গণপরিবহনে নৈরাজ্য: মন্ত্রীর দায়-দায়িত্ব প্রসঙ্গে
২২ মার্চ ২০২৪, ১২:১৮ এএম | আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৪, ১২:১৮ এএম
গত দেড় দশকে দেশের যোগাযোগ অবকাঠামো খাতে বিপুল বিনিয়োগ ও উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। ঢাকায় বিআরটি প্রকল্পের আওতায় মেট্টোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের মত আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার উদ্বোধন হয়েছে। এতকিছুর পরও সড়কে যানজট, বিশৃঙ্খলা, জনভোগান্তি, ভাড়ানৈরাজ্য এবং লক্কড়ঝক্কড় মার্কা গাড়ীর অবাধ চলাচল এতটুকু কমেনি। সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী-আমলারা সরকারের মেগা প্রকল্প নিয়ে আত্মপ্রসাদ লাভ করলেও মাঠের অবস্থায় তেমন কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। এ প্রসঙ্গে তারা বরাবরই এক ধরণের দায়সারা মনোভাব প্রকাশ করছেন। গত বুধবার তেজগাঁ এলাকার এফডিসি পয়েন্টে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের একটি নতুন র্যাম্প উন্মুক্ত করার অনুষ্ঠানে সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে যে মন্তব্য করেছেন, তা অনাকাঙ্খিত ও অনভিপ্রেত। সড়কে মানহীন, রঙহীন, লক্কড়ঝক্কড় মার্কা গাড়ী প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি গত ১২ বছরে যোগাযোগ অবকাঠামো খাতের নানা উন্নয়নের প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, ‘আমি মন্ত্রী , আমি তো নিজে গিয়ে বাস ঠিক করবো না’। গণমাধ্যম কর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি আরো বলেন, বাসগুলো বন্ধ করলে আপনারাই আগে রাস্তায় নামবেন। সবকিছু ঠিক করতে তিনি আরো সময় চেয়েছেন। মন্ত্রীর বক্তব্যে স্ববিরোধতা এবং সমস্যার মূল কারণ উপেক্ষা করে দায় এড়ানোর প্রবণতা লক্ষনীয়।
একজন পরিবহন বিশেষজ্ঞ বলেছেন, পরিবহন খাতে অর্জনের চেয়ে বিশৃঙ্খলা বেশি। একযুগের বেশি সময় ধরে ঢাকাসহ সারাদেশে যানজট ও জনভোগান্তি নিরসন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অবকাঠামো উন্নয়নে প্রতিবছর হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। সড়ক ও সেতু নির্মাণে প্রতি কিলোমিটারে বিশ্বের প্রায় সর্বোচ্চ ব্যয় বরাদ্দের রেকর্ড রয়েছে বাংলাদেশের। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাগুলোও এ প্রসঙ্গে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। এতকিছুর পরও বাস্তব ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত ইতিবাচক পরিবর্তন না হওয়া দু:খজনক। এর নেপথ্য কারণগুলো বিভিন্ন সময়ে নানা সংস্থার গবেষণা এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উঠে আসলেও সে সব প্রতিবন্ধকতা ও প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের বদলে মন্ত্রনালয় ও প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা শুধু ব্লেইম গেম তথা দায় এড়ানোর ফাঁকা বুলি আওড়ে চলেছেন। পরিবহন খাতে জবাবদিহিতা ও সুশাসনের অভাব এ খাতে সরকারের সব অর্জনকে ম্লান করে দিচ্ছে। বুধবার এফডিসি এলাকায় ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নতুন র্যাম্প উদ্বোধনের পর থেকেই সে এলাকায় নতুন মাত্রায় যানজট বেড়ে যাওয়ার খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে নতুন নতুন অবকাঠামো প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলেও রাস্তার নৈরাজ্য, ফিটনেসবিহীন লক্কড়ঝক্কড় গাড়ী, চালক-হেল্পারদের যথেচ্ছাচার, ভাড়া নৈরাজ্য, যত্রতত্র স্টপেজ, যাত্রী হয়রানি, দুর্ঘটনা ও বিশৃঙ্খলা বন্ধে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি।
পদ্মাসেতু, কর্ণফুলী টানেল থেকে শুরু করে বিআরটি, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্টোরেলের মত প্রকল্প দেশের যোগাযোগ উন্নয়নের ক্ষেত্রে মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হলেও গণপরিবহনে বিদ্যমান বাস্তবতা সামগ্রিক উন্নয়ন পরিকল্পনার সাথে সঙ্গতিহীন ও বেমানান। সামগ্রিক কর্মপরিকল্পনায় ভুল-ভ্রান্তি, ভুল নকশায় প্রকল্প বাস্তবায়ন, যথাসময়ে প্রকল্প বাস্তবায়নে অপারগতা ইত্যাদি কারণে উন্নয়ন প্রকল্প থেকে যথাযথ উপযোগিতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে মানুষ। গণপরিবহনের রেজিস্ট্রেশন, গাড়ি চালকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ ও লাইসেন্সিং, গাড়ির সঠিক ফিটনেস ও রুটপারমিটের তদারকির সাথে সংশ্লিষ্ট বিআরটিএ’র প্রাতিষ্ঠানিক স্বচ্ছতা ও দায়িত্ব পালন নিশ্চিত করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের। বাসের রঙ করা কিংবা ফিটনেস নিশ্চিত করার দায়িত্বকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর ব্যক্তিগতভাবে গ্রহণ করার বিষয় নয়। প্রতিষ্ঠান এবং তার সাথে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা সরকারের দায়িত্ব। ডিজিটালাইজেশন কিংবা স্মার্ট বাংলাদেশ কায়েমের আগে রাস্তার নৈরাজ্য ও প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতি বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। আমাদের গণপরিবহন ব্যবস্থা ভারত-পাকিস্তানের চেয়ে তো বটেই, নেপাল-ভূটানের মত দেশ থেকেও অনেক পিছিয়ে রয়েছে। প্রতিবছর ঈদকে সামনে রেখে রাস্তা ও গণপরিবহণের বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য আলোচ্য বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও কর্তৃপক্ষ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কিছু এড-হক ভিত্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের কথা বললেও সারা বছরের নিস্ক্রিয়তা দু’তিন সপ্তাহের অতিতৎপরতায় ঘুচানো সম্ভব নয়। সড়ক থেকে লক্কড়-ঝক্কড় ফিটনেসবিহিন গাড়ী তুলে নিতে বিভিন্ন সময়ে উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও অদৃশ্য কারণে কোনো উদ্যোগই সফল হয়নি। ঈদের সময় রাজধানী থেকে লাখ লাখ মানুষের বাড়ি যাওয়ার চাপ সামলাতে ফিটনেসহীন গাড়ীগুলো মেরামত ও রঙ করে রাস্তায় নামানোর সুযোগ দেয়া বন্ধ করতে হবে। চাকচীক্যময় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও মেট্টোরেলের নিচের রাস্তায় খানাখন্দ, ভাঙ্গাচোরা, রংহীন যানবাহন, পরিবহনে নৈরাজ্য. যানজট ও অব্যবস্থাপনা দূর করার বাস্তবসম্মত উদ্যোগ দেখতে চায় দেশের মানুষ। মানুষ দেখতে চায়, অন্যান্য দেশের রাজধানীল মতো ঢাকায়ও চকচকে, নিরাপদ, আরামদায়ক, আধুনিক যানবাহন সুশৃঙ্খলভাবে চলাচল করছে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
গাজীপুরে উপজেলা নির্বাচন বর্জনের আহবান জানিয়ে বিএনপি'র লিফলেট বিতরণ
দুই ভারতীয় গুপ্তচরকে বহিষ্কারের প্রসঙ্গে যা জানাল অস্ট্রেলিয়া
শিক্ষার্থী বিক্ষোভ নিয়ে অবশেষে মুখ খুললেন বাইডেন
লন্ডনের মেয়র পদে হ্যাটট্রিক জয়ের পথে সাদিক খান
গাজীপুরে দুই ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ : ৫ বগি লাইনচ্যুত, আহত অন্তত ৫০
পশ্চিম তীরে দুই শিশুকে হত্যা, সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত ইসরাইল
মুক্তি পেলেন মাওলানা মামুনুল হক
খালেদা জিয়ার চিকিৎসা বাংলাদেশে নেই : চিকিৎসক
উখিয়া থেকে অপহৃত ১০ জেলেকে দীর্ঘ ৩৬ ঘন্টা পর ছেড়ে দিল আরাকান আর্মি'র সদস্যরা
বিশ্বের দেশে দেশে নিষেধাজ্ঞার মুখে ভারতীয় খাদ্যপণ্য
নাইজারে মার্কিন ঘাঁটিতে অবস্থান নিল রুশ সেনা
মুদ্রাপাচার নিয়ে সরকার ও আইএমএফ রহস্যজনক কারণে নীরব : ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দীন
বাইডেন না ট্রাম্প, কে হবেন প্রেসিডেন্ট? জানালেন বিখ্যাত ভোটকুশলী
তথ্য পাঠাচ্ছে চীনের বৃষ্টিপাত পরিমাপক স্যাটেলাইট
ইইউ-তে ফ্রান্স চীনের তৃতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার
বাইডেনের জনপ্রিয়তায় ভয়াবহ ধস
পুরুষদের থেকে বেশি সময় বাঁচলেও অসুস্থ থাকেন মহিলারা, গবেষণাপত্রে প্রকাশ
তাইওয়ান ইস্যুতে ডব্লিউএইচও-কে ব্যবহার না করতে যুক্তরাষ্ট্রকে চীনের তাগিদ
বজ্রপাতে ৫ জেলায় প্রাণ গেল ১১ জনের
ভারী বর্ষণে ফের ডুবল দুবাই, বন্ধ স্কুল ও অফিস