ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধ ও প্রতিকারের উপায়
০৬ জুলাই ২০২৩, ০৮:৩৯ পিএম | আপডেট: ০৭ জুলাই ২০২৩, ১২:০৪ এএম
এবছর প্রথম ৬ মাসেই অনেক মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু বরণ করেছে। ডেঙ্গু মশাবাহিত ভাইরাসজনিত জ্বর। চায়না মেডিক্যাল এনসাইক্লোপেডিয়ায় খ্রিষ্টপূর্ব ২৫০ অব্দে এ রোগকে ওয়াটার পয়জন হিসেবে বর্ণনা করা হয়। ১৭৭৯-৮০ সালে এশিয়া, আমেরিকা ও আফ্রিকায় এটি মহামারী আকারে দেখা যায় বলে গবেষকরা জানিয়েছেন। আধুনিককালে ১৯৫৩ সালে ফিলিপাইন ও থাইল্যান্ডে এটি মহামারী দেখা দেয়। বিশ্বব্যাপী ২.৫ বিলিয়ন মানুষ এ রোগের ঝুঁকিতে আছে। প্রতি বছর ৫০ মিলিয়ন এ জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ২৫ হাজার মানুষ মারা যায়। ১৯৬০ সাল থেকে ২০০৯ সালে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা ৩০ ভাগ বেড়েছে। দেশে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হওয়ার কথা ব্যাপকভাবে জানা যায় ২০০০ সালে। সে সময় এটি আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
এখন সময় ডেঙ্গুজ্বরের। ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে অনেকেই হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। প্রতি বছর বৃষ্টি শুরু হলেই এ জ্বরে আক্রান্ত হন অনেকেই। ডেঙ্গুর মহামারী আকারে আমাদের দেশে ছড়িয়েছে ২০১৯ সালে। ২০২১, ২০২২ সালেও আক্রান্তের সংখ্যা ছিল অনেক বেশি। এ বছরও কিন্তু সংক্রমণের ঊর্ধগতি দেখা দিচ্ছে। সচেতনতাই পারে এ রোগ থেকে মুক্তি দিতে। এডিস নামক এক প্রকার মশার কামড়ে এ জীবাণু মানবদেহে প্রবেশ করে। আক্রান্ত ব্যক্তিকে কামড়ালে মশার দেহে জীবাণু প্রবেশ করে এবং পরবর্তীকালে অন্য সুস্থ লোককে কামড়ালে তার দেহে ভাইরাস প্রবেশ করে। এই মশা সাধারণত দিনের বেলায় কামড়ায়। বর্ষায় ও গ্রীষ্মের সময় এ মশা বংশ বিস্তার করে ও এ রোগের দ্রুত বংশ বিস্তার করে। ডেঙ্গু জ্বর ম্যালেরিয়ার মতোই মশাবাহিত জ্বর। ম্যালেরিয়া প্যারাসাইট-জনিত আর ডেঙ্গু ভাইরাস-জনিত। এডিস মশা প্রথমে আফ্রিকার জঙ্গলের গাছের কোটরে বাস করত। আজ সুদূর আফ্রিকা থেকে ডেঙ্গু জ্বর আমাদের দেশে আমদানি হয়েছে সমুদ্রপথে, আকাশপথে ও সড়কপথে।
ডেঙ্গু জ্বরের প্রকার- ডেঙ্গু ভাইরাস-এর ৪ প্রকার সেরো টাইপ আছে। ডেঙ্গু-১, ডেঙ্গু-২, ডেঙ্গু-৩, ডেঙ্গু-৪। কিন্তু ডেঙ্গু জ্বর প্রধানত ২ প্রকার (১) ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বর, (২) হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বর। এছাড়া ডেঙ্গু জ্বর তীব্র হয়ে ডেঙ্গু হেমোরেজিক শক সিড্রোম হতে পারে।
কোথায় বংশ বৃদ্ধি করে ও ডিম পাড়ে- এডিস মশা সাধারণত জমে থাকা পানিতে ডিম পাড়ে ও বংশ বৃদ্ধি করতে পারে, যেমন- ফুলের টব, বৃষ্টির জমানো পানি, ফুলদানি, ফ্রিজের নিচে ট্রে, পরিত্যক্ত কাচের বোতল, পরিত্যক্ত টায়ার, ড্রাম, মাটির ভাঙা কলস, ডাবের খোসায় জমানো পানিতে, ছাদের কোনায়, পানির ট্যাংকে এবং কয়েক দিন ব্যবহার না করা বালতি। কখন কামড়ায়- সাধারণত দিনের বেলায় কামড়ায়। বিশেষ করে সকালের দিকে ও বিকালের শেষ দিকে এই মশা বেশি কামড়ায়।
ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ- ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ- তীব্র জ্বর ১০৪-১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে। বমি, পেট ব্যথা ও মাথাব্যথা, কোমর, চোখের পেছনে ব্যথা, জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধিতে ব্যথা, হাড়ের ব্যথা এতই প্রচ- যে মনে হয় হাড় ভেঙে গেছে। যে কারণে এই জ¦রকে ব্রেকবোন ফিভার বলা হয়। সমস্ত শরীর (হাড়সহ) ব্যথা হতে পারে। শিশুরা অসহ্য কষ্টে কান্নাকাটি করে ও খিটখিটে মেজাজের হয়। চার-পাঁচ দিনের মধ্যে জ্বর ভালো হয়ে যায়। দেহের ত্বকে অ্যালার্জি র্যাশের মতো র্যাশ দেখা দিতে পারে। দাগগুলোর কারণে চুলকানিও হতে পারে।
হোমোরেজিক বা রক্তক্ষরা ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ- ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণগুলোই এই অবস্থায় অনেক বেশি তীব্র দেখা যায় এবং সঙ্গে রক্তক্ষরণ থাকে। বিশেষ করে রক্তবমি, পায়খানার সাথে কালো রক্ত, দাঁতের মাড়ি থেকে রক্তপাত হয়, নাক দিয়ে রক্তপাত, ত্বকের নিচে লালাভ চাকার মতো জমাট বাঁধা রক্তের নমুনা ইত্যাদি দেখা যায়। মস্তিষ্ক ও হার্টের মধ্যেও রক্তক্ষরণ হতে পরে। এই রক্তক্ষরণের ফলে রোগী হাইপোভলিউমিক শকে অর্থাৎ অজ্ঞান হয়ে গিয়ে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এ অবস্থাকে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম বলে।
চিকিৎসা- সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। তবে জ্বরের লক্ষণগুলো অনুযায়ী চিকিৎসা করাতে হবে। ক্লাসিক্যাল ডেঙ্গু জ্বর সাধারণত সাত দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যাবে। উপসর্গ অনুযায়ী চিকিৎসা, যেমন- ব্যথার জন্য প্যারাসিটামল, বমির জন্য অ্যান্টিইমেটিক অন্ডানসেটেরন জাতীয় ওষুধ দেয়া হয়। প্রয়োজনে শিরাপথে স্যালাইন দিতে হয়। এই জ্বরে প্রচুর পানি পান করতে হয়। জ্বর শেষে রোগীর দুর্বলতা, ক্ষুধামন্দা, বিষণœতা, দেখা দিলেও পরে আবার সেগুলো ভালো হয়ে যায়।
হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বর হলে রোগীকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়। প্রতিদিন রক্ত পরীক্ষা করে বিশেষ করে রক্তের হেমাটোক্রিট ও প্লাটিলেট পরীক্ষা করে ডেঙ্গু জ্বরের তীব্রতা দেখতে হয়। কারণ, এই জ্বরে হেমাটোক্রিট বেড়ে যায় ও প্লাটিলেট অনেক সময় কমে যায়। যদি অনেক কমে যায় তখন ডাক্তারের পরামর্শে প্লাাটিলেট ট্রান্সফিউশন করতে হয়। আর বেশি রক্তক্ষরণ হলে রক্ত দিত হয়। ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীকে এসপিরিন জাতীয় ওষুধ দিলে রক্তক্ষরণের প্রবণতা বেড়ে যায়। তাই জ্বর ব্যথা কমাতে না বুঝে যে কোন ওষুধ দেয়া যাবে না। ঠিক সময়মতো চিকিৎসা করলে জ্বর ভালো হয়ে যায়।
প্রতিরোধ- এডিস মশার উৎস নির্মূল করাই এর প্রতিরোধের একমাত্র উপায়। যেসব জায়গায় ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী এডিস মশা বংশ বৃদ্ধি করে সেসব জায়গা পরিষ্কার করতে হবে। গণসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। এ ছাড়া নেট, স্প্রে ব্যবহার করতে হবে এবং মশারি টানিয়ে ঘুমাতে হবে দিনের বেলায়ও। সবশেষে এ সত্যটি মনে রাখুন- রোগের চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধ করা ভালো। রোগ হলে রোগীর কষ্ট, চিকিৎসা, ওষুধ ইত্যাদিতে অনেক ঝামেলা পোহাতে হয়।
লোকমান হেকিম
চিকিৎসক ও কলামিস্ট, মোবা: ০১৭১৬-২৭০১২০।
বিভাগ : স্বাস্থ্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
প্রবাসীদের যে জন্য সুখবর দিলো মালয়েশিয়া
জাবি শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় মামলা, তদন্ত কমিটি গঠন, ফটকে তালা, মশাল মিছিল
মাদকের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে থাকবে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল
"নতুন সিনেমা নিয়ে ফিরছেন গ্লোবাল তারকা অ্যাঞ্জেলিনা জোলি"
ড. ইউনূসকে নিয়ে খালেদা জিয়ার পুরোনো যে বক্তব্য ভাইরাল
নতুন নির্বাচন কমিশনের প্রতি ইসলামী আন্দোলনের শুভ কামনা
আলোচনায় ফ্যাসিস্ট হাসিনার ‘টুস করে ফেলে দেয়ার’ হুমকি
দীর্ঘ ১৫ বছর সাংবাদিকরা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশন করতে পারেনি: খোকন
'ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে রয়েছে অভিনেতা তারিক আনাম খানের নাটক'
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
দেশের বাজারে ফের বাড়ল সোনার দাম
সবচেয়ে কম মূল্যে বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ দিচ্ছে নেপাল: নেপাল রাষ্ট্রদূত
আগামী নির্বাচন নিয়ে দিল্লি ভয়ংকর পরিকল্পনা করছে: যুক্তরাষ্ট্র জাগপা