অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতদ্বৈততা কাম্য নয়
২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১৩ এএম | আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:১৩ এএম
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কখন অনুষ্ঠিত হবে, এ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সাথে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর কিছুটা মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। বেশ কয়েক মাস ধরেই বিএনপি নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ দেয়ার জন্য সরকারকে আহ্বান জানিয়ে আসছে। বিএনপির এই আহ্বানের পরোক্ষ জবাব দেয়া হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের পক্ষ থেকে। সংগঠনটির নেতারা বলেছেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে নতুন বাংলাদেশের সূচনা হয়েছে, তাতে রাষ্ট্রীয় কাঠামোগত সংস্কারের প্রয়োজন শেষে নির্বাচন হবে। কারণ, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা নির্বাচনী ব্যবস্থাসহ, প্রশাসন, বিচার বিভাগ, পুলিশ, দুর্নীতি দমন কমিশন, সংবিধানকে যেভাবে ধ্বংস করে ফ্যাসিজম কায়েম করেছিল, তা সংস্কার করা জরুরি। তার আগে নির্বাচন হবে না। তাদের এ কথায় নির্বাচন কবে হবে, তার কোনো সুনির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল বলেছে, তারা সরকারকে সহযোগিতা ও যথাযথ সময় দিয়ে যাবে। সরকারকে ব্যর্থ হতে দেয়া যাবে না। তবে সংস্কারের কাজটি যাতে দ্রুত সময়ে শেষ হয়, এজন্য টাইম ফ্রেম থাকা দরকার। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসও বলেছেন, সংস্কার শেষে নির্বাচন দেয়া হবে। তিনি এ কথাও বলেছেন, ভোটার তালিকা হালনাগাদ করে যেটুকু সংস্কার প্রয়োজন তা করে নির্বাচন দেয়া হবে। বিএনপি ও অন্য রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সব সংস্কার অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষে করা সম্ভব নয়। সংবিধান সংস্কার বা সংশোধন করার জন্য পার্লামেন্ট প্রয়োজন, যা এ সরকারের নেই। ফলে দলটি নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ দেয়ার জন্য সরকারকে একধরনের চাপ দিয়ে আসছে। এমন এক পরিস্থিতিতে, ১৬ ডিসেম্বর জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ২০২৫ সালের শেষ দিক থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করা যায়। এই সময়ের ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, রাজনৈতিক ঐকমত্যের কারণে যদি অল্প কিছু সংস্কার করে ভোটার তালিকা নির্ভুলভাবে তৈরি করার ভিত্তিতে নির্বাচন সম্পন্ন করতে হয়, তাহলে ২০২৫ সালের শেষের দিকে নির্বাচন করা হয়ত সম্ভব হবে। যদি এর সঙ্গে নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এবং জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রত্যাশিত মাত্রার সংস্কার যোগ করি, তাহলে অন্তত আরও ৬ মাস অতিরিক্ত সময় লাগতে পারে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার এই বক্তব্যের মধ্য দিয়ে নির্বাচন কবে হবে, তার একটি সুস্পষ্ট ধারণা পাওয়া গেছে। অস্পষ্টতাও দূর হয়েছে। তবে এর দুইদিন পর প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, নির্বাচন হবে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে। এতে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেয়া হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার নির্বাচনের সম্ভাব্য সময় নির্ধারণের