ডব্লিউটিও’র ১৩তম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সহায়তায় গুরুত্ব বাংলাদেশের
২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৫:৫৪ পিএম | আপডেট: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৫:৫৪ পিএম
বিশ্ব বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এতদিন যেসব সুবিধা পেতো ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণের পর নির্দিস্টভাবে তা আর থাকছেনা। এসব সুবিধা অনেকটাই নির্ভর করবে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উপর। তাই বাংলাদেশসহ এলসিডিভুক্ত দেশগুলো দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সহায়তা বাড়াতেই বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ১৩তম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে নির্ধারিত বহুপাক্ষিক বৈঠকে অংশগ্রহণের পাশাপাশি বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল ভারত, চীন, জাপান, জার্মানী, কোরিয়া ও সিঙ্গাপুরের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছে। এসব বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক সহায়তার মাধ্যমে রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণ, এলডিসি উত্তোরণ পরবর্তীতে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা বহাল রাখা, আমদানি সহায়তা বাড়ানোর মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা পরিস্থিতির উন্নতি এবং বিনিয়োগ সম্প্রসারণের উপর জোর দেওয়া হয়।
সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবিতে ২৬ ফেব্রুয়ারি ডব্লিউটিও মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন শুরু হয়। বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) সম্মেলনের কার্যত শেষ দিন। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার অন্তত ছয়টি দেশের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এদিকে বেশকিছু ইস্যুতে শেষ দিন পর্যন্ত মতঐক্যে পৌঁছতে না পারায় একদিন বাড়তে পারে সম্মেলনের মেয়াদ।
এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, ডব্লিউটিওর মত বহুপাক্ষিক ফোরামে সব দেশের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। এখানে নির্ধারিত আলোচনার বাইরে অমাদের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদার দেশগুলোর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার সুযোগ থাকে। আমরা ইতোমধ্যে ভারত, চীন,জাপান,জার্মানী, দক্ষিণ কোরিয়া ও সিঙ্গাপুরের সঙ্গে আলোচনা করেছি। রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণ,আমদানি বিকল্প উপায় খুঁজে বের করা, বিনিয়োগ সম্প্রসারণ এবং দ্বিপাক্ষিক সহায়তার মাধ্যমে বাণিজ্য সহজ করার বিষয় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে তুলে ধরা হয়। প্রত্যেকটি দেশ বাংলাদেশের প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের আমদানির সবচেয়ে বড় উৎস চীনকে আমরা বলেছি-তোমরা এখানে বিনিয়োগ কর এবং যেসব পণ্য আমদানি করছি, সেগুলো এখানে তৈরি কর। এখানে উৎপাদিত পণ্য সহজেই বিদেশে রপ্তানি করতে পারবে। একইসঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সহায়তার মাধ্যমে আমদানি সহজ করার জন্য আমরা অনুরোধ করেছি ।তিনি মনে করেন, দ্বিপাক্ষিক সহায়তার মাধ্যমে আমদানি সহজ করতে না পারলে কাঁচামাল আমদানি করা কঠিন হয়ে পড়বে। যা আমাদের অর্থনীতি বিশেষত কর্মসংস্থানের উপর বিরুপ প্রভাব পড়বে।
কোরিয়ার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় বাংলাদেশে বিনিয়োগ স্থানান্তরের আহবান জানানো হয়। আহসানুল ইসলাম জানান, বাংলাদেশে কোরিয়ার বিনিয়োগ বাড়াতে বলেছি। তারা এখানে পণ্য তৈরি করে বিদেশে রপ্তানি করতে পারবে। বিনিয়োগ উপযোগি সুযোগ-সুবিধা দিতে পারলে তারা অন্য দেশে বিনিয়োগ বাদ দিয়ে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করবে বলে আমাদেরকে জানিয়েছে।
সিঙ্গাপুরের সঙ্গে বৈঠকে তাদের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে বন্দর আধুনিকায়ক ও ডিজিটাল ডকুমেন্টেশনের উপর গুরুত্ব দেন। বন্দরে আধুনিক ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা গেলে পণ্য খালাস সহজ হবে। এসব বিষয়ে তাঁরা সহায়তা করতে চান বলে আহসানুল ইসলাম জানান।
এক প্রশ্নের উত্তরে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, এলডিসি উত্তোরণ পরবর্তী সময় মোকাবিলা করার জন্য আমাদের নিজেদের প্রস্তুতি গ্রহণ করাটা বেশি জরুরি। আমাদের আর পেছনের দিকে ফেরার সুযোগ নেই, সামনের দিকে আগাতে হবে। তাই প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি কিভাবে নেওয়া যায়-সরকার সে বিষয়ে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে। একই সঙ্গে ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় আমদানি সহায়তা এবং রপ্তানি বহুমুখীকরণের সহায়তা চাওয়া হয়।
সম্মেলনে অংশ নেওয়া বাংলাদেশের গবেষণা সংস্থা সিপিডির ফেলো প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, এলডিসি উত্তোরণ পরবর্তী সময়ে শুল্কমুক্ত বাজার প্রবেশাধিকার ও বিরোধ নিস্পত্তির সুবিধা বহাল রাখা, দ্বিপাক্ষিক ক্রেডিট লাইন ঋণ সুবিধার আওতায় আমদানি সহায়তার মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার উপর বিদ্যমান চাপ কমানো এবং এলডিসি উত্তোরণের পরেও কারিগরি সহায়তা অব্যাহত রাখার জন্য দ্বিপাক্ষিক আলোচনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের দ্বিপাক্ষিক আলোচনাগুলো সময়োপযোগি এবং জরুরি বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, এলডিসি উত্তোরণকারি দেশগুলোর জন্য শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা বৃদ্ধির বিষয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্ত হয়নি কিন্তু ডব্লিউটিওর আলোচনায় সংস্থাটির পক্ষ থেকে উন্নত দেশগুলোকে বাজার সুবিধা অব্যাহত রাখার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। এখন বাংলাদেশকে প্রত্যেকটি দেশের সঙ্গে আলাদাভাবে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা বাড়ানোর বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। এমতাবস্থায় বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক আলোচনা খুবই প্রয়োজন, যেটা বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল এখন করছে।
ডব্লিউটিওর ১৩তম মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন গত সোমবার শুরু হয়, চার দিনব্যাপী সম্মেলন বৃহষ্পতিবার শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত স্থানীয় সময় বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত সম্মেলনে বেশ কিছু ইস্যুতে ঐক্যমতে পৌঁছাতে পারেনি সদস্য দেশগুলো। ইস্যুগুলোর মধ্যে সরকারিভাবে খাদ্য শষ্য সংগ্রহকে ভর্তুকির বাইরে রাখা, বিনিয়োগ সম্প্রসারণে ইনভেস্টমেন্ট ফ্যাসিলিটেশন ফর ডেভেলপমেন্ট (আইএফডি) চুক্তি মন্ত্রি পর্যায়ে সিদ্ধান্তে অন্তর্ভক্ত করা এবং ডিজিটাল ট্রানজেকশনের উপর কর আরোপ করা অন্যতম। বৃহস্পতিবারের মধ্যে এসব ইস্যুতে ঐক্যমত্যে পৌঁছতে না পারলে সম্মেলনের মেয়াদ আরও একদিন বাড়তে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এর আগেও একাধিকবার সম্মেলনের মেয়াদ বেড়েছে।
ডব্লিউটিওর সর্বোচ্চ নীতি-নির্ধারণী ফোরামের এবারের সম্মেলনে ১৬৪টি দেশের বাণিজ্যমন্ত্রী ও সিনিয়র কর্মকর্তারা অংশগ্রহণ করেছেন। বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটুর নেতৃত্বে ৮ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল এবারের সম্মেলনে অংশ নিয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ প্রতিনিধিদলে রয়েছেন।
বাংলাদেশ এলডিসিভুক্ত ও অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের স্বার্থ রক্ষার ব্যাপারে সবসময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। এলডিসি উত্তোরণের পরেও শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা, কৃষি ও মৎস্যখাতে ভর্তুকি এবং মেধাস্বত্ত সুবিধা বহাল রাখার বিষয়ে বাংলাদেশ জোর দিচ্ছে।####
বিভাগ : প্রবাস জীবন
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস
শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া
ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল
‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’
প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের
প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া
মুসলিম চিকিৎসক
শীর্ষে দিল্লি
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান