প্রকাশিত হয়েছে শহীদদের স্মরণে ' জুলাই অনির্বাণ', ভিডিও দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন সাধারণ মানুষ
২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:২৪ পিএম | আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:২৪ পিএম
এখনও মানুষের চোখে ভাসে আবু সাঈদের প্রসারিত দুই হাত, ‘ ভাই পানি লাগবে পানি’ বলতে বলতে মাটিতে লুটিয়ে পড়া মুগ্ধ দেশের ইতিহাসের এক অনন্তকালের সাক্ষী। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে রক্তচোষা হাসিনার বিরুদ্ধে যাওয়ায় এবং ন্যায় ও সত্যের পক্ষে থাকায় প্রাণ দিতে হয়েছে অসংখ্য শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষকে। খালি হয়েছে অসংখ্য মায়ের কোল, কেউ হারিয়েছেন ভাই, বাবা হারিয়েছে তার আদরের ধন ছেলেকে, কেউ হারিয়েছে প্রিয় স্বামী তো কেউ হারিয়েছে একসাথে হাত ধরে চলা বন্ধুটিকে। এই ত্যাগ কি কোনভাবেই আর্থিক পরিমাপে ওজন করা সম্ভব? উত্তরটি সম্ভবত হবে না,কখনই এই ত্যাগকে মূল্যায়ন করা যাবে না পৃথিবীর কোন বস্তু দিয়ে।
১৯ জুলাইয়ের পর থেকেই ঘাতকের বুলেটে নিহত সৈকতের বাবা প্রতিদিন একটি রাস্তায় এসে হাঁটাহাঁটি করেন, যেখানে তার ছেলে হাঁটাহাঁটি করত। সেখানেই নির্বাক দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন বাবা বুকভরা শূন্যতা আর হাহাকার নিয়ে। হতভাগ্য সেই বাবা নিজের ছেলের শেষ হাসিটা দেখতে পেয়েছিলেন দাফনের সময়।
কিশোর মোহাম্মাদ তামিম। আঠারোর গন্ডিও পাড় হয়নি জীবনের। দুরন্ত এই বয়সে তার ছুটে বেড়ানোর কথা ছিল, পাখির মতো উড়বার কথা ছিল, কথা ছিল বাঁ পায়ের শটে গোলকিপারের রক্ষণভাগকে পর্যদুস্ত করার কিন্তু তামিম আজ ঘরবন্দি! কেননা তার সেই পা যে আর নেই শরীর জুড়ে। 'মাঝে মাঝে ঘুমের মধ্যে কিংবা বেখেয়ালে মনে হয় পা আছে, হাত দিয়ে দেখি নেই।' এভাবেই কথাগুলো বলতে বলতে গলার স্বর ক্ষীণ হয়ে আসে তামিমের।
যেকোন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ মানে ক্ষতিটা সবদিক থেকে কোন না কোন মায়েরই৷ দু'চোখ ভরা স্বপ্ন নিয়ে ছুটে বেড়ানো আনাস প্রিয় মাকে উদ্দেশ্য করে লিখেছিলেন একটি চিঠি, ‘একটি প্রতিবন্ধী কিশোর, সাত বছরের বাচ্চা যদি রাস্তায় নামতে পারে, যদি সংগ্রামে নামতে পারে, তাহলে আমি কেন বসে থাকব?একদিন মরতেই হবে, আমি মিছিলে যাচ্ছি মা।’ আনাসরা জানে মা তার নারী ছেঁড়া ধনকে হয়তো কোন ভাবেই বিপদের মুখে পতিত হতে দিবে না। তাই শেষবারের মতো কথাগুলো চিঠিতে লিখেছিলেন শহীদ শাহরিয়ার খান আনাস। আনাস নেই,আর কখনও ছুঁয়ে দেখা হবেনা প্রাণের ধন আনাসকে। তাই শেষ স্মৃতি হিসেবে পুত্রের চিঠির প্রতিটি লেখা পড়ে শোনান তার শোকার্ত মা। এক একটি শব্দ পড়ছিলেন তিনি আর চোখ থেকে টপ টপ করে চুইয়ে চুইয়ে পড়ছিলো পানি। বুক ফেটে যায় সন্তান হারানোর যন্ত্রণায়। কান্নাজড়িত গলায় সন্তান হারানো সেই মা আর্তনাদের সুরে বললেন, ‘আমার সন্তানের বুকে গুলি লাগছে, আর ছিদ্রটা হইছে আমার কলিজায়’।
প্রতিটি মেয়ের জীবনে তার সুপারম্যান প্রাণপ্রিয় বাবা। নির্মম ঘাতকের বুলেটে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে সাংবাদিক শহিদ তাহির জামানের দেহখানি। তাহিরের ছোট্ট মেয়েটি এখনও ঘুমের মধ্যে হতচকিত হয়ে ওঠে বীভৎস সেই দুঃস্বপ্ন দেখে। ‘প্রিয় বাবা’কে প্রচন্ড মিস করছে তার ছোট্ট কন্যা সন্তান। আর কখনই ফিরবে না বাবা,কখনও হাতটি ধরে হাঁটা হবে না, একসাথে গাওয়া হবে না জীবনের জয়গান। আধো আধো ভাষায় দ্য রিপোর্টের সাংবাদিক শহিদ তাহির জামান প্রিয়'র কন্যা বলছিলেন, ‘প্রিয় বাবা নাই বাড়িতে, যখন বাইরে গেছে, পুলিশ এসে গুলি মেরেছে। আই মিস ইউ প্রিয় বাবা।’
