স্বাস্থ্য সুরক্ষায় শীতের ফল
২৬ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:২৩ এএম | আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০২৪, ১২:২৩ এএম
শীতে ফলের সমারোহ কম। তবুও যেসব ফল পাওয়া যায় তন্মধ্যে কমলা, কুল, সফেদা, আঙুর, বেদানা বা ডালিম, নাশপাতি, আপেল, আমলকী ও জলপাই প্রধান। এসব ফলের মধ্যে কিছু দেশে ও কিছু বিদেশে উৎপন্ন হয়। আমাদের দেশের মাটিতে উৎপাদিত ফল স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। শীতে সহজলভ্য কয়েকটি ফলের উপকারিতা জেনে নেই।
কমলা : শীতের ফলের মধ্যে কমলা হলো সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য। যদিও বিজ্ঞানের বদৌলতে সারা বছরই কমলা পাওয়া যায়। কমলা হচ্ছে ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ ফলের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। কমলা মাটি ও জাতের গুণে টক ও মিষ্টি হয়। তবে পুষ্টিবিদদের মতে, ঈষৎ টক কমলা অধিক ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ। বাংলাদেশে পাকিস্তান আমলে সিলেটের কমলা দেশের চাহিদা মেটাত। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী সিলেটের কমলা বাগান আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। পরবর্তীকালে আবার কমলার বাগান তৈরি হয়। পঞ্চগড় ও চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলেও কমলা বাগান আছে। দেশী কমলা সারা দেশের চাহিদা মেটাতে পারে না বিধায় বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। কমলার উপকার সবাই পেতে পারে। বিশেষ করে শিশুদের জন্য কমলা অত্যন্ত উপকারী। অপুষ্টি, জন্ডিস, অর্শরোগ, কোষ্ঠকাঠিন্য, বাত, কৃমি, সর্দি-কাশি ইত্যাদি রোগে কমলা অত্যন্ত কার্যকর। পাকা কমলার খোসা রোদে শুকিয়ে রাখা যায়। কারো বারবার বমি হতে থাকলে শুকনো কমলার খোসা বেটে রস করে খাওয়ালে বমি বন্ধ হয়। শিশুদের স্কার্ভি রোগেও কমলা খুবই কার্যকর ও উপকারী।
কুল : কুল শীতকালের একটি অতি জনপ্রিয় ফল। সবাই এ ফল মজা করে খায়। আগে কেউ কুলগাছ লাগাত না, আপনা-আপনি হতো। সভ্যতার ক্রমবিকাশের সাথে সাথে মানুষ ভিটামিন-সচেতন হয়। কুলের উপকারিতা জানতে পারে। তখন কুল চাষ শুরু হয় বাণিজ্যিকভাবে। কুল বীজ থেকেও হয়। তবে ফল আসতে বিলম্ব হয়। কলমের গাছে চলতি বছরেই কুল ধরে। তাই এখন কলমের গাছ লাগানো হয় বেশি। নানা জাতের কুল হয়। যেমন- বাউকুল, বিবিকুল , গোলকুল, আপেল কুল ও নারকেল কুলসহ আরো অনেক প্রকার কুল পাওয়া যায়। গোলাকার টক বরইকে কুল বলে না। বরই বা টক বরই বলে। কৃষিবিজ্ঞানীরা সম্প্রতি এক প্রকার কুল বের করেছেন বেশ বড়। বিচি ছোট, কিন্তু স্বাদে পানসে বলে এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে না। রাজশাহীর নারকেল কুল অত্যন্ত জনপ্রিয়। এই