সবকিছুই আমাকে নতুন করে শিখতে হচ্ছে - আঁখি
২৩ মার্চ ২০২৩, ১০:১৪ এএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:৫৯ পিএম

ছোট পর্দার জনপ্রিয় অভিনেত্রী শারমিন আঁখি। অভিনয়ের মাধ্যমে দর্শক জনপ্রিয়তা পেয়েছেন তিনি। চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি শুটিং সেটে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটে দগ্ধ হয়ে পুড়ে যায় অভিনেত্রীর শরীরের ৩৫ শতাংশ। বর্তমানে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা চলছে তার। বর্তমানে ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন তিনি। এদিকে দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার পর এই প্রথম অভিনেত্রী শারমিন আঁখি ফেসবুকে এলেন।
বুধবার (২২ মার্চ) সেই কষ্টের দিনগুলো স্মরণ করে নিজের সোশ্যাল হ্যান্ডেলে একটি দীর্ঘ স্ট্যাটাস দিয়েছেন তিনি। সেখানে বর্ণনা করলেন বিগত দুই মাস তাকে কী যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে, সেইসব ঘটনা। তার এমন বিপদের দিনে যারা পাশে ছিলেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতাও জানিয়েছেন আঁখি।
শারমিন আঁখির সেই স্ট্যাটাসটি ইনকিলাব পাঠকদের জন্য হুবুহু তুলে ধরা হলো-
‘‘এখন আমি অল্প অল্প হাঁটতে পারি, একটু একটু করে হাত মুঠ করতে পারি, আগের মতো কথা বলতে পারি, কষ্ট করে নিজের হাতে খেতেও পারি, সবকিছুই আমাকে নতুন করে শিখতে হচ্ছে। নিজেকে মনে হয়, আমি একটা নিউবর্ন বেবি। এটা আমার জন্য সেকেন্ড লাইফ। আমার বাম হাতে এখনও শক্তি ফিরে পাইনি। হাতটা অনড় করে রাখতে হবে আরও বেশ কিছুদিন। তারপর ধীরে ধীরে এই হাতেরও শক্তি ফিরিয়ে আনব, ইনশাআল্লাহ।
যেদিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলাম আমার দুই হাত-পা ডিপ বার্ন আর মুখ সুপার ফেসিয়াল বার্ন, সঙ্গে শ্বাসনালিও আক্রান্ত ছিল। এতটাই খারাপ অবস্থায় ছিলাম, চিকিৎসক নিশ্চয়তা দিতে পারছিল না আমি ফিরে আসতে পারব কি না। যখন আইসিইউতে ছিলাম তখন বেঁচে ফেরার সম্ভাবনা মাত্র ৩০%।
প্রতি রাতে ১০৪-১০৫ ডিগ্রি জ্বরের ঘোরে শুধু ফ্লাশব্যাকের মতো ফেলে আসা স্মৃতিগুলো চোখের সামনে আসত। মনে হতো মানুষ তার অন্তিম মুহূর্তে এভাবেই বুঝি ভালো স্মৃতিগুলো দেখতে দেখতে চলে যায়। কিন্তু এই ভালো স্মৃতিগুলোই আমাকে ফিরে আসতে শক্তি জুগিয়েছে। আমি বোঝাতে পারব না গত দু মাস ধরে কী কঠিন যুদ্ধ আমাকে করতে হচ্ছে। আমার এক একটা রাতের অসহ্য যন্ত্রণা শুধু আমি জানি।
আইসিইউতে সারারাত আশপাশের রোগীদের আর্তচিৎকারে কেঁপে কেঁপে উঠত শরীর আর মন। ভারী হয়ে উঠত বাতাস। প্রতিরাতেই কেউ না কেউ এই যন্ত্রণার কাছে হার মেনে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ছে। প্রতিদিন সকালে কোনো না কোনো বেড খালি দেখে বুঝে নিতাম আরেকজন পরাজিত হলো।
অসহ্য যন্ত্রণায় দিনরাত কাতরেছি, ধৈর্যশক্তির অধিক ধৈর্য ধারণ করে সব যন্ত্রণা গিলেছি, আর একটা কথাই বলেছি বারবার। মনোবল ভাঙা যাবে না, শেষবিন্দু পর্যন্ত চেষ্টা করব। বাকিটা আল্লাহ ভরসা। আল্লাহ সত্যিই মহান। আল্লাহ স্বয়ং তার রহমতের চাদর দিয়ে আমাকে জড়িয়ে রেখেছিলেন বলেই আমি বেঁচে ফিরেছি।
বিশেষ কিছু মানুষের দোয়া, ভালোবাসার কথা আমি কখনই ভুলব না। বার্ন ইন্সটিটিউটের চিকিৎসকরা, বিশেষ করে ডা. সোহান আরজু আপু যেভাবে যত্ন নিয়ে আমার ট্রিটমেন্ট করেছেন, এক পোস্টে আপনার গল্প বলে শেষ করা যাবে না। ইবনে হাসান ভাই, আপনি প্রতিদিন যেভাবে খোঁজ নিয়েছেন, প্রতি মুহূর্তে যেভাবে সাহস জুগিয়েছেন, চরম বিপদে যেভাবে পাশে থেকেছেন আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতার ভাষা লেখায় প্রকাশ করা সম্ভব না। আপনি আমার এই নতুন জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে থাকবেন সবসময়।
উর্মিলা আমার মুমূর্ষু অবস্থায় তোমার এত কুইক রেসপন্স—যেভাবে প্রতি মুহূর্তে পাশে ছিলে, তুমি না থাকলে সবকিছু এত সহজ আর দ্রুত হতো না। আল্লাহ তোমাকে আরও বড় করুক। কৃতজ্ঞ আমি আমার সংগঠন অ্যাক্টরস ইকুইটির কাছে প্রথম দিন থেকে আমার পাশে ঢাল হয়ে থাকার জন্য। ফাহাদ ভাই, আমি হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই আপনি ইমার্জেন্সিতে সব প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন।
রুপেল ভাই (Md Faridul Islam) আপনিই প্রথম আমাকে সাহস দিয়ে বলেছেন আপনারা সবাই আমার পাশে আছেন। মৌসুমি তোমার সেই জ্বালাময় বক্তব্য আইসিইউতে আমাকে যে কি বুস্ট-আপ করেছে, ওই মুহূর্তে আমার এমন কিছুরই দরকার ছিল। রনি তুমিও আমার মতো একটা কঠিন সময় পার করেছ এই বার্ন ইন্সটিটিউটে। আমার যন্ত্রণা একমাত্র তুমি বুঝবে কী গেছে আমার ওপর দিয়ে। থ্যাংকস আমাকে সাহস দিয়ে যাওয়ার জন্য।
পিকুল ভাই তুমি এভাবেই চুপচাপ ভালোবাসা আর দোয়া করে যেও। মিঠু আপা তুমি পুরাই একটা ভালোবাসার ডিব্বা, তোমার বানানো জাউ ভাত আমি আবার খেতে চাই। মুন্না ভাই আমি শুঁয়োপোকার খোলস থেকে প্রজাপতি হয়ে বের হওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছি। হাসিব বন্ধু বুস্ট ইজ দ্য সিক্রেট অব আওয়ার অ্যানার্জি। আতিকা, জয়ী, লারা, আইরিন, ইমতু, সাফাত, তন্বি তোদের নিয়ে কিছু বলব না। আমাকে জলদি বাসায় নিয়ে চলো।
আগামী ৬ মাসের যুদ্ধটাও অনেক কঠিন। মন শক্ত করে যেন এই যুদ্ধটাও জিতে ফিরতে পারি এই দোয়া চাই সবার কাছে। আমার পরিবারের প্রত্যেকটা মানুষ যেভাবে আমার পাশে ছিলেন, যেভাবে আমাকে সাহস দিয়ে গেছেন, বার্ন ইন্সটিটিউটের চিকিৎসক, নার্স, ফিজিও সকলের যে সেবা আর ভালোবাসা আমি পেয়েছি, আমার সকল সহকর্মী, কলিগ যারা প্রতিনিয়ত আমার খোঁজ নিয়েছেন, আমার জন্য দোয়া করেছেন সকলের কাছে কৃতজ্ঞতা।’’
উল্লেখ্য, গত ২৮ জানুয়ারি রাজধানীর মিরপুরে একটি টেলিফিল্মের শুটিং সেটে আহত হন এই অভিনেত্রী। সেসময় মিরপুরের একটি শুটিং হাউজে টেলিফিল্মের শ্যুট করছিলেন। সেই শুটিং সেটে মেকআপ নিয়ে ওয়াশরুমে যান চুল ঠিক করতে। হেয়ার স্টেটমেন্ট অন কিংবা অফ করতে গিয়ে এ ঘটনাটি ঘটে।
বিভাগ : বিনোদন
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

রাজশাহীতে পদ্মা নদীর বাঁধ ঘিরে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করলো প্রশাসন

কুষ্টিয়ায় ছাত্রাবাসে কলেজ ছাত্রের মৃত্যু ঘিরে রহস্য

হাজীগঞ্জে ১৪ বস্তা সরকারি চালসহ গ্রাম পুলিশ ধরাশায়ী

কুষ্টিয়ায় সার্চ কমিটি নিয়ে বিএনপির দুপক্ষের গোলাগুলি, আহত ৩

কুষ্টিয়ায় ছাত্রাবাসে কলেজ ছাত্রের মৃত্যু ঘিরে রহস্য

তথ্য এখন জাতীয় নিরাপত্তার কৌশলগত অস্ত্র: পরিবেশ উপদেষ্টা

তালা ভেঙ্গে মৌলভীবাজার প্রেসক্লাব দখলের হুংকার বিএনপি নেতার!

সুবর্ণচরে জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় দিনব্যাপী কর্মশালা

সুবর্ণচরে জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় দিনব্যাপী কর্মশালা

হিলিতে অটোভ্যান থেকে ছিটকে পড়ে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে প্রাণ গেলো শিক্ষার্থীর

জার্মানিতে আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ইসলামবিদ্বেষ

জনগনের তোপের মুখে গোদাগাড়ী উপজেলার বাসুদেবপুর ইউপির চেয়ারম্যানের পদত্যাগ

ইরানকে ঠেকাতে গিয়ে নিজেদের ভূখণ্ডেই পড়ল ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মিসাইল!

ট্রাম্পের হুমকির কঠোর জবাব দিলেন খামেনি

যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধে যোগ দিলে মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা চালাতে পারে ইরান

ভোলায় বিএনপির উদ্যোগে সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত

হেরমেস ড্রোন ভূপাতিত, ইরান প্রমাণ দেয়ায় স্বীকার করতে বাধ্য হল ইসরাইল

খুলনায় তারুণ্যের ভাবনায় আগামীর বাংলাদেশ শীর্ষক সেমিনার

রামগড় পর্যটন লেক সৌন্দর্য রক্ষায় সেচ্ছাশ্রমে কাজ করছে উপজেলা বিএনপি পরিবার

জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভিডিও বার্তায় যা বললেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা