ঢাকা   রোববার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ | ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

সবকিছুই আমাকে নতুন করে শিখতে হচ্ছে - আঁখি

Daily Inqilab বিনোদন ডেস্ক

২৩ মার্চ ২০২৩, ১০:১৪ এএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৫৯ পিএম

ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী শারমিন আঁখি। অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শক জনপ্রিয়তা পেয়েছেন তিনি। চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি শুটিং সেটে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটে দগ্ধ হয়ে পুড়ে যায় অভিনেত্রীর শরীরের ৩৫ শতাংশ। বর্তমানে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা চলছে তার। বর্তমানে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন তিনি। এদিকে দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার পর এই প্রথম অভিনেত্রী শারমিন আঁখি ফেসবুকে এলেন।

বুধবার (২২ মার্চ) সেই কষ্টের দিনগুলো স্মরণ করে নিজের সোশ্যাল হ্যান্ডেলে একটি দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়েছেন তিনি। সেখানে বর্ণনা করলেন বিগত দুই মাস তাকে কী যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে, সেইসব ঘটনা। তার এমন বিপদের দিনে যারা পাশে ছিলেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতাও জানিয়েছেন আঁখি।

শারমিন আঁখির সেই স্ট্যাটাসটি ইনকিলাব পাঠকদের জন্য হুবুহু তুলে ধরা হলো-

‘‘এখন আমি অল্প অল্প হাঁটতে পারি, একটু একটু করে হাত মুঠ করতে পারি, আগের মতো কথা বলতে পারি, কষ্ট করে নিজের হাতে খেতেও পারি, সবকিছুই আমাকে নতুন করে শিখতে হচ্ছে। নিজেকে মনে হয়, আমি একটা নিউবর্ন বেবি। এটা আমার জন্য সেকেন্ড লাইফ। আমার বাম হাতে এখনও শক্তি ফিরে পাইনি। হাতটা অনড় করে রাখতে হবে আরও বেশ কিছুদিন। তারপর ধীরে ধীরে এই হাতেরও শক্তি ফিরিয়ে আনব, ইনশাআল্লাহ।

যেদিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলাম আমার দুই হাত-পা ডিপ বার্ন আর মুখ সুপার ফেসিয়াল বার্ন, সঙ্গে শ্বাসনালিও আক্রান্ত ছিল। এতটাই খারাপ অবস্থায় ছিলাম, চিকিৎসক নিশ্চয়তা দিতে পারছিল না আমি ফিরে আসতে পারব কি না। যখন আইসিইউতে ছিলাম তখন বেঁচে ফেরার সম্ভাবনা মাত্র ৩০%।

প্রতি রাতে ১০৪-১০৫ ডিগ্রি জ্বরের ঘোরে শুধু ফ্লাশব্যাকের মতো ফেলে আসা স্মৃতিগুলো চোখের সামনে আসত। মনে হতো মানুষ তার অন্তিম মুহূর্তে এভাবেই বুঝি ভালো স্মৃতিগুলো দেখতে দেখতে চলে যায়। কিন্তু এই ভালো স্মৃতিগুলোই আমাকে ফিরে আসতে শক্তি জুগিয়েছে। আমি বোঝাতে পারব না গত দু মাস ধরে কী কঠিন যুদ্ধ আমাকে করতে হচ্ছে। আমার এক একটা রাতের অসহ্য যন্ত্রণা শুধু আমি জানি।

আইসিইউতে সারারাত আশপাশের রোগীদের আর্তচিৎকারে কেঁপে কেঁপে উঠত শরীর আর মন। ভারী হয়ে উঠত বাতাস। প্রতিরাতেই কেউ না কেউ এই যন্ত্রণার কাছে হার মেনে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ছে। প্রতিদিন সকালে কোনো না কোনো বেড খালি দেখে বুঝে নিতাম আরেকজন পরাজিত হলো।

অসহ্য যন্ত্রণায় দিনরাত কাতরেছি, ধৈর্যশক্তির অধিক ধৈর্য ধারণ করে সব যন্ত্রণা গিলেছি, আর একটা কথাই বলেছি বারবার। মনোবল ভাঙা যাবে না, শেষবিন্দু পর্যন্ত চেষ্টা করব। বাকিটা আল্লাহ ভরসা। আল্লাহ সত্যিই মহান। আল্লাহ স্বয়ং তার রহমতের চাদর দিয়ে আমাকে জড়িয়ে রেখেছিলেন বলেই আমি বেঁচে ফিরেছি।

