‘ইন্ডিয়া আউট’ ক্যাম্পেইন এবং ভারতীয় পণ্যবর্জনের আন্দোলন

Daily Inqilab কামরুল হাসান দর্পণ

০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০৫ এএম

বাংলাদেশে ভারতবিরোধী মনোভাব মুক্তিযুদ্ধের পরপরই দানা বাঁধতে শুরু করে। মুক্তিযুদ্ধে ভারত সহযোগিতা করলেও অনেক মুক্তিযোদ্ধা ভারতের কুমতলব তখনই আঁচ করতে পেরেছিলেন। সে সময় দেশের অনেক জেলার দেয়ালে দেয়ালে ভারতবিরোধী শ্লোগান দেখা যেত। এমনকি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এক প্রশ্নেও তা প্রচ্ছন্নভাবে উঠে এসেছিল। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ইংল্যান্ড হয়ে দেশে ফেরার পথে ভারতের বিমানবন্দরে নেমেছিলেন। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তাঁকে স্বাগত জানিয়েছিলেন এবং সেখানে সংক্ষিপ্ত বৈঠকের এক পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন, বাংলাদেশ থেকে ভারতের সৈন্য কবে সরিয়ে নেয়া হবে? এমন প্রশ্নে ইন্ধিরা গান্ধী বেশ বিব্রত হয়েছিলেন এবং তিনি প্রস্তুতও ছিলেন না। তিনি হয়ত ভাবতে পারেননি, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রথম বৈঠকেই বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে এমন একটি প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে। বঙ্গবন্ধু দূরদর্শিতা এবং যথার্থ উপলব্ধির মাধ্যমেই এ প্রশ্ন করেছিলেন। এর মর্মার্থ হচ্ছে, পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধ করে স্বাধীন হয়েছি, আরেক দেশের সৈন্য দেশে রাখার জন্য নয়। তখন রাজনীতিতে এ স্লোগান উঠেছিল, পি-ি থেকে মুক্ত হয়েছি, দিল্লীর করতলে যাওয়ার জন্য নয়। যে দেশ মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতা করেছিল, সে দেশের বিরুদ্ধে স্বাধীনতার পরপর এমন নেতিবাচক মনোভাব পোষণের নেপথ্যের কারণ সেসময় মুক্তিযোদ্ধা এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ যথাযথ ভাবেই উপলব্ধি করেছিলেন। ভারতের সহায়তার পেছনে তার আধিপত্যবাদী মনোভাব তারা আগেভাগে টের পেয়েছিলেন। তাদের এই ভারতবিরোধিতা যে যৌক্তিক ছিল, তা বিগত দিনগুলোতে দেশটির ক্ষমতাসীনদল দলসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতা ও ব্যক্তির বাংলাদেশবিরোধী বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট হয়।

