ভারত ও পাকিস্তানি সমরনায়কদের ভাষ্যে জিয়াউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধ

Daily Inqilab সরদার আবদুর রহমান

১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০১ এএম

 

স্বাধীনতার ঘোষক এবং মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম বীর সেনানী প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান (বীর উত্তম) ছিলেন ভারতপন্থী স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির ‘দুই চোখের বিষ’। এজন্য তারা তাঁকে বিভিন্ন বিশেষণে ভূষিত করার চেষ্টা করেছে। তাঁকে বলা হয়েছে, রাজাকার, পাকিস্তানের চর, আইএসআই’র এজেন্ট, ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা, ডাবল এজেন্ট ইত্যাদি। জিয়ার মুক্তিযোদ্ধা খেতাব কেড়ে নেয়া উচিৎ, তার বিচার হওয়া উচিৎ প্রভৃতি মন্তব্য অবিরাম উচ্চারিত হয়েছে ঐ শক্তির মুখে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকেই জিয়ার অবদান ও ভূমিকা স্বয়ং মুক্তিযুদ্ধের মাঠ পর্যায়ের নেতৃত্বের বক্তব্যেই পরিস্কার হয়েছে। এই নিবন্ধে তাঁর সম্পর্কে একদিকে ভারতীয় অপরদিকে পাকিস্তানী সমরনায়কদের বক্তব্য-মন্তব্যসম্বলিত একটি বিবরণ উল্লেখ করা হচ্ছে।

জিয়াউর রহমানের সামরিক পরিচয় সংক্ষেপে তুলে ধরেছে বাংলাপিডিয়া। তার ভাষ্য, শহীদ জিয়াউর রহমান (১৯৩৬-১৯৮১ খ্রি:) বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, বীর মুক্তিযোদ্ধা, সেনাবাহিনী প্রধান। ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বগুড়া জেলার বাগবাড়িতে জিয়াউর রহমানের জন্ম। তাঁর পিতা মনসুর রহমান ছিলেন কলকাতায় এক সরকারি দফতরে কর্মরত কেমিস্ট। জিয়াউর রহমান শৈশবে কিছুকাল বগুড়ার গ্রামাঞ্চলে এবং কিছুকাল কলকাতায় অতিবাহিত করেন। ভারত বিভাগের (১৯৪৭) পর তাঁর পিতা করাচিতে বদলি হলে জিয়াউর রহমান কলকাতার হেয়ার স্কুল ছেড়ে করাচির একাডেমি স্কুলে ভর্তি হন। ঐ স্কুল থেকে তিনি ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দে মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। ১৯৫৩ খ্রিস্টাব্দে তিনি করাচির ডি.জে কলেজে ভর্তি হন। একই বছর তিনি কাকুল মিলিটারি একাডেমিতে অফিসার ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেন।

জিয়াউর রহমান ১৯৫৫ খ্রিস্টাব্দে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসেবে কমিশন লাভ করেন। এ পদে তিনি দুই বছর চাকরি করেন এবং ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে তাঁকে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে বদলি করা হয়। তিনি ১৯৫৯ থেকে ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সামরিক গোয়েন্দা বাহিনীতেও কর্মরত ছিলেন। ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে পাক-ভারত যুদ্ধে একটি কোম্পানির অধিনায়ক হিসেবে খেমকারান সেক্টরে তিনি যুদ্ধ করেন। যুদ্ধে সাহসিকতা প্রদর্শনের জন্য তাঁর কোম্পানি সর্বাধিক বীরত্বসূচক পুরস্কার লাভ করে। ১৯৬৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমিতে ইনস্ট্রাক্টর পদে নিয়োগ লাভ করেন। ঐ বছরই একটি ‘কমান্ড’ কোর্সে যোগদানের জন্য তাঁকে কোয়েটার স্টাফ কলেজে পাঠানো হয়। ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি জয়দেবপুরে দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে দ্বিতীয়-অধিনায়ক পদে দায়িত্ব লাভ করেন। তিনি পশ্চিম জার্মানি থেকে উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ১৯৭০ খ্রিস্টাব্দে দেশে ফিরে আসার পর জিয়াউর রহমানকে (তদানীন্তন মেজর) অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের দ্বিতীয় অধিনায়ক হিসেবে চট্টগ্রামে বদলি করা হয়। স্বভাবতই জনসাধারণের কাছে জিয়াউর রহমান নামটি অপরিচিত ছিল। কিন্তু তিনি একজন তাৎক্ষণিক জাতীয় ব্যক্তিত্বে রূপান্তরিত হলেন যখন তিনি ২৭ মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করলেন। তাঁর ঘোষণাটি ছিল: ‘আমি মেজর জিয়া, বাংলাদেশ লিবারেশন আর্মির অস্থায়ী সর্বাধিনায়ক, এতদ্বারা শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি।’

