বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে মাঠের বিরোধীদলের করণীয়
২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৬ এএম
কোনো রাষ্ট্র ব্যর্থ হওয়ার কিছু বৈশিষ্ট্য বা লক্ষণ থাকে। যেমন ১. আধিপত্যবাদ। ২. রাজনীতির সাথে অর্থনীতির সামঞ্জস্যহীনতা। ৩. শিক্ষানীতির সাথে ধর্মনীতির সমন্বয়হীনতা। ৪. বিচার ব্যবস্থার সাথে অবিচার ব্যবস্থায় সামঞ্জস্যতা। ৫. আইনশৃঙ্খলা রক্ষার সাথে আইন শৃঙ্খলা বিনষ্টকরণের সামঞ্জস্যতা। বাংলাদেশে এ প্রবণতা রয়েছে।
রাষ্ট্রকে রক্ষা করার জন্য দু’টি বস্তুকে সামনে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। একটি হলো আন্দোলন। অন্যটি আলোচনা। সাধারণত আন্দোলন দুই ভাবে হয়ে থাকে। প্রথমত সহিংস আন্দোলন, দ্বিতীয়ত অহিংস আন্দোলন। হরতাল, অবরোধ, জ¦ালাও-পোড়াও বা অগ্নিসংযোগ প্রভৃতি এবং দাবী আদায়ের জন্য সশস্ত্র বিপ্লব হলো সহিংস আন্দোলন। বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলন, যেমন-সভা, মানববন্ধন, সেমিনার সিম্পোজিয়াম বা সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে দাবী আদায়ের জন্য সংঘবদ্ধ হওয়ায় কর্মকা- হচ্ছে অহিংস আন্দোলন।
দেশে বিরোধীদলগুলোর যে অহিংস আন্দোলন, তা অনেকাংশে সফল হয়েছে। তারা সহিংস আন্দোলন পরিহার করে অহিংস আন্দোলনের পথে রয়েছে। বলা বাহুল্য, স্বাধীন রাষ্ট্রে দাবী আদায়ের জন্য সহিংস আন্দোলন দুঃখজনক এবং ক্ষমতাসীনদলের জন্য লজ্জার। তবে ক্ষমতাসীনদলের মধ্যে যদি স্বৈরতান্ত্রিক প্রবণতা থাকে, তাহলে সহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে দাবী আদায় অনিবার্য হয়ে পড়ে। এতে প্রতিহিংসার পথ উন্মুক্ত হয়। কারণ, সরকার পতনের পর নতুন যেদল সরকার গঠন করে, তারা তাদের উপর পূর্ববর্তী জুলুম-নির্যাতনের প্রতিশোধ নিতে তৎপর হয়। সহিংস আন্দোলনে সরকার বিরোধীদল দমাতে নিপীড়ন-নির্যাতনের পথ বেছে নেয়। বিরোধীরাও এর জবাব দেয়। আন্দোলনে বিরোধীদল যদি জয়ী হয় এবং ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়, তাহলে তারা প্রতিশোধপরায়ন হয়ে উঠে। তাই দাবী আদায়ের জন্য বুদ্ধিবৃত্তিক সমাজ ব্যবস্থা কখনও সংঘাত কিংবা সশস্ত্র বিপ্লব সমর্থন করেনা। দেশের বড় রাজনৈতিক বিরোধীদল হিসেবে বিএনপি এখন পর্যন্ত অহিংস আন্দোলন করলেও সফল হতে ব্যর্থ হয়েছে। এই ব্যর্থতার প্রধানতম কারণ হচ্ছে, বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলনে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সরাসরি সমর্থন না পাওয়া। তবে দলটি এখন পর্যন্ত খুন, গুম, হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হয়েও সরকার পতনের লক্ষ্যে অহিংস আন্দোলন করে যাচ্ছে। একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রে দাবী আদায়ের জন্য বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর এই আন্দোলনকে যুক্তিগ্রাহ্য ও বৈজ্ঞানিক আন্দোলন বলা যায়। এই আন্দোলন অব্যাহত আছে।
সরকার পতন আন্দোলনের আরেকটি দিক হলো ‘আলোচনা’। আলোচনা দুভাবে হতে পারে। প্রথম ‘উন্মুক্ত আলোচনা’। দ্বিতীয়ত সিক্রেট ডিসকাসন অ্যান্ড অ্যাপ্লিকেশন বা গোপনীয় আলোচনা এবং তার প্রয়োগ। বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনার মাধ্যমে সরকার পতনের জন্য অনেক উন্মুক্ত আলোচনা হয়েছে এবং চলছে। এখন দরকার গোপনীয় আলোচনা এবং প্রয়োগ। গোপনীয় আলোচনা এবং প্রয়োগের জন্য ২+১ তত্ত্বটি ব্যবহার তুলে ধরছি। ২+১ তত্ত্ব হলো, একজন মাঠ পর্যায় থেকে অন্য একজনকে বাচাই করে ঊর্ধ্বতন তৃতীয় ব্যক্তির নিকট পৌঁছবে এবং সেখানে আলোচনা করবে। ঊর্ধ্বতন তৃতীয় ব্যক্তি বহুবিদ প্রক্রিয়ায় এই পদ্ধতির মাধ্যমে এগিয়ে যাবে। উর্ধ্বতন তৃতীয় ব্যক্তি ১০টি ২+১ তত্ত্ব প্রয়োগ করবে এবং এখান থেকে ১০ জন বাচাই করবে। পরবর্তীতে ১০+১ পদ্ধতিতে আরো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট হাজির হয়ে পরবর্তী কর্ম নির্ধারণ করবে। এখানে বাচাইকৃত ১০ জন এবং উর্ধ্বতন তৃতীয় ব্যক্তি নিয়ে মোট ১১জন হবে। ১০টি ১০+১ পদ্ধতিটি প্রয়োগ করে গ্রুপ সদস্য বৃদ্ধির জন্য এগিয়ে যাবে। এখানে একজন ঊর্ধ্বতন নেতার অধীনে ১০টি ১১ সদস্য বিশিষ্ট গ্রুপ থাকবে। গ্রুপের মোট সদস্য সংখ্যা হবে ১১০ জন। এভাবে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে সরকার পতনের মাধ্যমে রাষ্ট্রকে রক্ষা করতে হবে। প্রথমে ২+১ পদ্ধতিতে এগিয়ে গেলেও পরবর্তীতে তা ১০+১ পদ্ধতিতে এগিয়ে যেতে হবে। একটা নির্দিষ্ট সংখ্যক সদস্য সংগ্রহ করে বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলন চালিয়ে সরকারকে বাদ্য করতে হবে। এই পদ্ধতি কেন্দ্রীয় পর্যায় থেকে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত বিস্তৃতি লাভ করবে। এক লাখ পঞ্চাশ হাজার বা ততধিক সদস্য সংগ্রহের টার্গেট নিতে হবে। যদি বুদ্ধিবৃত্তিক আন্দোলন ব্যর্থ হয়, তাহলে এসব সদস্য নিয়ে মাঠপর্যায়ে আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। প্রশ্ন হচ্ছে কারা এর সদস্য হবে? বিশ^স্ত রাজনৈতিক কর্মী থেকে শুরু করতে হবে। পরবর্তীতে প্রশাসনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করে আন্দোলনকে এগিয়ে নিলে সফল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সরকার পতনের জন্য রাজনৈতিক আন্দোলনের পাশাপাশি একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক দল হিসাবে বিএনপিকে ‘সিক্রেট ডিসকাশন অ্যা- অ্যাপ্লিকেশন’ প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে হবে। এর অর্থ হচ্ছে, সহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পতন থেকে দেশকে রক্ষা করে রক্তপাতহীন পতনের দিকে অগ্রসর এবং সফল হওয়া। একজন পেশাজীবী হিসেবে রক্তাক্ত পতনের চেয়ে রক্তপাতহীন পতনকে আমি সমর্থন করি। এই পদ্ধতি ব্যর্থ হলে সংঘাতপূর্ণ আন্দোলন ছাড়া গত্যন্তর থাকবে না। এর মাধ্যমে সরকারের পতন হলে তার নোতকর্মী ও সমর্থক গোষ্ঠী ভয়ংকর প্রতিহিংসার স্বীকার হতে পারে। এই বিষয়টি সরকারকেও বিবেচনায় নিতে হবে। এই নিবন্ধে কোনো সহিংস আন্দোলন সমর্থন করা হয় নাই। বরং বুদ্ধিবৃত্তিক কৌশলের মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর ন্যায্য দাবী আদায়ে অহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পতন করা যায়, তার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
লেখক : শিক্ষক নেতা ও রাজনীতি বিশ্লেষক।Email: [email protected]
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বোলারদের নৈপুণ্যের পর অভিষেকে উজ্জ্বল তানজিদ,টাইগারদের বড় জয়
আখাউড়ায় মুরাদ হোসেন ভূইয়াকে সমর্থন দিলো আওয়ামী লীগ
সদ্য ভূমিষ্ঠ সব শিশুর নামে একটি করে গাছ লাগাবে সৌদি আরবের হাসপাতাল
নাম ফলকে বাংলা না থাকলে ব্যবস্থা নেবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি
অস্বাভাবিক তাপমাত্রা আল্লাহ তায়ালার অসন্তুষ্টির লক্ষণ জুমার খুৎবা পূর্ব বয়ান
মধুখালিতে দু’সহোদর শ্রমিক হত্যা সারাদেশে ইসলামী আন্দোলনের বিক্ষোভ মিছিল পালিত
ছেলের মৃত্যুর মাত্র ৪ দিন পর বাবার মৃত্যু!
অবশেষে কুমিল্লার রসমালাই জিআই পণ্যের স্বীকৃতির তালিকায়
দৌলতপুরে অগ্নিকান্ডে ১৪ বিঘা জমির পানবরজ পুড়ে ছাই
বিজয়নগরে জাল নোট তৈরির সরঞ্জাম সহ গ্রেপ্তার ৩
স্থানীয় সরকার নির্বাচনকেও তামাশায় রূপান্তরিত করেছে আওয়ামী লীগ : রিজভী
চিলমারীতে আনারস প্রতীক প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণায় হামলা
খেলার শুরুর চার ওভার পর ফের বৃষ্টির হানা, ডিএল মেথডে এগিয়ে বাংলাদেশ
দেশে মুক্ত চিন্তার মানুষদের ওপর নিষ্ঠুর আক্রমণ চলছে: মির্জা ফখরুল
চুয়াডাঙ্গার চিৎলা ইউনিয়নের হুদাপাড়ায় আগুনে পুড়ে নিঃস্ব হলো ৭ পরিবার
‘এনবিআরের অভিযান’ বিষয়ে ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যাখ্যা
নদীতে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ না পেয়ে হতাশ জেলেরা
অস্ট্রেলিয়ার একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ অব্যাহত
সৈয়দ আহমদ শহিদ বেরলভী (র.) ইসলামি আন্দোলনের আপোসহীন মডেল -আলহাজ হাফিজ সাব্বির আহমদ
নাইজারে মার্কিন বাহিনীর বিমান ঘাঁটিতে রুশ সেনা