সড়ক খোঁড়াখুঁড়ির দুর্ভোগ কবে নিরসন হবে?

Daily Inqilab ইনকিলাব

২৫ মে ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ২৫ মে ২০২৪, ১২:০৫ এএম

রাজধানীতে বছরের পর বছর ধরে সড়কে খোঁড়াখুঁড়ির দুর্ভোগ নগরবাসীর যেন ললাট লিখন হয়ে দাঁড়িয়েছে। উন্নয়নের নামে এ দুর্ভোগ থেকে তাদের রেহাই মিলছে না। উন্নয়ন অবশ্যই দরকার। তবে উন্নয়ন নগরবাসীকে খুব বেশি দুর্ভোগে না ফেলেও করা যায়। দুঃখের বিষয়, এ বিষয়টি কখনোই আমলে নেয়া হচ্ছে না। যখন খুশি তখন সড়ক খোঁড়াখুঁড়ির কারণে রাজধানীর পরিবেশও মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি দূষিত হচ্ছে বায়ু। বিগত বছরগুলোতে বায়ুদূষণে রাজধানী বিশ্বের শীর্ষ তালিকায় রয়েছে। পরিবেশবিদরা বায়ুদূষণ রোধে বারবার সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেয়ার তাকিদ দিলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কেউই বিষয়টিকে খুব একটা আমলে নিচ্ছে না। বলার অপেক্ষা রাখে না, বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি ও বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কর্মকা- থেকে উত্থিত ধুলাবালি। বায়ুদূষণ প্রতিরোধে যে ধরনের সুরক্ষা ও নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন, তা উন্নয়ন প্রকল্পের কর্তৃপক্ষ নেয় না। সড়ক খোঁড়াখুঁড়িতে নিয়মমানার কোনো বালাই নেই। একবার সড়ক খুঁড়ে মাসের পর মাস ফেলে রাখা হয়। সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেয়া হয় না। দীর্ঘসময় সড়ক মেরামত না করার ফলে নগরবাসীর ভোগান্তির অন্ত থাকে না। এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো ভ্রুক্ষেপ পরিলক্ষিত হয় না।

রাজধানীতে সচ্ছন্দে চলাফেরা করার জন্য যে পরিমাণ সড়ক থাকা প্রয়োজন, তা নেই। সাধারণত রাজধানীর মোট আয়তনের ২৫ ভাগ সড়ক থাকতে হয়। ঢাকায় রয়েছে ৭ শতাংশের মতো। এসব সড়কের আবার বেশিরভাগই নানাভাবে অবৈধ দখল হয়ে পরিমান আরও কমিয়ে দিয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ সড়কের অর্ধেক জুড়েই যানবাহন পার্ক করে রাখা হয়। এর মধ্যে সড়ক খুঁড়লে তা সরুগলির মতো হয়ে যায়। এই সড়কের মধ্য দিয়ে হাজার হাজার গাড়ি যখন চলাচল শুরু করে তখন পরিস্থিতি কী দাঁড়ায়, তা ভুক্তভোগী ছাড়া কেউ জানে না। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে রাজধানীর ব্যস্ততম ও বাণিজ্যিক এলাকাগুলোতে কোনো ধরনের পরিকল্পনা ছাড়া নির্বিচারে সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। মতিঝিল, গুলিস্তান, ইত্তেফাক মোড়, টিকাটুলি, মালিবাগ, রাজারবাগ, পরীবাগ, কমলাপুর, সেগুন বাগিচাসহ অন্যান্য এলাকায় সড়ক খোঁড়াখুঁড়ির ফলে যানবাহন চলাচলে অসহনীয় দুর্ভোগের সৃষ্টি হচ্ছে। ঘন্টার পর ঘন্টা এসব এলাকায় যানজট লেগে থাকে। এসব এলাকা দিয়ে চলাফেরার সময় প্রচ- তাপদাহ এবং ধুলাবালিতে যাত্রী ও পথচারিদের প্রাণ ওষ্ঠাগত হওয়ার উপক্রম হয়। অনেকে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছে। অনেক সময় যানবাহন গর্তে আটকে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। সড়ক পার হতে গিয়ে মানুষও গর্তে পড়ে আহত হচ্ছে। এই জনদুর্ভোগ দ্রুত নিরসনে কোনো উদ্যোগ ও পদক্ষেপ দেখা যায় না। সড়ক খোঁড়াখুঁড়ির সময়, নিয়ম-কানুন সবই রয়েছে। যত্রতত্র এবং যখন খুশি তখন খোঁড়াখুঁড়ি দেখে মনে হয় না, নিয়ম কানুনের তোয়াক্কা করা হচ্ছে। ঢাকা ওয়াসা, বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ, তিতাস গ্যাসসহ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সড়ক খোঁড়ার নিয়মকানুন মানছে বলে প্রতীয়মান হয় না। এক সংস্থা সড়ক খুঁড়ে কোনোরকমে বালু ফেলে ভরাট করে গেলে আরেক প্রতিষ্ঠান এসে খোঁড়া শুরু করে। খোঁড়া শেষে তা মাসের পর মাস চলে যায়, মেরামতের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়ে না। এতে ধুলোবালি যেমন উড়ে, তেমনি বৃষ্টিতে কাদা হয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। বলার অপেক্ষা রাখে না, সড়ক মানুষের কর্মস্থলে গমন ও চলাফেরার লাইফ লাইন হিসেবে কাজ করে। খোঁড়াখুঁড়ির ফলে যেকোনো একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়লে সর্বত্র চলাফেরা ব্যহত হয়। দুর্ভোগের সীমা থাকে না। যানজট লেগে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। বিগত কয়েক মাস ধরে উল্লেখিত এলাকাগুলোতে যানবাহন চলাচল ও মানুষের যে দুর্ভোগ চলছে, তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। অথচ নিয়ম রয়েছে, সড়ক খোঁড়া এবং কাজ শেষে তা সঙ্গে সঙ্গে মেরামত করা। তা নাহলে, শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে। দেখা যাচ্ছে, এ নিয়ম মানা হচ্ছে না। মানা হলে, সড়ক খোঁড়া শেষ হওয়ার সাথে সাথেই তা মেরামত হতো। মাসের পর মাস জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হতো না।

