শিক্ষা ব্যবস্থার ভয়াল দশা

Daily Inqilab ড. আহমাদ আব্দুল্লাহ ছাকিব

১৯ মে ২০২৪, ১২:০৪ এএম | আপডেট: ১৯ মে ২০২৪, ১২:০৪ এএম

সিংহভাগ মানুষের আক্বীদা-বিশ্বাসের উপর আঘাত হানার জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে নাস্তিক্যবাদী যে চক্রান্ত অব্যাহত রয়েছে, তার একটি বাস্তব দৃষ্টান্ত হ’ল এদেশের শিক্ষাব্যবস্থা। বৃটিশদের চাকরিজীবী, পেশাজীবী ও কেরানী তৈরি করার লক্ষ্যে নিবেদিত ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের দর্শনে পরিচালিত শিক্ষাব্যবস্থা এদেশের আম জনমানসের শাখায়-প্রশাখায় এমনভাবে পাশ্চাত্যের ভোগবাদী জীবনাদর্শকে ঢুকিয়ে দিয়েছে, যা থেকে পরিত্রাণের কোনো উপায় যেন নেই। স্বাধীনতার পর যতগুলো শিক্ষাক্রম এসেছে, প্রতিটি শিক্ষাক্রমেই একটু একটু করে গেড়ে দেয়া হয়েছে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের বীজ, আর পাল্লা দিয়ে কমানো হয়েছে মুসলিম হিসাবে আত্মপরিচয় গঠনের সুযোগগুলো।
এই ধারাবাহিকতায় জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২২ এদেশের মুসলমানদের আত্মপরিচয় গঠনের মূলে আরো এক গভীর কুঠারাঘাত। এতদিন ইসলামী শিক্ষার নামে যৎসামান্য কিছু শেখার ব্যবস্থা থাকলেও নতুন শিক্ষাক্রমে ‘ইসলামী শিক্ষা’ নামে কোনো বিষয় নেই। এর পরিবর্তে ‘মূল্যবোধ ও নৈতিকতা’ নামক যে বিষয়টি রয়েছে, সেটিও আবার দশম শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষার তালিকায় নেই। ২০১৩ সালে ‘ইসলাম শিক্ষা’ বিষয়টির নামকরণ যখন ‘ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা’ করা হয়, তখন সম্ভবত পরবর্তী পদক্ষেপের কথা ভেবেই রাখা হয়েছিল, যা এখন বাস্তবে রূপ নিয়েছে। অপরদিকে কলেজে ২০১২ শিক্ষাক্রম থেকেই ‘ইসলাম শিক্ষা’ বিষয়টি বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে বাদ দেয়া হয়েছিল। কেবল মানবিক বিভাগে ঐচ্ছিক বিষয় হিসাবে রাখা হয়েছে। অর্থাৎ শিক্ষা নিয়ে কারসাজির এই ধারাবাহিকতা থেকে সহজেই অনুমান করা যায়, কীভাবে পাঠ্যসূচি থেকে ইসলাম শিক্ষাকে স্থায়ীভাবে বিলুপ্ত করা যায়, সেটাই নেপথ্যের কুশীলবদের মূল লক্ষ্য।
অপরদিকে স্বয়ং সরকারি মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থাতেই এখন ইসলামী শিক্ষার বিপণœ অবস্থা। ইসলামের শিক্ষা ও সংস্কৃতি লালনই যে শিক্ষা ব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্য, সেখানেই এখন ইবতেদায়ী শ্রেণিতে সালামের পরিবর্তে শেখানো হচ্ছে ‘গুড মর্নিং’। ‘ইসলামের ইতিহাস’ বিষয়টি এখন আর সিলেবাসেই নেই। মাদ্রাসা ও স্কুল-কলেজের শিক্ষাকে একই মানে নিয়ে আসতে ১৯৮৫ সালে দাখিলকে এসএসসি এবং ১৯৮৭ সালে আলিমকে এইচএসসির সমমান প্রদান করা হয়। কিন্তু তাতে মাদ্রাসার মূল সিলেবাসে হাত দেয়া হয়নি। অথচ বর্তমানে স্কুল ও মাদ্রাসার সিলেবাস