দাঁত ও মাড়ির যত্ন

Daily Inqilab ইনকিলাব

০৮ মার্চ ২০২৪, ১২:১১ এএম | আপডেট: ০৮ মার্চ ২০২৪, ১২:১১ এএম

মানুষের দাঁত দুই প্রকার। প্রাথমিক ও স্থায়ী। আমাদের দুই চোয়ালে সারিবদ্ধভাবে দাঁতগুলো হাড়ের ভিতরে প্রোথিত থাকে। আর হাড় ও দাঁতের মধ্যে এক বিশেষ রকমের পর্দা থাকে যাকে বলে পেরিওডনটাল মেমব্রেন। এটি হাড় ও দাঁতের গোড়ার সিমেন্টামের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করে যার জন্য চিবানোর সময় সহজে হাড়ের আঘাতজনিত ক্ষতি হয় না। আর নরম মাড়ি হাড়ের উপর অ্যালভিওলার প্রসেস দাঁতের মাথা ১-২ মিলিমিটার ঢেকে রাখে যা চিবানোর সময় খাদ্যবস্তুকে ভিতরে যেতে পেরিওডন্টিয়াম রোগগ্রস্ত না-হয় সেদিকে আমাদের যতœশীল হতে হবে।

দাঁতের গঠনগত নির্দিষ্ট অংশগুলো একটু বলে নেয়া ভালো। দাঁতের ক্রাউন (মাথা) যা মুখের মধ্যে দেখা যায় তাকে ক্লিনিক্যাল ক্রাউন আর অ্যানটমিক্যাল ক্রাউন একটু নিচে, মাড়ি দিয়ে ঢাকা থাকে। তার ২-৩ মিমি নিচে দাঁতের মাড়ির হাড়ের উপরের অংশে অ্যালভিওলার টেস্ট থাকে। এই অ্যালভিওলার হাড়-পেরিওডনটাল মেমব্রেন দ্বারা দাঁতের গোড়ার সঙ্গে যুক্ত থাকে। দাঁতে রুটের শেষে এক বা একাধিক সরু ছিদ্র পথে রক্তের নালী ও নার্ভ থাকে। সব দাঁত ১ মিমি মতো নড়ে। আবার চিবানোর সময় পেরিওডনটাল মেমব্রেন শক্ত হয়ে দাঁতকে হাড়ের সঙ্গে শক্ত করে রাখে। চিবানোর সময় কতগুলো মাসল, জিভ, ঠোঁট তার নির্দিষ্ট কাজের মাধ্যমে খাদ্য বোলাস ইসোফেগাস হয়ে পাকস্থলীতে যায়। মুখের ভেতরের পরিবেশ লালায় ভিজে থাকে, যাতে কথা বলতে সুবিধা হয়। এই লালা জন্মের প্রথম থেকে মৃত্যু অবধি নির্দিষ্ট নিয়মে মুখের মধ্যে আসে। এ পর্যন্ত যা বলা হল তা দাঁত, মাড়ির গঠন ও কার্যগত দিকের।

দাঁতের সাধারণ রোগ থেকে কিভাবে? কীভাবে এদের প্রতিরোধ ও যতœ নেয়া যায় তার কথা বলি। দাঁতের প্রধানত তিন প্রকার রোগ আমরা লক্ষ করি-
১) দাঁতের মধ্যে কালো কালো গর্ত হওয়া যাকে দন্তক্ষয় বা ক্যারিস বলে।
২) মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া যা আরও ভিতরের অংশে গেলে পচন ক্রিয়া হয়ে মুখে দুর্গন্ধ হয়।
৩) উপযুক্ত রোগগুলোর কারণ কী কী, তাদের প্রতিষেধক ব্যবস্থা কী কী-আমরা যে খাবার খাই তার কণাগুলো দাঁত ও মাড়ির ফাঁকে আটকে থাকে যাদের কাজে লাগিয়ে অতিসুক্ষ্ম জীবাণু (আনুবীক্ষণিক)সমূহ মুখগহ্বরে ছড়িয়ে পড়ে। আবার ঐ জীবাণুগুলো পরিবেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজেদের পরিবর্তন ঘটায় ও ক্ষতিকারক শক্তি জোগাড় করে পাশের মাড়ি ও তার হাড়ের রোগ তৈরি করে বেঁচে থাকে। দন্তক্ষয় জীবাণুর দ্বারা আরম্ভ হয়ে টক্সিন এনামেলকে গলিয়ে কালো করে দেয়, পরে ভিতরের অংশে গেলে পাল্প টিস্যু যা একেবারে ভিতরে থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে তখন অসম্ভব ব্যথা করে।

