পূজামণ্ডপে ইসলামী গান : কাকতালীয় না পরিকল্পিত?
১৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২:১০ এএম | আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২:১০ এএম
চট্টগ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী জে.এম. সেন হলে পূজা উপলক্ষে আয়োজিত সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় ‘চট্টগ্রাম কালচারাল একাডেমি’ নামের একটি সংগঠন দুটি গান পরিবেশন করে। গান দুটি ছিল বাউল সম্রাট আবদুল করিমের বিখ্যাত বাউল সংগীত ‘আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম’ এবং প্রিন্সিপাল চৌধুরী আব্দুল হালিমের লেখা ‘শুধু মুসলমানের লাগি আসেনিকো ইসলাম’।
জানা গেছে, ঐ সংগঠন মহানগর পূজা উদযাপন কমিটির যুগ্ম সম্পাদক সজল দত্তের আমন্ত্রণেই ওখানে যায়। পরিবেশনা শেষে সংগীত পরিবেশনকারীগণ তাদের দাওয়াত দানের জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ দিতে এবং একইভাবে উপস্থাপককে সংগীত পরিবেশনকারীদের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের সংগীত পরিবেশনের জন্য সাধুবাদ জানাতে দেখা যায়। প্রথম গানটির ফোকাস ছিল হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতি, আর দ্বিতীয় গানে ইসলামে সর্ব ধর্মের জন্য সাম্যের যে বিধান রয়েছে তা তুলে ধরা হয়েছে।
পুরো বিষয়টি আয়োজক ও পরিবেশকদের পারস্পরিক সম্মতি ও সৌহার্দ্যের ভিত্তিতে ঘটে থাকলেও দর্শকদের একাংশ এটা ভালো চোখে দেখেননি। ঘটনার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার পর বিভিন্ন মহল থেকে অসন্তোষ প্রকাশ করা হতে থাকে। আলোচ্য সংগঠনটি জামায়াত ঘরানার এই ধারণার ভিত্তিতে জামায়াত-শিবিরের লোকজন পূজা-ম-পে উঠে জোরজবরদস্তি ইসলামী সংগীত পরিবেশন করেছে বলেও প্রচারণা শুরু হয়ে যায়। শুধু হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনই নয়, জামায়াত-শিবিরের রাজনীতিকে অপছন্দ করেন এমন অনেককেও এই প্রচারণার পালে হাওয়া দিতে দেখা যায়। পরিস্থিতির যাতে অবনতি না হয় তজ্জন্য স্থানীয় প্রশাসন হস্তক্ষেপ করে। ইতোমধ্যে পুলিশ দু’ জন সংগীত পরিবেশনকারীকে আটক করেছে। পরে তারা জামিনে মুক্ত হয়েছে। তবে পূজা কমিটির পক্ষে তাদের দাওয়াত দিয়ে ওখানে যিনি নিয়ে যান সেই সজল দত্তের খোঁজ নেই।
ক্ষমতায় আসা ও ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য পতিত স্বৈরাচার দেশে ও দেশের বাইরে প্রধান যে ন্যারেটিভটি দাঁড় করিয়েছিল সেটা হলো ইসলামী মৌলবাদ ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান। এর দ্বারা তারা মূলতঃ জামায়াত-শিবিরকে বুঝিয়ে থাকলেও বিএনপিকেও তাদের ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে দেখানো হয়ে আসছিল। পশ্চিমাদের ইসলামভীতিকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য এটা ছিল তাদের প্রধান অস্ত্র। এদেশের জাতীয়তাবাদী ও ইসলামপন্থী শক্তির ভারত বিরোধী অবস্থানের কারণে ভারতও পতিত শক্তিটিকে যেকোন মূল্যে ক্ষমতায় দেখতে চেয়ে এসেছে। গণঅভ্যুত্থানে স্বৈরাচারের পতনের পরও তাদের অনুসারিরা পশ্চিমাদের কাছে এদেশের পটপরিবর্তনকে একটি ইসলামিস্ট অভ্যুত্থান হিসেবে দেখানোর জন্য দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিকল্পিতভাবে সাম্প্রদায়িক হানাহানি সৃষ্টির চেষ্টা করে যাচ্ছে বলে মনে করা হয়। প্রতিবেশী রাষ্ট্রের রাজনীতিকগণ ও মিডিয়া এ দেশের পটপরিবর্তনকে বিশ্বের কাছে একই ধারায় চিত্রায়িত করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের উদ্দেশ্য, এভাবে যদি নতুন সরকারের বিরুদ্ধে পশ্চিমা বিশ্বকে বৈরী করে তোলা যায়।
