ভারতীয় পণ্য বর্জনের মধ্য দিয়ে হোক ঈদের শপিং

Daily Inqilab কামরুল হাসান দর্পণ

২২ মার্চ ২০২৪, ১২:১৮ এএম | আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৪, ১২:১৮ এএম

সাধারণত নি¤œবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা রোজার শুরুর দিকেই ঈদের শপিং বা কেনাকাটা করে ফেলে। কারণ, যতই রোজা এগুতে থাকে, জিনিসপত্রের দামও তত বাড়তে থাকে। ঈদের শপিং বলতে তারা স্ত্রী-সন্তান, বাবা-মা, ভাই-বোনসহ নিকটাত্মীয় কিংবা পরিচিতজনদের জন্য পোশাক-আশাক ও অন্যান্য উপকরণ কেনাকাটা করেন। যারা রেডিমেড পোশাক কেনেন, তাদের জন্য দর্জির কাছে যাওয়া এবং তার সময় পাওয়ার ঝামেলা থাকে না। যারা আনস্টিচ থ্রিপিসসহ অন্যান্য পোশাক নিতে চায়, তাদের রোজার আগে থেকেই দর্জির দোকানে বুকিং দিতে হয়। এই সময় দর্জিদের ব্যস্ততা সারা বছরের চেয়ে কয়েকগুণ বেড়ে যায়। তাদের দম ফেলার সময় থাকে না। অনেকে মজুরি বেশি দিয়েও পছন্দের দর্জির শিডিউল পায় না। অনেক দর্জির দোকান ১৫ রোজায় অর্ডার নেয়া বন্ধ করে দেয়। কারণ, তাদের ব্যস্ততা এতো থাকে যে, সামর্থ্যরে মধ্যে অর্ডার নিয়ে পোশাক তৈরি করে ডেলিভারি দেয়া পর্যন্ত অনেক সময় লাগে। ফলে অতিরিক্ত অর্ডার নিয়ে সময়মতো ডেলিভারি দিতে না পারার কারণে অর্ডার নেয়া বন্ধ করে দেয়। রোজার প্রথম দশ দিন শেষ হয়েছে। সাধারণত দশ রোজার পর থেকে মানুষের শপিং করার হার বাড়তে থাকে। মার্কেট ও শপিং সেন্টারগুলোতে ভিড় বাড়তে থাকে। মার্কেটগুলোও রাত দশটা পর্যন্ত খোলা থাকে। ঈদ যত কাছে আসতে থাকে, দোকান খোলা রাখার সময়ও গভীর রাত পর্যন্ত যেতে থাকে। এমনকি সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও মার্কেট খোলা থাকে। ফুটপাত থেকে সুপার মার্কেট সব জায়গায়ই মানুষের ভীড় থাকে। একজন দিন মজুরও বছরের একটি দিন সন্তানকে নতুন একটি জামা কিনে দিতে চায়। তবে এবার অনেকের পক্ষে ঈদে সন্তানদের নতুন জামাকাপড় দেয়া সম্ভব হবে কিনা, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। দিলেও একটি দিলে আরেকটি দিতে পারবে না। ঈদে সন্তানকে নতুন জামা দিতে না পারা বাবার জন্য কতটা কষ্টের তা সেই বাবা ছাড়া আর কেউ জানে না। যাদের একটু সামর্থ্য আছে, আয় কমে যাওয়ায় হয়ত তারা আগে সন্তানকে যে মানের ড্রেস দিত, হয়ত সেই মানের ড্রেস দেয়া তাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। এর কারণ হচ্ছে, সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এতটাই শোচনীয় যে, ঈদের নতুন পোশাক নয়, তাদের নিয়মিত দুইবেলা খাবার জোগান নিয়ে এখন নিরন্তর ভাবতে হচ্ছে।

