ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ | ১২ পৌষ ১৪৩১

আজ বেগম খালেদা জিয়া ও ড. মুহাম্মদ ইউনূস কোথায়, আর শেখ হাসিনা কোথায়?

Daily Inqilab কামরুল হাসান দর্পণ

২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৫ এএম | আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৫ এএম

বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া এক যুগ পর গত ২১ নভেম্বর সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে গিয়েছিলেন। সশস্ত্র বাহিনী দিবসে সেনাকুঞ্জে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি যোগ দেন। তাঁকে অভ্যর্থনা জানান, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান এবং বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খান। অতিথিদের জন্য নির্ধারিত আসনে বসেন বেগম খালেদা জিয়া। তার পাশের আসনে বসেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ড. মুহাম্মদ ইউনূস খালেদা জিয়ার সাথে কুশল বিনিময় করেন। তাদের হাস্যজ্জ¦ল ছবি দেশের পত্রপত্রিকায় ও বিভিন্ন চ্যানেলে প্রচার করা হয়। এই একটি ছবিই যেন ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে অর্জিত নতুন বাংলাদেশের প্রতীক হয়ে ইতিহাসে ঠাঁই করে নিয়েছে। কারণ, তাঁরা দুজনই ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সীমাহীন নিপীড়ন, নির্যাতন ও অপমানের শিকার হয়েছিলেন। এই দুইজন যখন একফ্রেমে বন্দি হন এবং কথা বলেন, তখন প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক, আজ তাঁরা কোথায়, আর ফ্যাসিস্ট হাসিনা কোথায়? যে ক্যান্টনমেন্ট থেকে ২০১০ সালের ১৩ নভেম্বর ফ্যাসিস্ট হাসিনা চরম প্রতিহিংসা ও রোষ নিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে অপমানিত করে বের করে দিয়েছিলেন, সেই ক্যান্টনমেন্টই এই নভেম্বরে তাকে অত্যন্ত আনন্দের সাথে বরণ করে নিয়েছে। যে ফ্যাসিস্ট হাসিনা নোবেল লরিয়েট ও বিশ্ববরেণ্য ব্যক্তিত্ব ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে একের পর এক মামলা-মোকদ্দমা ও সাজা দিয়ে চরমভাবে হেনস্তা ও অসম্মানিত করেছিলেন, সেই ইউনূসই প্রধান উপদেষ্টা হয়েছেন এবং বেগম খালেদা জিয়াকে তিনি বরণ করে নিয়েছেন। দুজন নিপীড়িত-নির্যাতিত মানুষ যখন পাশাপাশি বসে কথা বলেন এবং তা ফ্রেমে বন্দি করা হয়, এর চেয়ে সেরা ছবি আর কী হতে পারে! দেশের মানুষ এই ছবি দেখে আবেগাপ্লুত হয়েছে। বিগত সাড়ে ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার নিপীড়ন, নির্যাতন ও ভয়ে চুপসে যাওয়া মানুষের মুখে যেন হাসি ফুটেছে। তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় তারা আনন্দিত। ছাত্র-জনতার অভ্যত্থানে নেতৃত্ব দেয়া তরুণ প্রজন্মের তিন উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম, মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বেগম খালেদা জিয়ার সাথে কুশল বিনিময় করেন। মাহফুজ আলম তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, ম্যাডাম আপনার শরীর কেমন? তিনি জানান, বেশি ভালো না। প্রতি উত্তরে মাহফুজ আলম বলেন, আপনাকে ভালো থাকতে হবে। আপনি সামনে আসলে আমাদের কনফিডেন্স বাড়ে। আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া তার ফেসবুক আইডিতে তিনটি ছবি শেয়ার দিয়ে লিখেছেন, ‘আপনাকে এই সুযোগ করে দিতে পেরে আমরা গর্বিত।’ কুশল বিনিময়ের একটি ভিডিও শেয়ার করে ফেসবুক পেজে লেখেন, সোনালী অতীত, গর্বিত ভবিষ্যৎ। তরুণ প্রজন্মের কাছে কী অসীম অনুপ্রেরণা ও গর্বের হয়ে রয়েছেন বেগম খালেদা জিয়া!