রক্তপিপাসু হাসিনা দেশ থেকে বিতাড়িত হয়েছে। তবে রয়ে গেছে এমন শত শত শহিদের গল্প। যা খানিকটা তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে ডকুমেন্টারি ‘জুলাই অনির্বাণ’ শিরোনামে। জুলাইয়ের স্মৃতিগুলো ধরে রাখতেই ডকুমেন্টারিটি নির্মাণ করার উদ্দেশ্য।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার তরফ থেকে প্রকাশ্যে আনা হয় ডকুমেন্টারিটি। এছাড়াও ইউটিউব ও বিভিন্ন গণমাধ্যমেও আলাদা করে প্রকাশ করা হয় এই ডকুমেন্টারিটি। যা দেখে অত্যন্ত আবেগপ্রবন হয়ে পড়েন নেটিজেন, দর্শকেরা।
ডকুমেন্টারিটি দেখে অনেকেই বিভীষিকাময় সেই স্মৃতি রোমন্থন করেছেন। যেখানে এক নেটিজেন লিখেছেন, 'কত প্রাণ হলো বলিদান, লেখা আছে অশ্রুজলে। ভিডিওটা দেখে কষ্টে চোখ দুটো ভিজে যাচ্ছে বারবার। এই কষ্ট বুকে নিয়েই এ দেশটার জন্য আমাদের কাজ করে যেতে হবে। আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখতে হবে, স্বপ্ন দেখাতে হবে।'
আরেকজন লিখেছেন, 'দেখছি আর অঝোরে কাঁদছি! এতো যেন আমার ভাই আমার পরিবার। তোমরা সবাই ভালো থেকো ফুলের বাগানে। জান্নাতের ফুল।'
আরেকজন মন্তব্য করেছেন, 'পুরো ভিডিওটা দেখেছে অথচ চোখের পানি ঝরে নি এমনটা মনে হয় সম্ভব না। বিশেষ করে শহিদ ছেলের চিঠি পড়তে থাকা অশ্রুসিক্ত মা। কত ক্ষত তাদের পরিবারগুলোতে, ভাবতেই নিশ্বাস ভারি হয়ে যায়। জান্নাতে সুখে থাকুক আমার শহিদ ভাইয়েরা।'
ডকুমেন্টারিটি নিয়ে কথা বলেছেন নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। ফেসবুক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘ক্ষমতার বিরুদ্ধে মানুষের সংগ্রাম হল ভুলে যাওয়ার বিরুদ্ধে স্মৃতির সংগ্রাম’- মিলান কুন্ডেরা।
ফারুকী আরও লেখেন, ‘আমরা ভুলব না। আমরা আমাদের বীরদের গল্প, আমাদের সংগ্রামের সম্মিলিত স্মৃতি নিয়ে যেতে থাকব! আপনার প্রোপাগান্ডা মেশিন যত বড়ই হোক না কেন আপনি সফল হবেন না, আপনি মিথ্যা আখ্যা তৈরি করে আপনার হাত ধুতে পারবেন না। সত্য বারবার বলা হবে।’
বিভাগ : বিনোদন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বেনাপোল দিয়ে যাত্রী পারাপার কমেছে অর্ধেক, রাজস্ব আয় ও ব্যবসা বাণিজ্যে ধস
'জুলাই অনির্বাণ’ এ রক্তপিপাসু হাসিনার নির্মমতা দেখে কাঁদছেন নেটিজেনরা
অবশেষে ২৬ মামলার আসামি কুমিল্লার শীর্ষ সন্ত্রাসী আল-আমিন গ্রেফতার
তারেক রহমানের আর্থিক সহায়তা নিয়ে সিয়ামের বাড়িতে মীর হেলাল
মানবপাচারকারীদের প্ররোচনায় : স্বপ্ন পূরণে হাতছানি!
অবিলম্বে ফারাবিসহ সকল মাজলুম আলেমদের মুক্তি দিন, বিক্ষোভ সমাবেশে নেতৃবৃন্দ
জগন্নাথের সহকারী প্রক্টরকে গুলি করে হত্যার হুমকির অভিযোগ
আপনারা এখন কোথায়: আ.লীগকে জামায়াত নেতা
আনন্দে গুলি ছুড়তে গিয়ে নিজেই গুলিবিদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যু ভারতীয় শিক্ষার্থীর
বিশ্বস্ত পাম বন্ডিকে অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে বেছে নিলেন ট্রাম্প
জনসমর্থন হারাচ্ছে জার্মানির ক্ষমতাসীন দল
ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগ্রামে আহত, নিহত ও কারা নির্যাতিত নেতাকর্মীদের পাশে বিএনপি'র সব সময় থাকবে!
বিপ্লবী সরকারের উপদেষ্টা হবেন বিপ্লবী, তাদের চেতনা থাকবে গতিশীল: রিজভী
আয়ারল্যান্ড নারী ক্রিকেট দল এখন ঢাকায়
‘আন্তর্জাতিক আদালতের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাবে কানাডা’
সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানাকে আধুনিকায়ন করা হবে- রেলপথ উপদেষ্টা
দেড় যুগ পর গোলাপগঞ্জে প্রকাশ্যে জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে জনতার ঢল
উইন্ডিজকে ব্যাটিংয়ে পাঠাল বাংলাদেশ
ভাইরাল ভিডিওতে কটাক্ষের শিকার সামান্থা
দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে কাউকে ছাড় দেয়া হবেনা- এসএম জিলানী