বিষয়ে বিএনপি অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেছে, এতে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ দেয়া হয়নি। অন্যদিকে, প্রেস সচিবের বক্তব্য নিয়ে বলেছে, আমরা কোনটা বিশ্বাস করব? প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের যে সময়ের কথা বলেছেন সেটা, নাকি প্রেসসচিব যা বলেছেন সেটা? এ ধরনের বক্তব্য বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা ঠিক বুঝতে পারছি না, প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য সঠিক, নাকি প্রেস সচিবের বক্তব্য সঠিক।
দুই,
আগামী জাতীয় নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ও রোডম্যাপ নিয়ে বিএনপির চাওয়াকে কোনো কোনো উপদেষ্টা ভালোভাবে নিচ্ছে না। তারা পরোক্ষভাবে বলেছেন, নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো অস্থির হয়ে পড়েছে। এর জবাবে বিএনপি বলেছে, রাজনৈতিক দল নির্বাচন চাইবে, এটাই স্বাভাবিক। যা সংস্কার করার প্রয়োজন নির্বাচিত রাজনৈতিক দল করবে। এর জবাবে বেশ কাটকাট জবাব দিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ুবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোই যদি সংস্কার করবে, তাহলে গণঅভ্যত্থানের মধ্য দিয়ে আমাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে কেন? সংস্কার করার জন্যই তো দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। দলগুলো কেন ৫৪ বছরে সংস্কার করেনি? তিনি এ কথাও বলেছেন, তারা এখন নির্বাচনের রোডম্যাপ চাইছে। তারা কি কোনো নির্বাচনের রোডম্যাপ দিয়েছে? দেখা যাচ্ছে, আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার ও বিএনপির মধ্যে একধরনের টানাপড়েনের সৃষ্টি হয়েছে। এ ধরনের টানাপড়েন কতটা সঠিক বা বেঠিক, তা বিচার করা দুরুহ। অস্বীকার করার উপায় নেই, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মূল চেতনা ছিল ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার দুঃশাসন এবং স্বাধীনতার পর থেকে চলে আসা সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে বৈষম্যের বিরুদ্ধে। এজন্য, পুরো রাষ্ট্র ব্যবস্থা ও কাঠামোর পরিবর্তন জরুরি। কারণ, স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগ স্বাধীনতাকে তার নিজের করে নিয়েছিল। এখানে অন্যকোনো রাজনৈতিক দল বা সাধারণ মানুষের অবদানকে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। দেশের একমাত্র মালিক সেজে আওয়ামী লীগ, তার নিজের মতো বয়ান দিয়ে সংবিধানসহ রাষ্ট্রীয় কাঠামো তৈরি করে। পরবর্তীতে শেখ মুজিবুর রহমান যিনি মুক্তিযুদ্ধ দেখেননি, তিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হওয়ার জন্য সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে বাকশাল সৃষ্টি করে একনায়কে পরিণত হয়েছিলেন। ফলে যে আশা-আকাক্সক্ষা নিয়ে পাকিস্তানি স্বৈরশাসন থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য দেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে, দেখা গেল, স্বাধীনতার পর তারা আরেকটি স্বৈরাচারের কবলে পড়েছে। ’৭৫ সালের ট্র্যাজেডিতে পটপরিবর্তন হলেও আওয়ামী বয়ান ও মুক্তিযুদ্ধকে তার সম্পত্তি মনে করার কাঠামো থেকে কোনো সরকারই বের করে আনতে পারেনি। সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছে বলেও প্রতীয়মান হয়নি। যেসব রাজনৈতিক দল পালাক্রমে ক্ষমতায় এসেছে, তারা রাষ্ট্র কাঠামোর পরিবর্তন বা সংস্কারের দিকে মনোযোগ দেয়নি। শুধু রাজনৈতিক দলগুলোই নয়, দেশের সুশীল ও বুদ্ধিজীবী মহলও এ নিয়ে এত বছরে কোনো কথা বলেনি। আজ যারা সরকারে বা সরকারের বাইরে, তাদেরও কথা বলতে শোনা যায়নি। তবে, শেখ হাসিনা ঠিকই মুক্তিযুদ্ধকে তার পৈত্রিক সম্পত্তি মনে করে তার বাবার পথে হেঁটে কয়েক ধাপ এগিয়ে এক নিষ্ঠুর স্বৈরাচারে পরিণত হয়েছিলো। সংবিধানকে কাটছাঁট করে পারিবারিকরণ করে ফ্যাসিস্ট কায়দায় দেশকে কুক্ষিগত করে রেখেছিল। ক্ষমতাকে নিরঙ্কুশ করতে বিএনপিকে প্রধান টার্গেট করে নিশ্চিহ্ন করে দিতে হেন কোনো দমন-পীড়ন নেই, যা করেনি। কারণ, দলটির প্রতিষ্ঠাতা স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং রাষ্ট্রক্ষমতায় এসে বিএনপি গঠন করেছিলেন। ফলে এই দলই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আওয়ামী বয়ান ও ইতিহাসের চ্যালেঞ্জ জানানোর সক্ষমতা রাখে। শেখ হাসিনা এই কৃতিত্ব জিয়াউর রহমানকে না দিতে এবং তার প্রতিষ্ঠা করা দল যাতে মুক্তিযুদ্ধের কৃতিত্ব নিয়ে রাজনীতি করতে না পারে এজন্য নিশ্চিহ্নকরণ প্রক্রিয়া অবলম্বন করেছিল। হাসিনার স্বৈরাচারি শাসনামলে কোনো বুদ্ধিজীবী ও সচেতন মহলকে টুঁ শব্দ পর্যন্ত করতে দেখা যায়নি। বরং উল্টো তাদের একাংশ দালালি ও চাটুকারিতা করে তাকে ফ্যাসিস্ট করে তুলতে সহায়তা করেছে। ১৬ বছর ধরে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম করতে গিয়ে বিএনপির শত শত নেতাকর্মী প্রাণ দিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে জেল-জুলুম, খুন, গুম ছিল নিত্যকার বিষয়। তাদের এই ত্যাগ অস্বীকার করার উপায় নেই। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে তরুণ প্রজন্মের শিক্ষার্থী ও জনতা যে রুখে দাঁড়িয়েছে, তার পেছনেও বিএনপিসহ অন্য রাজনৈতিক দলের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। ফলে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসমর্থিত (ইনকিলাবের জরিপে ৬১ ভাগ) বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে নির্বাচনের সময় রোডম্যাপ চাইবে, এটাই স্বাভাবিক।
তিন.
এটা ঠিক, স্বাধীনতার ৫৪ বছরে সংবিধান ও রাষ্ট্র কাঠামোকে যুগোপযোগী করে জনকল্যাণে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা ছিল। এক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারকে সেই জনচাহিদাকে ধারন করে সংস্কারের উদ্যোগ নিতে হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এ ব্যাপারে অত্যন্ত আন্তরিক। তিনি রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত হতে চান না। তিনি নির্বাচন দিয়ে দায়িত্ব শেষ করতে চান। স্পষ্ট করেই বলেছেন, প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব পালন শেষে নিজের পেশায় ফিরে যাবেন। তবে কোনো কোনো উপদেষ্টার বক্তব্য-বিবৃতিতে সংস্কারের নামে দীর্ঘসময় ক্ষমতায় থাকার অভিলাষ প্রকাশিত হচ্ছে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। নির্বাচন নিয়ে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ না দেয়ায় বিএনপি ও সমমনা দলগুলো এ নিয়ে সন্দেহ পোষণ করছে। এ সন্দেহ পোষণ করা হচ্ছে, অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া ছাত্রনেতাদের রাজনৈতিক দল গঠন করার কারণে। তারা মনে করছেন, এই নতুন দল গঠনের পেছনে অন্তর্বর্তী সরকারের একাংশ রয়েছে। ফলে রাজনীতিতে নতুন দলকে জায়গা করে দিতে নির্বাচন প্রলম্বিত করার চেষ্টা থাকতে পারে। বিএনপির একজন নেতা বলেছেন, ছাত্রনেতাদের কেউ কেউ প্রধান রাজনৈতিক দলসহ অন্য দলগুলোকে আঘাত করে বক্তব্য দিচ্ছেন। অভ্যুত্থানের একক কৃতিত্ব তারা নিতে চাইছেন। আবার কখনো কখনো অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মকা-ে বিরাজনীতিকরণের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। কারণ, সরকার রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে না। বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর এই সন্দেহ অমূলক নয়। আমরা দেখেছি, স্বাধীনতার পর এর পুরো কৃতিত্ব আওয়ামী লীগ দখল করে নিয়েছিল। তার আচরণ এমন ছিল শুধু আওয়ামী লীগই দেশ স্বাধীন করেছিল। অন্য কারো এতে ভূমিকা নেই। মূলত আওয়ামী লীগ ও শেখ মুজিবের এই মনোভাবের মধ্যেই স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম স্বৈরতান্ত্রিকতার সূচনা হয়। পরবর্তীতে শেখ মুজিবের শাসন থেকেই তা বোঝা গেছে। ছাত্র-জনতার বিপ্লবে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সকল শ্রেণী- পেশার সাধারণ মানুষ এবং বিএনপিসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ ছিল। সামনে থেকে শিক্ষার্থীরা নেতৃত্ব দিলেও তারা ছিল হিমশৈলীর চূড়া। রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষ ছিল, হিমশৈলীর পুরো দেহ। এখন নেতৃত্ব দেয়া শিক্ষার্থীরা যদি মনে করেন, ছাত্র-জনতার বিপ্লব শুধু তাদের একক কৃতিত্ব, তাহলে তা স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগের কৃতিত্ব নেয়ার মতোই হয়ে যায়। নিশ্চয়ই তারা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের মতো এই কৃতিত্ব নিতে চাইবেন না। অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো ভূমিকা ছিল না, তা চিন্তা করবেন না। যদি তা করা হয়, তাহলে যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে ফ্যাসিস্ট হাসিনার বিরুদ্ধে গণঅভ্যুত্থান হয়েছে, তা ব্যহত হবে। বিশেষ করে অবাধ এবং মুক্ত পরিবেশে সকল দল ও মতের গণতান্ত্রিক চর্চা বাধাগ্রস্ত হবে, যা কাম্য হতে পারে না। তারাও দল গঠন করবে, অন্যরাও দল নিয়ে রাজনীতি করবে এবং পারস্পরিক সহবস্থানে থাকবে, দেশ ও জাতির স্বার্থে ঐকমত্য হবে, এক হবে, এটাই হবে নতুন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক চরিত্র। এখানে পরস্পরকে শত্রু ভাবার কারণ নেই। বরং ক্ষমতায় যেতে জনআস্থা অর্জনের কর্মসূচি দিয়ে সুস্থ প্রতিযোগিতা হবে। জনগণ যার প্রতিশ্রুতি ও প্রার্থীকে পছন্দ করবে, তারাই ক্ষমতায় যাবে। এ নিয়ে শত্রুতা বা বিদ্বেষী রাজনীতি করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না। সকলেরই জানা, আমাদের দেশের জনগণের মধ্যে এমন মনোভাব রয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সকলের চরিত্রই এক। ক্ষমতায় গেলে একরকম, ক্ষমতার বাইরে গেলে আরেক রকম। রাজনৈতিক দলগুলোর এমন বৈপরিত্যের কারণে জনগণের মধ্যে আস্থার সংকট কমবেশি রয়েছে। এটা রাজনৈতিক দলগুলোকে বুঝতে হবে। স্বাধীনতার পর থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে অপরাজনীতি বা প্রথাগত রাজনীতির প্রবণতা রয়েছে, তা নতুন বাংলাদেশে চলবে না। যারা নতুন দল গঠন করবে, তাদেরকেও এ বিষয়টি মাথায় রেখে জনগণের কাছে যেতে হবে, তাদের আস্থা ও গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করতে হবে। প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলগুলোকে ল্যাং মেরে এগিয়ে যাওয়া বা বিদ্বেষ পোষণ করা কাম্য হতে পারে না। বরং তাদের নিজস্ব চিন্তা ও রাজনৈতিক দর্শন নিয়ে জনগণের কাছে যেতে হবে। ওয়ান ইলেভেনের সময় কিংস পার্টির মতো যাতে না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
চার.
বিএনপির নেতৃবৃন্দ বারবারই বলেছেন, তারা সংস্কার চান। এজন্য, দুই বছর আগে হাসিনাবিরোধী আন্দোলনের সময় ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার যেসব সংস্কারের কথা বলছে, তার সবই এই প্রস্তাবে রয়েছে। তারা এ কথাও বলেছেন, সরকার যে ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে, তাদের প্রস্তাব ও সুপারিশ এক-দুই বছরে বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। নির্বাচনব্যবস্থা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, জনপ্রশাসন ও বিচার বিভাগ-এই চারটি ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংস্কার করলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। এর জন্য চার-পাঁচ মাসের বেশি সময় লাগার কথা নয়। বাকি সংস্কার নির্বাচিত সরকার এসে করবে। বিএনপির এই কথা উড়িয়ে দেয়ার মতো নয়। কারণ, এই দলটি পোড়খাওয়া, অভিজ্ঞ। তার যেমন রাষ্ট্র পরিচালনার অভিজ্ঞতা রয়েছে, তেমনি বিরোধীদলে থেকে আন্দোলন-সংগ্রামেরও অভিজ্ঞতা রয়েছে। ফলে সে জানে, সংস্কার করে নির্বাচন দিতে কত সময় লাগতে পারে। তাছাড়া, জামায়েতে ইসলামী শুরুতে সার্বিকভাবে সংস্কার করে অর্থাৎ সময় নিয়ে নির্বাচনের কথা বললেও এখন সে বিএনপিসহ অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মতো ২০২৫-এর মধ্যেই নির্বাচন চাইছে। এর অর্থ হচ্ছে, আওয়ামীবিরোধী সকল রাজনৈতিক দল দ্রুত নির্বাচন চাইছে এবং সরকারের কাছ থেকে সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ আশা করছে। এক্ষেত্রে বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোও একটি সম্ভাব্য নির্বাচনী রোডম্যাপের প্রস্তাব ও উপস্থাপন করতে পারে। এতে অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলাপ-আলোচনা শুরু হবে। এর মাধ্যমে ভুল বোঝাবুঝি, অস্পষ্টতার অবসান এবং ঐকমত্যের ভিত্তিতে আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য করা সম্ভব হবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
দীর্ঘদিন শরীর সুস্থ রাখার উপায়
গফরগাঁওয়ে ভয়াবহ ব্রহ্মপুত্র ট্রেন দুর্ঘটনা ঃ গুরুতর আহত ১
বাসের ধাক্কায় দুমড়েমুচড়ে গেল প্রাইভেটকার, নিহত ৫
যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম গুরুতর বার্ড ফ্লু সংক্রমণে মিউটেশন, শনাক্ত একজন
বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
সূর্যের নিকটতম যাত্রা, নিরাপদে ফিরে এলো নাসার পার্কার সোলার প্রোব
দোয়ারাবাজার পল্লীতে যুবক খুন
স্পেনগামী সমুদ্রপথে ২০২৪ সালে অভিবাসীদের রেকর্ড সংখ্যক মৃত্যু
অভিনয়ের জন্য গোসল করতেন না অনিল কাপুর
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ২০২৫ সালে রাশিয়া সফর করবেন
শেষ বিকেলে দ্রুত উইকেট হারিয়ে চাপে ভারত
বিশিষ্ট ব্যবসায়ী টাইম ওয়ার্নারের প্রাক্তন সিইও রিচার্ড ডি. পারসন্সের মৃত্যু
নারীকে যৌন নিপীড়ন: খোদ মহারাষ্ট্রে ইসকন সন্ন্যাসী জুতাপেটা
অনূর্ধ্ব-১৯ নারী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দল ঘোষণা
আফগানিস্তানকে পেয়ে আবারও জ্বলে উঠলেন উইলিয়ামস
অস্ট্রিয়ার তিরোলে তুষারধসে বাবা-ছেলের মৃত্যু
বিয়ে-বাচ্চা সব মানুষ হওয়ায় দিছে: জেফার
নতুন শাসকদের সাথে সংঘর্ষে সিরিয়ায় আসাদ অনুসারীদের হাতে ১৪ জন নিহত
কালকিনিতে ইউপি সদস্যসহ নিহত-৩, আহত-১০
রাজধানীতে শীতের ছোঁয়ায় শীতল সবজির বাজার