আমরা কি স্বাধীন রাষ্ট্র?
১৭ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৫ এএম
সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ’র ক্রমাগত বাংলাদেশিদের হত্যা, গুলি, তুলে নিয়ে যাওয়া এবং বিজিবিসহ সরকারের সংশ্লিষ্টদের নীরবতা ও নিস্ক্রিয়তায় মানুষের মধ্যে এখন প্রশ্ন উঠেছে, আমরা কি স্বাধীন রাষ্ট্র? তা নাহলে, সীমান্তে নিরীহ-নিরস্ত্র মানুষের উপর বিএসএফ যখন তখন পাখির মতো গুলি করে বাংলাদেশিদের হত্যা করার সাহস পায় কিভাবে? বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের সাথে আরো অন্তত ৫টি দেশের সীমান্ত রয়েছে। পাকিস্তান ও চীনের সাথে ভারতের বৈরিতা দীর্ঘদিনের। এসব দেশের সীমান্ত ডিঙ্গিয়ে দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে মানুষ অপহরণ কিংবা সীমানা পিলারের কাছে গুলি চালিয়ে মানুষ হত্যার ঘটনা বিরল। সেসব সীমান্তে বিএসএফ ত্রস্ত অবস্থায় থাকে। বাহাদুরি দেখাতে পারে না। কেবল আমাদের সীমান্তে এসেই তারা নিরীহ বাংলাদেশিদের হত্যা করে বীরত্ব দেখায়। গত দেড় দশক ধরে বাংলাদেশ ও ভারতের ক্ষমতাসীনরা দুই দেশের বন্ধুত্বের অনন্য উচ্চতার কথা বলে বেড়াচ্ছে। আর এ সময়েই সীমান্তে বাংলাদেশিদের উপর বিএসএফ’র গুলি বর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। গত জানুয়ারিতে বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা আইন ও শালিস কেন্দ্রের এক প্রতিবেদনে গত সাত বছরে সীমান্তে বিএসএফ’র গুলিতে দুই শতাধিক মানুষের প্রাণহানির তথ্য উঠে এসেছে। সীমান্তে বিএসএফ’র গুলিতে বাংলাদেশি নিহতের প্রকৃত সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে বলে অনুমান করা যায়। শুধুমাত্র ২০১৯ এবং ২০২০ সালেই বাংলাদেশ যথাক্রমে ৪৮ জন ও ৪৩ জন বিএসএফ’র গুলিতে ও নির্যাতনে নিহত হয়েছে।
নিরীহ-নিরস্ত্র বাংলাদেশিদের হত্যা করে হাত পাকিয়ে বিএসএফ এখন বাংলাদেশ সীমান্তরক্ষি বাহিনী বিজিবি সদস্যকেও গুলি করে হত্যা করতে কুণ্ঠিত হচ্ছে না।। সীমান্ত থেকে বাংলাদেশিদের ধরে নিয়ে নির্যাতন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশ করে মালামাল ও গবাদি পশু লুটে নেয়ার ঘটনাও বিভিন্ন সময়ে ঘটেছে। যত দিন যাচ্ছে, সীমান্তে বিএসএফ আগ্রাসী ও খুনীর চরিত্র হয়ে উঠছে। চলতি বছর জানুয়ারীতে সীমান্তে সন্দেহভাজন ভারতীয় চোরাচালানিদের ধাওয়া দিয়ে ঘন কুয়াশায় একজন বিজিবি জওয়ান সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতে প্রবেশ করলে বিএসএফ’র গুলিতে নিহত হয়। এ নিয়ে দুই সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে বিশেষ পতাকা বৈঠক হলেও দেশের মানুষ কোনো পক্ষের কাছ থেকেই এই হত্যাকাণ্ডের সন্তোষজনক ব্যাখ্যা কিংবা বিজিবি ও বাংলাদেশ সরকারের তরফ থেকে তেমন কোনো জোরালো প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি। উপরন্তু সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের মুখ থেকে বিএসএফ’র ভাষ্যের প্রতিধ্বনি শোনা গেছে। ফেব্রুয়ারিতে ছাগলনাইয়া সীমান্ত থেকে ২৩ জন বাংলাদেশিকে বিএসএফ ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনারও তেমন কোনো প্রতিবাদ করা হয়নি। প্রকাশিত খবরে জানা যায়, ছাগলনাইয়ার সীমান্ত এলাকা থেকে একজনকে বিএসএফ ধরে নিয়ে গেছে বলে গুঞ্জন উঠলে স্থানীয়রা সীমান্তের কাছাকাছি মানুষ জড়ো হলে বিএসএফ ধাওয়া দিয়ে ২৩ জনকে ধরে নিয়ে মামলা দিয়ে শ্রীনগর থানা হাজত থেকে জেলে পাঠিয়ে দেয়।
গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত রিপোর্টে জানা যায়, গত সোমবার ভোরে লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা সীমান্ত থেকে আমিনুর রহমান (২৩) নামের এক যুবককে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ। বাংলাদেশিদের উপর গুলি চালানো, হত্যা কিংবা আটকের পর ভারতীয় সীমান্তরক্ষিদের কোনো জবাবদিহিতা ও আইনগত স্বচ্ছতা না থাকায় আটক হওয়ার পর প্রত্যার্পণের কোনো সময়সীমা থাকে না। বিএসএফ’র নির্যাতনে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশি যুবকদের প্রাণ হারানোর ঘটনাও ঘটেছে। সীমান্তের কাঁটাতারে ঝুলে থাকা কিশোরী ফেলানির লাশ বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিএসএফ’র নির্মমতা ও ববর্রতা প্রতিকী ছবি হয়ে উঠেছে। ২০১১ সালের জানুয়ারিতে বৃটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্রাডের লেখা প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল, ‘ইন্ডিয়াস শুট টু কিল পলিসি অন দ্য বাংলাদেশ বর্ডার।’ বাংলাদেশ সীমান্তে বিএসএফ বেপরোয়া হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে আলোচিত হলেও সরকারের মধ্যে কোনো বিচলন দেখা যায়নি। প্রতিবাদ করা দূরে থাক, উল্টো সীমান্তে বাংলাদেশীদের হত্যাকে ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ হিসেবে অজুহাত দাঁড় করাতে দেখা গেছে। সীমান্তরক্ষি বাহিনী বিজিবিকে এসব হত্যাকাণ্ডের পাল্টা ব্যবস্থা কিংবা জোরালো প্রতিবাদ করতে দেখা যায়নি। ভারতের সাথে তথাকথিত বন্ধুত্বের বোলচালের ফাঁকা আওয়াজ জোরালো হওয়ার সাথে সাথে ভারতের উচ্চ পর্যায় থেকে বারবার প্রতিশ্রুতি দেয়া সত্যেও সীমান্তে মারনাস্ত্র ব্যবহার ও হত্যাকাণ্ড কমেনি। সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন উঠেছে, সীমান্তে বিএসএফ প্রতিনিয়ত বাংলাদেশিদের হত্যা, নির্যাতন ও তুলে নিয়ে গেলেও আমাদের পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কি করে? তারা কি দায়িত্ব পালন করছে? সীমান্তে বিজিবি কি করছে? সেখানে তাদের কার্যকারিতা কতটুকু? সীমান্ত কি তাহলে অরক্ষিত হয়ে রয়েছে? তা নাহলে, বিএসএফ কি করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ঢুকে মানুষকে গুলি করে? সে সময় বিজিবি কোথায় থাকে? এসব প্রশ্ন সচেতন মানুষের মধ্যে জাগা স্বাভাবিক। এ প্রশ্ন জাগা অমূলক নয়, আমরা কি আসলে স্বাধীন? সরকারকে এসব প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। দেশের মানুষের কাছে জবাবদিহি করতে হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
এনআরবিসি ব্যাংকের ১১ শতাংশ নগদ লভ্যাংশের সুপারিশ
গ্রিন ফ্যাক্টরী অ্যাওয়ার্ড পেল ইভিটেক্স ড্রেস শাট লিমিটেড
এনার্জিপ্যাকের সাথে চীনের আনহুই প্রাদেশিক গণ-কংগ্রেসের প্রতিনিধিদলের সাক্ষাৎ
গণিতপ্রেমীদের জন্য আয়োজিত হতে যাচ্ছে ইউসিবি ম্যাথ অলিম্পিয়াড ২০২৪
দেশে সংক্রামক রোগ, মহামারীর হুমকি মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ‘ওয়ান হেলথ’ প্রকল্প
জাতীয় সংসদের ন্যায় উপজেলা নির্বাচনেও জনগণ বিরত থাকবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ
হজ্জ্বব্রত পালনে সরকার সকল ধরনের ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করেছেন- জেলা প্রশাসক
ভারতে ২ বছর কারাভোগ শেষে দেশে ফিরলেন বাংলাদেশি ২০ নারী -শিশু
জার্মানিতে ইউক্রেনের দুই সেনা নিহত, এক রুশ আটক
হামাস ও ফাতাহর মধ্যে আলোচনায় ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে: চীন
আওয়ামী সরকার দেশের গণতন্ত্রকে মাটিচাপা দিয়েছে : আমিনুল হক
শামস জামান পিডব্লিউসি বাংলাদেশের নতুন কান্ট্রি ম্যানেজিং পার্টনার
পর্যটন গন্তব্য থেকে যেভাবে মাদক সাম্রাজ্য হয়েছে ইকুয়েডর
সিটি ব্যাংক ও পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী লিমিটেডের মধ্যে ব্যাংকাসুরেন্স চুক্তি স্বাক্ষর
আওয়ামী লীগ সরকার শ্রমিক বান্ধব: নিজাম উদ্দিন হাজারী
শিক্ষাবিদ হাসানুজ্জামানের ‘বিদেশে উচ্চশিক্ষা’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন!
প্রশ্ন : একটি ছাগল দিয়ে ছেলে এবং মেয়ের আকিকা করা প্রসঙ্গে।
প্রতারণামূলক ডামি উপজেলা নির্বাচন বর্জন করুন : সিলেট বিএনপি সভাপতি কাইয়ুম চৌধুরী
যুবদল সভাপতি টুকুকে কারাগারে প্রেরণের প্রতিবাদে সিলেট জেলা ও মহানগর যুবদলের বিক্ষোভ মিছিল
সুন্দরবনের আন্ধারিয়া খাল থেকে মৃত বাঘ উদ্ধার