ঢাকা   বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৪ আশ্বিন ১৪৩১

জ্বর কোনো রোগ নয়

Daily Inqilab ইনকিলাব

২০ জুলাই ২০২৩, ০৯:২৯ পিএম | আপডেট: ২০ জুলাই ২০২৩, ১১:৫১ পিএম

একটু জ্বর হলেই আমরা ঘাবড়ে যাই। কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। একটি লোকও পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া যাবে না, যার কোনদিন একবারও জ্বর হয়নি। জেনে রাখা উচিত জ্বর কোনও রোগ নয়। বহু অসুখের একটি উপসর্গ। তাই বলে জ্বরকে একেবারেই গুরুত্বহীন মনে করবেন না। এতে করে ভেতরে ভেতরে অন্য কোন রোগ শরীরে বাসা বাঁধতে পারে। চলুন তাহলে জেনে নেই জ্বরের স্বাস্থ্য-সমস্যা সম্পর্কে- কখন জ্বর বলা হয়? স্বাভাবিকভাবে শরীরের তাপমাত্রা হচ্ছে ৩৬.৬­­­­­­­­০-৩৭.২০ সে. পর্যন্ত। এর থেকে (১-৪০ সে. পর্যন্ত) বেশি হলেই আমরা ধরে নেই যে জ্বর হয়েছে।

এই জ্বর সেন্টিগ্রেড বা ফারেনহাইট থার্মোমিটার মাপা হয়। জ্বরের প্রকার- সাধারণত জ্বর তিন ধরনের হয়ে থাকে:

* কন্টিনিউড : জ্বর এর মাত্রা যখন ২৪ ঘণ্টায় ১০ সেন্টিগেড বা ১.৫০ ফারেনহাইট তারতম্য হয়; কিন্তু জ্বর কোন সময় স্বাভাবিক অবস্থায় আসে না, তখনই তাকে কন্টিনিউড জ্বর বলে।
* রেমিটেন্ট : যখন জ্বরের মাত্রা ২৪ ঘণ্টায় ২০ সেলসিয়াস বা ৩০ ফারেনহাইট তারতম্য হয়, তাকে রেমিটেন্ট জ্বর বলে।
* ইন্টামিটেন্ট : যখন জ্বর দৈনিক কয়েক ঘণ্টা শরীরে উপস্থিত থাকে, তখন তাকে ইন্টারমিটেন্ট জ্বর বলে। এই ইন্টারমিটেন্ট জ্বর যদি প্রতিদিন আসে তখন তাকে কোটিডিয়ান জ্বর বলে।
একদিন পরপর এলে টার্শিয়ান এবং দুই দিন পরপর এলে কোয়ার্টান জ্বর বলে। তবে এখন জ্বর নিরাময় ওষুধ, অ্যান্টিবায়োটিক ও অন্যান্য ওষুধ সেবনের ফলে এই জ্বরের শ্রেণিবিন্যাস সব সময় বোঝা যায় না। কী কারণে জ্বর হয়ে থাকে?

* যে কোনও একুইট ইনফেকশন বিশেষত পুঁজ তৈরিকারক ইনফেকশন যেমন ফোঁড়া, কার্বাংকল, ফুরাংকল ইত্যাদি। যেসব জীবাণুর সঙ্গে সম্পৃক্ত সেগুলো হল স্টাফাইলোকক্কাস, স্ট্রেপটোকক্কাস।
* যে কোনও ভাইরাসজনিত প্রদাহ যেমন সর্দি জ্বর, কাশি, ডেঙ্গু, হুপিংকাশি।
* কলা বিনষ্টকারী বা টিস্যু নেক্রোসিস যে রোগে হয়, যেমন মায়োকর্ডিয়াল ইনফেকশন, আর্থাইটিস, রিউমাটিক ফিভার বা বাতজ্বর।
* যে কোনও কোষ কলা অর্গানের প্রদাহজনিত রোগ যেমন মেনিনজাইটিস, একুইট অস্টিওমাইলাইটিস, একুইট গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস, একুইট হেপাটাইটিস।

* অটোইমিউন রোগ যেমন এসএলই, ইমুনোলজিক্যাল রিঅ্যাকশন।
* যে কোন টিস্যু বা অর্গান এর ক্যান্সারের কারণে।
* দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ বা ক্রনিক ইনফেকশন, যেমন যক্ষ্মা রোগ।
* মহিলা ও পুরুষদের জননতস্ত্রের প্রদাহ। যেমন প্রস্রাবে ইনফেকশন, প্রস্রাবের নালিতে ইনফেকশন, মেয়েদের অ্যান্ডোমেট্রাইটিস, সার্ভিসাইটিস, উফুরাইটিস, সালফিনজাইটিস ছেলেদের প্রস্টেটাইটিস, ইপিডিডাইমাইটিস, অরকাইটিস।