সন্দেহ নেই, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন এই বাংলাদেশে ইসলামী ও জাতীয়তাবাদী শক্তি এখন অনেক শক্তিশালী অবস্থানে আছে। কিন্তু, এর মানে তো এই নয় যে, এখানে আইএস বা তালেবান ধাঁচের কোনো শক্তির ক্ষমতায়ন হয়েছে বা হতে যাচ্ছে। পতিত স্বৈরাচার ও তাদের পৃষ্ঠপোষক ভারতীয় ব্রাহ্মণ্যবাদ এ ধরনের একটি ন্যারেটিভ তৈরির যে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তা এখন পর্যন্ত সফল না হবার প্রধান কারণ বিশ্ব জুড়ে ড. ইউনূসের পরিচিতি। তিনি যে একজন আপাদমস্তক অসাম্প্রদায়িক ব্যক্তিত্ব তা সর্বজনবিদিত। উপরন্তু, তাঁর নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারে যারা স্থান পেয়েছেন তাঁরাও প্রায় সবাই একই চরিত্রের। দ্বিতীয় যে কারণে এখন পর্যন্ত এই কূটকৌশলটি সফল হয়নি তা হলো, এ ধরনের একটি ন্যারটিভ তৈরির চেষ্টা আগে থেকে চলে আসায় দেশের ইসলামী ও জাতীয়তাবাদী শক্তি পটপরিবর্তনের পর থেকেই দেশে যেন কোনো রকম সাম্প্রদায়িক হানাহানি সৃষ্টি না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক ছিল।
নেতৃত্ব পর্যায়ে সতর্কতা ও সচেতনতা সত্ত্বেও সাধারণ কর্মী ও সমর্থকদের অনেকেই বিষয়টি ঠিক ওভাবে বুঝে উঠতে না পারাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এ কারণে পূজাম-পে ইসলামী ধাঁচের সংগীত পরিবেশনের ঘটনাটি কি স্রেফ ব্যক্তিগত পর্যায়ের নির্দোষ হিন্দু-মুসলিম বন্ধুত্ব ও সম্প্রীতির প্রকাশ, নাকি গভীর কোনো ষড়যন্ত্রের ফাঁদ, সে প্রশ্ন এসেই যায়। ওরা বুঝেই করুক আর না বুঝেই করুক, এই ঘটনা যে পতিত স্বৈরাচার ও তাদের ব্রাহ্মণ্যবাদী পৃষ্ঠপোষকদের হাতে এদেশের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু নিবর্তনের গল্প ফাঁদার নতুন একটি হাতিয়ার তুলে দিল সেটা তো অস্বীকার করার সুযোগ নেই। ইতোমধ্যে মিডিয়া ও সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তুলে তারা যে এই অস্ত্রের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহারের জন্য কাছা মেরে নেমে পড়েছে সেটা তো বুঝাই যাচ্ছে।
এদেশের সামগ্রিক স্থিতি ও প্রগতির জন্য সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি খুব গুরুত্বপূর্ণ। সাম্রাজ্যবাদী শক্তি সবসময় চাইবে এখানে অস্থিরতা ও বিভক্তি জিঁইয়ে রেখে তাদের স্বার্থ হাসিল করতে। কাজেই, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে তারা ভবিষ্যতে বিভিন্ন কায়দায় এ ধরনের আরও ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা যে করবে না, তা বলা মুশকিল। সুতরাং এ ব্যাপারে সবাইকে আরও সতর্ক এবং সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।
লেখক: অধ্যাপক ও সাবেক সভাপতি, ফার্মেসি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
সউদী আরবকে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগের আহ্বান উপদেষ্টা নাহিদের
গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত আরও ৩৬
যুক্তরাষ্ট্রে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ রফতানিতে চীনের নিষেধাজ্ঞা
বিক্ষোভের মুখে প্রত্যাহার দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক আইন
সিরিয়ার প্রেসিডেন্টকে সতর্ক করে যা বললেন এরদোগান
নভেম্বরে রপ্তানি আয় বেড়েছে ১৫.৬৩ শতাংশ
সৈয়দপুরে পিকআপের ধাক্কায় এক শ্রমিক নিহত
শিক্ষার্থীদের মারধর ও শিক্ষককে লাঞ্ছিত করার প্রতিবাদে শ্রমিকদের সঙ্গে খুবি শিক্ষার্থীদের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভারতীয় ষড়যন্ত্র বরদাস্ত করা হবে না : বিক্ষোভ মিছিলে খেলাফত আন্দোলন
আগরতলায় সহকারি হাইকমিশনে উগ্রবাদীদের হামলার প্রতিবাদে চাঁদপুরে খেলাফত মজলিস বিক্ষোভ
বগুড়ায় ম্যাজিষ্ট্রেটের সিল-স্বাক্ষর জাল করার অভিযোগে ৩ প্রতারক গ্রেফতার
পিলখানা হত্যা, শাপলা চত্বরে গণহত্যা ও ২৪'র গণহত্যার বিচারের জন্য ছাত্র ঐক্যের প্রয়োজন: শিবির সভাপতি
‘কুটনীতিকদের উপর আক্রমণ করে ভারত নিজেদের অসভ্য জাতি হিসেবে পরিচয় দিয়েছে’
ষড়যন্ত্র রুখতে সরকারের পাশে থাকবে বিএনপি
ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু ইস্যু নিয়ে ব্যাপক মিথ্যা ও অপতথ্য ছড়ানোয় বিএফইউজে ও ডিইউজের উদ্বেগ
স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য
ইনকিলাব সাংবাদিকের বাসায় দুর্ধর্ষ চুরি
পঞ্চগড়ে বিএনপির আনন্দ মিছিল
অব্যবহৃত মসজিদ বা তার জায়গা সংরক্ষণ করা প্রসঙ্গে?
চা শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করুন