দুই.
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘আমি যাকে ইচ্ছা তাকে সম্মান দেই, যাকে ইচ্ছা তাকে সম্মান দেই না।’ বেগম খালেদা জিয়াকে ফ্যাসিস্ট হাসিনার চরম অপমান, অসম্মান ও নির্যাতন থেকে উদ্ধার করে মহান আল্লাহ তাঁকে যে সম্মান দিয়েছেন এবং হাসিনাকে অসম্মানিত করে দেশ থেকে বিতাড়িত করেছেন, তা পবিত্র কুরআনের এই আয়াতের প্রতিফলন। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। অথচ ফ্যাসিস্ট হাসিনা তাঁকে কতভাবেই না অসম্মানিত করেছেন। হাসিনা যে, বিকৃত মানসিকতা ও চরম প্রতিহিংসাপরায়ণ, তা নতুন করে বলার কিছু নেই। তিনি গুণীর কদর করতে জানতেন না। ইভিল জিনিয়াসদের নিয়ে চলতেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূস নোবেল পুরস্কার পাওয়ায় তিনি অন্তর্জ¦ালায় ভুগেছেন, এখনও ভুগছেন। কেন ড. ইউনূস নোবেল পেলেন, তিনি কেন পেলেন না, সেটা তিনি কিছুতেই মানতে পারেননি। নোবেল পাওয়ার জন্য শেখ হাসিনা হেন কোনো চেষ্টা নাই, যা করেননি। প্রত্যেকবারই বিফল হয়েছেন। ফলে লবিং করে বিভিন্ন সংস্থা থেকে নানা উপাধি ও পুরস্কার জোগাড় করে মনের জ্বালা মিটাতে ও সান্ত¦না পেতে তাকে দেখা গেছে। এসব পুরস্কার নিয়ে তখন তার দলের নেতাকর্মী ও মিডিয়ার কিছু চাটুকার-দালাল সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবী দিনের পর দিন তাকে মহান বানাতে চেষ্টা করে গেছেন। তাতেও হাসিনার জ্বালা মিটেনি। তিনি ড. মুহাম্মদ ইউননুসের পেছনে লেগেই ছিলেন। তাঁকে অপমানিত ও হেস্তনেস্ত করে মানুষকে বোঝাতে চেয়েছেন, ড. ইউনূসকে নোবেল দেয়া ঠিক হয়নি। অথচ বেগম খালেদা জিয়া ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নোবেল প্রাপ্তিতে কতই না আনন্দিত ও গর্বিত হয়েছেন। তাঁকে কতই না কদর করেছেন। তিনি দ্ব্যর্থহীনভাবে ড. ইউনূসকে হাসিনার অপমানের জবাব দিয়েছেন। জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে তাঁকে অভিনন্দিত করে বক্তব্য দিয়েছেন। যেদিন তিনি ও ড. মুহাম্মদ ইউনূস সেনাকুঞ্জে একসাথে বসেছিলেন, সেদিন বেগম খালেদা জিয়ার আড়াই মিনিটের একটি ভিডিও নেট দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। বিরোধীদলীয় নেতা থাকা অবস্থায় ২০১০ সালে তিনি জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে বলেছিলেন, ‘শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ইউএস কংগ্রেশনাল অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত হয়েছেন। এ জন্য জাতি হিসেবে আমরা গর্বিত। তবে স্বদেশে তিনি (ড. ইউনূস) যেভাবে নিগ্রহের শিকার হচ্ছেন, তা সত্যিই দুঃখজনক। তার মেধা, শ্রম ও ঘামে