* পরজীবী ঘটিত রোগ, যেমন ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়া, ট্রিপোনোসোমা ইত্যাদি।
জ্বর কেন হয়? জ্বর হওয়ার কারণ বিভিন্ন ইনফেকশন, টিস্যু নেক্রোসিস ইত্যাদির কারণে শরীরে জ্বর তৈরিকারী পদার্থ পাইরোজেন নিঃসরণ হয়। এই পাইরোজেন প্রোস্টাগ্লান্ডিন নামক কেমিক্যাল মেডিয়েটর তৈরি করতে উত্তেজক হিসেবে কাজ করে। এছাড়া ব্যাকটেরিয়াল প্রডাক্ট, যেমন ব্যাকটেরিয়াল কলাইপোপলিস্যাকারাইড শ্বেত কণিকাকে উত্তেজিত করে এন্ডোজেনাস পাইরোজেন তৈরি করে। এগুলো প্রোস্টাগ্লান্ডিন তৈরিতে সাহায্য করে। এর ফলে আমাদের মস্তিস্কের হাইপোথ্যালামাস নামক অংশ বা আমাদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে সেখানকার রক্তনালি ও এর আশপাশের কোষগুলোতে বেশি মাত্রায় প্রোস্টাগ্লান্ডিন তৈরি করতে প্রভাবিত করে। এই সাইক্লিক এএমপি হাইপোথ্যালামাস শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে বেশি মাত্রায় পুননির্ধারণ করে, যার ফলে জ্বর হয়।

জ্বরের কারণ বের করার জন্য যে টেস্ট করা হয়-
* রক্তের সাধারণ টেস্ট টিসি, ডিসি ইএসআর। এগুলোর মান স্বাভাবিক থেকে বেশি হবে।
* একুইট পর্যায়ে প্রোটিনের পরিমাণ স্বাভাবিকের তুলনায় বহুগুণ বৃদ্ধি পায়।
* এক্সরে চেস্ট।
* রক্তের বিশেষ পরীক্ষা
* বডি ফ্লুয়িড পরীক্ষা
* পরজীবী যেমন ফাইলেরিয়া, ম্যালেরিয়া।
* দীর্ঘস্থায়ী রোগ যেমন যক্ষ্মার জন্য পিসিআর, এএফবি, কালচার সেনসিটিভিটি।
* ক্যান্সার রোগ নির্ণয়ের জন্য এফএনএসি সাইটোলজি, বায়োপসি, লিমফোমা ও লিউকেমিয়া প্যানেল।

জ্বর প্রতিরোধের উপায় :
* সম্পূর্ণ শারীরিক ও মানসিক বিশ্রাম
* সমস্ত শরীর পানি দিয়ে মোছা, গোসল করা।
* জ্বর কমার জন্য ওষুধ যেমন প্যারাসিটামল খাওয়া।
* জ্বরের কারণ বের করার জন্য বিশেষ পরীক্ষাগুলো করা এবং সেই মতো ডাক্তারের উপদেশ অনুযায়ী ওষুধ খাওয়া।
* পর্যাপ্ত বিশ্রাম, প্রচুর পানীয়, ফলের রস, স্বাভাবিক খাবার খেলে, প্রতিদিন গোসল বা পানি দিয়ে শরীর মুছলে, প্রয়োজনে জ্বর কমানোর ওষুধ খেলে ভালো হয়ে যাবে।

মাওঃ লোকমান হেকিম
চিকিৎসক-কলামিস্ট, ০১৭১৬২৭০১২০।


বিভাগ : স্বাস্থ্য


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

ইত্তিহাদেই সিটিকে রুখে দিল ইন্টার

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

রোনালদোদের নতুন কোচ পিওলি

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

দক্ষিণ আফ্রিকাকে গুড়িয়ে আফগানদের ঐতিহাসিক জয়

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

যেই গৌরব কেবল শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামের

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

রিট করে ‘খেলাপি ঋণ স্থগিত’ বন্ধ চান ব্যাংক-মালিকরা

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

বিদেশি ঋণ ফের ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

টাকা উদ্ধারের নামে ‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগ জিএম শাহজাহান চৌধুরীর’র বিরুদ্ধে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

জাতীয় ঐক্য বিনষ্টকারী কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকতে হবে

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

৬০ হাজার টন ইউরিয়া সার কিনবে সরকার, ব্যয় ২৩৬ কোটি টাকা

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

আইকনিক লিডার তারেক রহমান ও বাংলাদেশের রাজনীতি

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

পতিত স্বৈরাচার ও ভারতের চক্রান্ত চলছেই

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

তারেক রহমানের রাষ্ট্রনায়কোচিত বক্তব্য ও দিকনির্দেশনা

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

ইসরাইলের দখলদারিত্ব বন্ধের প্রস্তাব বিবেচনা জাতিসংঘের

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

উত্তপ্ত মণিপুরে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিয়ে নতুন করে গোলাগুলি

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২৭ দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনার নতুন ভ্যারিয়্যান্ট

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

২০০ হাতি নিধনের সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

কলেরাসহ মারাত্মক রোগের ঝুঁকিতে সুদানের ৩৪ লাখ শিশু

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

১১ হাজার ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীর প্রাণ গেছে

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

বেলারুশে হামলা হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হবে : লুকাশেঙ্কো

তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান

তাইওয়ান প্রণালীতে চীনের যুদ্ধবিমান