‘আমি আরও ঘোষণা করছি, আমরা ইতোমধ্যে শেখ মুজিবুর রহমানের অধীনে একটি সার্বভৌম ও বৈধ সরকার গঠন করেছি। এই সরকার রাষ্ট্র পরিচালনায় আইন এবং শাসনতন্ত্র মেনে চলায় অঙ্গীকারাবদ্ধ। নতুন গণতান্ত্রিক সরকার আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে জোট নিরপেক্ষ নীতির প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ। এ সরকার সকল দেশের সাথে বন্ধুত্বের প্রত্যাশী এবং আন্তর্জাতিক শান্তির জন্য চেষ্টা করবে। আমি সকল সরকারের কাছে আবেদন করছি তারা যেন বাংলাদেশে নৃশংস গণহত্যার বিরুদ্ধে তাদের নিজ নিজ দেশে জনমত গড়ে তোলেন।’

‘শেখ মুজিবুর রহমানের অধীনে গঠিত সরকার বাংলাদেশের সার্বভৌম ও বৈধ সরকার এবং এই সরকার পৃথিবীর সকল গণতান্ত্রিক দেশের স্বীকৃতি লাভের অধিকার সংরক্ষণ করে।’

জিয়াউর রহমান এবং তাঁর সেনাবাহিনী এভাবেই স্বাধীনতা যুদ্ধের একেবারে পুরোভাগে চলে আসে। মেজর জিয়া এবং তাঁর সশস্ত্রবাহিনী বেশ কয়েকদিন চট্টগ্রাম ও নোয়াখালী অঞ্চল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়। পরবর্তী সময়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অভিযানের মুখে কৌশলগত কারণে তারা সীমান্ত অতিক্রম করে।

মুক্তিযুদ্ধের পরিকল্পনা গ্রহণ এবং যুদ্ধ পরিচালনায় জিয়াউর রহমান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ১৯৭১ সালের জুন মাস পর্যন্ত ১নং সেক্টরের অধিনায়ক হিসেবে এবং পরে ‘জেড’ ফোর্সের প্রধান হিসেবে জিয়াউর রহমান নিজেকে অসম সাহসী যোদ্ধা হিসেবে পরিচিত করে তোলেন এবং সাহসিকতার জন্য তাঁকে ‘বীরউত্তম’ খেতাবে ভূষিত করা হয়। নয় মাস যুদ্ধে কৃতিত্বপূর্ণ ভূমিকার পর জিয়াকে কুমিল্লায় সেনাবাহিনীর ব্রিগেড কমান্ডার নিয়োগ করা হয়। ১৯৭২ সালের জুন মাসে তাঁকে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ডেপুটি চীফ অফ স্টাফ পদে উন্নীত করা হয়। [বাংলাপিডিয়া, খ- ৪, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি]

মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকেই জিয়ার অবদান ও ভূমিকা স্বয়ং মুক্তিযুদ্ধের মাঠ পর্যায়ের নেতৃত্বের বক্তব্যেই পরিস্কার হয়েছে। অস্থায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের ভাষায় জিয়াউর রহমান ছিলেন ‘স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম কণ্ঠস্বর’।

লেফটেন্যান্ট জেনারেল জে এফ আর জ্যাকব

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ভারতীয় বাহিনীর অন্যতম নায়ক ছিলেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল জেএফ আর জ্যাকব। তিনি ছিলেন ইস্টার্ন আর্মির চিফ অব স্টাফ। যুদ্ধের আগে ও যুদ্ধ চলাকালীন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য ভারত সরকার তাঁকে পিভিসিএম পদকে ভূষিত করে। তিনি তাঁর স্মতিচারণ গ্রন্থ ‘সারেন্ডার অ্যাট ঢাকা, একটি জাতির জন্ম’ গ্রন্থে লিখেছেন : ‘কয়েক ঘন্টার মধ্যে ঢাকা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর দখলে চলে যায়। হতাহতের সংখ্যা কয়েক হাজার। মুজিবকে তাঁর ধানমন্ডির বাসা থেকে ২৬ মার্চ রাত একটায় গ্রেফতার করা হয় এবং তিনদিন পর তাঁকে করাচিতে নিয়ে যাওয়া হয়। এছাড়া অধিকাংশ বাঙালি নেতা আত্মগোপন করেন। ২৭ মার্চের মধ্যে দেশত্যাগের জন্য বিদেশি সাংবাদিকদের ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে অন্তরীণ রাখা হয়। ৮ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম বাহিনীর অধিনায়কত্ব গ্রহণ করেন এবং ২৭ মার্চ বেতারকেন্দ্র দখল করে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন। এই ঘোষণা অনেকেই শুনেছেন। যাঁরা শোনেননি, মুখে মুখে এটা তাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।’

জ্যাকব আরো উল্লেখ করেন, ‘মেজর জিয়া সামরিক ও আধা-সামরিক বাহিনীর সমস্ত বাঙালি সদস্য নিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। যুদ্ধ দাবানলের মতো ইপিআর হেডকোয়াটার্সে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে পাকিস্তানিরা ট্যাঙ্ক, এয়ারক্রাফট, কামান ও নৌবাহিনীর গানবোট থেকে গোলাবর্ষণ করে। ৩১ মার্চ এটা তারা দখল করে। এরপরে তারা আক্রমণ চালায় রিজার্ভ পুলিশ লাইনের ওপরে। প্রায় বিনা প্রতিরোধেই এটার পতন হয়। জিয়া বেলোনিয়ার দিকে পশ্চাদাপরণ করেন এবং চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে ঢাকার সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফেনী ব্রিজ উড়িয়ে দেন।’ (লে. জেনারেল জে এফ আর জ্যাকব, সারেন্ডার অ্যাট ঢাকা একটি জাতির জন্ম, অনু. আনিসুর রহমান মাহমুদ, পৃ. ২০-২১)

মেজর জেনারেল সুখওয়ান্ত সিং

মেজর জেনারেল সুখওয়ান্ত সিং ভারতীয় রণকৌশলবিদদের একজন। ১৯৭১ সালে তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেসন্স-এর ডেপুটি ডিরেক্টর ছিলেন। তাঁর ‘দি লিবারেশন অব বাংলাদেশ’ গ্রন্থে তিনি উল্লেখ করেন, ‘ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম রেডিও একজন বাঙালি অফিসার মেজর জিয়াউর রহমানের কণ্ঠস্বর সরব হয়ে ওঠে। তিনি ২৬শে মার্চ অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার গঠনের কথা ঘোষণা করেন। মুক্তিযুদ্ধের সমর্থকদের জন্য এটা অবশ্যই সাদরে গ্রহণ করবার সংবাদ। কিন্তু মুজিব এবং আওয়ামী লীগের উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের ভাগ্য সম্পর্কে কিছুই জানা গেল না।’

জেনারেল সুখওয়ান্ত সিং আরো বলেন, ‘পুরোপুরিভাবে পূর্বে পাকিস্তানীদের নিয়ে গঠিত ৪ ইপিআর তাদের অধিনায়ককে হত্যা করে পাহাড়ীয়া এলাকার ভেতরে চলে আসে। সেখানে তাদের ঘাঁটির তত্ত্বাবধানে ছিলেন ব্যাটালিয়নের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড জিয়াউর রহমান। তিনি চট্টগ্রাম রেডিও স্টেশন দখল করেন এবং তার কণ্ঠে সর্বপ্রথম সামরিক একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বিদ্রোহের বাণী ধ্বনিত হয়। জিয়ার সঙ্গে ইপিআর ও ইবিআরসি’র সদস্যরা যোগ দেয় এবং এদের নিয়ে তিনি ২০ বালুচের উপর সফল আক্রমণ চালান। পরে তার আক্রমণে অবাঙালি কলোনির বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয়। কিন্তু তাদের উদ্দীপনা প্রাধান্য নির্ণয়ে ভ্রান্তির জন্ম দেয়। নৌ-ঘাঁটি ছিল অক্ষত। নবাগত সৈনিকদের সংযোজন ঘটিয়ে নৌ-ঘাঁটি স্থাপন করে। এর ফলে ঘাঁটিটি বিদ্রোহীদের নাগালের বাইরে রয়ে যায়। পরে কুমিল্লা থেকে আসা একটি ত্রাণ সেনা কলাম এবং অবরুদ্ধ ২০ বালুচের অবিরাম চেষ্টায় ৩১শে মার্চ শহরটি বিদ্রোহী মুক্ত হয়। দুদিন পর তারা চট্টগ্রাম রেডিও স্টেশন দখলে নিয়ে নেয়। জিয়াউর রহমান সহযোদ্ধাদের নিয়ে ভারতের দিকে পা বাড়ালেন। পথে বেলোনিয়ার উচ্চভূমি এলাকার দখল প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু পরে নতুন সৈন্যের জোগান নিয়ে পাকিস্তানীরা আক্রমণ চালিয়ে তাকে সেখান থেকে বহিস্কার করে।’ (মেজর জেনারেল সুখওয়ান্ত সিং, দি লিবারেশন অব বাংলাদেশ, অনু. মাসুদুল হক, স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যূদয়, পৃ. ১৩-১৫)।

মেজর জেনারেল (অব.) এস এস উবান

১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুক্তিবাহিনীর একটি বিশেষ অংশ, যা সাধারণত ‘মুজিব বাহিনী’ নামে অভিহিত হতো। ১৯৭১ সালের মে মাসের শেষের দিকে এই বিশেষ বাহিনী প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই বাহিনী অস্থায়ী মুজিব নগর সরকারের নিয়ন্ত্রণবহির্ভূত ছিল। একই সঙ্গে এই বাহিনী স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতীয় মিত্রবাহিনীর সেনাপতি জেনারেল অরোরার নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল। এই বাহিনীর প্রশিক্ষণ ও পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন জেনারেল সুজন সিং উবান, যিনি ভারতীয় স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্সের কমান্ডার (ইন্সপেক্টর জেনারেল) ছিলেন। ভারতের ভূখ-ে একটি গোপন স্থানে এই বাহিনীর সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেয়া হতো।

