ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১

মার্কিন শ্রম অধিকার নীতি নিয়ে উদ্বেগ রফতানিকারকদের

Daily Inqilab ইনকিলাব

২০ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৮ এএম | আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৮ এএম

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত বৃহস্পতিবার শ্রমিকদের ক্ষমতায়ন, শ্রম অধিকার ও মানসম্মত জীবনযাপন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি স্মারকে স্বাক্ষর করেছেন। ওই দিনই দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেছেন, বিভিন্ন দেশের সরকার, শ্রমিক, শ্রমিক সংগঠন, ট্রেড ইউনিয়ন, সুশীল সমাজ ও বেসরকারি খাতকে সম্পৃক্ত করে আন্তর্জাতিকভাবে প্রচলিত শ্রম আইন অনুযায়ী শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষায় কাজ করবে যুক্তরাষ্ট্র। তিনি আরো উল্লেখ করেছেন, এর মাধ্যমে শ্রমিকদের অধিকার রক্ষার বিষয়টিকে জাতীয় নিরাপত্তা ও বৈদেশিক নীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। অতঃপর যারা শ্রমিকদের অধিকারের বিরুদ্ধে যাবে, হুমকি দেবে, ভয় দেখাবে তাদের জবাবদিহি করতে নিষেধাজ্ঞা, বাণিজ্যিক জরিমানা এবং ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে। শ্রম অধিকার বিষয়ক নতুন এই মার্কিন নীতির প্রেক্ষিতে আমাদের দেশের গার্মেন্ট রফতানিকারকরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এমন এক সময় যুক্তরাষ্ট্র এই নীতি ঘোষণা করেছে যখন গার্মেন্ট শিল্পে শ্রমিক অসন্তোষ বিরাজ করছে। বেতন বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকরা আন্দোলন করছে। বর্ধিত নতুন বেতন নির্ধারণ ও ঘোষণা করা হলেও শ্রমিকরা স্বেচ্ছায় তা মেনে নেয়নি। আন্দোলনে কয়েকজন শ্রমিক নিহত হওয়া ছাড়াও বহু শ্রমিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। বন্ধ গার্মেন্টগুলো খুলে দেয়া হলেও শ্রমিকদের অসন্তোষ মিটে গেছে, এমন মনে করার তাই কারণ নেই। নতুন মার্কিন শ্রম অধিকার নীতি তাদের আন্দোলনমুখী হতে উৎসাহিত করতে পারে। সেক্ষেত্রে গার্মেন্ট শিল্প, উৎপাদন ও রফতানিতে দুর্ঘট নেমে আসতে পারে। কোনো ক্ষেত্রে এ নীতির লংঘন বা ব্যত্যয় ঘটলে যুক্তরাষ্ট্র ‘নিষেধাজ্ঞা’, ‘বাণিজ্যক জরিমানা’ বা ‘ভিসা নিষেধাজ্ঞা’ আরোপ করতে পারে। যেহেতু এটা ‘যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা ও পররাষ্ট্র নীতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ’ সুতরাং এর প্রয়োগ তাৎক্ষণিক ও সুদূরপ্রসারী হওয়াই স্বাভাবিক। এটাই গার্মেন্ট রফতানিকারকদের উদ্বেগের বড় কারণ।

এর আগে মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগে র‌্যাব ও তার কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। সে নিষেধাজ্ঞা এখনো বহাল আছে। এরপর বহুল আলোচিত ভিসা নীতি ঘোষণা করে। এটা বাংলাদেশের জন্য স্পেশাল। যারা গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করবে, তাদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করা হবে। রাজনীতিক, আইনশৃংখলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ, বিচারকসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের বিরুদ্ধে এ ভিসানীতি কার্যকর করা হবে। ইতোমধ্যে এ নীতির প্রয়োগ শুরু হয়েছে। ভিসা নিষেধাজ্ঞার পর দেশের গার্মেন্ট পণ্যের ব্যবসায়ীরা এই মর্মে আশংকা প্রকাশ করেছিলেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের তরফে আরো নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে। শেষ পর্যন্ত শ্রম অধিকারের নামে গার্মেন্ট খাতের ওপরই আঘাতটা এলো। বাংলাদেশের গার্মেন্টসহ বিভিন্ন পণ্যের গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র। গার্মেন্টপণ্যের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া হোম টেক্সটাইল, হিমায়িত মাছ, চামড়াজাত পণ্য ইত্যাদিও রফতানি হয়। গার্মেন্ট পণ্য রফতানির অন্যতম শীর্ষ প্রতিষ্ঠান হা-মীম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ পত্রিকান্তরে জানিয়েছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের নতুন এ নীতি নিয়ে আমরা খুবই চিন্তিত। এখন পর্যন্ত আমরা বিষয়টি যতটুকু বুঝতে পারছি, তাতে মনে হচ্ছে, এ নীতি ব্যক্তিগত পর্যায়ে ও রাষ্ট্রীয়ভাবে আরোপের সুযোগ আছে। ‘বলার অপেক্ষা রাখে না, গার্মেন্টসহ বিভিন্ন শিল্পে শ্রমিকদের অধিকার, সুযোগ-সুবিধা, বেতন-ভাতার নিশ্চয়তা, কর্মপরিবেশ ইত্যাদি পর্যাপ্ত ও সমপর্যায়ে নেই। অনেক ক্ষেত্রেই ঘাটতি রয়েছে। এমতাবস্থায়, এই নীতির প্রয়োগ হলে শিল্প, রফতানি ও শ্রমিক বেকায়দায় পড়তে পারে। এমনিতেই সামগ্রিকভাবে শিল্পের অবস্থা এখন ভালো নয়। শিল্পের মধ্যে গার্মেন্ট সবচেয়ে বড় খাত হওয়ায় এর সমস্যাও বেশি। এক খবরে বলা হয়েছে, ডলার সংকট, ডলারের উচ্চমূল্য ও টাকার অবমূল্যায়ন, গ্যাস-বিদ্যুতের অব্যাহত বাড়তি দাম ইত্যাদি এই শিল্পকে সংকটে ফেলেছে। অন্য এক খবরে জানা গেছে, গত জুলাই-অক্টোবরÑ চার মাসে যুক্তরাষ্ট্রে গার্মেন্টপণ্য রফতানি আগের বছর একই সময়ের তুলনায় ৩ শতাংশের বেশি কমেছে।

বিদ্যমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে, শিল্পের সুরক্ষা, উৎপাদন অব্যাহত রাখা ও বাড়ানো এবং রফতানি বৃদ্ধির বিকল্প নেই। অর্থনীতির সার্বিক পরিস্থিতি ক্রমাগত নাজুক হয়ে পড়ছে। রফতানি আয় যেমন কমছে, তেমনি রেমিট্যান্স প্রবৃদ্ধিও আশানুরূপ নয়। বিনিয়োগ ও বৈদেশিক সহায়তা আসছে না বললেই চলে। ব্যাংকসহ আর্থিক খাতের অবস্থাও শোচনীয়। লেনদেন ভারসাম্যে বড় আকারে ঘাটতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিও অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনীতি সংঘাতের দিকেই মোড় নিয়েছে। সরকার একতরফা নির্বাচন করতে চাইছে বলে মনে হচ্ছে। সেক্ষেত্রে রাজনীতি সহিংস ও সংঘাতময় হয়ে উঠলে আশ্চর্যের কিছু থাকবে না। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক হোক, এমন আন্তর্জাতিক চাপ রয়েছে। এটা দীর্ঘ জনপ্রত্যাশাও বটে। রাজনৈতিক পরিস্থিতি অর্থনীতির ওপর অনিবার্য প্রভাব বিস্তার করে। এই বিবেচনায় গণতন্ত্র ও গণরাজনীতির স্বার্থে তো অবশ্যই, অর্থনৈতিক সংকট ও বিপর্যয় এড়াতেও সুষ্ঠু রাজনীতি, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও কাম্য নির্বাচন নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো এ ক্ষেত্রে শুভবুদ্ধির পরিচয় দেবে বলে আমরা মনে করি। মার্কিন শ্রমনীতির ব্যাপারে পর্যবেক্ষক ও বিশেষজ্ঞদের অভিমত হলো, এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ ও ফলপ্রসূ আলোচনা হওয়া জরুরি। অবিলম্বে সরকার সেটা করবে এবং একই সঙ্গে শ্রম অধিকার নিশ্চিত করতে সচেষ্ট হবে বলে আমরা আশা করি।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সবধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সবধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণপিটুনিতে হত্যা মামলায় আরও একজনসহ গ্রেপ্তার ৬

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণপিটুনিতে হত্যা মামলায় আরও একজনসহ গ্রেপ্তার ৬

সাধ্যের বাইরে গিয়ে মা-বাবার চাহিদা পূরণ করা প্রসঙ্গে?

সাধ্যের বাইরে গিয়ে মা-বাবার চাহিদা পূরণ করা প্রসঙ্গে?

আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা প্রথম বিদেশ সফরে যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেন

আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর প্রধান উপদেষ্টা প্রথম বিদেশ সফরে যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেন

ইসলামি দেশগুলোর মধ্যে জ্ঞানীয় বিজ্ঞানে শীর্ষ দুয়ে ইরান

ইসলামি দেশগুলোর মধ্যে জ্ঞানীয় বিজ্ঞানে শীর্ষ দুয়ে ইরান

জাইসের লেন্সের জয়জয়কার, স্মার্টফোনেও দুর্দান্ত

জাইসের লেন্সের জয়জয়কার, স্মার্টফোনেও দুর্দান্ত

সাগর-রুনি হত্যার বিচারের প্রাথমিক স্তর পরিষ্কার করা দরকার : শামসুজ্জামান দুদু

সাগর-রুনি হত্যার বিচারের প্রাথমিক স্তর পরিষ্কার করা দরকার : শামসুজ্জামান দুদু

আন্দোলন সংগ্রামে থাকা নেতাকর্মীদের পিছনে রাখার সুযোগ নেই : আমিনুল হক

আন্দোলন সংগ্রামে থাকা নেতাকর্মীদের পিছনে রাখার সুযোগ নেই : আমিনুল হক

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টার সাথে বিশ্ব ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্টের বৈঠক

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টার সাথে বিশ্ব ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্টের বৈঠক

যশোরে সাবেক এমপি, এসপিসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা

যশোরে সাবেক এমপি, এসপিসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা

এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি স্থানান্তরে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া রিটের আদেশ আগামী রোববার

এস আলম গ্রুপের সম্পত্তি স্থানান্তরে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া রিটের আদেশ আগামী রোববার

গণহত্যাকারী আ.লীগের সঙ্গে আলোচনা নয় : আসিফ নজরুল

গণহত্যাকারী আ.লীগের সঙ্গে আলোচনা নয় : আসিফ নজরুল

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসি’র সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি শুরু

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ডিএনসিসি’র সপ্তাহব্যাপী কর্মসূচি শুরু

প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে নোবিপ্রবি শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একদিনের বেতন প্রদান

প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে নোবিপ্রবি শিক্ষক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একদিনের বেতন প্রদান

সিল্ক রোড উৎসবে ইরানের ‘মেলোডি’

সিল্ক রোড উৎসবে ইরানের ‘মেলোডি’

বেনজির ও আজিজসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের

বেনজির ও আজিজসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের

৬ ব্যাংকের এমডি নিয়োগ বাতিল

৬ ব্যাংকের এমডি নিয়োগ বাতিল

১৪৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এলো সেপ্টেম্বরের ১৭ দিনে

১৪৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এলো সেপ্টেম্বরের ১৭ দিনে

ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী

ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর আমীর আলী চৌধুরীর ইন্তেকাল

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর আমীর আলী চৌধুরীর ইন্তেকাল