গ্যাসের দাম বাড়ানো যাবে না
০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:১৩ এএম | আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:১৩ এএম
শিল্পখাতে আবারো গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। একলাফে গ্যাসের দাম আড়াইগুণ বৃদ্ধির প্রস্তাব সোমবার বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছে জমা দিয়েছে পেট্রোবাংলা। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, শিল্পখাতে ব্যবহৃত প্রতি ইউনিট গ্যাসের বর্তমান দাম ৩০ টাকা ৭৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৭৫ টাকা ৭২ পয়সা করার প্রস্তাব করেছে সংস্থাটি। জ্বালানি খাতে ভর্তুকি সামাল দিয়ে নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের কথা বলে এর আগে ২০২৩ সালের ১৮ জানুয়ারি জারি করা নির্বাহী আদেশে শিল্পে গ্যাসের দাম বাড়িয়ে তিন গুণ করা হয়। প্রতি ইউনিট গ্যাসের দাম বৃহৎ শিল্পে ১১ টাকা ৯৮ পয়সা ও ক্ষুদ্র শিল্পে ১০ টাকা ৭৮ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হয়। এরপর ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ক্যাপটিভে প্রতি ইউনিটের দাম ৩০ টাকা ৭৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। তখন নিরবচ্ছিন্ন গ্যাসের আশ্বাস দিয়ে দাম তিনগুণ করা হলেও শিল্পমালিকরা তাদের চাহিদামতো গ্যাস কখনোই পাননি। বরং, গ্যাসের সংকট অনেকাংশেই বেড়েছে। ঢাকার আশেপাশের নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, সাভার, আশুলিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় ইতোমধ্যে গ্যাস সংকট বেড়েছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, ইতোমধ্যে গ্যাস সংকটের কারণে ২০০ কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে আছে আরও অন্তত ৩০০টি কারখনা। স্থাপিত অনেক কারখানা চালু করা যাচ্ছে না গ্যাস সংকটে, গ্যাস সরবরাহের নিশ্চয়তা না থাকায় বিনিয়োগকারীরা নতুন শিল্প স্থাপনেও আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। ফলে একদিকে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, অন্যদিকে বাড়ছে না কর্মসংস্থান। উল্টো যেসব কারখানা বন্ধ হয়েছে, সেখানে হাজার হাজার মানুষ কর্মসংস্থান হারিয়েছে। নতুন কর্মসংস্থানের বদলে দেশে বাড়ছে বেকারত্ব। এই অবস্থায় নতুন করে শিল্পখাতে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি হবে মরার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মতো। তার ওপর মূল্য বাড়লেই যে শিল্প-কারখানাগুলো চাহিদা মতো গ্যাস সরবরাহ পাবে তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। শিল্পের শোচনীয় অবস্থা আরো অবনতির দিকে যাবে। উৎপাদন কম হবে বলে, রপ্তানিও কমবে, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে।
নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহের কথা বলে দুই বছর আগে শিল্পে ১৫০ থেকে ১৭৮ শতাংশ পর্যন্ত দাম বাড়ানো হয়েছিল গ্যাসের। গত বছরও কিছুটা দাম বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু দুই বছর পরও শিল্পে গ্যাস-সংকট কাটেনি। অনেক ক্ষেত্রে তা আরো বেড়েছে। আমাদের দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রগুলোর উল্লেখযোগ্য অংশ গ্যাসের উপর নির্ভরশীল। এখন শীতকাল বিদ্যুতের চাহিদা কম। তাই বিদ্যুৎপাদন খাতে গ্যাসের চাহিদাও কম। এই অবস্থার মধ্যেও সরকার বাসা-বাড়িতে প্রয়োজন মতো গ্যাস দিতে পারছে না। রাজধানীসহ অধিকাংশ এলাকায় রান্নার গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে না। রাজধানীর কোনো কোনো এলাকার গৃহিনীদের রান্না করতে হচ্ছে গভীর রাতে। রাতে রান্না করে রাখা খাবার দিনের তিন বেলা খেয়ে কাটাতে হচ্ছে পরিবারের সদস্যদের। কিন্তু যেসব বাসায় শিশু ও বয়স্ক মানুষজন আছে, তাদের পক্ষে তো সেটা সম্ভব হচ্ছে না। তাদের দুর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। সরকারকে গ্যাসের নির্ধারিত বিল প্রতি মাসে পরিশোধ করার পরও বাধ্য হয়ে অনেকে অতিরিক্ত দামে সিলিন্ডার কিনছে। যাদের পক্ষে সেটা সম্ভব হচ্ছে না তাদের বৈদ্যুতিক হিটার বা অন্যকোনো বিকল্প ব্যবস্থার উপর নির্ভর করতে হচ্ছে। এদিকে সিএনজি ফিলিং স্টেশনগুলোতে গ্যাসের সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন করতে না পারায় দিনের