সমন্বয় করতে গিয়ে মাদ্রাসা এবং স্কুলের মধ্যকার পৃথক বৈশিষ্ট্য প্রায় হারিয়েই যাচ্ছে। স্কুলের সিলেবাসের সমস্ত বই মাদ্রাসার উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। ফলে এসকল মাদ্রাসায় পড়ে কেউ ভালো আলেম হ’তে পারবে- এ কথা খোদ আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক ও ছাত্ররাও বিশ্বাস করে না। যদিও মাদ্রাসা শিক্ষার সার্বিক মানোন্নয়নে ২০০৬ সালে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া’র অধীনে ফাযিল ও কামিলকে যথাক্রমে ডিগ্রি ও মাস্টার্স সমমান দিয়েছিল। অতঃপর ২০১৩ সালে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো স্বতন্ত্র ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়, যার মাধ্যমে সারা দেশের ফাযিল ও কামিল মাদ্রাসাগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে সরকারিভাবে ঘোষণা আসে কওমী মাদ্রাসার সর্বোচ্চ ডিগ্রি দাওরায়ে হাদীছকে মাস্টার্স সমমান প্রদানের। তবে এসব পদক্ষেপের উদ্দেশ্য যে মূলত ইসলামী শিক্ষার সার্বিক উন্নয়ন নয়; বরং রাজনৈতিক মতলবপ্রসূত, তা তাদের ধারাবাহিক কার্যক্রম থেকে সু¯পষ্ট। লর্ড মেকলেরা ইংরেজ শাসনামলেও যা করেননি, বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা তা কর্যকর করেছে। এ এমন এক শিক্ষাব্যবস্থা, যার সাথে আমাদের ধর্মীয় চিন্তা-চেতনা, আদর্শিক ও সাংস্কৃতিক মূল্যোবোধের কোনো স¤পর্ক নেই।
দুঃখের বিষয় হলো, কেবল ধর্মীয় শিক্ষাই নয়, সামগ্রিকভাবে শিক্ষার উন্নয়নকল্পে কোনো- সরকারের পক্ষ থেকে একটি যুক্তিপূর্ণ ও বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা ও বিনিয়োগ আমাদের নজরে আসেনি। অবকাঠামো খাতে সরকারের বিশাল ব্যয় দেখে আমরা আনন্দিত হই। স্কুল-কলেজের অবকাঠামো নির্মাণের জন্য বিশাল বরাদ্দ দেয়া হয়। কোটি কোটি টাকা সেখানে ব্যয় হয়। তবে দিনশেষে সেটা হয় একদল মানুষের স্বার্থে; যারা দুর্নীতির মচ্ছবে লিপ্ত হয়ে কাড়ি কাড়ি অর্থ হাতিয়ে নেয়, আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যায়। আর সেটাই হয়ে যায় আমাদের উন্নয়নের মাপকাঠি।
অথচ শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধির জন্য কোনো বরাদ্দ কিংবা শিক্ষা উন্নয়নের জন্য গবেষণামূলক কোনো উচ্চতর প্রতিষ্ঠান আমাদের নজরে আসেনি। উচ্চ শিক্ষার জন্য বিশেষায়িত কোনো কমিশনও গঠন করা হয় না। এক্ষেত্রে কোটি কোটি টাকা তো দূরের কথা, কোনো বিনিয়োগই নেই! এমনকি সরকার নিজেও বোধহয় জানে না যে, শিক্ষার নামে দেশে আসলে কী নৈরাজ্য চলছে। ফলে শিক্ষা কারিকুলাম নিয়ে দেশব্যাপী সমালোচনা শুরু হ’লে কেউ এর দায়দায়িত্ব নিতে চায় না। একে অপরকে দায়ী করার মধ্যখান থেকে বাস্তবায়ন হয়ে যায় আড়ালের কুশীলবদের গভীর ষড়যন্ত্র। এত বিশৃংখল শিক্ষাব্যবস্থাপনা পৃথিবীর আর কোনো একটি দেশেও আছে কি-না সন্দেহ। সরকারি কিংবা এমপিওভুক্ত অনার্স, মাস্টার্স স্তরের ৮২০টি কলেজ বর্তমানে রয়েছে। এগুলোর একমাত্র কাজ সার্টিফিকেট প্রদান করা। সেখানে কোনো পড়াশোনা নেই বললেই চলে। শিক্ষক-ছাত্র কেউ ক্লাসে উপস্থিত হয় না। যা হয়, তা স্রেফ দায়সারা গোছের। শিক্ষিত জাতি গড়ার আকাক্সক্ষা তো দূরের থাক, শিক্ষার ন্যূনতম কোনো লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টাও সেখানে অনুপস্থিত।
সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো কর্তৃক এক জরিপ রিপোর্টে প্রকাশিত হয়েছে যে, দেশে অলস সময় পার করছে ৩৯ শতাংশ তরুণ। এর বাস্তবতা আমরা অনার্স কলেজগুলো দেখলেই অনুধাবন করতে পারি। দেশের উপজেলা, ইউনিয়ন লেভেলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে যেসব কলেজ রয়েছে, তার প্রায় শতভাগেই ক্লাস করার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। ক্লাসে আসা-না আসা শিক্ষার্থীর ইচ্ছাধীন। পরীক্ষা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় আয় করে এবং শিক্ষার্থীরা সার্টিফিকেট পায়। অনার্স/মাস্টার্স পাশ করার পর শিক্ষার্থীরা এতটুকুই জানে যে, তারা অমুক বিষয়ে পড়েছে। কিন্তু কী শিখেছে তা তারা জানে না। আর সার্টিফিকেট থাকায় কিছু যে শিখেনি তা-ও বলতে পারে না। আবার সার্টিফিকেট থাকার কারণে তারা ‘ছোটখাটো’ কাজও করতে চায় না। কেবল অফিসার হ’তে চায়, যার যোগ্যতা তার নেই। সেকারণ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে কেবল সার্টিফিকেটধারী বেকার তৈরির কারখানা বললেও হয়তো অত্যুক্তি হবে না।
অপরদিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সাধারণত শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ বিষয়ের পড়া পড়ে না। বরং তারা তাদের সমস্ত মেধা ও শক্তি ব্যয় করে বিসিএস পরীক্ষার জন্য। সেজন্য দক্ষতাস¤পন্ন বিশেষজ্ঞ পেশাজীবীও সেভাবে তৈরি হচ্ছে না। মাদ্রাসাগুলোয় ফাযিল ও কামিলের নামে যা হচ্ছে, তা স্রেফ প্রহসন।
চোখের সামনে সবকিছু চলছে, কিন্তু এই অচল শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে কারো কোনো মাথাব্যথা নেই। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এক্ষেত্রে পর¯পরের প্রতি ভীষণ উদার ও সহানুভূতিশীল। এ ব্যাপারে তাদের একে অপরের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। ঠুনকো বিষয় নিয়েও এদেশে মিছিল-মিটিং দিনরাত চলমান থাকলেও জাতির এই নীরব অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে কারো কোনো মিছিল-মিটিং দেখা যায় না। না শিক্ষকদের পক্ষ থেকে, না শিক্ষার্থীদের। এভাবে মাস শেষে শিক্ষকদের বেতন গোনা আর বছর শেষে শিক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট ফি প্রদানের বিপরীতে অনার্স-মাস্টার্স সার্টিফিকেট অর্জনের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলেছে এদেশের অন্তঃসারশূন্য শিক্ষাব্যবস্থা।
