সরকারকে প্রাত্যহিক সমস্যা সমাধানেও নজর দিতে হবে
০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:১৬ এএম | আপডেট: ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:১৬ এএম
ছাত্র-জনতার অভুত্থানের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচার হাসিনার পলায়নের পর ড.মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের বয়েস প্রায় ১ মাস হতে চলেছে। গত ১৬ বছরে রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান এবং অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। জাতির কাঁধের উপর জগদ্দল পাথরের মত চেপে বসা স্বৈরাচারের বিদায়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের যে নবযাত্রা সূচিত হয়েছে, সে পথের চ্যালেঞ্জ ও প্রত্যাশা ব্যাপক। প্রত্যাশিত পরিবর্তনের জন্য মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। কিন্তু ১৬ বছরের জঞ্জাল দু’এক মাসেই সাফ-সুতরো করার কোনো ম্যাজিক কারো হাতেই নেই। এর জন্য প্রথমে প্রয়োজন সঠিক কর্মপন্থা ও লক্ষ্য নির্ধারণ করে দৃঢ় পদক্ষেপে তা বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যাওয়া। ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রথম মাসের কর্মকান্ডে মানুষের মধ্যে এই প্রতীতি জম্মেছে যে, এই সরকার জনগণের প্রত্যাশা অনুসারে রাষ্ট্র সংষ্কার ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় উত্তরণের রোডম্যাপ বাস্তবায়নে সক্ষম হবে। একটি অনির্বাচিত, নির্দলীয় সরকারের পক্ষে অনেক কিছুই করা সম্ভব নয়। তবে হাজারো ছাত্র-জনতার রক্ত ও আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত একটি বিপ্লবী সরকারের পক্ষে অনেক কিছুই করা সম্ভব। স্বৈরাচার বিরোধী বিপ্লবী চেতনাকে ধারণ করে এই সরকার একটি মধ্যপন্থা অবলম্বন করে তার অভীষ্ঠ লক্ষ্যে যাত্রা করেছে। ইতিমধ্যে দেশের অর্থনীতি এবং রেমিটেন্স প্রবাহে একটি আশাব্যঞ্জক পরিবর্তনের আভাস লক্ষ্যণীয় হয়ে উঠেছে। ৫ আগষ্টের পর মাত্র ২৫ দিনে দেশে রেকর্ড পরিমান রেমিটেন্স প্রবাসি কর্মীরা পাঠিয়েছে। আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত মেট্টোরেল মেরামত করতে সাড়ে ৩শ’ কোটি টাকা খরচ এবং এক বছর সময় লাগবে বলে হাসিনা সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল। সরকারের মেয়াদ একমাস পূর্ণ হওয়ার আগেই মাত্র ৪০-৪৫ কোটি টাকা খরচ করে এই সরকার মেট্টোরেল চালু করতে সক্ষম হয়েছে।
ড.ইউনূসের খ্যাতি, তাঁর মেধা ও প্রজ্ঞার আলো দুর্দিন উত্তরণে জাতিকে পথ দেখাচ্ছে। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় বিদেশে থাকা বাংলাদেশিরা নানাভাবে অনেক বড় ভূমিকা পালন করেছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতে আইন অমান্য করে বাংলাদেশি কর্মীরা ছাত্র আন্দোলনের সাথে সংহতি জানিয়ে রাজপথে নেমে আসার অভিযোগে জুলাই মাসে ৫৭ বাংলাদেশিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ডে দন্ডিত করেছিল সে দেশের আদালত। ড. ইউনূস প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব গ্রহণের পর সে সব দন্ডিত বাংলাদেশীদের সাজা মওকুফের আহ্বান জানিয়েছিলেন। আমিরাতের প্রেসিডেন্ট শেখ নাহিয়ান সে আবেদনকে অগ্রাহ্য করেননি। তিনি সাজা মওকুফ করে তাদের দেশে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। দায়িত্ব গ্রহণের একমাসের মধ্যেই অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের জন্য একে অনেক বড় একটি কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবে গণ্য করা যায়। দেশ থেকে পাচার হওয়া হাজার হাজার কোটি ডলার দেশে ফেরত আনা এই সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকারমূলক লক্ষ্য বলে নির্ধারণ করা হয়েছে। ড. ইউনূসের বৈশ্বিক খ্যাতি ও ভাব-মর্যাদা এ ক্ষেত্রে অনেক বড় সাফল্য এনে দিতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন। পর্যবেক্ষকদের মতে, নতুন সরকার ঠিক পথেই চলছে। দেশে বিদেশে সরকারের আস্থা ও জনপ্রিয়তা বাড়ছে। তবে এই মুহূর্তে দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরার মত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সরকারকে আরো মনোযোগ দিতে হবে। এসব প্রাথমিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার মধ্য দিয়ে ভেঙ্গে পড়া রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে। সে ক্ষেত্রেও কার্যক্রম থেমে নেই। রাষ্ট্র মেরামত তথা সাংবিধানিক পরিবর্তনের জন্য ন্যুনতম একটি জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা অপরিহার্য। প্রধান উপদেষ্টা ইতিমধ্যে সে লক্ষ্যেও তার কার্যক্রম শুরু করেছেন।
পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অসহযোগীতা-নিস্ক্রিয়তা সত্ত্বেও দেশকে অস্থিতিশীল করতে ভারতের মদদে পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের একের পর এক নানামুখী ষড়যন্ত্র ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। এ সব মোকাবেলা করেই সরকার সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে। ইতিমধ্যে দেশের প্রতিনিধিত্বশীল রাজনৈতিক দলসহ সমাজের অংশীজনদের সাথে মত বিনিময়ের মাধ্যমে রাষ্ট্র সংস্কার ও নির্বাচনের রোডম্যাপ প্রণয়নের কাজ এগিয়ে চলেছে। গত মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টা ঢাকার শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্রসমুহের সম্পদকদের সাথে মতবিনিময় করেছেন। সেখানে অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের সম্ভাব্য মেয়াদকাল নিয়ে বিদ্যমান অনিশ্চয়তা দূর করতে সম্পাদকদের পক্ষ থেকে এই সরকারের মেয়াদ ২ থেকে ৩ বছরের মধ্যে হওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। সরকার অংশীজনদের সাথে আলোচনা অব্যাহত রাখবে। সেই সাথে বিগত সরকারের রেখে যাওয়া জঞ্জাল সরিয়ে দেশকে পরিচ্ছন্ন ও স্বচ্ছতার ধারায় এগিয়ে নিতে জনকল্যাণমুখী উন্নয়ন কার্যক্রমের দিকে মনোনিবেশ করতে হবে। ইতিমধ্যে জ্বালানি তেলের মূল্য কিছুটা কমানো হয়েছে। গণপরিবহনের চাঁদাবাজিও অনেকটা বন্ধ হয়েছে। মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে এসব পদক্ষেপের ইতিবাচক ফলাফল নিশ্চিত করতে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরের যানজট, পানিবদ্ধতা, ভাঙ্গাচোড়া রাস্তা মেরামত এবং ব্যাংকিং সেক্টরের তারল্য ও আস্থার সংকট দূরিকরণে কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন। শহরের চারপাশের নদী, খাল ও জলাভূমি দখল উদ্ধার ও সংস্কারের মত উদ্যোগগুলো এই সরকারকেই নিতে হবে। অর্থ পাচার সহ বিগত সময়ের বড় বড় কেলেঙ্কারির সাথে জড়িত রাঘব-বোয়ালদের গ্রেফতার করে বিচারের সম্মুখীন করা হচ্ছে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে যৌথ বাহিনীর অভিযান ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। যদিও পুলিশ বাহিনী এখনো পুরোপুরি সক্রিয় হয়ে উঠেনি। এই বাহিনীর আমূল সংস্কারের উদ্যোগ নিতে হবে। দুর্নীতি, লুন্ঠন, দখলদারিত্ব, দুর্বৃত্তায়ন ও বিচারহীনতার রাজনৈতিক সংস্কৃতি চিরতরে দূর করার কার্যক্রম এই সরকারকেই শুরু করতে হবে। নিরপেক্ষ-নির্মোহ দৃষ্টিভঙ্গি ও লক্ষ্য অর্জনে অবিচল দৃঢ়তা ছাড়া রাষ্ট্র মেরামতের মত কঠিন প্রত্যাশার বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে সেই দৃঢ় সঙ্কল্প রয়েছে বলে মুক্তিকামী মানুষের অটুট আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
ভারতে চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ‘নারী ডন’ গ্রেফতার
মঙ্গলে কিলবিল করছে মাকড়সা! অবশেষে রহস্যের সমাধান
বৈদেশিক মুদ্রা আইনের মামলায় সালমান-আনিসুল ৫ দিনের রিমান্ডে
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আরো চারটি হত্যা মামলা
ভারতে পুলিশ সদস্যের গুলিতে ২ সহকর্মী নিহত
কাজ করবে না অ্যান্টিবায়োটিক, প্রাণ হারাবে ৪ কোটি মানুষ!
ভারতকে ব্যাটিংয়ে পাঠাল বাংলাদেশ
বিদেশে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি
শেরপুরের পাঁচ থানার ওসি বদলি
রাজধানীতে বেপরোয়া ব্যাটারিচালিত রিকশা
২০৩৫ সালের মধ্যে আধুনিক স্মার্ট বন্দর তৈরি করবে চীন
লেবাননে ওয়াকিটকি বিস্ফোরণ, নিহত ২০
এস আলমের গৃহকর্মীর নামে ১৫ কোটি টাকার সম্পদ!
পরীক্ষা দিতে এসে আটক ছাত্রলীগের ৩ নেতাকর্মী
পিটিয়ে হত্যার আগে তরুণকে ভাত খেতে দিয়েছিল ঢাবি শিক্ষার্থীরা
জার্মানির চ্যান্সেলর নির্বাচনে শলৎসের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ম্যারৎস
রাজ্জাকের বিশ্ব রেকর্ড ভাঙলেন নেপালের ঝা
মেসির ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলা নিয়ে যা বললেন দে পল
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ গ্রেপ্তার
জাবিতে গণপিটুনির শিকার সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শামীম মারা গেছেন