কুল আকারে বড়। দেখতে নারকেলের মতো বলে এর নাম নারকেল কুল। এই কুলের দাম একটু বেশি হলেও চাহিদা আছে। স্বাদে মিষ্ট। বিবিকুল গোলাকার ও মিষ্ট। আপেল কুল আকারে ছোট। স্বাদে মিষ্ট। দেখতে আপেলের মতো। তাই এর নাম আপেল কুল। কুল যদি কবিরাজ, হেকিম ও বৈদ্যদের পরামর্শ মোতাবেক ব্যবহার করা যায়, তবে হৃদরোগ, কোষ্ঠবদ্ধতা, প্রদর, রক্ত আমাশয়, মাথা ধরা, মাথায় যন্ত্রণা, রক্তস্বল্পতা প্রভৃতি সমস্যা ভালো হয়।
আপেল : আপেল একটি দৃষ্টিনন্দন ফল, যা সারা বছর পাওয়া যায়। দৈনিক একটা পুষ্ট আপেল খেলে রোগব্যাধি থেকে দূরে থাকা যায়। তবে বিক্রেতারা বিশেষ করে আপেলচাষিরা ক্রেতাদের ঠকান। আপেলের বহিঃভাগ দেখে বোঝা যায় না যে, সে আপেল খাওয়ার মতো পুষ্ট কি না। অনেক সময় যেসব আপেল খাওয়ার মতো পরিপক্ক নয় সেসব আপেল গাছ থেকে পেড়ে এনে বাজারে বিক্রি করা বা কার্টুনে প্যাক করে বিদেশে রফতানি করা হয়। এটা চেনা মুশকিল। কারণ, যেমন আস্ট্রেলিয়ান জাতের আপেল ছোট হয়। এগুলো দেখে বোঝা যায় না যে সেগুলো খাওয়ার উপযোগী। অপুষ্ট বা অপরিপক্ক আপেল ক্ষতিকর না হলেও কোনো উপকার করে না। এটুকু বলা যায়, পুষ্ট ও পরিপক্ক আপেল মিষ্ট ও অপুষ্ট আপেল পানসে ও টক। আপেল মস্তিষ্কের দুর্বলতা, হৃদকম্পন, শুক্রস্বল্পতা, অজীর্ণ, হজমে অক্ষমতা, কোষ্ঠবদ্ধতা, হৃদরোগ, সংক্রমণ রোগ, কিডনির ক্যান্সারে উপকার করে।
কতবেল : কতবেল সাধারণত আশ্বিন-কার্তিক মাসে পাওয়া যায়। এই বেল খুব প্রচলিত নয়। গ্রামগঞ্জে কতবেল খুবই কম খাওয়া হয়। শহুরে শিশু ও মহিলাদের নিকট এই বেল খুবই জনপ্রিয়। পুরুষেরা এই বেল খায় না বলা চলে। এই বেল স্বাদে টক। তাই ছোট ছেলেমেয়ে ও মহিলারা বেশি খায়। স্বল্প সময়ের জন্য কতবেল পাওয়া যায়। এর কিছু উপকারিতা আছে। যাদের পিত্তে পাথর হয়, পেটে গ্যাস হয়, মহিলাদের শ্বেত বা রক্ত প্রদর আছে, বমি হওয়া, শ্বাসকষ্ট, মুখে ব্রণ ইত্যাদি সমস্যায় কতবেল কার্যকর। এসব সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে কোনো কবিরাজ, হেকিম ও বৈদ্যদের পরামর্শ মোতাবেক ব্যবহার করতে হবে।
আঙুর : আঙুর অত্যন্ত জনপ্রিয় ফল। এর চাষ আমাদের দেশে কম। আমাদের দেশে বিদেশ থেকে আঙুর আসে। আঙুরে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’। ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। তবে অধিক পরিমাণে খেলে অপকার করে। হজমে গোলযোগ দেখা দেয়। তাই প্রাপ্তবয়স্কদের দৈনিক ১০টির অধিক আঙুর খাওয়া উচিত নয়।