দুই.
আমাদের ভাগ্য ভাল যে, খেজুর ভারত থেকে আমদানি করতে হয় না। যদি ভারত থেকে খেজুর আমদানি করা হতো, তাহলে বাংলাদেশের মুসলমানদের কি অবস্থা হতো, তা অনুমান করতে কষ্ট হয় না। এক পেঁয়াজ নিয়ে ভারত কি তেলেসমাতি কা-ই না ঘটিয়ে যাচ্ছে। দুই দিন পরপর পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ ঘোষণা করে। আবার নিজেই চালু করে। বছর কয়েক আগে বেশ উঁচু গলায় বলেছিল, বাংলাদেশে গরু রফতানি বন্ধ করে দেবে। দিয়েছিলও। ভাবখানা এমন ছিল, ভারতের গরু ছাড়া বাংলাদেশের কোরবানি বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা পানিতে পড়ে যাব। গরুর জন্য হাহাকার করব। বাস্তবে দেখা গেছে, তা হিতে বিপরীত হয়ে গেছে। আমরা দেশি গরু দিয়ে কোরবানি দিতে পেরেছি। দেশের খামারিরা উৎপাদন এমনই বাড়িয়ে দিয়েছে যে, কোরবানির চাহিদা পূরণ করেও গরু উদ্বৃত্ত থেকে গেছে। অনেকে হাটে গরু এনে বিক্রি করতে না পেরে বাড়ি নিয়ে গেছে। এ চিত্র এখন প্রতি কোরবানির ঈদে নিয়মিত হয়ে পড়েছে। এর ফলে যে কাজটি হয়েছে, তা হচ্ছে, ভারত থেকে গরু আমদানি করতে আমাদের যে অর্থ চলে যেত, তা দেশে থেকে যাচ্ছে। খামারিরা উপকৃত হয়েছে এবং গরু উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে গেছে। এতে ভারতের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। সে কোথায় আমাদের টাইট দেয়ার জন্য গরু রফতানি বন্ধ করেছে, উল্টো দেখছে, আমরাই গরু উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে গেছি। আমাদের দেশের মানুষ এখন ভারতীয় গরুর চেয়ে দেশি গরুতে কোরবানি দিতে বেশি পছন্দ করে। দেশি গরুর গোশত সবার কাছে প্রিয়। এই যে ভারত দুই দিন পরপর পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয়, তাতে আমাদের কোনো ক্ষতি নেই বরং লাভ। ইতোমধ্যে আমাদের চাষীরা ভালো জাতের বড় বড় লাল পেঁয়াজ উৎপাদন শুরু করেছে। উৎপাদনও বাড়িয়ে দিয়েছে। দেখা যাবে, এ মৌসুম থেকেই ভারতীয় পেঁয়াজের উপর থেকে নির্ভরশীলতা অনেকাংশে কমে যাবে। দেশি গরুর মতো দেশি পেঁয়াজেই আমাদের চাহিদা মিটে যাবে। আর ভারতীয় মিষ্টি পেঁয়াজের চেয়ে দেশিয় ঝাঁজের পেঁয়াজের চাহিদা আমাদের দেশে সবসময়ই বেশি। আশা করা যায়, এ মৌসুম থেকেই পেঁয়াজের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের বছরে পেঁয়াজের চাহিদা গড়ে ২৮ লাখ টন বা তার কিছু বেশি। এখন এই চাহিদা পূরণ করেও উদ্বৃত্ত থেকে যাচ্ছে। গত বছর উৎপাদিত হয়েছিল ৩৩ লাখ টন। এবার টার্গেট করা হয়েছে, ৩৬.৭৩ লাখ টন। অর্থাৎ দেশের মানুষের চাহিদা পূরণ করেও পেঁয়াজ উদ্বৃত্ত থেকে যাচ্ছে। তাহলে প্রশ্ন আসতে পারে, ভারত থেকে কেন, পেঁয়াজ আমদানি করতে হচ্ছে? এটা আসলে এ দেশের কিছু ভারতীয় দালাল ব্যবসায়ী কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে পেঁয়াজ আমদানির ছুঁতো দেখায়। সরকারও তাদের সাথে তাল মিলিয়ে ভারতকে বাণিজ্য সুবিধা দিয়ে খুশি করতে আমদানির অনুমতি দেয়। ভারততোষণ দেখায়। অর্থাৎ প্রয়োজন না হলেও শুধু ভারতকে খুশি রাখার জন্য পেঁয়াজের ক্রাইসিস সৃষ্টি এবং আমদানির পথ খোলা হয়। আমাদের প্রত্যেকের উচিৎ ভারতীয় পেঁয়াজ বর্জন করা। একটু বেশি দাম হলেও দেশি পেঁয়াজ ব্যবহার করা। এতে দেশের টাকা দেশে থেকে যাবে। ভারতও পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দিয়ে কৃত্রিম আতঙ্ক সৃষ্টি করতে