প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংকও আজ হুমকির মুখে। সরকার নিয়োজিত কমিশন নোবেল বিজয়ী প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংককে ভেঙে ১৯ টুকরো করার সুপারিশ করেছে। আমরা এতে স্তম্ভিত। এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রামীণ ব্যাংককে ধ্বংস করে ফেলবে। গ্রামীণ ব্যাংকে সরকারি হস্তক্ষেপের প্রতিবাদ জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নে এই ব্যাংক (গ্রামীণ ব্যাংক) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। সেই প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের উদ্দেশ্যে প্রতিশোধমূলক চক্রান্ত বন্ধের জন্য আমি সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা এর তীব্র বিরোধিতা করছি। দেশের মানুষ এ ধরনের হীন কার্যকলাপ মেনে নেবে না। তিনি বলেছিলেন, একটি প্রতিষ্ঠান ভেঙে ফেলা-ধ্বংস করা খুবই সহজ; কিন্তু এ ধরনের একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা অনেক কঠিন ও শ্রমসাধ্য কাজ। গ্রামীণ ব্যাংকের ওপর রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব আরোপের যে অপচেষ্টা করছে, আমরা এরও তীব্র বিরোধিতা করছি। রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোতে লুটতরাজ করে যে অবস্থায় নিয়ে গেছে, সরকার গ্রামীণ ব্যাংককেও একই অবস্থায় নিয়ে যেতে চায় কিনা, প্রশ্ন রেখে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেছিলেন, আমরা ড. ইউনূসের সমর্থনে ও গ্রামীণ ব্যাংকের পক্ষে আমাদের দৃঢ় অবস্থানের কথা ব্যক্ত করছি। তিনি বলেছিলেন, জাতির জন্য যারা সম্মান বয়ে আনেন, সেই কৃতী সন্তানরা যেন দেশেও সম্মান পান, তা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। তা নাহলে, দেশ মেধাশূন্য হয়ে পড়বে।’ এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে বেগম খালেদা জিয়া একজন দেশপ্রেমিক নেত্রী হয়ে তাঁর প্রজ্ঞা ও বিজ্ঞতা দিয়ে দেশের সম্পদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে মূল্যায়ন করেছেন। বেগম খালেদা জিয়ার এই ভিডিও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার ফেসবুক পেজে শেয়ার করেন। বেগম খালেদা জিয়া গুণের কদর, মানির মান রাখতে জানেন বলেই মহান আল্লাহ তাঁকে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার চরম অপমানজনক অবস্থা থেকে উদ্ধার করে তাঁর সম্মান অটুট রেখেছেন। হাসিনার চক্ষুশূল বেগম খালেদা জিয়া ও ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে এক সাথে বসিয়ে সম্মান দিয়েছেন। এই দৃশ্য ফ্যাসিস্ট হাসিনা নিশ্চয়ই দেখেছেন।

তিন.
অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় ছিল, বেগম খালেদা জিয়াকে ২০১০ সালে যখন ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের মইনুল রোডের বাসা থেকে হাসিনা জোর করে বের করে দেন, তখন সমস্ত মিডিয়া তা ফলাও করে প্রচার করে। তাঁকে অপমান ও অপদস্ত করার দৃশ্য লাইভ প্রচার করে। হাসিনা মিডিয়া ও কিছু সাংবাদিক এতটাই উচ্ছ্বসিত ছিল যে, বেগম খালেদা জিয়ার বেড রুম থেকে শুরু করে বাসার কোথায় কি আছে, তা ধরে ধরে লাইভ সম্প্রচার করে। এর মধ্যে অন্যতম ছিলেন খুনের মামলায় জেলে থাকা ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত। তিনি সেই বাসায় বেগম খালেদা জিয়ার বেড রুমে ঢুকে তাঁর ব্যক্তিগত ব্যবহার্য জিনিসপত্র ক্যামেরার সামনে ক্লোজ করে দেখান। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে হাসিনার পালানোর পর গণভবন সাধারণ মানুষ তছনছ করে ফেলেছিল। সেখান থেকে হাসিনার কিছু ব্যক্তিগত ব্যহার্য সামগ্রী তারা নিয়ে যান এবং তা ক্যামেরায় ধরা পড়ে। এ নিয়ে ভারতের মোদির গোদি মিডিয়া ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিরস্কার করা হয়। অথচ বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত ব্যবহার্য সামগ্রী যখন শ্যামল দত্তরা লাইভ করে তুলে ধরেন, তখন এ নিয়ে তারা ছি ছি করেনি। ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস এবং ইতিহাসের নিষ্ঠুর পুনরাবৃত্তি যে, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাও চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে নেয়া বাড়ি থেকে উচ্ছেদ হয়েছেন। সেইসব সাংবাদিকও হয়ত ঘুর্ণাক্ষরে ভাবতে পারেননি, এই ইতিহাস একদিন ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দিকে বুমেঢ়াং হয়ে ফিরে আসবে। পার্থক্য হচ্ছে, বেগম খালেদা জিয়াকে হাসিনা অন্যায়ভাবে প্রতিহিংসাপরায়ন হয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিনেন, আর তাকে দেশের মানুষ শুধু বাড়ি থেকে বের করেনি, দেশ থেকেও বের করে দিয়েছে। প্রচলিত একটি কথা আছে, ‘মানির মান আল্লায় রাখে।’ আল্লাহ বেগম খালেদা জিয়ার সম্মান আরও বহুগুণ বাড়িয়ে ফিরিয়ে দিয়েছেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূসকেও শুধু সম্মান ফিরিয়ে দেননি, দেশের সরকার প্রধান করে দিয়েছেন। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা যে খুনি চরিত্রের অধিকারী তা অনেক আগেই তার ব্যক্তিগত সহকারী মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান রেন্টু তার ‘আমার ফাঁসি চাই’ গ্রন্থে লিখেছেন। শেখ হাসিনা বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে জেলে রেখে খাবারে ‘স্লো পয়জন’ দিয়ে তাঁকে হত্যা করতে চেয়েছেন। আজ বেগম খালেদা জিয়া যে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত, জেলে যাওয়ার আগে তাঁর এত রোগ ছিল না। জেলে যাওয়ার পরই তিনি ভয়াবহ সব রোগে আক্রান্ত হন। বিএনপির পক্ষ থেকে সেসময় অভিযোগ করা হয়েছিল, তাঁকে স্লো পয়জন দেয়া হচ্ছে। বাস্তবেও অসুস্থ খালেদা জিয়াকে দেখে তাদের এ অভিযোগের সত্যতা দেশের মানুষ বুঝতে পারছে। ফ্যাসিস্ট হাসিনা এতটাই নির্দয় ও নিষ্ঠুর ছিলেন যে, খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ নিয়ে যাওয়ার পারমিশনটুকু দেননি। অর্থাৎ বেগম খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে চেয়েছিলেন। বলা বাহুল্য, বেগম খালেদা জিয়ার মতো দেশপ্রেমিক, তিনবারের প্রধানমন্ত্রী-যিনি কখনো কোনো নির্বাচনে হারেননি, অন্যতম বৃহৎ দল বিএনপির চেয়ারপার্সন ও বিপুল জনপ্রিয় নেত্রী, তাঁকে যখন ফ্যাসিস্ট হাসিনা হত্যা চেষ্টা চালায়, সেখানে সাধারণ মানুষকে হত্যা করা তো তার কাছে ডালভাতের মতো ছিল। দেশের মানুষও তা দেখেছে। অন্যদিকে, ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে কী হেনস্তাই না করা হয়েছে! একের পর এক মামলা দিয়ে তাঁকে আদালত প্রাঙ্গণে দৌড়াতে বাধ্য করা হয়েছে। প্রতিবারই আদালতে হাজিরা শেষে মিডিয়ার সামনে তাঁর হৃদয়তাড়িত কথায় মানুষের চোখ ভিজেছে।