সফেদা : সফেদা বাংলাদেশের সর্বাপেক্ষা মিষ্টি সুস্বাদু ফল। দেখতে গাবের মতো অসুন্দর হলেও এমন সুমিষ্ট ফল বোধহয় আমাদের দেশে আর নেই। সফেদা দুই প্রকার হয়- ছোট ও বড়। আকৃতিতে দুই প্রকার হলেও স্বাদে গন্ধে অভিন্ন। সফেদা বেশি মিষ্টি ফল বিধায় ডায়াবেটিস রোগীদের দৈনিক একটার বেশি খাওয়া উচিত নয়। এতে প্রচুর পরিমাণে শর্করা রয়েছে। সফেদা অপুষ্টি দূর করে। সফেদা সকালে একটা ও বিকেলে একটা খাওয়া ভালো। খাওয়ার পর ঠা-া পানি খেতে হয়। বৃদ্ধদের জন্য সফেদা বেশ উপকারী। অত্যধিক ক্লান্তি, হৃদদৌর্বল্যে, প্রসবান্তিক দুর্বলতায়, মায়ের বুকের দুধ বাড়াতে সফেদা খাওয়া উপকারী।
নাশপাতি : নাশপাতি বিদেশী ফল। ফলটির ক্রিয়া বেশি হয় স্নায়ুতে। যারা বেশি মানসিক পরিশ্রম করেন তারা নাশপাতি খেলে উপকার পাবেন। নাশপাতি মানসিক শক্তি বাড়ায়। যারা সর্বক্ষণ মানসিক ক্লান্তিতে ভোগেন, গৃহীত খাবার হজম হয় না, পেটে গ্যাস হয় তারা নাশপাতি খেলে উপকার পাবেন।
বেদানা : ডালিম ও বেদানা এক নয়। ডালিম আমাদের দেশেও উৎপাদিত হয় সীমিত আকারে। ডালিমের আকার মধ্যম, দানা সাদা, স্বাদে কষায়। বেদানা আকারে বড়। রঙ টকটকে লাল। দানাও টকটকে লাল ও রসে ভরপুর। বেদানা অত্যন্ত উপকারী ফল। হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, লিভার বৃদ্ধি, অনিদ্রা, অজীর্ণ, অরুচি, স্মৃতিশক্তিহীনতা প্রভৃতি সমস্যায় বেদানা উপকারী।
আমলকী : আমলকী শীতের আরেকটি অত্যন্ত উপকারী ফল। কিন্তু এর চাষ দিন দিন কমে যাচ্ছে। এই উপকারী ভেষজ ফলটি চাষে উৎসাহিত করা উচিত। চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে গেলে, অনিদ্রায়, শ্বেত প্রদরে, ডায়াবেটিস, চুল পড়তে থাকলে, প্র¯্রাবের জ্বালা-যন্ত্রণায়, পিত্তশূলে, মাথাধরা প্রভৃতি সমস্যায় আমলকী উপকারী। আমলকী কাঁচা খাওয়া যায়। বাজারে আমলকীর শুঁটকিও পাওয়া যায়।
আমড়া : আমড়া বাংলাদেশের আরেকটি জনপ্রিয় ফল। আমড়া কাঁচা ও রান্না খাওয়া যায়। তবে কাঁচা খেলে বেশি ভিটামিন পাওয়া যায়। বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা প্রভৃতি জেলায় আমড়াগাছের চাষ করা হয়। শরীরে ত্বক খসখসে হয়ে গেলে, অজীর্ণ রোগে, ক্ষুধাহীনতা, অরুচিতে, রক্ত আমাশয় হলে ও শরীরে জ্বালাপোড়া করলে আমড়া খাওয়া উচিত। শিশু ও বৃদ্ধদের হাড় শক্ত করে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। ফসফরাসের ঘাটতি পূরণ করে। রাতকানা থেকে রক্ষা করে। তাই বলা হয়: পুষ্টিহীন আর কম দৃষ্টিহীন, শাকসবজি ও ফল খাওয়ান প্রতিদিন।
মো: লোকমান হেকিম
গবেষক-চিকিৎসক,
মোবাইল- ০১৭১৬-২৭০১২০
বিভাগ : স্বাস্থ্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস
শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া
ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল
‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’
প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের
প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া
মুসলিম চিকিৎসক
শীর্ষে দিল্লি
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান