সড়ক ব্যবহারে শৃঙ্খলা ও সচেতনতা জরুরি
২০ মার্চ ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ২০ মার্চ ২০২৪, ১২:০৪ এএম
সড়ক-মহাসড়ক তথা যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নে প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করছে সরকার। প্রধান জাতীয় মহাসড়কগুলো ইতিমধ্যে চারলেন, ছয় লেন ইত্যাদিতে উন্নীত করা হয়েছে। এরফলে সড়ক পরিবহনে গতিশীলতা বৃদ্ধির পাশাপাশি যানজট কমে আসার কথা থাকলেও বাস্তবে তার তেমন সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। এর প্রধান কারণ, যাত্রীদের অসচেতনতা, গণপরিবহন চালক ও হেল্পারদের স্বেচ্ছাচারিতা এবং গাড়ির স্টপেজ, ফুট ওভারব্রিজ ও রোড ডিভাইডার স্থাপন ও যাত্রী পারাপারে বাস্তব পরিকল্পনায় ত্রুটি। রাজধানী ঢাকায় ফ্লাইওভার নির্মাণে ত্রুটিপূর্ণ নকশা এবং রক্ষণাবেক্ষণ ও নজরদারিতে শৈথিল্যের কারণে যাত্রীদের নানাবিধ ভোগান্তি ও নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন হতে হয়। সম্প্রতি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যাত্রাবাড়ি ফ্লাইওভারের আগে রোড ডিভাইডার পার হতে এক স্থানে পথচারিদের মই ব্যবহারের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। দূরপাল্লার যাত্রীদের নামিয়ে দেয়ার পর মাঝখানের উঁচু ডিভাইডার পার হতে মই দিয়ে সহযোগিতা করার বিনিময়ে জনৈক যুবক যাত্রীদের কাছ থেকে ৫ টাকা করে অর্থ আদায় করছিল। নিরুপায় যাত্রীদের সহায়তার বিনিময়ে অর্থ উত্তোলনের এই পন্থা নিয়ে যাত্রীসাধারণের কোনো অভিযোগ না থাকলেও পুলিশ সেই যুবককে আটক করে চাঁদাবাজির মামলা দিয়ে জেল হাজতে পাঠিয়েছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক মানুষের মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।
ফ্লাইওভার ও সড়ক বিভাজক স্থাপনের মধ্য দিয়ে সড়ক যোগাযোগ অবকাঠামোতে যে পরিবর্তন সূচিত হয়েছে, গণপরিবহনের চালক-হেল্পাররা তার সাথে সঠিকভাবে তাল মিলাতে পারছে না। তারা আগের মতই যত্রতত্র গাড়ি থামিয়ে এবং যাত্রি ওঠানামা করিয়ে নানাবিধ বিড়ম্বনা সৃষ্টি করছে। চার লেনের রাস্তায় দুইপাশে লোকাল সার্ভিসের বাসগুলো যেখানে সেখানে থামার অবকাশ থাকলেও মাঝখানের দুইটি লেন দ্রুতগামী সার্ভিসের জন্য নির্ধারিত। মাঝখানের লেনে যাত্রী নামানো হলে তাদেরকে উঁচু ডিভাইডার ডিঙ্গাতে হয়। বুক সমান উঁচু ডিভাইডার পার হওয়া সবার পক্ষে সম্ভব নয়। ফলে বাধ্য হয়ে বিপদসঙ্কুল পন্থায় অনেক ঝুঁকি নিয়ে এসব যাত্রীদের রাস্তা পার হতে হয়। তাদের সুবিধা দিতে মই দিয়ে ডিভাইডার পার হতে সহায়তা করে যুবকটি। পুলিশের ভাষায়, সে বেআইনীভাবে মহাসড়কে রাস্তা পারাপারের নামে অর্থ আদায় করছিল। এজন্য তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের মাঝখানের লেনে দূরপাল্লার যাত্রী নামানো অব্যাহত রয়েছে। যাত্রীবান্ধব কোনো বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় যাত্রীরা একইভাবে অনেক কষ্ট-দুর্ভোগ সয়ে এবং অনেকে অন্যের সহযোগিতায় উঁচু ডিভাইডার পার হচ্ছে।
মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মত আধুনিক যোগাযোগ পরিষেবা বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকার গণপরিবহন ব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। এসব আধুনিক স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা প্রবর্তনের সাথে যাত্রী সাধারণ এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যে ধরনের সচেতনতা ও সমন্বয় থাকার কথা তার কিছুটা ঘাটতি পরিলক্ষিত হচ্ছে। গনপরিবহনের চালক-হেল্পাররা যাত্রীর নিরাপত্তা ও কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে যত্রতত্র যাত্রি ওঠা-নামা করানোর কারণে যেমন সড়কে অনভিপ্রেত ঘটনা ঘটছে, তেমনি রাস্তা পারাপারে জেব্রা ক্রসিং, ট্রাফিক সিগন্যালিং, ফুট ওভারব্রিজ ব্যবহারে যাত্রী ও পথচারিদের অনীহা ও অসচেতনতা সড়কে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরী করছে। এমআরটি মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারের মত নাগরিক জীবনের নতুন অনুসঙ্গ, গণপরিবহনে নাগরিক শৃঙ্খলা, নিয়মানুবর্তিতা, যত্রতত্র যেখানে সেখানে ময়লা না ফেলা, ফুটওভারব্রিজ, টানেলপথ ব্যবহারের ক্ষেত্রে ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ নিতে হবে। দেখা যায়, ফুটওভার ব্রিজ থাকলেও পথচারিরা যথতত্রভাবে সড়ক পার হয়। কয়েক বছর আগে বাংলামোটরে পথচারীদের যত্রতত্রভাবে সড়ক পার হওয়া নিয়ে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সচেতনতা সৃষ্টি ও জরিমানা করা হয়। এতে পথচারীরা ওভারব্রিজ ব্যবহার করতে বাধ্য হয়। তবে কিছুদিন পর সেই পুরনো অবস্থায় ফিরে যায়। সড়ক পারাপারে পথচারীদের সচেতন ও শৃঙ্খল করা জরুরি। এর সাথে সভ্যতার বিষয়টিও জড়িত। ফলে পথচারীরা যাতে যেমন খুশি তেমন সড়ক পারাপার করতে না পারে, নির্দিষ্ট স্থান দিয়ে পার হয়, এ ব্যাপারে তাদের সচেতন করতে হবে। এ ব্যাপারে ট্রাফিক পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে মূল ভূমিকা পালন করতে হবে। এছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সড়কের শৃঙ্খলা নিয়ে শিক্ষার্থীদের সচেতনতামূলক শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। গণপরিবহন চালক-কর্মীসহ সব ড্রাইভারদের বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। রাস্তা ও ডিভাইডার পার হওয়ার সুব্যবস্থা না থাকলে সেখানে যাত্রী ওঠানামা করানো কঠোরভাবে বন্ধ করতে হবে। লোকাল লেনের পরিবহন ও যাত্রীদেরকেও ন্যুনতম শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতা অবলম্বনে বাধ্য করতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
কুষ্টিয়ায় অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় পুলিশ কর্মকর্তা নিহত
রাজবাড়ীতে দুই দিনব্যাপী ক্যারিয়ার ফেস্ট
ইউরোপ ত্রিমুখি অস্তিত্বের ঝুঁকির সম্মুখীন: ম্যাখোঁর হুঁশিয়ারি
যুক্তরাষ্ট্রে গৃহযুদ্ধের সম্ভাবনা দেখছে ৪১ শতাংশ মার্কিন ভোটার
যশোরের শার্শা উপজেলার নাভারন সিটি হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় ব্রেস্ট টিউমার রোগীর মৃত্যু
গাজীপুরের দুটি ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনায় ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন
এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে
৭ মাসে গাজায় নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা ১৪০ জন ছাড়িয়েছে
হবিগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত একই পরিবারের চারজনের পটুয়াখালীতে দাফন সম্পন্ন
আচমকাই খাদে পড়ল যাত্রীবাহী বাস, পাকিস্তানে নিহত ২০
বিক্ষোভে অংশ নেয়ায় কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত বাংলাদেশি ছাত্রী
ভারতকে ‘অপমান’ বাইডেনের, যা বলল হোয়াইট হাউজ
নিয়মভঙ্গের অভিযোগে আদানির ৬ সংস্থাকে শোকজ নোটিস
কষ্টের ‘স্মৃতি’ ভুলে রায়বরেলিতে রাহুল, আমেঠিতে নতুন মুখ কংগ্রেসের
পশ্চিমবঙ্গেও ধর্মীয় মেরুকরণ উস্কে দেয়ার চেষ্টা মোদির
গাজীপুরে উপজেলা নির্বাচন বর্জনের আহবান জানিয়ে বিএনপি'র লিফলেট বিতরণ
দুই ভারতীয় গুপ্তচরকে বহিষ্কারের প্রসঙ্গে যা জানাল অস্ট্রেলিয়া
শিক্ষার্থী বিক্ষোভ নিয়ে অবশেষে মুখ খুললেন বাইডেন
লন্ডনের মেয়র পদে হ্যাটট্রিক জয়ের পথে সাদিক খান
গাজীপুরে যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেনের সংঘর্ষঃ চালকসহ আহত ৪