দায়িত্বহীন শিক্ষক- শব্দবন্ধটি বাংলাদেশের মতো এত প্রাসঙ্গিক বোধ হয় পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে নেই। মানুষ গড়ার রক্ষক হয়ে কীভাবে ভক্ষক হয়ে যান, কীভাবে নিজের রুটি-রুজি ঠিক রাখতে অবলীলায় জাতির ভবিষ্যতের বিনাশ সাধনে ভূমিকা রাখতে পারেন, তার দৃষ্টান্ত বোধহয় কেবল বাংলাদেশই। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা গোল্লায় যাক, তাতে তাদের বিন্দুমাত্র মাথাব্যথা নেই। ছাপোশা কেরানীর মতো তাদের নজর কেবল প্রমোশন আর বেতন বৃদ্ধির খবরে। জাতি গঠনের সামান্যতম দায়ও যেন তারা বোধ করেন না। ফলে সমাজ গড়ার কারিগরদের নামই এখন বেশি আসে দুর্নীতি ও অপকর্মের হোতাদের তালিকায়।
এদেশের ব্যবসায়ীরাও শিক্ষার উন্নয়নে বিনিয়োগ করেন না, বরং রাষ্ট্রকে নিয়ন্ত্রণে রেখে বিদেশে টাকা পাচার করাই তাদের কামিয়াবীর দর্শন। নতুবা খেলাধুলা আর বিনোদনে যেভাবে তারা দেদারছে অর্থ বিলান, শিক্ষার উন্নয়নে সেরূপ কোনো উদ্যোগ আমাদের চোখে পড়ে না। কখনও শোনা যায়নি যে, গবেষণার জন্য কোনো শিল্প গোষ্ঠী বড় কোনো বরাদ্দ দিয়েছে। ধর্মীয় শিক্ষার জন্য জাকাতের টাকা থেকে কিছু বরাদ্দ রেখেই তারা তাদের দায়িত্ব শেষ মনে করেন। ফলে এদেশে উন্নয়নের মহড়া আছে, কিন্তু বাস্তবে কিছু নেই। দেশে কোনো মেধাবী টেক জায়ান্ট নেই, বিজনেস জায়ান্ট নেই, শিক্ষা জায়ান্ট নেই, বড় আলম বা বিদ্বান নেই। হাজী মুহাম্মাদ মুহসিন কিংবা স্যার সলিমুল্লাহদের মতো শিক্ষানুরাগী দানশীলদের কোনো দেখা নেই। আছে কেবল ভাবধরা বুদ্ধিজীবী সমাজ, যাদের মুখঃনিসৃত জ্ঞান বিতরণ কেবল সেমিনার কক্ষেরই রওনক বৃদ্ধি করে, জাতির উন্নয়নে বিশেষ কাজে আসে না।
এদেশে শিক্ষার যা কিছু এখনও অবশিষ্ট রয়েছে, তার পিছনে মূল অবদান বেসরকারি ও অনানুষ্ঠানিক খাতের। বেসরকারি স্কুল-মাদ্রাসাগুলো হাজারো বাধা-বিঘœতার মধ্যে সাধ্যমত দেশের শিক্ষার উন্নয়নে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। ফলে সেখানে দক্ষ, যোগ্য ও আন্তরিক শিক্ষক-স্টাফ পাওয়া যায়। প্রতিযোগিতামূলক সার্ভিস থাকায় আশানুরূপ যতœও পায় শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষাব্যবস্থার এই গহীন অমানিশার মাঝেও আমরা নিরাশার ঘোরে সবকিছু হারাতে চাই না। বরং এর মধ্যেও আমরা কিছু আশার আলো দেখছি একারণে যে, আমাদের বৃহত্তর সংখ্যক অভিভাবকই এখন তাদের সন্তানদের সু‹লে পাঠানোর পরিবর্তে মাদ্রাসায় পাঠানো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছেন। এত যে নাস্তিক্যবাদী প্রচারণা চলমান রয়েছে, তবুও শিক্ষার্থীদের মাঝে বোরকা, হিজাব এবং দাঁড়ি রাখার প্রবণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সুতরাং এই চরম বিপর্যয়কর পরিস্থিতিতে আমরা হতাশবাদী নই; বরং এ অবস্থা সামাল দিতে হলে আমাদের কিছু করণীয় নির্ধারণ করতে চাই। যেমন:
১. সরকারিভাবে পরীক্ষা পদ্ধতি তুলে দেয়ার চিন্তা করা হলেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত হবে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় পরীক্ষাপদ্ধতি ও মূল্যায়নব্যবস্থা চালু রাখা। কেননা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে পরীক্ষা ব্যবস্থা তুলে দেয়া এক সর্বনাশা সিদ্ধান্ত, যা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে প্রতিযোগিতার মনোভাব দূরীভূত করে তাদের একটা লক্ষ্যহীন হযবরল অবস্থায় ফেলে দিয়েছে। তবে গতানুগতিক মুখস্থবিদ্যার পরিবর্তে এমসিকিউ/বিষয়ভিত্তিক পরিষ্কার ধারণা, বিশ্লেষণ দক্ষতা প্রভৃতি যাচাইমূলক প্রশ্ন রাখতে হবে।
২. ক্যারিয়ার বিষয়ক সেমিনারের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সচেতন করা জরুরি, যেন দাখিল/এসএসসির মধ্যেই তারা পেশাগত লক্ষ্য স্থির করে ফেলে। গতানুগতিক অনার্স/ মাস্টার্স/বিসিএস-এর মতো সময়সাপেক্ষ উচ্চাভিলাসী চিন্তার পিছনে না ছুটে প্রয়োজন ও চাহিদার ভিত্তিতে বাস্তবভিত্তিক হালাল রুজি উপার্জনের ব্যবস্থা গ্রহণ করে। ব্যবসা/কারিগরি/টেকনিক্যাল প্রভৃতি সেক্টর এখন বিপুল সম্ভাবনাময় এবং কম সময়ক্ষেপণকারী। এজন্য প্রতিটি প্রতিষ্ঠানেই ‘ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং’ বিভাগ থাকা আবশ্যক, যেন শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে যথাযথ পরামর্শ প্রদান করা যায়।
৩. শিক্ষার প্রতিটি স্তরে দ্বীন শিক্ষা বাধ্যতামূলকভাবে গ্রহণ করতে হবে। এজন্য কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জন্য বৈকালিক মক্তব/সাপ্তাহিক মক্তব/আফটার স্কুল মক্তব/অনলাইন পাঠশালা প্রভৃতি অনানুষ্ঠানিক ধারাগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে, তেমনি যুবক ও বৃদ্ধদের জন্যও প্রতিষ্ঠান, মসজিদ এবং অনলাইনভিত্তিক শিক্ষাধারাকে সহজলভ্য করতে হবে।
৪. অভিভাবকদের সচেতন করাও অতীব জরুরি, যেন শিক্ষাব্যবস্থার এই বিপর্যয় থেকে তারা সন্তানকে রক্ষার উদ্যোগ নেন। এজন্য সন্তানদের জন্য সঠিক দ্বীনী প্রতিষ্ঠান নির্বাচন করা জরুরি। প্রয়োজনে এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গঠনের জন্য নিজেই উদ্যোগ নিতে হবে। সেটা সম্ভব না হলে অনানুষ্ঠানিক শিক্ষা উদ্যোগগুলোর সাথে সন্তানকে বাধ্যতামূলক যুক্ত করে দিতে হবে।
৫. সর্বোপরি চলমান শিক্ষাক্রম বাতিলের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে এবং যুগোপযোগী শিক্ষার্থী গড়ে তোলার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হবে।
লেখক : চেয়ারম্যান,
হাদীছ ফাউন্ডেশন শিক্ষাবোর্ড।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

