শিল্পকলায় বিজয়ের মঞ্চে দর্শক মাতালো আর্টসেল–লালন
১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:১৯ এএম | আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:১৯ এএম

বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর আয়োজনে বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে সন্ধ্যা ৭ টায় জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে ‘২০২৪: ঐ নূতনের কেতন ওড়ে’ মাসব্যাপী পোস্টার, পেইন্টিং, আলোকচিত্র, ভিডিওচিত্র, কার্টুন প্রদর্শনীর উদ্বোধন করা হয়। চারুকলা বিভাগের ব্যবস্থাপনায় আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ। উপস্থিত ছিলেন জুলাই বিপ্লবে আহত ছাত্র ও ব্যবসায়ী সিরাজ উদ্দিন। সঞ্চালনা করেন চারুকলা বিভাগের পরিচালক মোস্তফা জামান।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ও স্বৈরাচার পতনের পর দেয়াল লিখন ও দেয়ালচিত্রের আন্দোলনসহ, আলোকচিত্রে আন্দোলনের প্রামাণ্য দলিল তুলে ধরে বহুমাত্রিক একটি আর্কাইভ গড়ে তোলার প্রাথমিক প্রয়াস হিসেবে এই প্রদর্শনীর আয়োজন।
উদ্বোধনী আয়োজনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, “জুলাই বিপ্লব ২০২৪ অনিবার্য হয়ে ওঠেছিলো, কারণ স্বাধীনতা বেহাত হয়ে গিয়েছিলো। এটা কেবল সরকার পরিবর্তন নয়, এর মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়েছিল এবং তারা জানতেন যে কে দেশ চালাচ্ছিল। সেই ক্ষোভ থেকেই ২৪ জুলাই হয়েছিলো। একাত্তরের চোখ দিয়েই ২০২৪ হয়েছে। আমাদের দেশ আর সেই অবস্থায় আর ফিরে যাবে না।”
শিল্পকলা একাডেমীর নানামাত্রিক অনুষ্ঠানমালার প্রসংশা করে সংস্কৃতি উপদেষ্টা বলেন, “এই বিজয়ের মাসে উৎসবের জোয়ার চলছে শিল্পকলা একাডেমিতে। যারা প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে যে বাংলাদেশ ইসলামিস্টরা দখল করে নিয়েছে, তাদের জন্য উত্তর হবে শিল্পকলা একাডেমির নানামুখী এসব অনুষ্ঠানমালা।”
সংস্কৃতি উপদেষ্টাকে স্বাগত জানিয়ে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, “এতো বছর ভাষাতাত্ত্বিক, ভাষাভিত্তিক যে জাতীয়তাবাদের কথা বলা হয়েছে ভাষার বাইরে শুধু বাঙালির কথা যেটা বলা হয়েছে সেখানে শিল্পকলা একাডেমি মনে করে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী না বলে “আদিবাসী” বলে পরিচয় দেয়া হোক। একইভাবে মুসলিম হলে মনে করা হতো নৈরাজ্য সৃষ্টিকারী দল, যাদের জুজুর ভয় দেখিয়ে ১৫ বছর শাসন চালিয়ে গেছে। তার মানে ইসলামিক কোন শাসনব্যবস্থা আমাদের মধ্যে ঢুকতে পারবে না। অথচ লোক দেখানোর জন্য তারা ওমরা করেছেন। গোপনে যোগ সাজেশ করেছেন।”
মহাপরিচালক আরো বলেন, “আজকে যারা আওয়ামীদের প্রকাশ্য সমর্থন করে রবীন্দ্রনাথের কথা বলে যাচ্ছে যে আমরা রবীন্দ্রনাথকে ভুলে যাচ্ছি। জাতির দুইটা বিষয় আছে একটি অতীত একটা বর্তমান। গত ১৫ বছরে একাত্তরের খন্ডিত ইতিহাস মনে করিয়ে দেয়া হয়েছে যেখানে জেনারেল ওসমানী নেই, তাজউদ্দিন নেই, শেখ মুজিবকে নিয়ে, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তারা তাদের ভাবাদর্শ তৈরি করেছেন। যা সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদের অতীতের স্মৃতি।”
সকলের সহাবস্থান উল্লেখ করে নাট্যকার ও শিক্ষক ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ বলেন, “সকল চিন্তা, সকল মহৎ পথ, সহিষ্ণুতার সাথে আমরা শুনতে পারি। আমরা এখন বিশৃংখলতার চাইতে শিল্পকর্মের দিকে, নতুন চিন্তার দিকে নজর দেই। আমরা মনে করি জাতিগত পরিচয় তুলে ধরবে শিল্পকর্ম। বহুবছর আগের হিন্দু শাসন, মুসলমান শাসন, বৌদ্ধ শাসন কিভাবে মনে রাখব, তার উপরে আমাদের জাতিসত্তা নির্মিত হবে। বিশৃঙ্খল না হয়ে আমাদের একে অপরের কথা শুনতে হবে, আমরা যেন নিজেরা নিজেদের পথকে বের করতে পারি এবং একসাথে থাকতে পারি তার মনোবাসনা সকলের থাকতে হবে।”
পরবর্তীতে প্রধান অতিথি প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন এবং গ্যালারী পরিদর্শন করেন।
একইসাথে সন্ধ্যা ৬.০০ টায় একাডেমির নন্দনমঞ্চে শুরু হয় বিজয়ের অনুষ্ঠান। একাডেমির সংগীত, নৃত্য এবং আবৃত্তি বিভাগের আয়োজনে অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক ড. সৈয়দ জামিল আহমেদ। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন সংগীত ও নৃত্য আবৃত্তি বিভাগের পরিচালক মেহজাবীন রহমান।
বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির যন্ত্রশিল্পীবৃন্দের সমবেত যন্ত্রসংগীত ‘দেশের গান’ পরিবেশনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর সমবেত সংগীত ‘ও আলোর পথযাত্রী’ এবং ম্যাশআপ (‘সবকটা জানালা’, ‘একবার যেতে দি না’, ‘বিপ্লবের রক্তে রাঙা’, ‘একতারা লাগে না আমার’ এবং ‘ও আমার দেশের মাটি’) পরিবেশন করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির কন্ঠশিল্পীবৃন্দ; একক আবৃত্তি ‘ছবি’ (আবু হেনা মোস্তফা কামাল) করেন মাহিদুল ইসলাম মাহি।
যেখানে সমবেত নৃত্য ‘দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা’ পরিবেশন করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নৃত্যশিল্পীবৃন্দ, নৃত্য পরিচালনায় ছিলেন লায়লা ইয়াসমিন লাবণ্য এবং কণ্ঠ দিয়েছেন রোখসানা আক্তার রূপসা; একক সংগীত ‘যে মাটির বুকে’ ও ‘মাগো ভাবনা কেন’ পরিবেশন করেন পিয়াল হাসান। সমবেত নৃত্য পরিবেশন করে বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী সংস্থা এবং ‘এসো বাংলাদেশের যত বীর জনতা’ ও ‘মোরা ঝঞ্জার মত উদ্দাম’ পরিবেশন করে বাংলাদেশ নৃত্যশিল্পী ফাউন্ডেশন।
এছাড়াও একক সংগীত পরিবেশন করেন ফেরদৌস আরা; সমবেত নৃত্য ‘বিপ্লবী জনতা’ পরিবেশন করেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নৃত্যশিল্পীবৃন্দ, পরিচালনায় ছিলেন ইমন আহমেদ, সহযোগী নৃত্য পরিচালক হিসেবে ছিলেন জাহিদুল ইসলাম সানি, গীতিকার- কফিল উদ্দিন মাহমুদ, সুরকার- ফাহাল হোসাইন অন্তু, কন্ঠ দিয়েছেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির কন্ঠশিল্পীবৃন্দ, যন্ত্রসংগীতে ছিলেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির যন্ত্রশিল্পীবৃন্দ। একক আবৃত্তি করেন দি রেইন।
অনুষ্ঠানের শেষ হয় ব্যান্ডদল ‘আর্টসেল’ এবং ‘লালন'র পরিবেশনার মধ্য দিয়ে। তাদের অসাধারণ পরিবেশনায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন ভক্ত-সমর্থকেরা।
বিভাগ : বিনোদন
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও






আরও পড়ুন

বগুড়ার সান্তাহারে প্রাইভেট কারের ধাক্কায় শিশুসহ ৪ আহত

নানা আয়োজনে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে বৈশাখী উৎসব সম্পন্ন

গফরগাঁওয়ে প্রাইভেটকার ও মোটর সাইকেল মুখোমুখি সংর্ঘষ ঃ হোন্ডার চালক গুরুতর আহত

প্রকাশ্য মুসলিম নারীদের বোরখা ধরে টানাটানি, উত্তরপ্রদেশে গ্রেফতার ৬

আনোয়ারায় বাংলা নববর্ষ উদযাপনে শোভাযাত্রা

বেরোবিতে বর্ণিল আয়োজনে বাংলা নববর্ষ উদযাপন

বরিশালে একঘরে দম্পতির লাশ উদ্ধার

চাঁদের গাড়ী থেকে ছিটকে যুবকের মৃত্যু

বাংলা নববর্ষ উৎসব ১৪৩২ উপলক্ষে মৌলভীবাজারে বর্ণাঢ্য আনন্দ শুভাযাত্রা

আদালত প্রাঙ্গনে দুই স্ত্রীর জুতোপেটা খেলেন স্বামী, ভিডিও ভাইরাল!

নববর্ষে দেশবাসীর প্রতি সৌহার্দ্য ও ঐক্যের বার্তা সেনাপ্রধানের

মোংলায় নববর্ষকে স্বাগত জানিয়ে বিএনপি শোভাযাত্রা

বাংলা নববর্ষে নোবিপ্রবিতে বর্ণাঢ্য আনন্দ শোভাযাত্রা

বাংলাদেশি 'কালা কালা' গানে মাতাল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র

পীরগাছা এ.এফ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ বরন উপলক্ষে বর্ণাঢ্য র্যালী ও আলোচনা সভা

ইসরায়েলি গণমাধ্যমে বারবার কেন বাংলাদেশের নাম?

রাঙামাটির রাজস্থলীতে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের অংশগ্রহনে পহেলা বৈশাখ পালন

বাংলা নববর্ষ, টাইম স্কোয়ারে বাঙালি সংস্কৃতির ঝলক

মাভাবিপ্রবিতে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ পালিত

১২ ফরাসি কর্মকর্তাকে দেশ ত্যাগের নির্দেশ আলজেরিয়ার