উন্নয়নের নামে রাজধানীতে সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি কবে শেষ হবে, তা কেউ বলতে পারে না। দেশে উন্নয়নের ঢামাঢোল বাজানো হলেও রাজধানীকে আজ পর্যন্ত চলাচল কিংবা বসবাসের উপযোগী করে গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। অথচ উন্নয়নের প্রতিচ্ছবি হিসেবে রাজধানীকে গণ্য করা হয়। এর সার্বিক পরিবেশ ও বিশৃঙ্খল অবস্থা দেখে বোঝার উপায় নেই, দেশ উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলছে। রাজধানীর সেবা, সৌন্দর্য এবং সচ্ছন্দ চলাফেরার ক্ষেত্রে দুই সিটি করপোরেশনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে। এ নিয়ে দুই মেয়রকে বড় বড় কথা বলতে শোনা যায়। তাদের এসব কথা বাস্তবায়ন হতে দেখা যায় না। ফলে তাদের কথা বাগাড়ম্বরে পরিণত হয়েছে। তারা সড়ককে আজও চলাচল উপযোগী করে তুলতে পারেননি। কোনো কাজেই যেন জবাবদিহিতা নেই। নগরবিদরা বহুবার সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয়ের মাধ্যমে উন্নয়ন কাজ করার জন্য বলেছেন। সমন্বয় দূরে থাক, যে যার খুশিমতো সড়ক খোঁড়াখুঁড়ি করে চলেছে। কবে সমন্বয় ও শৃঙ্খলার মধ্যে আসবে, তা অনিশ্চিত। সামনে বৃষ্টি ও বর্ষা মৌসুম। দেখা যাচ্ছে, নগরজুড়ে সড়ক খোঁড়াখুঁড়ির যে মচ্ছব চলছে, তা ওই সময় পর্যন্ত চলতেই থাকবে। এতে যে নগরবাসীর ভোগান্তি চরমে পৌঁছবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে, দুই সিটি করপোরেশনসহ সেবামূলক প্রতিষ্ঠানগুলো কি কোনো পদক্ষেপ নেবে? নাগরিক দুর্ভোগ মোচনে সড়ক খুঁড়ে তা সঙ্গে সঙ্গে মেরামতের ব্যবস্থা নিতে হবে। যে ঠিকাদার বা প্রতিষ্ঠান তা না করবে, তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। মাসের পর মাস জনদুর্ভোগ ও পরিবেশ দূষণ চলতে থাকবে, সেটা কোনোভাবেই বরদাস্ত করা যায় না।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

দায়িত্বপ্রাপ্তদের অবহেলায় সুন্দরবনের মধু জিআই মর্যাদা হারিয়েছে : দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

দায়িত্বপ্রাপ্তদের অবহেলায় সুন্দরবনের মধু জিআই মর্যাদা হারিয়েছে : দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

এলজিইডির এক প্রকৌশলীর ধূমপানের ভিডিও ঘুরছে চোখে চোখে !

এলজিইডির এক প্রকৌশলীর ধূমপানের ভিডিও ঘুরছে চোখে চোখে !