পারবে না। সরকারেরও তোয়াজের পথ বন্ধ হবে। আমাদের দেশে এখনও বহু মানুষ পেঁয়াজ ছাড়াই রান্না করে খায়। এমন মানুষও আছে যারা তেল ছাড়া সামান্য লবন দিয়ে শুধু শাক-সবজি সিদ্ধ করে খায়। এ সিদ্ধ প্রক্রিয়া কিন্তু এখন বড়লোকদের পছন্দের খাবারে পরিণত হয়েছে। ফলে পেঁয়াজ ছাড়াও খাবার খাওয়া যায়। আবার পেঁয়াজ কম ব্যবহার করেও রান্না করা যায়। এখন জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ায় অসংখ্য মানুষ আগে যতটুকু খেত, এখন তা অর্ধেক কিংবা তার চেয়ে বেশি কমিয়ে দিয়েছে। আগে যতটুকু পেঁয়াজ কিনত, এখন অর্ধেক বা চার ভাগের একভাগ কেনে। এভাবে তো চলছে। দেশের পেঁয়াজ যখন বাজারে সয়লাব হয়ে যাবে, তখন এ সমস্যা থাকবে না। ভারতীয় মিষ্টি পেঁয়াজেরও প্রয়োজন পড়বে না। তাছাড়া, ভারতীয় পেঁয়াজের চেয়ে দেশি পেঁয়াজের স্বাদ অনেক ভাল। ইতোমধ্যে ভারতীয় পেঁয়াজ বর্জনের কারণে এর মূল্যছাড়ও দেয়া হচ্ছে। এর কারণ হচ্ছে, যারা পেঁয়াজ বর্জন করেছে, তারা জেনেবুঝে করেছে এবং এই পেঁয়াজ তারা আর কিনবে না। দেশি পেঁয়াজ কম হলেও কিনে খাবে। এ মানসিকতা এখন মানুষের মধ্যে গড়ে উঠছে। ফলে ভারতীয় পেঁয়াজ দোকানে পঁচে যাওয়া ছাড়া গতি থাকবে না। শুধু পেঁয়াজই নয় ভারতীয় নিত্যব্যবহার্য পণ্যবর্জনের যে ক্যাম্পেইন শুরু হয়েছে, তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটা নিয়ে দেশের ভারতীয় কিছু দালালের গা জ্বালা শুরু হয়েছে। তারা নানাভাবে ইনিয়ে-বিনিয়ে বলতে চেষ্টা করে ভারতীয় পণ্যছাড়া আমাদের চলা মুশকিল। বিষয়টি এমন যেন, ভারতীয় পণ্যের বিকল্প নেই। অথচ নিত্যব্যবহার্য প্রত্যেকটি ভারতীয় পণ্যের বিকল্প আমাদের দেশে রয়েছে এবং তা উৎপাদিত হয়। ওষুধ থেকে শুরু করে টুথপেস্ট, নারিকেল তেল, ভোজ্যতেল, মশুরির ডাল, সাবানসহ সবকিছু আমাদের দেশে উৎপাদিত হয়। তাছাড়া ভারত ছাড়া অন্যদেশের উন্নত মানের পণ্যও পাওয়া যায়। ভারতের পণ্যই যে উন্নত মানের তা ভাবার কোনো কারণ নেই। তাদেরও পণ্যের মান উন্নতকরণে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। যেমন ত্বক ফর্সাকারি একই ব্র্যান্ডের ক্রিম ভারতে যেটি উৎপাদিত হয়, সেটির চেয়ে দুবাই বা অন্যদেশে উৎপাদিত ক্রিমের মান অনেক ভাল। ফলে ক্রেতারা দুবাই, ইউকে, মালয়েশিয়া বা থাইল্যান্ডে উৎপাদিত ক্রিমই কিনে থাকে। আবার আমাদের দেশেও এখন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অত্যন্ত উন্নত মানের প্রসাধন সামগ্রী উৎপাদন করছে। ভারতীয় পণ্য বাংলাদেশে সয়লাব করে দিয়ে এবং বিজ্ঞাপনের বাহারের মাধ্যমে আমাদের দেশের মানুষের মনকে সেগুলোর প্রতি আকৃষ্ট করে দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেয়া হয়েছে। এটাকে সাইকোলজিক্যাল ট্রিটমেন্ট বলা হয়ে থাকে। আর আমাদের দেশের পণ্য ভাল নয়, এমন একটি প্রচারণা বহু আগে থেকেই রয়েছে। অথচ আমাদের দেশীয় পণ্য যে কতটা মানসম্মত ও উন্নত হয়ে গেছে, তা যারা ব্যবহার করছে, তারা জানে। এসব পণ্য যদি না চলত, তাহলে এগুলোর কারখানাই বন্ধ হয়ে যেত। শুধু প্রচারণার অভাব ও মানসিকতার কারণে দেশি পণ্য পিছিয়ে রয়েছে। তবে এবার যেহেতু সাধারণ মানুষের মধ্যে ভারতীয় পণ্যবর্জনের মনোভাব দৃঢ় হয়ে উঠেছে, তাতে দেশের পণ্যের যেমন ব্যবহার ও প্রসার ঘটবে এবং দেশের টাকা দেশে থেকে যাবে, তেমনি ভারতীয় পণ্যও এদেশ থেকে আউট হয়ে যাবে।

তিন.
নিবন্ধের শুরুতেই ঈদের শপিংয়ের কথা বলা হয়েছে। এটা বলার কারণ হচ্ছে, ঈদের শপিংয়ের বিষয় এলেই আমাদের একশ্রেণীর মানুষের মধ্যে ভারতীয় থ্রিপিস, শাড়ি, লেহেঙ্গা ইত্যাদিসহ নানা পণ্যের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠে। অনেকে শপিং করতে কলকাতা চলে যায়। লাখ লাখ টাকা খরচ করে আসে। এক হিসেবে দেখা গেছে, প্রতি ঈদে বাংলাদেশে থেকে শুধু কলকাতায় শপিংয়ের জন্য গড়ে দেড় লাখ মানুষ যায়। ঈদের সময় ভারতীয় হাইকমিশনও বেশি বেশি ভিসা ইস্যু করে। কলকাতার এক নিউ মার্কেটেই প্রতিদিন প্রায় ২৫ হাজার বাংলাদেশি শপিং করে। যে দেড় লাখ মানুষ ঈদে শপিংয়ে যায়, তারা প্রত্যেকে গড়ে মিনিমাম ১ হাজার ডলার খরচ করে। এ হিসেবে, দেড় লাখ মানুষ কলকাতায় ঈদ শপিং করে গড়ে দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি। অনেকে ৫ হাজার ডলারের বেশি শপিং করে। এ হিসেবে দেখা যায়, এক ঈদে বাংলাদেশের মানুষ কলকাতায় গিয়ে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার শপিং করে দেশের টাকা ভারতে দিয়ে আসে। অথচ এ টাকা আমাদের দেশের পোশাক কিনে তারা দেশে রেখে দিতে পারে। কলকাতার দোকানদাররাও সারাবছর ধরে দুই ঈদে বাংলাদেশের মানুষের অপেক্ষায় বসে থাকে। তাদের মূল ব্যবসা বাংলাদেশের ক্রেতাদের নিয়ে। কলকাতার ক্রেতারা কিন্তু তাদের মূল ক্রেতা নয়। বাংলাদেশ থেকে যারা কলকাতায় শপিং করতে যায়, তাদের ধারণা এমন যে, কলকাতার থ্রি পিস, লেহেঙ্গা, শাড়ি বিশ্বসেরা। এটা তাদের দীর্ঘদিনের অভ্যাসের কারণে হয়েছে। তারা হয়ত খোঁজই রাখেন না, বাংলাদেশ থ্রিপিস, শাড়ি এমনকি লেহেঙ্গার দিক থেকেও অনেক উন্নত হয়ে গেছে। মেয়েদের যেকোনো পোশাকের ক্ষেত্রে ভারতকে ছাড়িয়ে গেছে। অনেকে মনে করে, কলকাতার চেয়ে দেশের পোশাকের দাম বেশি। তাদের এ কথায় কিছুটা যুক্তি থাকলেও এ হিসাটি করতে হবে যে, কলকাতায় যাওয়া-আসা এবং থাকা-খাওয়া বাবদ যে খরচ হয়, তার হিসাব করলে দেশের পোশাকের দাম কি খুব বেশি? বেশি নয়। অথচ দেশে থেকে যাওয়া-আসার ঝক্কির মুখে না পড়ে আরামে যখন খুশি তখন মার্কেটে বা শপিং সেন্টারে গিয়ে ভারতের পোশাকের চেয়ে ভাল পোশাকটি কিনতে পারছে। আমাদের দেশের ট্রেন্ডি পোশাক এখন ভারতের চেয়ে অনেক অনেক বেশি এগিয়ে গিয়েছে। ঈদের মৌসুম এবং আবহাওয়া বিবেচনা করে আরামদায়ক ও আধুনিক পোশাক বুটিকশপ থেকে শুরু করে বড় বড় চেইনশপগুলো তৈরি ও উপস্থাপন করছে। অনেকে দুবাই, থাইল্যান্ড, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, ইউকে, ইতালি থেকে ব্র্যান্ডের পোশাক আমদানি করে। এসব কেনার জন্য ভারতে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে আমাদের দেশের পোশাক শিল্প যে এই উপমহাদেশের চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে গিয়েছে, তাতে সন্দেহ নেই। যারা ঈদ মানেই ভারত বা কলকাতা থেকে শপিং করতে হবে, এমন মনস্থির করে থাকেন, তারা যদি আমাদের দেশের পোশাকের আউটলেটগুলোতে একবার যান, তাহলে তাদের দৃষ্টিভঙ্গিই পরিবর্তন হয়ে যাবে। অবাক বিস্ময়ে এ চিন্তা করতে বাধ্য হবে, আমাদের দেশেও উন্নত ও বিশ্বসেরা পোশাক উৎপাদিত হয়। আশি-নব্বই দশকের দিকে ভারতীয় শাড়ির প্রতি আমাদের দেশের অনেক মহিলাদের দুর্বলতা ছিল। এখন আমাদের দেশের শাড়ির প্রতিই ভারতীয় মহিলাদের দুর্বলতা সবচেয়ে বেশি। ঢাকাই জামদানি, রাজশাহী সিল্ক, রূপগঞ্জের তাঁতের শাড়ি, টাঙ্গাইলের শাড়ি ইত্যাদি ঐতিহ্যবাহী শাড়ির পাশাপাশি এখন আধুনিক অনেক শাড়ি আমাদের দেশে তৈরি হচ্ছে। ফলে ভারতের শাড়ি কেনার কোনো প্রয়োজনই নেই। প্রয়োজন শুধু আমাদের দেশের প্রতি মায়া, দেশপ্রেম এবং দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। ভারত তার প্রতিবেশি দেশগুলোকে তার দেশে বাজার বানাতে দেয় না। যতটুকু প্রয়োজন ঠিক ততটুকুই আমদানি করে। অন্যদিকে, আমাদের দেশকে সে পুরোপুরি তার বাজার বানিয়ে ফেলেছে। আমাদের পণ্য তার দেশে রফতানি তার তুলনায় অর্ধেক। যে ভারত আমাদেরকে ব্যবসা-বাণিজ্য, রাজনীতি, অর্থনীতি, তার সব স্বার্থ হাসিল করে নেয়া, বিনিময়ে আমাদের কিছুই না দেয়া এবং গণতন্ত্রের সংকোচনের মাধ্যমে আমাদেরকে নতজানু করে রেখেছে, সেই ভারতকে আমরা কেন বন্ধু ভাবব? কেন তার স্বার্থ রক্ষায় তার দেশের পণ্য কিনে আমাদের পণ্যকে উপেক্ষা করব?

চার.
আমাদের দেশের প্রতি ভারতের যে তাচ্ছিল্যপূর্ণ এবং তার উপর নির্ভরশীল দেশের মতো আচরণ করে, আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে কটাক্ষ করে, সেই দেশের প্রতি কোনো দেশপ্রেমিক বাংলাদেশীর শ্রদ্ধা থাকতে পারে না। আমাদের সরকার নতজানু হওয়ায় বাংলাদেশের প্রতি ভারতের যে অন্যায় আচরণ, তার প্রতিকার পাওয়া যাবে না। যতদিন ক্ষমতায় থাকবে, ততদিন ভারতকে তোষণ করেই চলবে। এর বাইরে তার যাওয়ার সুযোগ নেই। তাবে সরকারের কারণে আমরা তো আমাদের স্বকীয়তা এবং আমাদের প্রতি ভারতের অন্যায় আচরণ মেনে নিতে পারি না। আমাদের একটিই অস্ত্র ভারতীয় নিত্যব্যবহার্য পণ্য বর্জন করা। আর এবারের ঈদে কলকাতার ব্যবসায়ীরা যে বিরাট ব্যবসার মৌসুমের আশায় বসে আছে, তা বর্জনের মধ্য দিয়েই এর প্রতিবাদ শুরু হোক। মনে রাখা প্রয়োজন, জনগণের ভারতীয় পণ্যবর্জন কারো পক্ষে বন্ধ করা সম্ভব নয়। এখানেই জনগণের শক্তি, যেখানে সরকারেরও কিছু করার থাকে না।