বিশেষ কিছু মানুষের দোয়া, ভালোবাসার কথা আমি কখনই ভুলব না। বার্ন ইন্সটিটিউটের চিকিৎসকরা, বিশেষ করে ডা. সোহান আরজু আপু যেভাবে যত্ন নিয়ে আমার ট্রিটমেন্ট করেছেন, এক পোস্টে আপনার গল্প বলে শেষ করা যাবে না। ইবনে হাসান ভাই, আপনি প্রতিদিন যেভাবে খোঁজ নিয়েছেন, প্রতি মুহূর্তে যেভাবে সাহস জুগিয়েছেন, চরম বিপদে যেভাবে পাশে থেকেছেন আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতার ভাষা লেখায় প্রকাশ করা সম্ভব না। আপনি আমার এই নতুন জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে থাকবেন সবসময়।

উর্মিলা আমার মুমূর্ষু অবস্থায় তোমার এত কুইক রেসপন্স—যেভাবে প্রতি মুহূর্তে পাশে ছিলে, তুমি না থাকলে সবকিছু এত সহজ আর দ্রুত হতো না। আল্লাহ তোমাকে আরও বড় করুক। কৃতজ্ঞ আমি আমার সংগঠন অ্যাক্টরস ইকুইটির কাছে প্রথম দিন থেকে আমার পাশে ঢাল হয়ে থাকার জন্য। ফাহাদ ভাই, আমি হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই আপনি ইমার্জেন্সিতে সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন।

রুপেল ভাই (Md Faridul Islam) আপনিই প্রথম আমাকে সাহস দিয়ে বলেছেন আপনারা সবাই আমার পাশে আছেন। মৌসুমি তোমার সেই জ্বালাময় বক্তব্য আইসিইউতে আমাকে যে কি বুস্ট-আপ করেছে, ওই মুহূর্তে আমার এমন কিছুরই দরকার ছিল। রনি তুমিও আমার মতো একটা কঠিন সময় পার করেছ এই বার্ন ইন্সটিটিউটে। আমার যন্ত্রণা একমাত্র তুমি বুঝবে কী গেছে আমার ওপর দিয়ে। থ্যাংকস আমাকে সাহস দিয়ে যাওয়ার জন্য।

পিকুল ভাই তুমি এভাবেই চুপচাপ ভালোবাসা আর দোয়া করে যেও। মিঠু আপা তুমি পুরাই একটা ভালোবাসার ডিব্বা, তোমার বানানো জাউ ভাত আমি আবার খেতে চাই। মুন্না ভাই আমি শুঁয়োপোকার খোলস থেকে প্রজাপতি হয়ে বের হওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছি। হাসিব বন্ধু বুস্ট ইজ দ্য সিক্রেট অব আওয়ার অ্যানার্জি। আতিকা, জয়ী, লারা, আইরিন, ইমতু, সাফাত, তন্বি তোদের নিয়ে কিছু বলব না। আমাকে জলদি বাসায় নিয়ে চলো।

আগামী ৬ মাসের যুদ্ধটাও অনেক কঠিন। মন শক্ত করে যেন এই যুদ্ধটাও জিতে ফিরতে পারি এই দোয়া চাই সবার কাছে। আমার পরিবারের প্রত্যেকটা মানুষ যেভাবে আমার পাশে ছিলেন, যেভাবে আমাকে সাহস দিয়ে গেছেন, বার্ন ইন্সটিটিউটের চিকিৎসক, নার্স, ফিজিও সকলের যে সেবা আর ভালোবাসা আমি পেয়েছি, আমার সকল সহকর্মী, কলিগ যারা প্রতিনিয়ত আমার খোঁজ নিয়েছেন, আমার জন্য দোয়া করেছেন সকলের কাছে কৃতজ্ঞতা।’’

উল্লেখ্য, গত ২৮ জানুয়ারি রাজধানীর মিরপুরে একটি টেলিফিল্মের শুটিং সেটে আহত হন এই অভিনেত্রী। সেসময় মিরপুরের একটি শুটিং হাউজে টেলিফিল্মের শ্যুট করছিলেন। সেই শুটিং সেটে মেকআপ নিয়ে ওয়াশরুমে যান চুল ঠিক করতে। হেয়ার স্টেটমেন্ট অন কিংবা অফ করতে গিয়ে এ ঘটনাটি ঘটে।


বিভাগ : বিনোদন


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

অভিনেতা সেবাস্তিয়ান কিডারের মৃত্যু
সড়ক দুর্ঘটনায় পরীমণির সাবেক স্বামীর মৃত্যু
বঙ্গবন্ধু ও রবীন্দ্রনাথকে দেবতার রূপ দেয়া হয়েছিল-লতিফুল ইসলাম শিবলী
ইত্যাদি এবার মোংলা বন্দরে
যার হাত ধরে পরীমনি এসেছিলেন চলচ্চিত্রে,তার মরণ দিনে করলেন খাসি জবাই
আরও

আরও পড়ুন

স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয়করণের দাবী অত্যন্ত যৌক্তিক

স্বতন্ত্র ইবতেদায়ী মাদরাসা জাতীয়করণের দাবী অত্যন্ত যৌক্তিক

পাঠ্যবই ছাপায় অনিয়মে আনন্দ প্রিন্টার্সকে সতর্কতা

পাঠ্যবই ছাপায় অনিয়মে আনন্দ প্রিন্টার্সকে সতর্কতা

দক্ষিণ লেবাননে ৬ চিকিৎসাকর্মী নিহত

দক্ষিণ লেবাননে ৬ চিকিৎসাকর্মী নিহত

জনগণের সাথে জনসংযোগ বাড়াতে হবে

জনগণের সাথে জনসংযোগ বাড়াতে হবে

আমরা যুদ্ধে বিশ্বাসী না কেউ গায়ে পড়লে জবাবের প্রস্তুতি রাখতে হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

আমরা যুদ্ধে বিশ্বাসী না কেউ গায়ে পড়লে জবাবের প্রস্তুতি রাখতে হবে: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

বাফুফের নতুন সভাপতি তাবিথের কাছে ২৭ রেফারির চিঠি

বাফুফের নতুন সভাপতি তাবিথের কাছে ২৭ রেফারির চিঠি

ফের বাড়লো সোনার দাম, ভরি ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা

ফের বাড়লো সোনার দাম, ভরি ১ লাখ ৪২ হাজার টাকা

বাংলাদেশে খেলা নিয়ে অনিশ্চিয়তায় হামজা!

বাংলাদেশে খেলা নিয়ে অনিশ্চিয়তায় হামজা!

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই হবে অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফের খেলা

বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামেই হবে অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফের খেলা

সিলেটে মাজিদের ফিফটি

সিলেটে মাজিদের ফিফটি

অ্যাম্বাসেডর কাপ উশুতে সেনাবাহিনী চ্যাম্পিয়ন

অ্যাম্বাসেডর কাপ উশুতে সেনাবাহিনী চ্যাম্পিয়ন

মাদক শুধু ব্যক্তিকে নয় পরিবারকেও ধ্বংস করে

মাদক শুধু ব্যক্তিকে নয় পরিবারকেও ধ্বংস করে

সাধারণ মানুষের পেটে লাথি মেরে আ.লীগ নিজেদের ভাগ্য গড়েছে : এমরান সালেহ প্রিন্স

সাধারণ মানুষের পেটে লাথি মেরে আ.লীগ নিজেদের ভাগ্য গড়েছে : এমরান সালেহ প্রিন্স

ধর্মদ্রোহী সরকারের সময় কোনো ধর্মই নিরাপদ ছিল না

ধর্মদ্রোহী সরকারের সময় কোনো ধর্মই নিরাপদ ছিল না

দৌলতখানে শীতকালীন সবজি পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক

দৌলতখানে শীতকালীন সবজি পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষক

সুন্দরগঞ্জে ছয় পা বিশিষ্ট বাছুরের জন্ম

সুন্দরগঞ্জে ছয় পা বিশিষ্ট বাছুরের জন্ম

বৈষম্যের শিকার কুমিল্লার ১৫ হাজার এতিম শিশু

বৈষম্যের শিকার কুমিল্লার ১৫ হাজার এতিম শিশু

দালালচক্রে জিম্মি রোগীরা

দালালচক্রে জিম্মি রোগীরা

ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকোই সাটুরিয়ার শিশু শিক্ষার্থীদের ভরসা

ঝুঁকিপূর্ণ বাঁশের সাঁকোই সাটুরিয়ার শিশু শিক্ষার্থীদের ভরসা

পঞ্চগড়ে চিকিৎসক পদায়নের দাবিতে সড়ক অবরোধ

পঞ্চগড়ে চিকিৎসক পদায়নের দাবিতে সড়ক অবরোধ