প্রবাসীদের আইনি সুরক্ষার জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন জরুরি- এডভোকেট মনজিল মোরসেদ

প্রবাসীদের আইনি সুরক্ষার জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন জরুরি- এডভোকেট মনজিল মোরসেদ

খালেদা জিয়া মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন : মির্জা ফখরুল

খালেদা জিয়া মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন : মির্জা ফখরুল

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের এক বছর চুক্তির মেয়াদ বাড়ল

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের এক বছর চুক্তির মেয়াদ বাড়ল

মুক্ত জীবনে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ, ফিরেছেন তার জন্মভূমি অস্ট্রেলিয়ায়

মুক্ত জীবনে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ, ফিরেছেন তার জন্মভূমি অস্ট্রেলিয়ায়

বৃষ্টি কমছে, কমছে নদ-নদীর পানি দৃশ্যমান হচ্ছে ক্ষয়ক্ষতি, সিলেটে বিভিন্ন খাতে ক্ষতির পরিমাণ আপাতত ৮ শত কোটি!

বৃষ্টি কমছে, কমছে নদ-নদীর পানি দৃশ্যমান হচ্ছে ক্ষয়ক্ষতি, সিলেটে বিভিন্ন খাতে ক্ষতির পরিমাণ আপাতত ৮ শত কোটি!

ভারতকে করিডোর দিয়ে শেখ হাসিনা খাল কেটে কুমির এনেছেন: রিজভী

ভারতকে করিডোর দিয়ে শেখ হাসিনা খাল কেটে কুমির এনেছেন: রিজভী

মহাসড়ক বিভাগের সচিব হিসেবে আরও এক বছর থাকছেন আমিন উল্লাহ নুরী

মহাসড়ক বিভাগের সচিব হিসেবে আরও এক বছর থাকছেন আমিন উল্লাহ নুরী

যুক্তরাষ্ট্রকে কি শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনের সমালোচনা করার মূল্য দিতে হচ্ছে : প্রশ্ন দ্য ডিপ্লোম্যাট

যুক্তরাষ্ট্রকে কি শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনের সমালোচনা করার মূল্য দিতে হচ্ছে : প্রশ্ন দ্য ডিপ্লোম্যাট

দু’পক্ষের মারামারির পর মাদ্রাসায় আগুন, নারীসহ আহত ৭

দু’পক্ষের মারামারির পর মাদ্রাসায় আগুন, নারীসহ আহত ৭

আইএসডি’র উদ্যোগে কার্নেগি মেলন রোবোটিক্স সামার ক্যাম্প আয়োজিত

আইএসডি’র উদ্যোগে কার্নেগি মেলন রোবোটিক্স সামার ক্যাম্প আয়োজিত

পরিকল্পনার অভাবে ইউরোপের শ্রমবাজার হারাচ্ছে বাংলাদেশ সংবাদ সম্মেলনে রাবিড নেতৃবৃন্দ

পরিকল্পনার অভাবে ইউরোপের শ্রমবাজার হারাচ্ছে বাংলাদেশ সংবাদ সম্মেলনে রাবিড নেতৃবৃন্দ

বাংলাদেশ ও মালদ্বীপ জলবায়ু কূটনীতি ও ইকো-ট্যুরিজম সম্প্রসারণে একযোগে কাজ করবে : পরিবেশমন্ত্রী

বাংলাদেশ ও মালদ্বীপ জলবায়ু কূটনীতি ও ইকো-ট্যুরিজম সম্প্রসারণে একযোগে কাজ করবে : পরিবেশমন্ত্রী

মোদি সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানানোর প্রতিশ্রুতি রাহুল গান্ধীর

মোদি সরকারকে চ্যালেঞ্জ জানানোর প্রতিশ্রুতি রাহুল গান্ধীর

ভারতের সাথে রেল করিডোর চুক্তি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের উপরে কুঠারাঘাত : গণঅধিকার পরিষদ

ভারতের সাথে রেল করিডোর চুক্তি বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের উপরে কুঠারাঘাত : গণঅধিকার পরিষদ

আরিফুল ইসলাম জেনেভায় বাংলাদেশের নতুন স্থায়ী প্রতিনিধি

আরিফুল ইসলাম জেনেভায় বাংলাদেশের নতুন স্থায়ী প্রতিনিধি

পাকিস্তানে গণতন্ত্রকে সমর্থন করার প্রস্তাব পাস মার্কিন সংসদে

পাকিস্তানে গণতন্ত্রকে সমর্থন করার প্রস্তাব পাস মার্কিন সংসদে

হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ উ. কোরিয়ার, মাঝ-আকাশেই বিস্ফোরিত

হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ উ. কোরিয়ার, মাঝ-আকাশেই বিস্ফোরিত

‘পাকিস্তানে সন্ত্রাসীদের অর্থ দিচ্ছে ভারত’

‘পাকিস্তানে সন্ত্রাসীদের অর্থ দিচ্ছে ভারত’