[email protected]


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

কুষ্টিয়ায় অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় পুলিশ কর্মকর্তা নিহত

কুষ্টিয়ায় অরক্ষিত রেলক্রসিংয়ে ট্রেনের ধাক্কায় পুলিশ কর্মকর্তা নিহত

রাজবাড়ীতে দুই দিনব্যাপী ক্যারিয়ার ফেস্ট

রাজবাড়ীতে দুই দিনব্যাপী ক্যারিয়ার ফেস্ট

ইউরোপ ত্রিমুখি অস্তিত্বের ঝুঁকির সম্মুখীন: ম্যাখোঁর হুঁশিয়ারি

ইউরোপ ত্রিমুখি অস্তিত্বের ঝুঁকির সম্মুখীন: ম্যাখোঁর হুঁশিয়ারি

যুক্তরাষ্ট্রে গৃহযুদ্ধের সম্ভাবনা দেখছে ৪১ শতাংশ মার্কিন ভোটার

যুক্তরাষ্ট্রে গৃহযুদ্ধের সম্ভাবনা দেখছে ৪১ শতাংশ মার্কিন ভোটার

যশোরের শার্শা উপজেলার নাভারন সিটি হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় ব্রেস্ট টিউমার রোগীর মৃত্যু

যশোরের শার্শা উপজেলার নাভারন সিটি হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় ব্রেস্ট টিউমার রোগীর মৃত্যু

গাজীপুরের দুটি ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনায় ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন

গাজীপুরের দুটি ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনায় ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন

এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে

এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে

৭ মাসে গাজায় নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা ১৪০ জন ছাড়িয়েছে

৭ মাসে গাজায় নিহত সাংবাদিকের সংখ্যা ১৪০ জন ছাড়িয়েছে

হবিগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত একই পরিবারের চারজনের পটুয়াখালীতে দাফন সম্পন্ন

হবিগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত একই পরিবারের চারজনের পটুয়াখালীতে দাফন সম্পন্ন

আচমকাই খাদে পড়ল যাত্রীবাহী বাস, পাকিস্তানে নিহত ২০

আচমকাই খাদে পড়ল যাত্রীবাহী বাস, পাকিস্তানে নিহত ২০

বিক্ষোভে অংশ নেয়ায় কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত বাংলাদেশি ছাত্রী

বিক্ষোভে অংশ নেয়ায় কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কৃত বাংলাদেশি ছাত্রী

ভারতকে ‘অপমান’ বাইডেনের, যা বলল হোয়াইট হাউজ

ভারতকে ‘অপমান’ বাইডেনের, যা বলল হোয়াইট হাউজ

নিয়মভঙ্গের অভিযোগে আদানির ৬ সংস্থাকে শোকজ নোটিস

নিয়মভঙ্গের অভিযোগে আদানির ৬ সংস্থাকে শোকজ নোটিস

কষ্টের ‘স্মৃতি’ ভুলে রায়বরেলিতে রাহুল, আমেঠিতে নতুন মুখ কংগ্রেসের

কষ্টের ‘স্মৃতি’ ভুলে রায়বরেলিতে রাহুল, আমেঠিতে নতুন মুখ কংগ্রেসের

পশ্চিমবঙ্গেও ধর্মীয় মেরুকরণ উস্কে দেয়ার চেষ্টা মোদির

পশ্চিমবঙ্গেও ধর্মীয় মেরুকরণ উস্কে দেয়ার চেষ্টা মোদির

গাজীপুরে উপজেলা নির্বাচন বর্জনের আহবান জানিয়ে বিএনপি'র লিফলেট বিতরণ

গাজীপুরে উপজেলা নির্বাচন বর্জনের আহবান জানিয়ে বিএনপি'র লিফলেট বিতরণ

দুই ভারতীয় গুপ্তচরকে বহিষ্কারের প্রসঙ্গে যা জানাল অস্ট্রেলিয়া

দুই ভারতীয় গুপ্তচরকে বহিষ্কারের প্রসঙ্গে যা জানাল অস্ট্রেলিয়া

শিক্ষার্থী বিক্ষোভ নিয়ে অবশেষে মুখ খুললেন বাইডেন

শিক্ষার্থী বিক্ষোভ নিয়ে অবশেষে মুখ খুললেন বাইডেন

লন্ডনের মেয়র পদে হ্যাটট্রিক জয়ের পথে সাদিক খান

লন্ডনের মেয়র পদে হ্যাটট্রিক জয়ের পথে সাদিক খান

গাজীপুরে যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেনের সংঘর্ষঃ চালকসহ আহত ৪

গাজীপুরে যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেনের সংঘর্ষঃ চালকসহ আহত ৪