ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪ | ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

'রাজপথের বিপ্লব থেকে টিএসসির মঞ্চে একজন মহিউদ্দিন রনি'

Daily Inqilab তরিকুল সরদার

১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:২৫ পিএম | আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:২৫ পিএম

 

হয় মাতৃভূমি নয় মৃত্যু বিপ্লবীদের একমাত্র স্লোগান। সেই স্লোগানের যথার্থ মান রেখেছেন তিনি। সকল রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে এগিয়ে গেছেন জালিমের বিরুদ্ধে। বলেছেন সাদাকে সাদা, কালোকে কালো। অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলে কখনও হয়েছেন আহত তো কখনও চক্ষুশূল হয়েছেন স্বৈরাচারের। তবুও পিছপা হননি, কেননা বিপ্লবীরা কখনও পিছিয়ে যায় না।

 

বলছি মহিউদ্দিন রনির কথা, বলছি একজন রনি ভাইয়ের কথা। ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলে যখন কেউ কথা বলতে পারেনি সেইসময় চোখে চোখ রেখে অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে গেছেন মহিউদ্দিন রনি। বাংলাদেশ রেল কর্তৃপক্ষের স্বেচ্ছাচারী মনোভাব এবং সহজ ডট কমের সীমাহীন দুর্নীতি যখন ছাড়িয়ে গেছে সকল সীমা তখন মহিউদ্দিন রনি আঙ্গুল তুলেছেন সেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে। ফলশ্রুতিতে তাকে হতে হয়েছে আহত,অপমানিত তবুও হার মানেননি রনি। শেষ পর্যন্ত টুটি চেপে ধরেছেন সকল অপকর্মের। রেল কর্তৃপক্ষকে মাথানত করতে হয়েছিল রনির আপোষহীন গর্জনের সামনে। ঠিক তখন থেকেই যেন ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার এবং তার নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের সবচেয়ে বড় শত্রু হয়ে উঠেছিলেন রনি। যেকোন যৌক্তিক আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করায় কেবল রনিই নন তার পরিবারকেও হতে হয়েছে লাঞ্চনার শিকার তবুও মাথা নত করেননি তিনি।

 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে দেশ যখন চরম উত্তাল তখন সর্বাগ্রে থেকে লড়াই করেছেন তিনি। তার আগুন জ্বালানো বক্তব্য সহজেই হজম হয়নি শোষকের। অনেকে হয়তো জানেই না হাসিনা বিরোধী আন্দোলনে কিছু না করেই প্রথম মামলার শিকার হয়েছিলেন তিনি। আবু সাঈদ হত্যার পূর্বেই হাসিনার বিরুদ্ধে প্রথম গর্জে উঠেছিলেন তিনি। শারীরিকভাবে অসুস্থ রনি যন্ত্রনায় ছটফট করছিলেন তবুও রাজপথ থেকে সরে দাড়াঁননি এক মূহুর্তের জন্য। স্বৈরাচারের পোষা গোয়েন্দা বাহিনী থেকে শুরু করে লাঠিয়াল বাহিনীর প্রধান টার্গেট ছিলেন তিনি তবুও সামান্যতম পিছপা হননি,অটল ছিলেন ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে। এমনকি আন্দোলনে গানে গানে আওয়াজ তুলেছেন, আহ্বান জানিয়েছেন ছাত্র-জনতাকে এগিয়ে আসার।

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের স্বেচ্ছাচারীতামূলক কার্যক্রমের প্রতিবাদ এবং রেলের সীমাহীন দুর্নীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করায় চক্ষূ্ুশূল হয়েছিলেন বিভাগের কিছু শিক্ষক থেকে শুরু করে ভিসি আখতারুজ্জামানের। তথাকথিত অজুহাত, এ্যাটেনডেন্স নেই এই বাহানায় তৎকালীন ঢাবি প্রশাসন দিতে দেয়নি পরিক্ষা, শত অনুরোধ করে নিজ বিভাগে বসতে পারেননি পরিক্ষায়। রনির জীবন থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে মহামূল্যবান একটি বছর তবুও দমে জাননি রনি।

 

সকল অপশক্তির মোকাবেলা করে অবশেষে স্নাতক (সন্মান) শেষ করতে যাচ্ছেন তারুণ্যের এই তারকা মহিউদ্দিন রনি। গত ৩রা ডিসেম্বর শুরু হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৮ তম কেন্দ্রীয় বার্ষিক নাট্যোৎসব। যেখানে পরিক্ষার অংশ হিসেবে নাট্য নির্দেশনা দিয়েছেন মহিউদ্দিন রনি। করতে যাচ্ছেন নির্দেশক হিসেবে আত্মপ্রকাশ। পাশাপাশি নিজেই করছেন অভিনয়। আগামীকাল শুক্রবার (১৩ ই ডিসেম্বর) নাট্যোৎসবের সমাপনী দিনে মঞ্চস্থ হতে যাচ্ছে মহিউদ্দিন রনির নির্দেশনা এবং যতীন সরকারের রচনায় নাটক 'সব পাওয়ার মন্ত্র'।

জানা যায়, নাটকটিতে রূপকের মাধ্যমল ফুঁটিয়ে তোলা হয়েছে স্বৈরাচারী হাসিনার দুঃশাসন এবং জুলাই বিপ্লবের বীরদের স্মৃতি রোমন্থন। নাটকটির প্রেক্ষাপট ও নির্মান সম্পর্কে মহিউদ্দিন রনি বলেন যে, সম্প্রতি বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া ছাত্র-জনতার জুলাই অভ্যুত্থানের মূল্যবোধকে ধারণ করে ও সাহসী বীরদের স্মরণে নির্মিত হয়েছে রূপকআশ্রিত এই নাটক।

নাটকের মূল ভাবনার বিষয়ে নির্দেশক মহিউদ্দিন রনি বলেন, "নাটকটির মাধ্যমে সারা পৃথিবীর সকল ফ্যাসিবাদের উৎপত্তি, প্রবাহ এবং তার পতনের প্রেক্ষাপটকে প্রতিকীরূপে অঙ্কিত হয়েছে। বিশ্বাস রাখি নাটকটি উপভোগ করার মধ্য দিয়ে একজন দর্শক বিপ্লবের মন্ত্র শিখবে। জুলাই অভুত্থানে তার ভূমিকা কি ছিলো সে তা খুঁজে পাবে এবং পরবর্তীতে তার করণীয় বিষয় কি? তার মনে সেই প্রশ্নের উদ্রেক ঘটাবে।"

এ বিষয়ে রনি আরও বলেন, 'পুরো প্রেক্ষাপটটি সারা বিশ্বের সার্বজনীন বিপ্লব সৃষ্টির কারণ এবং সে জনস্রোত কোথায় গিয়ে সমাপ্ত হবে তা অতি নাটকীয়ভাবে সেই প্রশ্নটি তোলার মাধ্যমেই নাটকটি শেষ হয়'

 

নাটকের নির্যাস সম্পর্কে জানা যায়, নাটকটিতে দেখা যাবে একটি কল্পিত স্থান অচলগীরি, যেখানে রাজতন্ত্র চলমান, সেই রাজ্যের রাজার মনে বাসনা জেগেছে লাল টকটকে "সূর্য" দেখার। তবে তার রাজ্যে থাকা পাহাড়ের কারনে দেখতে পারেন না সকালের সূর্য। প্রজাদের জীবিকার কথা না ভেবেই রাজা প্রতিজ্ঞা করেছেন নিজ রাজ্য থেকে ৭ দিনের মধ্যে সরিয়ে দেবেন পাহাড়।

একাজে, প্রজারা ব্যর্থ হলে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হবে তাদের। ফলশ্রুতিতে এই স্বৈরাচারী সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে প্রবল প্রজাবিদ্রোহ। অন্যদিকে, এই বিদ্রোহকে পুঁজি করে ফায়দা হাসিল করারও চেষ্টা করে আরেক ষড়যন্ত্রকারী গোষ্ঠি এবং প্রজাদের ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধে যুদ্ধবাজ দুষ্টচক্রকে ভেঙ্গে ফেলে প্রতিষ্ঠিত হয় জনগণের শাসন।

 

জুলাই স্মৃতি নিয়ে আয়োজিত এই নাটকের মঞ্চ পরিকল্পনায় ছিলেন সাদমান মুবতাসিম আদীব, আলোক প্রক্ষেপণে রিফাত জাহান শাওন, সংগীত পরিচালনায় তরিকুল সরদার, পোশাক পরিকল্পনায় ফারজানা আফরিন মিম এবং দ্রব্যসামগ্রী পরিকল্পনায় সানজিদা জামান স্নেহা এবং আনজীর আব্দুল্লাহ।

পাশাপাশি, মুখসজ্জায় রয়েছেন তানজিমা পাঠান এবং মৃন্ময়ী পন্ডিত এবং সার্বিক সহায়তায় নুসরাত জাহান সাদিয়া, চন্দ্রিমা রানী পাল, মাহির ইবনে ওমর, নাফিসা মালিয়াত সাবা।


বিভাগ : বিনোদন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

জমকালো আয়োজনে পালিত হলো সেভি বাংলাদেশ লঞ্চিং ইভেন্ট
কনের সাজে বুবলী, ভাইরাল সামাজিক মাধ্যমে
আগামীকাল দেশব্যাপী মুক্তি পাচ্ছে ৮৪০' ওরফে Democracy Pvt. Ltd.
বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্কের অবনতি কষ্ট দেয়
'চঞ্চল গৃহবন্দী' শিরোনামে সংবাদ প্রচার, মিথ্যাচারকে শিল্পে রূপ দিয়েছে ভারতীয় মিডিয়া
আরও

