বিডিআর হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচারের উদ্যোগ নিতে হবে
৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম | আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:০৫ এএম
ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার শাসনামলে খুন, গুম, অপহরণ, বিরোধীমত দমন-পীড়ন, নির্যাতন করা ছিল নিত্যকার বিষয়। এর মধ্যে দেশের ইতিহাসে বর্বরতম দুটি হত্যাকাণ্ড আলোচিত হয়ে রয়েছে। ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিআর হত্যাকাণ্ড এবং ২০১৪ সালের ৫ মে শাপলা চত্বরে হেফাজত ইসলামের সমাবেশে রাতের আঁধারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্বিচার হত্যাকাণ্ড। ‘ডাল-ভাতে’র অজুহাতে সুপরিকল্পিতভাবে বিডিআর বিদ্রোহের নামে সেনাবাহিনীর ৫৭ জন অফিসারসহ ৭৪ জনকে হত্যা করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে ভারতের হাত রয়েছে। ভারতের ইন্ধনে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সেনাবাহিনীর মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়ে দুর্বল করে দেয়ার জন্য এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। একই সঙ্গে রাতের আঁধারে হেফাজতের কর্মী-সমর্থকদের হত্যার মাধ্যমে মুসলমানদের মধ্যে ভীতি ছড়িয়ে হিন্দুত্ববাদী মোদি সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া চালিয়েছে। সচেতন মহলের মতে, শাপলা চত্বরে কয়েক হাজার মানুষ হত্যা করা হয়েছিল। সে সময় সরকারের তরফ থেকে তা অস্বীকার করা হয়েছিল। এই দুই নৃশংস ও বর্বরতমহত্যাকাণ্ডের বিচার আজও হয়নি। বিডিআর হত্যাকাণ্ড নিয়ে একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও সেগুলোর প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি। তা না করে, গ্রেফতারকৃত অনেক বিডিআর সদস্যকে মৃত্যুদ-সহ নানা মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। তাদের কেউ কেউ কারাগারে মৃত্যুবরণ করেছে।
সেনাবাহিনীর ইতিহাসে সবচেয়ে ট্র্যাজিক ঘটনা হয়ে রয়েছে বিডিআর হত্যাকাণ্ড। শুধু বাংলাদেশ সেনাবাহিনী নয়, বিশ্বে কোনো দেশের সেনাবাহিনীর এত অফিসার হত্যার নজির নেই। বিশ্বযুদ্ধসহ যেকোনো যুদ্ধে এত সংখ্যক অফিসার হত্যা ও নিহত হওয়ার দৃষ্টান্ত বিরল। ২০০৯ সালে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার প্রায় দেড় মাসের মাথায় এ হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়। এটা যে অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে, তা ইতোমধ্যে নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলেছেন। ভারত তার গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর মাধ্যমে ষড়যন্ত্র করে এ হত্যাকাণ্ড ঘটায় বলে অভিযোগ রয়েছে। এর মূল কারণ, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার মাধ্যমে বাংলাদেশকে ভারতের একটি অনুগত দেশে পরিণত করা। বাংলাদেশের সেনাবাহিনী শক্তিশালী থাকলে এ কাজ করা সহজ হবে না বলেই তাকে দুর্বল করে বশংবদে পরিণত করাই ছিল এর অন্যতম লক্ষ্য। পরবর্তীতে দেশের মানুষ তার নজির দেখেছে। শেখ হাসিনাকে ব্যবহার করে ভারত কীভাবে বাংলাদেশে তার আধিপত্য বিস্তার করেছে। ভারত যা চেয়েছে, শেখ হাসিনা নির্দ্বিধায় তা দিয়েছে। হাসিনার শাসনামল ছিল ভারতের কাছে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হওয়ার কাল। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পলায়নের মধ্য দিয়ে জনগণ নতুন করে স্বাধীনতার স্বাদ পায়। মুক্ত পরিবেশে বিডিআর ও শাপলা চত্বর হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্ত এবং সঠিক বিচারের দাবি উত্থাপিত হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পরপরই এই দুই হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার দাবি করা হয়। শেখ হাসিনার সময়ের সেনা প্রধান মইন-ইউ-আহমেদ এক ভিডিও বার্তায় বিডিআর হত্যাকাণ্ডের পুনঃতদন্ত দাবি করেছেন। তিনি সেনাবাহিনীর তদন্ত আদালতের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সরকারের অসহযোগিতারও অভিযোগ করেছেন। বিডিআর হত্যাকা-ে শহীদ অফিসারদের পরিবারের সদস্যরা বেশ কয়েক মাস আগে সংবাদ সম্মেলন করে এবং সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার তারা পুনরায় সংবাদ সম্মেলন করে পুনরায় বিচার প্রক্রিয়া শুরু করার দাবি জানিয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে তারা এ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে শেখ হাসিনা, শেখ ফজলে নূর তাপস, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মির্জা আজম, তৎকালীন ডিজিএফআই কর্মকর্তা এবং সে সময়ে ভুল বয়ান সৃষ্টি করা কিছু সাংবাদিকের বিচারের আওতায় আনার দাবি করা হয়েছে। শহীদ পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিল করবেন। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকারের তিন মাস অতিক্রান্ত হলেও এ ব্যাপারে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেনেন্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বিডিআর হত্যাকাণ্ডের বিচার ‘অবশ্যই হবে’ বললেও আজ পর্যন্ত তার কোনো অগ্রগতি নেই। অথচ তিনি সে সময় সেনাবাহিনীর তদন্ত কমিটির দায়িত্বে ছিলেন। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা বিডিআর হত্যাকাণ্ডের যে বিচার প্রক্রিয়া শুরু করে, তা প্রহসন ছিল বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করেন। প্রকৃত ঘটনা আড়াল করে বিচার করার বিষয়টি ছিল ‘আই ওয়াশ’। তারা মনে করেন, এ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত রিপোর্ট এবং স্বচ্ছ বিচার প্রক্রিয়া অবলম্বন করলে অনেক কিছু বের হয়ে আসত। কারা, কি উদ্দেশ্যে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে এবং এর পেছনে দেশি-বিদেশি চক্রান্তসহ অনেক অজানা বিষয় বিস্তারিতভাবে প্রকাশিত হতো। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর এ হত্যাকা-ের প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটনের সুযোগ এসেছে। এ সুযোগ হাতছাড়া করা কোনোভাবেই ঠিক হবে না। শেখ হাসিনা ও মোদির দোসররা এক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি করতে পারে। তবে নতুন বাংলাদেশে এ বাধা উপেক্ষা বা আমলে না নিয়ে বিডিআর হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত কারণ এবং এর সাথে জড়িতদের মুখোশ উন্মোচন করে বিচার করতে হবে। তা নাহলে, সরকারকে ইতিহাসের কাছে দায়বদ্ধ থেকে যেতে হবে।
ভারত কখনোই আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমতাকে স্বীকার করতে চায় না। সে চায়, বাংলাদেশ তার কাছে নতজানু হয়ে থাকুক। এজন্য, নানা ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত করে যাচ্ছে। দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলার জন্য সে তার আশ্রয়ে থাকা ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে ‘তুরুপের তাস’ হিসেবে রেখে দিয়েছে। তার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে, নানা ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ করে দেয়ার অপচেষ্টা থেকে। গত সপ্তাহে উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন ইসকনকে দিয়ে সংখ্যালঘু নির্যাতনের ধোঁয়া তুলে দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙা লাগিয়ে অস্থিতিশীল করে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে এবং এখনও করছে। রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় এই সংগঠনের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেফতার করা নিয়ে ভারত যেভাবে বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে বক্তব্য ও বিবৃতি দিয়েছে, তা আমাদের স্বাধানীতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি অবজ্ঞা করার শামিল। বিডিআর হত্যাকাণ্ড ও শাপলা চত্বরের হত্যাকাণ্ডের পেছনে যে ভারতের হাত রয়েছে তা ‘ওপেন সিক্রেট’। এসব হত্যাকা-ের তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ এবং পুনরায় তদন্ত করে এর নেপথ্যের কুশীলবদের বিচারের আওতায় আনলে, তা হবে ভারতের জন্য উপযুক্ত জবাব। আমরা মনে করি, বিডিআর ও শাপলা চত্বর হত্যাকাণ্ড পুনঃতদন্ত করে জড়িতদের মুখোশ উন্মোচন এবং দ্রুত বিচার করা অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব। এটি এখন জনদাবিতে পরিণত হয়েছে। সরকারকে এ দাবি বাস্তবায়ন করতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো রকমের শৈথিল্য প্রদর্শন করা যাবে না।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
সোনা চোরাচালানের দায়ে বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিমান জব্দ
রাজশাহী বাঘায় পদ্মা নদীতে ধরা পড়লো সাড়ে এগারো কেজি বাঘাইড় মাছ
চ্যাম্পিয়ন্স লিগে সিটির খেলা নিয়ে শঙ্কিত গুয়ার্দিওলা
সুশীলগিরি ছেড়ে দোসরদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে আসতে হাসনাতের আহ্বান
গোয়ালন্দে চুরির সন্দেহে ব্যবসায়ীর ১০টি গরু থানায়!
সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের সুষ্ঠু ও বিস্তারিত তদন্ত হতে হবে: রিজওয়ানা হাসান
দৌলতপুরে পেঁয়াজের ন্যায্যমূল্যের দাবিতে কৃষকদের সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ
বিজয় দিবস রাগবি শনিবার
প্রসিকিউটর মাহমুদকে হত্যার হুমকির অভিযোগ
বিএনপি কর্মীকে হত্যা মামলায় কুষ্টিয়ার সাবেক এসপি গ্রেপ্তার
মধ্যরাতে সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ড নিয়ে যেসব প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন মানুষ
‘সচিবালয়ের ন্যায় দেশটাও কি অরক্ষিত?’
কসবায় ৪ হাজার টাকার মোবাইল ফোনসেটের জন্য অটোচালক খুন
পরশুরামে মুহুরী নদীতে পানির পাম্প বসাতে দিচ্ছে না বিএসএফ
বগুড়া কারাগারে হার্ট এ্যাটাকে আওয়ামী লীগ নেতাদের সিরিয়াল মৃত্যু নানামুখি প্রশ্ন
যতবার বাংলাদেশে সুষ্ঠু ভোট হয়েছে, ততবার বিএনপি সরকার গঠন করেছে: এবিএম মোশাররফ
সচিবালয়ে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ষড়যন্ত্র আছে: সারজিস আলম
শীর্ষ ফুটবলে নিজেকে আরও কয়েক বছর দেখেন ফন ডাইক
কালীগঞ্জে পানিতে ডুবে এক শিশুর মৃত্যু আরেক শিশু নিখোঁজ
কুমিল্লায় আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন পরিষদের কর্মসূচি অনুষ্ঠিত