মেজর জেনারেল এস. এস. উবান তাঁর ‘ফ্যান্টমস্ অব চিটাগাং’ দি ‘ফিফ্থ্ আর্মি ইন বাংলাদেশ’ গ্রন্থে জানিয়েছেন, ‘বেঙ্গল রাইফেল্স্ (বাঙালিদের দ্বারা গঠিত পাক সামরিক ইউনিটসমূহ) বিদ্রোহ করল এবং কিছুক্ষেত্রে বলা হল যে, তারা তাদের পাঞ্জাবি অফিসারদেরকেও হত্যা করেছে। এদের কিছু জওয়ান বাঙালি নেতৃত্বে গোলাগুলি শেষ হয়ে যাওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ করে গেল এবং শেষে ভারতে পাড়ি দিল। মেজর জিয়া বলে একজন নিজেকে মুক্তিবাহিনীর প্রধান বলে অভিহিত করলেন এবং ২৮ মার্চ ১৯৭১ তারিখে মুক্ত বাংলা রেডিও থেকে একটি সরকার চলবে শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশনায়, যিনি মুক্তিসংগ্রামের নেতৃত্ব দিচ্ছেন চট্ট্রগ্রাম গোপন সদর দফতর থেকে।’ (মেজর জেনারেল (অব.) এস এস উবান: ফ্যান্টমস অব চিটাগং, দি ‘ফিফ্থ্ আর্মি ইন বাংলাদেশ’, অনু. হোসাইন রিদওয়ান আলী খান, পৃ. ১৭)

মেজর জেনারেল (অব) খাদিম হুসেন রাজা

১৯৭১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে পাক বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ সামরিক পদাধিকারী ছিলেন মেজর জেনারেল (অব) খাদিম হুসেন রাজা। পাকিস্তানি এই জেনারেল ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দে ঢাকায় ছিলেন ১৪ ডিভিশনের জিওসি হিসেবে। ‘অপারেশন সার্চলাইট’-এর অন্যতম প্রণেতা ছিলেন তিনি।

মুক্তিযুদ্ধের শুরুতে খুব নিকট থেকে দেখা ঘটনাবলী স্মরণ করেন খাদিম হুসেন রাজা। তাঁর স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ ‘এ স্ট্রেঞ্জার ইন মাই ওউন কান্ট্রি ইস্ট পাকিস্তান, ১৯৬৯-১৯৭১’-এর এক স্থানে পাক বাহিনীর ক্র্যাকডাউনের প্রতিক্রিয়ার উল্লেখ করে বলেন, ‘চট্টগ্রাম থেকে হতাশাজনক রিপোর্ট আসছিল। আমি ইতিমধ্যেই জায়গাটিকে আমাদের জন্য ‘অ্যাখিলিসের গোড়ালী’ (দুর্বল অর্থে) বলে উল্লেখ করেছি। আমাদের অস্তিত্ব বজায় রাখার জন্য চট্টগ্রাম প্রয়োজন ছিল- বন্দর খোলা রাখা আর আশেপাশের বিশাল অংশ আমাদের দখলে রাখা প্রয়োজন। ২০ বালুচ পরিকল্পনা মতো সঠিকভাবেই এগোলো। গোলাগুলির পর তারা ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টারের অস্ত্রাগার আর গোলাবারুদের ভা-ার দখল করে নিলো। তারপর তারা এগোলো মূল শহরের দিকে, কিন্তু রেলক্রসিংয়ের কাছে এসে ভারী প্রতিরোধের সম্মুখীন হলো। মেজর জিয়াউর রহমান ইতিমধ্যেই বিদ্রোহ করে তার পশ্চিম পাকিস্তানি কমান্ডিং অফিসারসহ আরো দুজন পশ্চিম পাকিস্তানি অফিসারের অন্তিম ব্যবস্থা করে ফেলেছিলেন। তিনি প্রতিরক্ষামূলক অবস্থান গ্রহণ করে ফেললেন আর ক্যান্টনমেন্ট থেকে শহরটিকে বিচ্ছিন্ন করে ফেললেন। এভাবেই শহরটির বেশির ভাগ অংশই বিদ্রোহীদের হাতে রয়ে গেলো। (বাংলা অনুবাদ, পৃষ্ঠা: ৭৮-৭৯)। তিনি আরো উল্লেখ করেন, ‘২৭ মার্চ তারিখে ২৫ ফ্রন্টিয়ার ফোর্স রেজিমেন্ট চট্টগ্রামে চলে আসলো আকাশপথে। আমি তাদের বিগ্রেডিয়ার আনসারি’র ব্যক্তিগত কমান্ডে দিয়ে দিলাম। বিগ্রে: আনসারি চট্টগ্রামকে ভালো চিনতেন। তারা নেভাল হেডকোয়ার্টার হতে মেইন রোড ধরে এগোলো শহরের দিকে। তার সৈন্যরা রেডিও স্টেশনটি দখল করে ফেললো কিন্তু তাতে খুব একটা লাভ হলো না। ট্রান্সমিটারটি ছিলো কাপ্তাই রোডে, আর মেজর জিয়াউর রহমান সেই ট্রান্সমিটারটির পুরোপুরি ফায়দা তুলছিলেন। তিনি বাঙালিদের বিদ্রোহে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য উৎসাহিত করছিলেন বেতারে যথেষ্ট বিষাক্ত কথার সম্প্রচার চালিয়ে। রেডিও স্টেশনটি আমরা দখলে নেওয়ার পর বিদ্রোহীদের সম্প্রচার বন্ধ হলো না। ফলে আমি বিমান আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নিলাম। এই আক্রমণ ফলপ্রসূ হলো এবং স্টেশনটি নিষ্ক্রিয় হয়ে গেলো। বিমান আক্রমণের আগে (মে. জে.) মিঠঠা তার বাকী কমান্ডোদের নদীপথে নৌকাযোগে ট্রান্সমিটারটির কাছে গিয়ে সেটাকে দখল ও ধ্বংস করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। যা হোক, কমান্ডোরা তাদের লক্ষ্যবস্তুর কাছে পৌঁছাতে ব্যর্থ হয়েছিলো। আগের অভিযানে চরম বিফলতা এসেছিলো কারণ কমান্ডোরা এই এলাকায় একদম নতুন ছিল, কিন্তু এবার বাকীরা সর্তক থাকায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটলো না।’ (মেজর জেনারেল (অব) খাদিম হোসেন রাজা : এ স্ট্রেঞ্জার ইন মাই ওউন কান্ট্রি ইস্ট পাকিস্তান, ১৯৬৯-১৯৭১, অনু. শাহরীয়ার শরীফ, পৃ. ৮১-৮২)

মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী খান

মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলি খান ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অন্যতম উচ্চপদস্থ অফিসার। ৫৭ ডিভিশনের জিওসি এবং শীর্ষ সামরিক উপদেষ্টা হিসেবে তিনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে সামরিক পুলিশ ও রাজাকারসহ নিরাপত্তা বাহিনীর অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক কর্মকা- সম্পাদন ও তদারক করতেন। তিনি প্রথমদিকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গোলন্দাজ রেজিমেন্টের পরিদর্শক ছিলেন এবং পরে পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক উপদেষ্টা হন।

মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী খান তাঁর ‘বাংলাদেশের জন্ম’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন, ‘প্রতিটি বাঙালি ইউনিটই বিদ্রোহ করেছিল। মেজর জিয়াউর রহমান তাঁর কম্যান্ডিং অফিসার কর্নেল জানজুয়াকে হত্যা করেছিলেন এবং নিজেকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। তাঁরা চট্টগ্রাম শহর দখল করে নিয়েছিলেন।’ (মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী খান, ঐড়ি চধশরংঃধহ এড়ঃ উরারফবফ, অনু. ‘বাংলাদেশের জন্ম’, শাহ আহমদ রেজা, পৃ. ৮৭)

সিদ্দিক সালিক

ব্রিগেডিয়ার সিদ্দিক সালিক পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে মেজর হওয়ার পর সাবেক পূর্ব পাকিস্তানে বদলি হয়ে আসেন প্রাদেশিক সামরিক আইন প্রশাসক লেফটেন্যান্ট জেনারেল সাহেবজাদা ইয়াকুব খানের জনসংযোগ অফিসার হয়ে। পরবর্তী সময়ে তিনি লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খান ও লেফটেন্যান্ট জেনারেল এ.এ.কে নিয়াজির জনসংযোগ অফিসারের দায়িত্ব পালন করেন। পাকিস্তানে ফিরে তিনি ব্রিগেডিয়ার পদে উন্নীত হন। প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হকের বিমান দুর্ঘটনাকালে সিদ্দিক সালিকও নিহত হন।

‘উইটনেস টু সারেন্ডার’ গ্রন্থে সিদ্দিক সালেক বলেন, ‘প্রাথমিক পর্যায়ে বিদ্রোহীরা সব রকমের সাফল্য নিজেদের হাতের মুঠোয় নিয়ে নেয়। ফেনীর কাছাকাছি শুভপুর ব্রিজ উড়িয়ে দিয়ে কুমিল্লা থেকে আগমনকারী সেনাদলের পথ কার্যকরভাবে বন্ধ করে দেয়। চট্টগ্রাম শহর ও চট্টগ্রাম ক্যান্টম্যান্টের প্রধান প্রধান এলাকা তারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে এনে ফেলে। ২০ বালুচের এলাকা ও নৌবাহিনীর ঘাঁটিই শুধু সরকারি কর্তৃত্বাধীনে ছিল। অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল-এর দ্বিতীয় ব্যক্তি মেজর জিয়াউর রহমান ব্রিগেডিয়ার মজুমদারের অনুপস্থিতিতে (যাকে কয়েকদিন আগে কৌশলে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছিল) চট্টগ্রামের বিদ্রোহীদের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। রেডিও স্টেশন প্রহরারত সরকারি সৈন্যরা সেখানে শক্তভাবেই অবস্থান করছিল। কাপ্তাই রোডে ছিল আলাদা একটা ট্রান্সমিটার। মেজর জিয়া সেটার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেন এবং বাংলাদেশের ‘স্বাধীনতা ঘোষণা’ প্রচারের জন্যে প্রাপ্ত যাবতীয় যন্ত্রপাতির ব্যবহার করলেন। চট্টগ্রামে যতক্ষণ অতিরিক্ত সৈন্য সমাবেশ ঘটানো না গেল ততক্ষণ পরিস্থিতি উল্টোখাতে প্রবাহিত করানোর ব্যাপারে কিছু করা গেল না। (মেজর সিদ্দিক সালিক: উইটনেস টু সারেন্ডার, অনু. নিয়াজির আত্মসমর্পনের দলিল, মাসুদুল হক, পৃ. ৮৩)

এভাবে বাংলাদেশের মাঠ পর্যায়ের কমান্ডারদের বক্তব্যে জিয়াউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধ ও তাঁর নেতৃত্ব সম্পর্কে বিবরণ পাওয়া যায়। ফলে তাঁর মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ সম্পর্কে কটাক্ষ ও ব্যঙ্গোক্তিগুলো বুমেরাং হতে বাধ্য।

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট ও গ্রন্থপ্রণেতা।


বিভাগ : সম্পাদকীয়


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

বেপরোয়া গাড়ি চালানো বন্ধ হোক
জিয়া : স্বাধীনতার ঘোষক
আমাদের পথ
পাহাড়িদের নিয়ে ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে
স্মার্টফোনের দাসত্ব থেকে মুক্তির উপায়
আরও

আরও পড়ুন

বিএসএফ সাইন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে : লে. কর্নেল কিবরিয়া

বিএসএফ সাইন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে : লে. কর্নেল কিবরিয়া

যুদ্ধবিরতির প্রতীক্ষায় গাজার ফিলিস্তিনিরা, নিহত ৪৭ হাজার ছুঁই ছুঁই

যুদ্ধবিরতির প্রতীক্ষায় গাজার ফিলিস্তিনিরা, নিহত ৪৭ হাজার ছুঁই ছুঁই

এক সপ্তাহে মসজিদে নববীতে ৫৪ লাখ মুসল্লির নামাজ আদায়

এক সপ্তাহে মসজিদে নববীতে ৫৪ লাখ মুসল্লির নামাজ আদায়

ধর্ম নিয়ে তাচ্ছিল্যকারীদের বিরুদ্ধে জিহাদের ডাক দিলেন আজহারী

ধর্ম নিয়ে তাচ্ছিল্যকারীদের বিরুদ্ধে জিহাদের ডাক দিলেন আজহারী

‘মা’ দেশ স্বাধীন করেছি- মৃত্যু শয্যায় শহীদ সাব্বির

‘মা’ দেশ স্বাধীন করেছি- মৃত্যু শয্যায় শহীদ সাব্বির

নাইজেরিয়ায় পেট্রোল ট্যাংকার বিস্ফোরণে নিহত ৭০

নাইজেরিয়ায় পেট্রোল ট্যাংকার বিস্ফোরণে নিহত ৭০

লাল সন্ত্রাসের ঘোষণা : মেঘমল্লার বসুর শাস্তির দাবিতে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ

লাল সন্ত্রাসের ঘোষণা : মেঘমল্লার বসুর শাস্তির দাবিতে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ

চুয়াডাঙ্গার কুমারী ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মাহাবুল হককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম

চুয়াডাঙ্গার কুমারী ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মাহাবুল হককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম

বিএনপিতে কোন সন্ত্রাসীর ঠাঁই হবে না কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু

বিএনপিতে কোন সন্ত্রাসীর ঠাঁই হবে না কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু

মধ্যরাতে জাবির ছাত্রী হলের রুম থেকে লালন ভক্ত যুবক আটক

মধ্যরাতে জাবির ছাত্রী হলের রুম থেকে লালন ভক্ত যুবক আটক

মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে : তারেক রহমান

মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে হবে : তারেক রহমান

ঋণখেলাপিরা যাতে মনোনয়ন না পায় চেষ্টা করবো : মির্জা ফখরুল

ঋণখেলাপিরা যাতে মনোনয়ন না পায় চেষ্টা করবো : মির্জা ফখরুল

অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর না হলে রাজনৈতিক সংস্কার টেকসই হবে না : বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি

অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর না হলে রাজনৈতিক সংস্কার টেকসই হবে না : বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি

টিসিবি’র এক কোটি ফ্যামিলি কার্ডধারীর মধ্যে ৩৭ লাখই ভুয়া: বাণিজ্য উপদেষ্টা

টিসিবি’র এক কোটি ফ্যামিলি কার্ডধারীর মধ্যে ৩৭ লাখই ভুয়া: বাণিজ্য উপদেষ্টা

ভোজ্যতেলের সরবরাহ নিশ্চিতে কারখানা পরিদর্শন ভোক্তা অধিকারের

ভোজ্যতেলের সরবরাহ নিশ্চিতে কারখানা পরিদর্শন ভোক্তা অধিকারের

গণপরিবহনে শৃঙ্খলায় কাউন্টার স্থাপনের পরিকল্পনা

গণপরিবহনে শৃঙ্খলায় কাউন্টার স্থাপনের পরিকল্পনা

রাজধানীর তিন পার্কে ভেন্ডারের চুক্তি : শর্ত ভঙ্গের তদন্তে ডিএনসিসি

রাজধানীর তিন পার্কে ভেন্ডারের চুক্তি : শর্ত ভঙ্গের তদন্তে ডিএনসিসি

বাবা-মায়ের পুরোনো বাড়িতে যাই : শফিকুল আলম

বাবা-মায়ের পুরোনো বাড়িতে যাই : শফিকুল আলম

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসায় ১৫০ কোটি টাকা অনুদান

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহতদের চিকিৎসায় ১৫০ কোটি টাকা অনুদান

২০২৪ সালে ৩১০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

২০২৪ সালে ৩১০ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা