো উষা
পাহাড় কাটা, বায়ুদূষণ ও নিষিদ্ধ পলিথিনের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান জোরদার করা হবে: পরিবেশ উপদেষ্টা
ফুলপুরে অবৈধ ইট ভাটায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, এক লাখ টাকা জরিমানা
মিরপুরে বেড়েছে চুরি ছিনতাই
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে ভাইয়ের হাতে ভাই খুন
পালিয়ে গিয়ে হাসিনা ভারত থেকে ষড়যন্ত্র করছে: মির্জা ফখরুল
মাগুরায় দলকে গতিশীল করতে কর্মী সম্মেলন অনুষ্ঠিত
মৌলভীবাজারে সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে শ্রমিকের মৃত্যু, জিরো লাইন থেকে লাশ উদ্ধার
মাদারীপুরে ভুয়া সমন্বয়কদের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে ছাত্র জনতা
সেনবাগে ট্রাক্টর চাপায় ১ শিশু মৃত্যু : আহত ১
আ.লীগের নিবন্ধন বাতিলসহ ৩ দফা দাবিতে ৭ দিনের আল্টিমেটাম ইনকিলাব মঞ্চের
ঢাকা ফাইট নাইট ৪.০-এ জয়ী মোহাম্মদ ‘রয়্যাল বেঙ্গল’ ফাহাদ
শহীদ আবু সাঈদকে কটূক্তি, ক্ষমা চাইলেন কিশোরগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা ইদ্রিছ আলী ভূঁইয়া
মোরেলগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাবের বার্ষিক কমিটি গঠন