লক্কড়ঝক্কড় যানবাহন আর কতকাল চলবে?

Daily Inqilab ইনকিলাব

২৬ মে ২০২৪, ১২:১০ এএম | আপডেট: ২৬ মে ২০২৪, ১২:১০ এএম

রাজধানীতে লক্কড়ঝক্কড় ও ত্রুটিপূর্ণ বাস চলাচল বহু বছর ধরেই চলছে। এসব বাসের অধিকাংশের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও তা বন্ধ করা যাচ্ছে না। বিআরটিএ বারবার বন্ধের কিংবা সেগুলো মেরামত করে চালানোর সময়সীমা বেঁধে দিলেও তা মানা হচ্ছে না। গত ২ এপ্রিল বিআরটিএ’র সাথে এক সভায় বাস মালিকরা রাজধানী থেকে ভাঙাচোরা, রংচটা ও ফিটনেসবিহীন বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়ার আশ্বাস দেয়। তারা এসব গাড়ি ফিট করতে ৩১ মে পর্যন্ত সময় চায়। বিআরটিএ তাদের প্রস্তাবে রাজী হয়ে ১ জুন থেকে এসব বাসের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করবে বলে জানিয়ে দেয়। দেখা যাচ্ছে, এ সময়ের মধ্যে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। মালিকরা বাসের ফিটনেস ও সংস্কার কাজ খুব একটা করেনি। এমতাবস্থায়, গত ১৬ মে বিআরটিএ সময় বাড়িয়ে ১ জুলাই সাঁড়াশি অভিযানের ঘোষণা দিয়েছে। বিআরটিএ এ ধরনের ঘোষণা অতীতেও অনেকবার দিয়েছিল। তাতে কোনোই কাজ হয়নি। মালিকরা আশ্বাস দিয়েও সাড়া দেয়নি। বরং অভিযান চালালে তারা অঘোষিতভাবে ধর্মঘট করে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়। এতে যাত্রীরা অসহনীয় দুর্ভোগের মধ্যে পড়ে। লক্কড়ঝক্কড় ও ফিটনেসবিহীন গাড়ি বন্ধে বিআরটিএ এবং মালিকদের মধ্যকার এই ‘ইঁদুর বেড়াল খেলা’ কবে বন্ধ হবে, তা কেউ বলতে পারে না।

যেকোনো দেশের রাজধানীর গণপরিবহনের শৃঙ্খলা, সুযোগ-সুবিধা ও দৃষ্টিনন্দন অবয়ব, সে দেশের রুচি ও সৌন্দর্যের পরিচয় তুলে ধরে। উন্নত বিশ্বে গণপরিবহন ব্যবস্থা এতটাই উন্নত ও শৃঙ্খলাবদ্ধ যে, যাত্রীদের অনেকে নিজস্ব গাড়ি থাকা সত্ত্বেও গণপরিবহনকে বেছে নেয়। সিঙ্গাপুরে সরকার গণপরিবহন ব্যবস্থা এতটাই উন্নত করে দিয়েছে যে, দেশটিতে কেউ চাইলেই প্রাইভেট কার কিনতে পারে না। কিনতে গেলে অনেক কঠিন প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। সরকারকে জাবাবদিহি করতে হয়। কারণ, সরকার যাতায়াত ব্যবস্থাকে এতটাই উন্নত করে দিয়েছে যে, প্রাইভেট কারের প্রয়োজন পড়ে না। পুরো গণপরিবহন ব্যবস্থাকে নিয়মের মধ্যে বেঁধে দিয়েছে। যাত্রীরাও তাতে খুশি। আমাদের সরকারের কর্তাব্যক্তিরা কথায় কথায় উন্নয়নের দিক থেকে সিঙ্গাপুরকেও ছাড়িয়ে গেছি দাবি করেন। এ দাবি যে অসার, তাতে সন্দেহ নেই। রাজধানী ঢাকার গণপরিবহন ব্যবস্থা ও সিঙ্গাপুরের গণপরিবহন ব্যবস্থার দিকে দৃষ্টি দিলেই পার্থক্যটা বুঝতে কষ্ট হয় না। তাহলে আমরা কি উন্নয় করলাম? বরং দিন দিন গণপরিবহন ব্যবস্থার এতটাই অবনতি হয়েছে যে, যাত্রীদের লক্কড়ঝক্কড় ও ফিটনেসবিহীন বাসে চড়তে হচ্ছে। এসব বাসের ভাঙা ও ময়লা সিট, জানালার গ্লাস ভাঙা, ফ্যান নেই, ভেতরের পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর, সামনে পেছনের লাইট থাকে না, রংচটা ও কালো ধোঁয়া নিঃসরণ করে পরিবেশকে বিষাক্ত করে দিচ্ছে। রাজধানীর বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ হয়ে রয়েছে এসব আনফিট বাস। শুধু রাজধানী নয়, বিভাগীয় শহর থেকে শুরু করে জেলা শহরেও আনফিট যানবাহন অবাধে চলাচল করছে। সঙ্গতকারণেই প্রশ্ন উঠে, সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় ও বিআরটিএ কি করছে? কেন গণপরিবহন ব্যবস্থাকে উন্নত করতে পারছে না? বহু বছর ধরেই দেখা যাচ্ছে, এসব পরিবহনের বিরুদ্ধে অভিযান চলালে মালিকরা অঘোষিতভাবে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়। অভিযান বন্ধ হলে আবার চালু করে। এর মাঝে পড়ে যাত্রীদের দুর্ভোগের সীমা থাকে না। অনেক সময় এ কথা শোনা যায়, বাস মালিকদের কাছে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জিম্মি হয়ে আছে। বাস মালিকদের বেশিরভাগই সরকারি দলের লোকজন। ফলে সরকারও কিছু বলতে পারে না। সরকারকে ছাড় দিয়ে চলতে হয়। এভাবে যদি চলতে থাকে, তাহলে গণপরিবহন কিভাবে উন্নত হবে? নাম প্রকাশ না করে বিআরটিএ’র ভ্রাম্যমাণ আদালতের একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গণমাধ্যমকে বলেছেন, অতীতে যখনই রাজধানীর ফিটনেসবিহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে ঘোষণা দিয়ে অভিযান শুরু হয়েছে, তখনই মালিক-শ্রমিকরা অঘোষিত ধর্মঘট করে। অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হলেই তারা যাত্রীদের জিম্মি করে ফেলে। তাঁর এ কথা থেকে মনে হতে পারে, সরকারের চেয়েও বাস মালিকরা যেন বেশি শক্তিশালী।

গণপরিবহন উন্নত ও আরামদায়ক করলে যাত্রীসংখ্যা বৃদ্ধি এবং কম সময়ে গন্তব্যস্থলে যে পৌঁছা যায়, তার অন্যতম উদাহরণ মেট্রোরেল। আধুনিক এই পরিবহনের কারণে অনেকে নিজের প্রাইভেট কার রেখে মেট্রোরেলকে বেছে নিয়েছে। প্রতিদিন ছয়-সাত লাখ মানুষ রাজধানীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে আরামে যাতায়াত করতে পারছে। একইভাবে, সড়কের গণপরিবহন সুশৃঙ্খল, আধুনিক ও আরামদায়ক হলে যাত্রীরা যেমন আগ্রহী হয়ে উঠবে, তেমনি যানজট ও পরিবেশ দূষণ কামাতেও সহায়ক হবে। উন্নত বিশ্বের মতো পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। এজন্য প্রয়োজন, সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত, পরিকল্পনা এবং তা বাস্তবায়ন। যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত করতে সরকারকে পরিবহন খাত নিয়ে আলাদাভাবে প্রকল্প হাতে নিতে হবে। সরকারকে এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিয়ে রাজধানী থেকে লক্কড়ঝক্কড়, ফিটনেসবিহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ পরিবহন তুলে দিতে হবে। এ ব্যাপারে বাস মালিকদেরকে বাধ্য করতে হবে। তা নাহলে, বছরের পর বছর ধরে চলা এসব গণপরিবহন কোনোভাবেই সড়ক থেকে সরানো যাবে না। অভিযানেও কাজ হবে না। সরকারকে রাজধানীর প্রত্যেক রুট নির্ধারণ করে সেখানে চাহিদানুযায়ী আধুনিক বাস দিতে হবে। এক্ষেত্রে বিআরটিসিকে কার্যকর করে তুলতে হবে। আধুনিক ও প্রযুক্তির যুগে এসে রাজধানীর গণপরিবহন লক্কড়ঝক্কড়, ফিটনেসবিহীন ও দৃষ্টিকটু হয়ে থাকবে, তা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

পশু কোরবানি দিতে গিয়ে আহত ৯৪

পশু কোরবানি দিতে গিয়ে আহত ৯৪

হরিরামপুরে সাপের কামড়ে দেড় বছরের শিশুর মৃত্যু

হরিরামপুরে সাপের কামড়ে দেড় বছরের শিশুর মৃত্যু

ফৌজদারহাাটে মালবাহী ট্রেন লাইনচ্যুত

ফৌজদারহাাটে মালবাহী ট্রেন লাইনচ্যুত

৭ দিনে পদ্মা সেতুতে ২৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকা টোল আদায়

৭ দিনে পদ্মা সেতুতে ২৫ কোটি ৭৩ লাখ টাকা টোল আদায়

যুদ্ধ মন্ত্রিসভা ভেঙে দিয়েছেন নেতানিয়াহু

যুদ্ধ মন্ত্রিসভা ভেঙে দিয়েছেন নেতানিয়াহু

কাদেরের বক্তব্যের জবাব দিতে ‘রুচিতে বাধে’ ফখরুলের

কাদেরের বক্তব্যের জবাব দিতে ‘রুচিতে বাধে’ ফখরুলের

ইউরোয় ‘বড় কিছুর’ লক্ষ্য রোনালদোর

ইউরোয় ‘বড় কিছুর’ লক্ষ্য রোনালদোর

ছোট পুঁজি নিয়েও আত্মবিশ্বাসী ছিলাম: শান্ত

ছোট পুঁজি নিয়েও আত্মবিশ্বাসী ছিলাম: শান্ত

কেন্দ্রীয় কৃষকলীগ নেতা সোহাগ তালুকদার আর নেই

কেন্দ্রীয় কৃষকলীগ নেতা সোহাগ তালুকদার আর নেই

জনগণের মধ্যে ‘ঈদের আনন্দ নেই: মির্জা

জনগণের মধ্যে ‘ঈদের আনন্দ নেই: মির্জা

ঈদ জামাতে মাথা ঘুরে পড়ে গেলেন আ জ ম নাছির

ঈদ জামাতে মাথা ঘুরে পড়ে গেলেন আ জ ম নাছির

সাড়ে ৩টার মধ্যে ৮০ শতাংশ বর্জ্য পরিষ্কার করেছে চসিক

সাড়ে ৩টার মধ্যে ৮০ শতাংশ বর্জ্য পরিষ্কার করেছে চসিক

মুসল্লীদের সাথে ভিজে ঈদ জামাতে শরীক হলেন সিসিক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান

মুসল্লীদের সাথে ভিজে ঈদ জামাতে শরীক হলেন সিসিক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান

ঈদ মোবারক

ঈদ মোবারক

বৃষ্টির তান্ডবে সিলেটে ঈদ উৎসবের সর্বনাশ : পশু জবাইয়ের আমেজে ভাটা

বৃষ্টির তান্ডবে সিলেটে ঈদ উৎসবের সর্বনাশ : পশু জবাইয়ের আমেজে ভাটা

শাসকগোষ্ঠী উল্লাসের ঈদ করছে আর বিএনপি নেতাকর্মীদের বাসায় চলছে শোকের মাতম : রিজভী

শাসকগোষ্ঠী উল্লাসের ঈদ করছে আর বিএনপি নেতাকর্মীদের বাসায় চলছে শোকের মাতম : রিজভী

ঈদের দিনেও রাজধানী ছেড়ে বাড়ি যাচ্ছেন মানুষ

ঈদের দিনেও রাজধানী ছেড়ে বাড়ি যাচ্ছেন মানুষ

কুড়িগ্রামে কচুক্ষেতে মিললো কীটনাশক ব্যবসায়ীর গলা কাটা লাশ

কুড়িগ্রামে কচুক্ষেতে মিললো কীটনাশক ব্যবসায়ীর গলা কাটা লাশ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আপন দুই ভাই নিহত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আপন দুই ভাই নিহত

ভিয়েতনামে একটি বাসায় আগুন লেগে তিন শিশুসহ ৪ জন নিহত

ভিয়েতনামে একটি বাসায় আগুন লেগে তিন শিশুসহ ৪ জন নিহত