ঢাকা   রোববার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪ | ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
বিশ্ব ক্যান্সার দিবস ২০২৪

স্তন ক্যান্সার

Daily Inqilab ইনকিলাব

০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম | আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১২:০০ এএম

প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও গত ৪ ফেব্রুয়ারী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে পালিত হল বিশ্ব ক্যান্সার দিবস। এবারের ক্যান্সার দিবসের প্রতিপাদ্য “টুগেদার, উই চ্যালেন্জ দোজ ইন পাওয়ার”। এই থিম দিয়ে আমরা সাধারন মানুষ বিশ্বের নেতাদের কাছে দাবি করছি ক্যান্সারের জন্য এগিয়ে আসুন, যাতে এটা প্রতিরোধ করে, চিকিৎসা করে সারা বিশ্বে এর প্রকোপ কমাতে সহায়তা করতে পারি। সবাইকে সচেতন করতেই মুলত প্রতিবছর এই দিবসটি পালিত হয়।

ব্রেস্ট বা স্তন মা ও মেয়েদের মাতৃত্ব ও সৌন্দর্যের প্রতীক শৈশব থেকে এই সময়ের মধ্যে নারীত্ব পূর্ণতা লাভ করে। এই স্তনে ক্যান্সার মরণব্যাধি বাসা বাধতে পারে যে কোন সময় এবং সচেতন না হলে কেড়ে নিতে পারে আপনার মহামূল্যবান প্রাণ। নারী পুরুষ উভয়েরই স্তন ক্যান্সার হতে পারে, তবে নারীদের মধ্যেই এর প্রবণতা বেশী। সারা বিশ্বে প্রতি বছর ২৩ লক্ষ মানুষ এতে আক্রান্ত হচ্ছে, আর প্রায় সাত লক্ষ মারা যাচ্ছে এবং প্রতি বৎসরই এটা বেড়ে চলেছে। বিশ্বে প্রতি ৪ জন নতুন ক্যান্সারের ১ জন স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে আর মৃতদের ৬ জনের ১ জন মারা যাচ্ছে এই স্তন ক্যান্সারে।

ব্রেস্ট ক্যান্সার কেন হয়?
নির্দিষ্ট কোন কারণ এখনো জানা যায়নি, তাই একাধিক কারণকে স্তন ক্যান্সারের জন্য দায়ী করা হয় :
জেনিটিক ফ্যাক্টর : যেমন- মা-খালা এদের থাকলে সন্তানদের হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
অবিবাহিতা বা সন্তানহীন মহিলাদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের প্রকোপ বেশি।
একই রকমভাবে যারা সন্তানকে কখনো স্তন্য পান করাননি তাদের ব্রেস্ট ক্যান্সার বেশি হয়।
৩০ বছরের পরে যারা প্রথম মা হয়েছেন তাদের স্তন ক্যান্সারের প্রবণতা একজন কমবয়সী মা হওয়া মহিলাদের থেকে অনেক বেশি।

বয়স যত বাড়ে স্তন ক্যান্সার এর ঝুঁকি তত বৃদ্ধি পায়।
অল্প বয়সে বাচ্চা নিলে, দেরীতে মাসিক শুরু হলে, তাড়াতাড়ি মাসিক বন্ধ হলে স্তন ক্যান্সারের প্রকোপ বেড়ে যায়।

একাধারে অনেক দিন জন্ম নিরোধক বড়ি খেলেও স্তন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। উপরোক্ত কারণগুলি ব্রেস্ট ক্যান্সারে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তবে এগুলোই একমাত্র কারণ নয়।
কি করে স্তন ক্যান্সার বুঝবেন :
১। সাধারণত ৩০ বৎসর এর পূর্বে এই রোগ কম হয়।
২। বেশির ভাগ রোগী বুকে চাকা নিয়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়।
৩। বুকে চাকা সেই সাথে কিছু কিছু রোগী ব্যথার কথাও বলে থাকে।
৪। কখনো কখনো বুকে চাকা এবং বগলেও চাকা নিয়ে রোগী আসতে পারে।
৫। নিপল ডিসচার্জ এবং নিপল ভিতরের দিকে ঢুকে যাওয়া ও এ রোগের লক্ষণ হিসেবে দেখা দিতে পারে।
৬। কিছু কিছু রোগী বুকে ফুলকপির মত ঘা নিয়ে ডাক্তার এর কাছে আসে।
৭। অনেক সময় যে বুকে ব্যথা সেদিকের হাত ফোলা নিয়েও আসতে পারে।
৮। এগুলো ছাড়া ব্রেস্ট ক্যান্সার দূরবর্তী কোথাও ছড়িয়ে পড়েছে এমন উপস্বর্গ নিয়ে আসে যেমন : হাড়ে ব্যথা, মাথা ব্যথা, শ্বাসকষ্ট ও জন্ডিস ইত্যাদি।

কিভাবে রোগ নির্ণয় করা যাবে :
১। মেমোগ্রাম বা স্তনের বিশেষ ধরনের এক্স রে
২। স্তনের আলট্রাসনোগ্রাম
৩। চাকা বা টিউমার থেকে রস (এফএনএসি) নিয়ে পরীক্ষা করলে এই রোগ ধরা পড়বে।
ব্রেস্ট ক্যান্সারে কি কি চিকিৎসা আছে :
ক্যান্সার কোন স্তরে ধরা পড়ল তার উপরই চিকিৎসা নির্ভর করে। তাই বলা হয় সম্ভব হলে সার্জারি করাই উত্তম। তাছাড়া কেমোথেরাপি, রেডিও থেরাপি, হরমোন থেরাপি ইত্যাদি।

কিভাবে প্রাথমিক পর্যায়ে এই রোগ ধরা যায় :
১। ৩০ বৎসর এর বেশি বয়স হলে নিজে নিজে ব্রেস্ট পরীক্ষা করতে হবে। কোন চাকা পাওয়া যায় কি না। চাকা পাওয়া গেলে সাথে সাথে ডাক্তার এর শরণাপন্ন হতে হবে।
২। বয়স ৫০-এর উপরে হলে বছরে ১ বার মেমোগ্রাম করতে হবে।
৩। কোন প্রকার সন্দেহ হলে ডাক্তারের সাথে দেখা করতে হবে।

এই রোগ এড়ানোর উপায় কি?

যেহেতু রোগটির নির্দিষ্ট কোন কারণ জানা যায়নি। তাই এই রোগ এড়ানোর জন্য কয়েকটি নিয়ম মেনে চলার জন্য পরামর্শ দেয়া হয় :

১। ৩০ বৎসর বয়স থেকে নিজে নিজে ব্রেস্ট পরীক্ষা করুন।
২। রিস্ক ফ্যাক্টর থাকলে সে ক্ষেত্রে মেমোগ্রাফি করুন। যেমন : ফ্যামিলিতে ব্রেস্ট ক্যান্সার থাকলে।
৩। ৩০ বছর বয়সের মধ্যে ১ম সন্তান জন্ম দেয়ার চেষ্টা করুন।
৪। সন্তানকে বুকের দুধ পান করান।
৫। টাটকা শাক সব্জি ও ফল খান।
৬। সন্দেহ হলে ক্যান্সার সার্জনের শরণাপন্ন হন।

উপসংহার :
মনে রাখবেন প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নিরুপন করলে এবং চিকিৎসা করলে আপনি অনেকদিন সুস্থ থাকবেন। সার্জারি করার সময় টিউমারটি বগলে লসিকা গ্রন্থিসহ অপসারণ করলে এই রোগ পুন:বার দেখা দেয়ার সম্ভাবনা খুব কম। অসম্পূর্ণভাবে টিউমার অপসারণ করলে এই রোগ আবার হতে পারে। বর্তমানে অপারেশন টেকনোলজী অনেক উন্নতি লাভ করেছে যার ফলে এই রোগের চিকিৎসা এখন বাংলাদেশের অনেক স্খানেই করা সম্ভব। তাছাড়া এডভান্স ব্রেস্ট ক্যান্সারে এখন টিউমার ফেলে দিয়ে ব্রেস্ট এরিয়া রিকন্সট্রাকশও করা হচ্ছে।

অধ্যাপক ডা. এম এ হাসেম ভূঁঞা
জেনারেল ও ল্যাপারোস্কোপিক সার্জারি বিশেষজ্ঞ
উত্তরা ক্রিসেন্ট ডায়াগনোস্টিক এন্ড কনসাল্টেশন সেন্টার,
ফোন : ০৯৬৬৬৭১০৬৬৫: ০১৭১১৫৩৩৩৭৩।


বিভাগ : স্বাস্থ্য


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

কাঁচকলার উপকারিতা
অপরিণত নবজাতকরাও ফিরবে স্বাভাবিক জীবনে
বিমান ভ্রমণে জেট ল্যাগ
চোখ ওঠা রোগের কারণ ও প্রতিকার
ডায়াবেটিস রোগীর হৃদরোগের ঝুঁকি
আরও

আরও পড়ুন

যশোরে নাশকতার অভিযোগে আওয়ামীলীগের দুই কর্মী আটক

যশোরে নাশকতার অভিযোগে আওয়ামীলীগের দুই কর্মী আটক

যশোরে ব্যবসায়ীর পায়ে গুলি সাবেক এসপি আনিসসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা থানায় রেকর্ড

যশোরে ব্যবসায়ীর পায়ে গুলি সাবেক এসপি আনিসসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা থানায় রেকর্ড

যশোরে একই সঙ্গে দুই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ জাহিদুল

যশোরে একই সঙ্গে দুই প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ জাহিদুল

ইমনের সেঞ্চুরির পরও এগিয়ে খুলনা

ইমনের সেঞ্চুরির পরও এগিয়ে খুলনা

টিয়ারশেল-সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে সরানো হলো প্রথম আলোর সামনে অবস্থানকারীদের

টিয়ারশেল-সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে সরানো হলো প্রথম আলোর সামনে অবস্থানকারীদের

নাইমের ১৮০, মেট্রোর বড় সংগ্রহ

নাইমের ১৮০, মেট্রোর বড় সংগ্রহ

রাজার বোলিংয়ে অলআউট বরিশাল

রাজার বোলিংয়ে অলআউট বরিশাল

দেশের টাকা পাচার করে হাসিনা ও তাঁর দোসররা দেশকে দেউলিয়া করে গেছে পাচারকৃত টাকা উদ্ধারে কাজ করতে হবে -মাওলানা ইমতিয়াজ আলম

দেশের টাকা পাচার করে হাসিনা ও তাঁর দোসররা দেশকে দেউলিয়া করে গেছে পাচারকৃত টাকা উদ্ধারে কাজ করতে হবে -মাওলানা ইমতিয়াজ আলম

এসডিজি কার্যক্রমে যুক্ত হচ্ছে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের ‘থ্রি জিরো তত্ত্ব’

এসডিজি কার্যক্রমে যুক্ত হচ্ছে প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের ‘থ্রি জিরো তত্ত্ব’

বিএনপি’র প্রতিনিধি দলের সাথে ঢাকায় নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত রামিস সেনের বৈঠক

বিএনপি’র প্রতিনিধি দলের সাথে ঢাকায় নিযুক্ত তুরস্কের রাষ্ট্রদূত রামিস সেনের বৈঠক

৫ বছর পর আয়োজিত হতে যাচ্ছে আন্তঃবিভাগ ফুটবল টুর্নামেন্ট-২০২৪

৫ বছর পর আয়োজিত হতে যাচ্ছে আন্তঃবিভাগ ফুটবল টুর্নামেন্ট-২০২৪

থিতু হয়েও ইনিংস লম্বা করতে পারলেন না শাহাদাত

থিতু হয়েও ইনিংস লম্বা করতে পারলেন না শাহাদাত

গণ-অভ্যুত্থানে ঢাবি ভিসির ভূমিকা কী ছিল? জানতে চান ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক

গণ-অভ্যুত্থানে ঢাবি ভিসির ভূমিকা কী ছিল? জানতে চান ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক

নির্বাচন কমিশনের প্রধান কাজ হওয়া উচিত অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সাধারণ জনগণের আস্থা অর্জন করা : রিজভী

নির্বাচন কমিশনের প্রধান কাজ হওয়া উচিত অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সাধারণ জনগণের আস্থা অর্জন করা : রিজভী

ইংরেজিতে দক্ষতা অর্জনে দেশে এলো অ্যাপ ‘পারলো’

ইংরেজিতে দক্ষতা অর্জনে দেশে এলো অ্যাপ ‘পারলো’

সীমান্তর লক্ষ্য এসএ গেমসের হ্যাটট্রিক স্বর্ণ জয়

সীমান্তর লক্ষ্য এসএ গেমসের হ্যাটট্রিক স্বর্ণ জয়

বিপিএলের প্রথম দিনই মাঠে নামছে বসুন্ধরা-মোহামেডান

বিপিএলের প্রথম দিনই মাঠে নামছে বসুন্ধরা-মোহামেডান

নির্বাচিত সরকারই দেশকে পুনর্গঠন করতে পারে : তারেক রহমান

নির্বাচিত সরকারই দেশকে পুনর্গঠন করতে পারে : তারেক রহমান

লক্ষ্মীপুরে ১২০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেলেন ৫০ জন

লক্ষ্মীপুরে ১২০ টাকায় পুলিশে চাকরি পেলেন ৫০ জন

১৫ দিন রিমান্ড শেষে কারাগারে আব্দুর রাজ্জাক

১৫ দিন রিমান্ড শেষে কারাগারে আব্দুর রাজ্জাক