মাড়ির রোগের ক্ষেত্রে মাড়িগুলো একটু একটু করে ফোলে ও রক্তপাত হয়, পরে মুখে দুর্গন্ধ হয়, দাঁত নড়তে থাকে। প্রতিরোধ করতে গিয়ে লালার ক্যালসিয়াম ও বিভিন্ন যোগ ক্যালকুলাস ও টারটারে রূপান্তরিত হয়। মাড়ি নিচের দিকে নামতে থাকে, দাঁত বড় দেখায়, কখনও নড়ে যায়, অনেক সময় পড়েও যায়। সাধারণত লোকে বলে পায়োরিয়া হয়েছে। আধুনিক চিকিৎসায় এই রোগকে বলে পেরিওডনটাইটিস, যার সূচনা মাড়ির জীবাণুর সংক্রমণে আরম্ভ হয়ে ভিতরের দিকের পর্দা বা হাড়কে নষ্ট করে। এই প্রক্রিয়ায় খুব ধীরে ধীরে হাড় নষ্ট হয় তেমন ব্যথা বা যন্ত্রণা হয় না বলে রোগীরা চিকিৎসকের কাছে তেমন একটা যান না। ফলে অনেক বেশি পাথর ও টারটার জমে দাঁতের গোড়া আলগা হয় ও নড়িয়ে দেয়।

আর একটা রোগ হল মুখে ঘা, যা বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে। খাদ্যের ভিটামিনের অভাব থেকে ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে। মুখগহ্বরের ক্যানসার ৪০ রকমের। যার সঠিক চিকিৎসা, এককভাবে করে সারানো যায় না। শল্য চিকিৎসা, রশ্মি চিকিৎসা, কেমোথেরাপি ছাড়া বর্তমান জিন থেরাপিও হয় তবে তা আমাদের দেশে এখনও আরম্ভ হয়নি। এই রোগ ধূমপানীয়দের মধ্যে বেশি দেখা যায়। যারা খুব মদ্যপায়ী এবং পারিবারিক ইতিহাস আছে তাদের এই রোগ বেশি করে লক্ষ করা যায়।

যাতে রোগ না-হয় অর্থাৎ প্রতিষেধক কী কী ব্যবস্থা নেয়া যায় তার দিকগুলো তুলে ধরছি। দাঁত ও মাড়ির সংযোগস্থল ভালো করে পরিষ্কার না-করলে জীবাণুর কলোনি বা প্লাক জমে, যা পরে মাড়ির রোগ তৈরি করে। এটি যাতে না হয় তার দিকে সকলের সৃষ্টি দিতে হবে। রোগ প্রাথমিক স্তরে নির্ণয় করে সঠিক চিকিৎসা দরকার। দাঁতে গর্ত হলে ফিলিং করে নেয়া দরকার। কর্কট রোগ প্রাথমিক ক্ষেত্রে নির্ণয় করে চিকিৎসা করা যায়। দাঁত যাতে নষ্ট না হয়, তারজন্য নির্দিষ্ট নিয়মে রাত্রে ও সকালে ব্রাশ করা উচিত। ম্যাসেজ করা অবশ্যই দরকার। প্রতি ছয় মাস অন্তর দাঁতের ডাক্তার দেখিয়ে প্রাথমিক স্তরেই রোগের চিকিৎসা করানো উচিত।