বাংলাদেশ ও মালদ্বীপ জলবায়ু কূটনীতিতে একযোগে কাজ করবে : পরিবেশ মন্ত্রী

বাংলাদেশ ও মালদ্বীপ জলবায়ু কূটনীতিতে একযোগে কাজ করবে : পরিবেশ মন্ত্রী

দুধকুমার নদের ভাঙ্গনে কবর বিলীন, বেড়িয়ে এলো আট বছর আগে দাফন করা লাশ

দুধকুমার নদের ভাঙ্গনে কবর বিলীন, বেড়িয়ে এলো আট বছর আগে দাফন করা লাশ

অবৈধভাবে নির্মিত সাদিক এগ্রোর স্থাপনা উচ্ছেদ করবে ডিএনসিসি

অবৈধভাবে নির্মিত সাদিক এগ্রোর স্থাপনা উচ্ছেদ করবে ডিএনসিসি

যে পেনশন স্কিম শিক্ষকদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে তা সম্পূর্ণ বৈষম্যমূলক : ড. জিনাত হুদা

যে পেনশন স্কিম শিক্ষকদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে তা সম্পূর্ণ বৈষম্যমূলক : ড. জিনাত হুদা

লক্ষাধিক সউদীগামী কর্মী বিপাকে!

লক্ষাধিক সউদীগামী কর্মী বিপাকে!

ইরান আগামী সপ্তাহে দুটি বড় স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করবে

ইরান আগামী সপ্তাহে দুটি বড় স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করবে

কাঞ্চন পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন দেওয়ান আবুল বাশার বাদশা

কাঞ্চন পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন দেওয়ান আবুল বাশার বাদশা

বুড়িগঙ্গায় ট্রলারের আগুনে একজনের মরদেহ উদ্ধার

বুড়িগঙ্গায় ট্রলারের আগুনে একজনের মরদেহ উদ্ধার

জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ কাল থেকে শুরু

জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা সপ্তাহ কাল থেকে শুরু

হাসিমুখে করমর্দন করলেন মোদি-রাহুল

হাসিমুখে করমর্দন করলেন মোদি-রাহুল

অর্থ সংস্থান না থাকায় এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের অবসরভাতা ৬ মাসে দেওয়া সম্ভব নয় : শিক্ষামন্ত্রী

অর্থ সংস্থান না থাকায় এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের অবসরভাতা ৬ মাসে দেওয়া সম্ভব নয় : শিক্ষামন্ত্রী

ভারতের পার্লামেন্টে ‘জয় ফিলিস্তিন’ বলে আওয়াজ দিলেন আসাদউদ্দিন ওয়াইসি

ভারতের পার্লামেন্টে ‘জয় ফিলিস্তিন’ বলে আওয়াজ দিলেন আসাদউদ্দিন ওয়াইসি

সমাজ পরিবর্তনে সার্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থার বিকল্প নেই : প্রেসিডেন্ট

সমাজ পরিবর্তনে সার্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থার বিকল্প নেই : প্রেসিডেন্ট

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানে জাতীয় লজিস্টিক নীতি হবে অন্যতম চালিকাশক্তি: তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া

স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানে জাতীয় লজিস্টিক নীতি হবে অন্যতম চালিকাশক্তি: তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া

চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম বাগান পরিদর্শনে যাচ্ছেন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত

চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম বাগান পরিদর্শনে যাচ্ছেন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত

আখাউড়া থানা পুলিশের অভিযানে ৯০টি স্কফসহ ১ জন গ্রেফতার

আখাউড়া থানা পুলিশের অভিযানে ৯০টি স্কফসহ ১ জন গ্রেফতার

চট্টগ্রাম বোর্ডে এইচএসসি পরীক্ষার্থী ১ লাখ ৬ হাজার

চট্টগ্রাম বোর্ডে এইচএসসি পরীক্ষার্থী ১ লাখ ৬ হাজার

প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশ উন্নয়নের রোড মডেল হয়েছে : নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে দেশ উন্নয়নের রোড মডেল হয়েছে : নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী

নড়িয়ায় গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু

নড়িয়ায় গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু

সাংবাদিকদের সাথে পুলিশের দ্বন্ধ আলোচনার মধ্য দিয়ে নিরসন হবে - আইজিপি

সাংবাদিকদের সাথে পুলিশের দ্বন্ধ আলোচনার মধ্য দিয়ে নিরসন হবে - আইজিপি