আরও পড়ুন

বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে টাস্কফোর্স গঠন করা হবে যা কাজ করবে আগামী বর্ষাকাল পর্যন্ত : পরিবেশ উপদেষ্টা

বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে টাস্কফোর্স গঠন করা হবে যা কাজ করবে আগামী বর্ষাকাল পর্যন্ত : পরিবেশ উপদেষ্টা

ইনকিলাব সম্পাদক-সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলায় ডিইউজে’র উদ্বেগ

ইনকিলাব সম্পাদক-সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলায় ডিইউজে’র উদ্বেগ

টঙ্গীতে গাড়ি ভাঙচুর ও উত্তেজনার বিষয়ে যা জানালেন জোবায়েরপন্থিরা

টঙ্গীতে গাড়ি ভাঙচুর ও উত্তেজনার বিষয়ে যা জানালেন জোবায়েরপন্থিরা

গণহত্যাকারীদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত কোন নির্বাচন হতে পারে না-মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক

গণহত্যাকারীদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত কোন নির্বাচন হতে পারে না-মাওলানা মুহাম্মদ মামুনুল হক

অবশেষে মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চালু হলো এমআরআই যন্ত্র, জেলাবাসীর স্বস্তি

অবশেষে মানিকগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে চালু হলো এমআরআই যন্ত্র, জেলাবাসীর স্বস্তি

ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর মির্জা আজমের ব্যাংক হিসাবে ৯০৭ কোটি টাকার লেনদেন!

ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর মির্জা আজমের ব্যাংক হিসাবে ৯০৭ কোটি টাকার লেনদেন!

কক্সবাজার সদরে জাতীয় নাগরিক কমিটির ১৩৬ সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধি কমিটি ঘোষণা

কক্সবাজার সদরে জাতীয় নাগরিক কমিটির ১৩৬ সদস্য বিশিষ্ট প্রতিনিধি কমিটি ঘোষণা

১০ এপ্রিল ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষা শুরু

১০ এপ্রিল ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষা শুরু

হামলা ও নির্যাতনের শিকার কুমিল্লার সাত সাংবাদিককে সম্মাননা

হামলা ও নির্যাতনের শিকার কুমিল্লার সাত সাংবাদিককে সম্মাননা

কালীগঞ্জে নিখোঁজ দুই শিশুর লাশ উদ্ধার

কালীগঞ্জে নিখোঁজ দুই শিশুর লাশ উদ্ধার

ঝিকরগাছায় ট্রেনের ধাক্কায় মাদ্রাসা ছাত্র নিহত

ঝিকরগাছায় ট্রেনের ধাক্কায় মাদ্রাসা ছাত্র নিহত

তুরস্কে অনুষ্ঠিত ইউরোপ ভিত্তিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশি মাহমুদুল প্রথম হয়েছেন

তুরস্কে অনুষ্ঠিত ইউরোপ ভিত্তিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশি মাহমুদুল প্রথম হয়েছেন

ইনকিলাবের নির্বাচনী জরিপে থমকে দাঁড়িয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো

ইনকিলাবের নির্বাচনী জরিপে থমকে দাঁড়িয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো

রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে

রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে

মহেশপুর আলমসাধু ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে স্কুলছাত্র নিহত

মহেশপুর আলমসাধু ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে স্কুলছাত্র নিহত

স্কুল ব্যাগে পাথর ভরে ডোবায় ফেলে শিশু নাশিতের লাশ

স্কুল ব্যাগে পাথর ভরে ডোবায় ফেলে শিশু নাশিতের লাশ

রাঙামাটির জুরাছড়িতে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের মাঝে সেনাবাহিনীর শিক্ষা সহায়তা প্রদান

রাঙামাটির জুরাছড়িতে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের মাঝে সেনাবাহিনীর শিক্ষা সহায়তা প্রদান

আগস্টের ছাত্র জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে আমরা একটি নতুন স্বাধীন দেশ পেয়েছি - আফরোজা খানম রিতা

আগস্টের ছাত্র জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে আমরা একটি নতুন স্বাধীন দেশ পেয়েছি - আফরোজা খানম রিতা

কাল খুলনায় ‘রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রুপান্তরে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠা’র গণসংলাপ

কাল খুলনায় ‘রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক রুপান্তরে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠা’র গণসংলাপ

ফরিদপুরে দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষে আহত -১০

ফরিদপুরে দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষে আহত -১০