দুই.
বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে এখন যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি ভারতবিরোধী মনোভাব গড়ে উঠেছে। তাদের মনে এই বিরোধিতা দৃঢ় থেকে দৃঢ় হচ্ছে। এজন্য বাংলাদেশের প্রতি ভারতের আধিপত্যবাদী নীতিই একমাত্র দায়ী। বিশেষ করে হিন্দুত্ববাদী মোদি সরকার ক্ষমতায় আসার পর বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে তার দলের নেতাদের নানা ধরনের কটাক্ষপূর্ণ ও অবমাননাকর বক্তব্য বাংলাদেশের জনগণকে বিক্ষুদ্ধ করে তুলেছে। বিজেপির কেউ কেউ এমন কথাও বলেছেন, ’৭১ সালেই বাংলাদেশ দখল করে নেয়া উচিৎ ছিল। এছাড়া বাংলাদেশ থেকে যেসব নাগরিক ভারতে গিয়েছে, তাদেরকে বিজেপির সভাপতি অমিত শাহ ‘উঁই পোকার সাথে তুলনা করেছেন। তারা নাকি ভারতে উঁই পোকা হয়ে ঢুকেছে। ২০১৬ সালের ১৮ জুলাই বিশ্ব হিন্দু পরিষদের (ভিএইচপি) সাবেক নেতা তোগাড়িয়া এমন কথাও বলেছেন, ভারতীয় সেনাবাহিনীর উচিত বাংলাদেশের একাংশ দখল করে সেখানে ‘অবৈধ অভিবাসীদের’ থাকার বন্দোবস্ত করা। বিগত বছরগুলোতে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে এমন আরও অনেক অবমাননাকর মন্তব্য করা হয়েছে। ভারতের এমন আচরণে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে ক্ষুদ্ধতা সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের জনগণের প্রতি ভারত তার আক্রমণাত্মক মনোভাবের প্রকাশ ঘটাচ্ছে সীমান্তে পাখির মতো গুলি করে বাংলাদশীদের হত্যার মাধ্যমে। পৃথিবীর আর কোনো দেশের সীমান্তে প্রতিবেশী জনগণের প্রতি এমন নির্মম, নিষ্ঠুর ও বর্বর আচরণ দেখা যায় না। এ দৃশ্যও দেখা যায় না, হত্যা করে কাঁটাতারে লাশ ঝুলিয়ে রাখতে। অথচ ভারতের সাথে চীন, পাকিস্তান, নেপাল, মায়ানমারসহ অন্যদেশের সীমান্ত রয়েছে। সেখানে সে এ ধরনের আচরণ করতে পারে না। কেন করতে পারে না, তা বোধকরি জনগণের বুঝতে বাকি নেই। গত ২২ জানুয়ারি বেনাপোলের ধান্যখোলা সীমান্তে বিজিবির এক সদস্যকে বিএসএফ গুলি করে হত্যা করে। তার প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের এক মন্ত্রী যখন এ ঘটনাকে ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ বলে মন্তব্য করেন, তখন বাংলাদেশের জনগণের দুঃখের সীমা থাকে না। রক্ষকই যখন রক্ষা করতে পারে না, তখন তাদের অসহায় হওয়া ছাড়া গতি থাকে না। অসহায় অবস্থার মধ্যে মনে ক্ষোভ সৃষ্টি হওয়াই স্বাভাবিক। তাদের মনের এই ক্ষোভ যে, প্রকাশ্যে তুলে ধরবে, তেমন কোনো প্ল্যাটফর্ম নেই। বাংলাদেশের প্রতি ভারতের আগ্রাসী ও সা¤্রাজ্যবাদী নীতির বিরুদ্ধে দেশের বুদ্ধিজীবী ও সচেতন নাগরিকরা যেন মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে। কাউকে এ নিয়ে কথা বলতে শোনা যায় না। বছরের পর বছর ধরে তাদের এই নীরবতা ভারতের প্রতি কি তাদের আনুগত্য প্রকাশ করছে না? আশার বিষয় হচ্ছে, দেশের সবচেয়ে বড় বিরোধীদল বিএনপি সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের অন্যায্য আচরণের বিরুদ্ধে মুখ খুলছে ও প্রতিবাদ করছে। দলটি গত ২৭ জানুয়ারি এক বিবৃতির মাধ্যমে কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে। যশোরের সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বিজিবি সদস্য নিহত হওয়ার ঘটনা জাতিসংঘের মাধ্যমে তদন্তের দাবি জানিয়েছে। দলটির জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক থেকে এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলা হয়েছে, ভারত বারবার প্রতিশ্রুতি দিলেও সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশিদের হত্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। দিল্লির উগ্রতা আর ঢাকার নীরবতা এসব হত্যাকা-কে আশকারা দিচ্ছে। বিএনপি বলেছে, সীমান্তে এই হত্যাকা- বাংলাদেশের মানুষকে নতজানু রাখার একটি আধিপত্যবাদী বার্তা। বিএসএফ বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকাকে রক্তক্ষয়ী খেলায় পরিণত করেছে। এতদিন সাধারণ বাংলাদেশি নিহত হয়েছে, এখন বিজিবিরও নিরাপত্তা নেই। একটি দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে আরেকটি স্বাধীন দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী হত্যা কোনো সাধারণ ঘটনা নয়। এর সঙ্গে রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন জড়িত। দলটি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, ক্ষমতাসীনদের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে বাংলাদেশকে তাঁবেদার রাষ্ট্র বানানো হয়েছে। ভারত একটি গণতান্ত্রিক দেশ হলেও তাদের নীতিনির্ধারকদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের গভীরতা অর্জিত হয়নি। সে জন্যই বাংলাদেশ সীমান্তে বেআইনি হত্যাকা-ে তারা কোন দায়বোধ করে না। ফেলানীসহ সীমান্তে হত্যার ঘটনায় ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কোনো বিচার বা প্রতিকার করেনি। বিএনপির মতো বৃহৎ ও ব্যাপক জনসমর্থিত দল যখন এ ধরনের প্রতিবাদ করে, তখন দেশের জনগণের মধ্যে যেমন আশার সঞ্চার করে, তেমনি ভারতের আগ্রাসী আচরণের বিরুদ্ধে তাদের ঐক্যবদ্ধ মনোভাবকে দৃঢ় করে। এর মাধ্যমে এটাই প্রতিভাত হয়, বিএনপি দেশের মানুষের ভারতবিরোধী যৌক্তিক মনোভাব ধারণ করতে পেরেছে। অন্যদিকে, বাংলাদেশ সরকার ভারতের একতরফা ও অন্যায্য আচরণ নিয়ে প্রতিবাদ দূরে থাক, কোনো ধরনের বিবৃতি দেয়াও প্রয়োজনবোধ করছে না। সরকারের এ ধরনের আচরণ যে, দেশের সিংহভাগ মানুষের মনোভাবের পরিপন্থী, তাতে সন্দেহ নেই।

তিন.
সরকার ভারতের আগ্রাসী নীতির বিরুদ্ধে কোনো ধরনের প্রতিবাদ না করলেও দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ ইতোমধ্যে প্রতিবাদ করতে শুরু করেছে। তাদের এই প্রতিবাদ নীরব ও সরবÑ দুইভাবেই হচ্ছে। তারা এখন ‘ইন্ডিয়া আউট’ ক্যাম্পেইন চালাচ্ছে। মালদ্বীপের বর্তমান প্রেসিডেন্ট মোহামেদ মুইজ্জু তার নির্বাচনি এজেন্ডায় ‘ইন্ডিয়া আউট’ স্লোগান দিয়ে ব্যাপকভাবে বিজয় লাভ করেন। তার এই স্লোগান উপমহাদেশে এখন ব্যাপক জনপ্রিয়। বছরের পর বছর ভারতের সা¤্রাজ্যবাদী নীতিতে ক্ষুব্ধ বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে এর ঢেউ এসে লেগেছে। তারাও এখন ‘ইন্ডিয়া আউট’ ক্যাম্পেইন চালাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাংলাদেশি ইনফ্লুয়েন্সাররা দেশের জনগণের সামনে বাংলাদেশের প্রতি ভারতের সা¤্রাজ্যবাদী নীতির বিস্তারিত তুলে ধরে ‘ইন্ডিয়া আউট’ ক্যাম্পেইনকে জোড়ালো করে তুলেছে। তারা প্রথমেই বাংলাদেশে ভারতীয় পণ্য বয়কটের ডাক দিয়েছে। বাংলাদেশে ভারতের চাল, ডাল, লবণ, তেল, পেঁয়াজ, মেয়েদের পোশাক, কসমেটিক্স সামগ্রী, শিশুদের খাবার থেকে শুরু করে যতধরনের পণ্য রয়েছে, সেগুলোর ব্র্যান্ডের নাম উল্লেখ করে দেশের মানুষকে বর্জনের আহ্বান জানিয়ে দেশি পণ্য ব্যবহার করার জন্য আহ্বান জানাচ্ছে। তাদের এ আহ্বানে যে দেশের এবং প্রবাসের অসংখ্য মানুষ সাড়া দিয়ে ভারতীয় পণ্য বর্জন শুরু করেছে, তার তথ্য এবং ভিডিও চিত্র তুলে ধরছে। উল্লেখ করা প্রয়োজন, ভারতের চতুর্থ রফতানি বাজার বাংলাদেশ। অন্যদিকে, ভারত থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দ্বিতীয়। অর্থাৎ আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভারতের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বাজার। বাংলাদেশের প্রতি ভারতের আগ্রাসী ও আধিপত্যবাদী নীতির কারণে বাংলাদেশের মানুষ এখন এ বাজারে আঘাত করা শুরু করেছে। তারা বাংলাদেশে উৎপাদিত পণ্য ব্যবহারের প্রতি ঝুঁকেছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, কেউ যদি ভারতের একটি পণ্য বর্জন করে তবে তার একটি পণ্য কম বিক্রি হবে। অসংখ্য মানুষ যারা সেই পণ্য ব্যবহার করে তারা একসঙ্গে বর্জন শুরু করলে, সেই পণ্য বিক্রি যেমন বন্ধ হয়ে যাবে, তেমনি বাংলাদেশে ভারতের বাজারে ধস নামবে। এভাবে নীরবে দেশের মানুষ ভারতীয় পণ্য বর্জন শুরু করলে ভারত তার বিশাল বাণিজ্য হারাবে। বলার অপেক্ষা রাখে না, ভারতের জনসংখ্যা শতকোটির বেশি হলেও তাদের চেয়ে বাংলাদেশের মানুষের ‘পার্চেজ পাওয়ার’ বা ক্রয়ক্ষমতা অনেক বেশি। ফলে ভারতীয় পণ্যবর্জনের ফলে ভারতের বিশাল বাজারে ধস নামবে। এ কথা মনে রাখা প্রয়োজন, সরকারের চেয়ে জনগণের শক্তি অনেক বেশি। সরকার ভারতের প্রতি নতজানু নীতিতে থাকলেও জনগণের প্রতিবাদ ভারতের উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। উল্লেখ্য, ভারত থেকে যেসব পণ্য বাংলাদেশে রফতানি করা হয়, তার সবই বাংলাদেশ উৎপাদন করে। কসমেটিক্স সামগ্রীর মধ্যে তেল, সাবান, ডিটারজেন্ট, শ্যাম্পু, ক্রিম, ফেসওয়াশ, রেজর, ব্লেড, দুধ, বিস্কুট, চিপস, মসলা, ইলেক্ট্রনিক্স সামগ্রী থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব ধরনের পণ্যই বাংলাদেশ উৎপাদন করে। এসব পণ্য উৎপাদক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে, বেক্সিমকো গ্রুপ, স্কয়ার গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, প্রাণ গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, পারটেক্স গ্রুপ, সিটি গ্রুপ, যমুনা গ্রুপ, ইফাদ গ্রুপ, কোহিনুর কেমিক্যালস কোম্পানি, কেয়া কসমেটিক্স, নাবিস্কো, কমান্ডার কোম্পানি, লালবাগ কেমিক্যালসসহ আরও অনেক দেশীয় কোম্পানি, যারা মানসম্মত নিত্যপ্রয়োজনীয় এমন কোনো পণ্যসামগ্রী নেই, যা উৎপাদন করে না। এছাড়া বহুজাতিক কোম্পানির মধ্যে ইউনিলিভার রয়েছে। এ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ নামে পণ্য উৎপাদন করে। পোশাক শিল্পে আমরা বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ উৎপাদনকারি দেশ। ফলে বিদেশ থেকে পোশাক কেনার প্রয়োজন নেই। তবে মেয়েদের পোশাকের ক্ষেত্রে ভারতীয় থ্রিপিস, ল্যাহেঙ্গাসহ অন্য পোশাকের প্রতি মেয়েদের দুর্বলতা রয়েছে। কলকাতা মেয়েদের পোশাকের প্রতিষ্ঠানগুলোর সারা বছরের ব্যবসা বাংলাদেশের ক্রেতাদের উপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে দুই ঈদকে তারা তাদের মূল ব্যবসার সিজন ধরে। এ সময়ের জন্য সারাবছর তারা অপেক্ষায় থাকে। এ সময় প্রচুর বাংলাদেশি কলকাতায় শপিংয়ে যায়। অথচ মেয়েদের পোশাকের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে অনেক নামী-দামী দেশি ব্র্যান্ডের শাড়ি ও বুটিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ফলে ভারতীয় পণ্য কেনার প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন শুধু ভারতের আগ্রাসী নীতির প্রতিবাদে দেশপ্রেম ও মানসিকতার পরিবর্তন। যে ভারত আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে উপেক্ষা করে আধিপত্যবাদী ও খবরদারি মনোভাব দেখিয়ে, প্রতিনিয়ত অপমানিত করে এবং আমাদের গণতন্ত্রের প্রতি কোনো শ্রদ্ধা পোষণ করে না, সেই ভারতের প্রতি আমাদের কি কোনো সম্মান বা শ্রদ্ধা থাকা উচিৎ? কোনো দেশপ্রেমিক বাংলাদেশি কি তা করতে পারে?

চার.
বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের মধ্যে ভারতবিরোধী যে ‘ইন্ডিয়া আউট’ মনোভাব গড়ে উঠছে এবং এর অংশ হিসেবে ভারতীয় পণ্য বয়কট ক্যাম্পেইন চলছে, তা বাংলাদেশের পণ্য উৎপাদনকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সামনে ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি করেছে। এ সুযোগ তাদের হাতছাড়া করা উচিৎ হবে না। দেশের যে বিশাল বাজার ভারতীয় পণ্য দখল করে আছে, তা তাদেরকে উচ্ছেদ করতে হবে। এটা তাদের দেশেপ্রেমের ঈমানী দায়িত্ব। এজন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে মানসম্মত পণ্য উৎপাদন করে যেমন দেশের মানুষের দ্রুত আস্থা অর্জন করতে হবে, তেমনি রফতানিযোগ্য করে তুলতে হবে। রফতানিযোগ্য পণ্যের মান যেমন থাকে, একই মানের পণ্য দেশের বাজারে সরবরাহ করতে হবে। একই পণ্যের দুইরকম মান করা যাবে না। এতে লাভ কম হলেও দেশের মানুষের সেবায় তা করতে হবে। ‘দেশি পণ্য, কিনে হও ধন্য’ বিস্মৃত হয়ে যাওয়া এই শ্লোগানকে নতুন করে সামনে আনতে হবে এবং একে আন্দোলনে রূপ দিতে হবে। দাম দুই টাকা বেশি দিয়ে হলেও আমরা দেশের পণ্য কিনব, গর্বিত হবো, এ মনোভাব ধারণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, সরকার যদি জনগণের নীতিবিরোধী অবস্থানে থেকে তাঁবেদারি নীতি অবলম্বন করে, তবে জনগণকেই তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। জনগণের প্রতিবাদের মুখে বিশ্বের কোনো আগ্রাসী শক্তিই টিকে থাকতে পারেনি এবং পারবেও না। ভারতীয় পণ্যবর্জনের যে শোর উঠেছে তাকে জোরদার করে বাংলাদেশ থেকে ভারতের আগ্রাসী নীতি আউট করে দিতে হবে। মালদ্বীপের মতো ছোট আয়তনের এবং কম জনসংখ্যার দেশ যদি ইন্ডিয়াকে আউট করে দিতে পারে, তবে আমাদের বিশাল জনসংখ্যার সমৃদ্ধ দেশ কেন পারবে না?

[email protected]


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

দুই ঘন্টায় ভোট প্রদানের হার ১.৪৭

দুই ঘন্টায় ভোট প্রদানের হার ১.৪৭

৬ষ্ঠ প্রথম ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে হিলি স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ

৬ষ্ঠ প্রথম ধাপে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন উপলক্ষে হিলি স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ

হাকিমপুরে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে ভোটাররা ছুটছেন ভোট কেন্দ্রে

হাকিমপুরে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে ভোটাররা ছুটছেন ভোট কেন্দ্রে

কক্সবাজারের ৩ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটগ্রহন চলছে: কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি কম

কক্সবাজারের ৩ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটগ্রহন চলছে: কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি কম

ফুলপুরে কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পৌঁছে ফেরার পথে বাসের সঙ্গে সংঘর্ষে ইউএনও আহত

ফুলপুরে কেন্দ্রে ব্যালট পেপার পৌঁছে ফেরার পথে বাসের সঙ্গে সংঘর্ষে ইউএনও আহত

টাঙ্গাইলে ধনবাড়ী ও মধুপুর উপজেলায় ভোট গ্রহণ চলছে

টাঙ্গাইলে ধনবাড়ী ও মধুপুর উপজেলায় ভোট গ্রহণ চলছে

মাগুরায় উপজেলা নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শুরু

মাগুরায় উপজেলা নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শুরু

রাগ হার্ট অ্যাটাকের কারণ, উঠে এল গবেষণায়

রাগ হার্ট অ্যাটাকের কারণ, উঠে এল গবেষণায়

নর্দার্ন হোয়াইট গন্ডারদের টিকিয়ে রাখার চেষ্টা

নর্দার্ন হোয়াইট গন্ডারদের টিকিয়ে রাখার চেষ্টা

পঞ্চগড়ে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশী দুই যুবক নিহত

পঞ্চগড়ে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশী দুই যুবক নিহত

বৈরী আবহাওয়া বৃষ্টির মধ্যে নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় ভোট চলছে

বৈরী আবহাওয়া বৃষ্টির মধ্যে নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় ভোট চলছে

ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে ইউরোপে জিনপিং, কোন অঙ্ক কষছে বেইজিং?

ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে ইউরোপে জিনপিং, কোন অঙ্ক কষছে বেইজিং?

ভোট কিনতে গিয়ে এমপিপুত্রের শ্বশুরসহ আটক ৪

ভোট কিনতে গিয়ে এমপিপুত্রের শ্বশুরসহ আটক ৪

নিখোঁজ রিধীর লাশ উদ্ধার

নিখোঁজ রিধীর লাশ উদ্ধার

বাজার থেকে সব করোনা টিকা তুলে নিচ্ছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা

বাজার থেকে সব করোনা টিকা তুলে নিচ্ছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা

দক্ষিণ আফ্রিকায় বহুতল ভবনধস, এখনো নিখোঁজ ৪৮

দক্ষিণ আফ্রিকায় বহুতল ভবনধস, এখনো নিখোঁজ ৪৮

আজ হজ কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

আজ হজ কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী

১৩৯ উপজেলায় ভোট চলছে

১৩৯ উপজেলায় ভোট চলছে

ফেনীতে ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে সেই টিকটকার তরুণীর ধর্ষণ মামলা

ফেনীতে ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে সেই টিকটকার তরুণীর ধর্ষণ মামলা

চিকিৎসার খরচ সামলাতে না পেরে হাসপাতালের মধ্যেই স্ত্রীকে হত্যা মার্কিন স্বামীর

চিকিৎসার খরচ সামলাতে না পেরে হাসপাতালের মধ্যেই স্ত্রীকে হত্যা মার্কিন স্বামীর