চার.
ছাত্র-জনতার ভয়ে জীবন নিয়ে দেশ থেকে শেখ হাসিনা পালিয়ে গেলেও তার মধ্যে অনুশোচনার লেশমাত্র নেই। বরং তার ফাঁস হওয়া কলরেকর্ডের কথাবার্তায় কেবল প্রতিশোধের আগুনশিখা ঝরে পড়েছে। এখনো তিনি ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে গালমন্দ করে যাচ্ছেন। এই ধরনের মানসিকতা যে, মানসিক বিকারগ্রস্তদের হয়ে থাকে, তা বলা বাহুল্য। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, দেশে রেখে যাওয়া শেখ হাসিনার নেতাকর্মীদের মধ্যেও ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গণহত্যা নিয়ে কোনো অনুশোচনা নেই। শেখ হাসিনা ও তার গড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, দলের খুনি-গুন্ডারা নির্বিচারে গুলি করে যে, কয়েক হাজার ছাত্র, শিশু, সাধারণ মানুষ হত্যা করেছে, চিরতরে অন্ধ ও পঙ্গু করে দিয়েছে, তা নিয়ে তাদের মধ্যে কোনো মায়া-মমতা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এর অর্থ হচ্ছে, হাসিনার মধ্যে যেমন মানবতা বলে কিছু নেই, তেমনি তার নেতাকর্মীদেরকেও সেভাবেই গড়ে তুলেছেন। তার শাসনামলে দেশের মানুষ দেখেছে, ছাত্রলীগ-যুবলীগ কীভাবে প্রকাশ্যে কুপিয়ে, গুলি করে অসংখ্য মানুষ হত্যা করেছে। ফলে এমন এক নিষ্ঠুর ও মানবতাহীন দলের নেতাকর্মীদের মানুষ কেন মেনে নেবে? কেন তাদের রাজনীতি করতে দেবে? আবার খুন, গুম, নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হতে? এখন আওয়ামী লীগের এক নেতা বিদেশে বসে ক্ষমা চাওয়ার কথা বলেছেন। গণহত্যা চালানো একটি দলকে ক্ষমা, নাকি বিচার করতে হয়? এ প্রশ্ন দেশের মানুষ করতেই পারে। গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের যত নেতাকর্মী আছে, তাদের অবশ্যই বিচার হতে হবে। তারপর দলটিকে রাজনীতি করার সুযোগ দেয়া যায় কিনা, তা বিবেচনা করা যেতে পারে। জুলুম যে মহান আল্লাহ পছন্দ করেন না, দুনিয়াতে তার বিচার করেন, তা শেখ হাসিনার পতনের মধ্য দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন। পবিত্র কুরআনে জুলুমে নিমজ্জিত বহু জাতিকে আল্লাহ দুনিয়াতে ধ্বংস করে দেয়ার দৃষ্টান্ত দিয়েছেন। আদ, সামুদ জাতিসহ নুহ (আ.), লুত (আ.)-এর সময়কার জাতিকে তিনি ধ্বংস করে দিয়েছেন। যারা জুলুমের শিকার হয়ে মজলুম হয়েছে, তাদের তিনি সম্মানের সাথে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। বেগম খালেদা জিয়া ও ড. মুহাম্মদ ইউনূস ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার যে জুলুমের শিকার হয়েছেন, তার প্রতিদান মহান আল্লাহ দিয়েছেন। শেখ হাসিনাকে যেমন দেশছাড়া করেছেন, তেমনি দেশে তাঁদেরকে সম্মান ফিরিয়ে দিয়েছেন।

[email protected]


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের যত্ন নিতে হবে
সংবিধান সংশোধন-পুনর্লিখন প্রসঙ্গে
বিশ্ব পরিস্থিতি কেমন
পিলখানা ট্রাজেডির বিচারে আশার আলো
বই আত্মার মহৌষধ
আরও

আরও পড়ুন

কালীগঞ্জে পানিতে ডুবে এক শিশুর মৃত্যু আরেক শিশু নিখোঁজ

কালীগঞ্জে পানিতে ডুবে এক শিশুর মৃত্যু আরেক শিশু নিখোঁজ

কুমিল্লায় আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের কর্মসূচি অনুষ্ঠিত

কুমিল্লায় আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের কর্মসূচি অনুষ্ঠিত

মির্জাপুরে বনের ভেতর গড়ে উঠা ৯টি ঘর উচ্ছেদ

মির্জাপুরে বনের ভেতর গড়ে উঠা ৯টি ঘর উচ্ছেদ

সচিবালয়ে আগুন ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি সরকার ও গোয়েন্দা সংস্থা দায় এড়াতে পারেনা - এবি পার্টি

সচিবালয়ে আগুন ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি সরকার ও গোয়েন্দা সংস্থা দায় এড়াতে পারেনা - এবি পার্টি

পথশিশুদের মাঝে উষ্ণতা ছড়িয়ে দিয়েছে সামাজিক সংগঠন আলোকিত নরসিংদী

পথশিশুদের মাঝে উষ্ণতা ছড়িয়ে দিয়েছে সামাজিক সংগঠন আলোকিত নরসিংদী

কুলাউড়ায় বিসিএস ডাক্তারদের মানববন্ধন

কুলাউড়ায় বিসিএস ডাক্তারদের মানববন্ধন

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজির সাথে  ইসলামী  বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃবৃন্দের সৌজন্য  সাক্ষাত

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজির সাথে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের নেতৃবৃন্দের সৌজন্য সাক্ষাত

ভারতীয় খাসিয়ার গুলিতে সিলেট  সীমান্তে নিহত এক তরুন : বিজিবির প্রতিবাদ

ভারতীয় খাসিয়ার গুলিতে সিলেট  সীমান্তে নিহত এক তরুন : বিজিবির প্রতিবাদ

যারা নির্বাচনী অপরাধ করেছেন তাদের বিচার হওয়া  উচিত.রাজশাহীতে বদিউল আলম মজুমদার

যারা নির্বাচনী অপরাধ করেছেন তাদের বিচার হওয়া উচিত.রাজশাহীতে বদিউল আলম মজুমদার

ট্রাকচাপায় ফায়ার ফাইটার নিহতের ঘটনায় মামলা

ট্রাকচাপায় ফায়ার ফাইটার নিহতের ঘটনায় মামলা

সরকারি কর্মচারীদের সম্পদ বিবরণী দাখিলের সময় বাড়ল

সরকারি কর্মচারীদের সম্পদ বিবরণী দাখিলের সময় বাড়ল

মেহেরপুর জেলা বিএনপির নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটির নেতৃবৃন্দকে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের  শুভেচ্ছা জ্ঞাপন

মেহেরপুর জেলা বিএনপির নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটির নেতৃবৃন্দকে হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের  শুভেচ্ছা জ্ঞাপন

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির লক্ষ্যে কেএমপিকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে; কেএমপি কমিশনার

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির লক্ষ্যে কেএমপিকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে; কেএমপি কমিশনার

মির্জাপুরে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসনে মানববন্ধন  কর্মসূচি পালিত

মির্জাপুরে আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত

বাগেরহাটে ষড়যন্দ্রমূলক মিথ্যা মামলা ও হুমকির প্রতিবাদে প্রবাসীর সংবাদ সম্মেলন

বাগেরহাটে ষড়যন্দ্রমূলক মিথ্যা মামলা ও হুমকির প্রতিবাদে প্রবাসীর সংবাদ সম্মেলন

পদবঞ্চিতদের আড়ালে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ, জবি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাহীনতায় বিবৃতি

পদবঞ্চিতদের আড়ালে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ, জবি শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাহীনতায় বিবৃতি

টিকেটে ছাড়াই তারকা খেলোয়াড়দের খেলা দেখার সুযোগ পাবে সিলেটবাসী

টিকেটে ছাড়াই তারকা খেলোয়াড়দের খেলা দেখার সুযোগ পাবে সিলেটবাসী

ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে শ্রম মন্ত্রণালয়ের ২ কমিটি গঠন

ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে শ্রম মন্ত্রণালয়ের ২ কমিটি গঠন

কনস্টাসকে ধাক্কা দেওয়ার শাস্তি পেলেন কোহলি

কনস্টাসকে ধাক্কা দেওয়ার শাস্তি পেলেন কোহলি

আটঘরিয়ায় ফসলী জমিতে চলছে পুকুর খনন আশঙ্কাজনক হারে কমছে জমি

আটঘরিয়ায় ফসলী জমিতে চলছে পুকুর খনন আশঙ্কাজনক হারে কমছে জমি