আফতাব চৌধুরী
সাংবাদিক-কলামিস্ট।


বিভাগ : স্বাস্থ্য


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

নিজের বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ভাড়া দিলেন মালাইকা

নিজের বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ভাড়া দিলেন মালাইকা

ঈদ উপলক্ষে ওয়ালটনের অত্যাধুনিক নতুন মডেলের বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব পণ্য উন্মোচন

ঈদ উপলক্ষে ওয়ালটনের অত্যাধুনিক নতুন মডেলের বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব পণ্য উন্মোচন

প্রেমের কথা স্বীকার করে যা বললেন জাহ্নবী

প্রেমের কথা স্বীকার করে যা বললেন জাহ্নবী

ফিলিস্তিনে নির্বিচার হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে দিনাজপুরে র‌্যালী

ফিলিস্তিনে নির্বিচার হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে দিনাজপুরে র‌্যালী

নতুন রূপে হাজির হলেন নুসরাত ফারিয়া

নতুন রূপে হাজির হলেন নুসরাত ফারিয়া

রাঙামাটিতে দুর্বৃত্তের গুলিতে ইউপিডিএফ কর্মীসহ নিহত ২

রাঙামাটিতে দুর্বৃত্তের গুলিতে ইউপিডিএফ কর্মীসহ নিহত ২

ধোলাইখালে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৪ ইউনিট

ধোলাইখালে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৪ ইউনিট

সাতক্ষীরায় ট্রাক উল্টে ২ ধানকাটা শ্রমিকের মৃত্যু

সাতক্ষীরায় ট্রাক উল্টে ২ ধানকাটা শ্রমিকের মৃত্যু

আট বিভাগে বৃষ্টির আভাস

আট বিভাগে বৃষ্টির আভাস

কারওয়ান বাজারে হোটেলে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে

কারওয়ান বাজারে হোটেলে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে

ফের ভেঙে যাচ্ছে বেন অ্যাফ্লেক ও জেনিফার লোপেজের সংসার!

ফের ভেঙে যাচ্ছে বেন অ্যাফ্লেক ও জেনিফার লোপেজের সংসার!

রাফাহসহ সমগ্র গাজায় চলছে প্রচণ্ড যুদ্ধ

রাফাহসহ সমগ্র গাজায় চলছে প্রচণ্ড যুদ্ধ

কারওয়ান বাজারের একাংশে আগুন

কারওয়ান বাজারের একাংশে আগুন

হরিয়ানায় চলন্ত বাসে আগুন, ৮ পুণ্যার্থীর মৃত্যু

হরিয়ানায় চলন্ত বাসে আগুন, ৮ পুণ্যার্থীর মৃত্যু

ঢাকায় ফেরার পথে খিলগাঁওয়ে কক্সবাজার এক্সপ্রেসের রেক থেকে ইঞ্জিন বিচ্ছিন্ন

ঢাকায় ফেরার পথে খিলগাঁওয়ে কক্সবাজার এক্সপ্রেসের রেক থেকে ইঞ্জিন বিচ্ছিন্ন

ব্রিটেনের ধনকুবেরদের তালিকায় ৩০ ধাপ এগোলেন সস্ত্রীক ঋষি সুনক

ব্রিটেনের ধনকুবেরদের তালিকায় ৩০ ধাপ এগোলেন সস্ত্রীক ঋষি সুনক

ইউক্রেন সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের চেষ্টা করা উচিত

ইউক্রেন সংকট সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রের চেষ্টা করা উচিত

দিনাজপুরে পুলিশের কড়াকড়ি, হেলমেট ছাড়া পাম্পে মিলছে না জ্বালানি তেল

দিনাজপুরে পুলিশের কড়াকড়ি, হেলমেট ছাড়া পাম্পে মিলছে না জ্বালানি তেল

নির্বাচনী প্রচারণায় গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লেন সায়নী

নির্বাচনী প্রচারণায় গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লেন সায়নী

গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ঝরছে ঢাকায়, জনজীবনে স্বস্তি

গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ঝরছে ঢাকায়, জনজীবনে স্বস্তি