নির্দিষ্ট সময় ঘোষণা করে বন্ধ রাখতে হচ্ছে ফিলিং স্টেশনগুলো। শিল্পকারখানাগুলোতেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। শিল্পখাতে প্রয়োজন মতো গ্যাস দিতে পারছে না সরকার। নারায়ণগঞ্জের একজন নিট ওয়্যার ফ্যাক্টরির মালিক গণমাধ্যমকে বলেছেন, কারখানার একটি বার্নার চালু রাখতে যেখানে গ্যাসের চাপ ১৫ পিএসআই থাকতে হয়, সেখানে পাওয়া যাচ্ছে মাত্র ২/৩ পিএসআই। এই অবস্থায় কারখানার সকল ডাইয়িং মেশিনগুলো অলস বসিয়ে রাখা ছাড়া উপায় থাকছে না। এতে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। যে পরিমাণ পণ্য উৎপাদন হচ্ছে সেগুলোর গুণগত মানও নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। অন্যদিকে শ্রমিকদের বেতনসহ অন্যান্য খরচ বসে থাকছে না। ফলে অনিবার্যভাবে উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে। এর প্রভাব পড়ছে পণ্যের দামের উপর, বাড়ছে মূল্যস্ফীতি।
এ অবস্থায় নতুন করে শিল্পখাতে গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে কোনোভাবেই সমস্যার সমাধান হবে না। কয়েক মাস পরেই গ্রীষ্মকাল আসছে। তখন বিদ্যুতের চাহিদা বাড়বে। বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে গ্যাসের চাহিদাও বাড়বে। তাতে অন্যান্য শিল্পখাতে গ্যাসের সংকট তীব্র হওয়ার আশঙ্কাই বেশি। ফলে শিল্পে যেসব বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান আছে তা আরো বেশি ঝুঁকির মুখে পড়বে। দেশি এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীরা নতুন বিনিয়োগ নিয়ে এগিয়ে আসার সম্ভাবনা আরো ক্ষীণ হয়ে যাবে। এতকিছুর পরও যেসব শিল্প টিকে থাকবে সেগুলোর উৎপাদিত পণ্যের দাম বৃদ্ধি পাবে। কারণ, সরকার শিল্পখাতে গ্যাসের দাম বাড়ালেও সেটা শেষ পর্যন্ত বিনিয়োগকারীরা তাদের পকেট থেকে দেবেন না বরং উৎপাদিত পণ্যের মূল্য বাড়িয়ে ভোক্তাদের পকেট থেকেই তা উসুল করবেন। ফলে দেশের মানুষ নতুন করে মূল্যস্ফীতির চাপে পড়বে। এমনিতে অর্থনীতি নানা কারণে উচ্চ ঝুঁকিতে আছে। এখন গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি যোগ হলে সেই ঝুঁকি বাড়বে বৈ কমবে না। তাই পেট্রোবাংলার উচিত, ভর্তুকির অর্থের সংস্থানের সহজ উপায় গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির দিকে না গিয়ে বিকল্প উপায়গুলোর দিকে নজর দেওয়া। দুর্নীতি, অবৈধ সংযোগ, অপচয় ও সিস্টেম লস রোধ এবং গ্যাসক্ষেত্রগুলোতে সর্বোচ্চ মাত্রায় গ্যাস উত্তোলন ইত্যাদির মাধ্যমে গ্যাসের ঘাটতি অনেকাংশে পূরণ করা সম্ভব। প্রয়োজনে সাময়িকভাবে এলপিজি আমদানিও করা যেতে পারে। আমরা প্রত্যাশা করব, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি করে জনদুর্ভোগ বাড়ানোর পরিবর্তে পেট্রোবাংলা বিকল্পগুলোর দিকেই মনোযোগ বাড়াবে।
বিভাগ : সম্পাদকীয়
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
নোয়াখালীতে বাসচাপায় শ্রমিকের মৃত্যু,আহত ২
মৃদু শৈত্যপ্রবাহের কবলে নওগাঁ
নির্বাচনের রোড ম্যাপ দেন অতিসত্বর : আবুল কালাম আজাদ
উত্তর কোরিয়ায় নিষিদ্ধ করা হল ‘হট ডগ’
সিংগাইরে ১ সপ্তাহে আত্মহত্যা-৬
মির্জাপুরের অবৈধ সেই ৭ ইটভাটা ভেঙে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে
সীমান্তে সাহসী বাংলাদেশিরা, অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে পুরো দেশকে
দাবানলে পুড়ছে প্যারিস হিলটন, অ্যান্টনি হপকিন্সের কোটি টাকার বাড়ি
‘অতিথি দেবতার মতো’, এই নীতিতে হাসিনার ভিসার মেয়াদ বাড়ালো ভারত
ভূরুঙ্গামারী মহিলা কলেজের গভর্ণিং বডির সদস্য নির্বাচনে মনোনয়ন পত্রের মূল্য ১০ হাজার টাকা
গোয়ালন্দে পাখিদের নিরাপদ আবাসনে গাছে গাছে মাটির হাঁড়ি বসাচ্ছেন একদল যুবক
নভোএয়ার এর ১২ বছরের সাফল্য উদযাপন
ফরিদপুরে বিল্ডিংয়ের দরজার পাশে পড়েছিল কেয়ারটেকারের হাত-পা বাঁধা মরদেহ
ডিএমপির ১২ ডিসিকে বদলি
আবারও অস্ট্রেলিয়ার নেতৃত্বে স্মিথ
‘৪৩তম বিসিএসে বাদ পড়া ২২৭ জনের বেশিরভাগই চাকরিতে যোগ দিতে পারবে’
বিএনপির ২২৭৬ নেতাকর্মীকে ক্রসফায়ারে হত্যার অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে
ভোটার এবার আগের মত ভোট হবে না-মৌলভীবাজারে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ. এম. এম. নাসির উদ্দিন
ইহুদি খ্রিস্টানদের স্বর্গরাজ্য পুড়ে ছাই হচ্ছে!
জালিয়াতির প্রশ্ন তুলে শিরোপা হারালেন মিস ইউনিভার্স