ওয়ার্ল্ড ওরাল হেলথ্ ডে-২০২৪
১৫ মার্চ ২০২৪, ১২:০৭ এএম | আপডেট: ১৫ মার্চ ২০২৪, ১২:০৭ এএম
সারা বিশ্বে প্রতি বছর ২০শে মার্চ ওয়ার্ল্ড ওরাল হেলথ্ ডে একযোগে পালিত হয়। এ দিবসের মূল উদ্দেশ্য জনগণকে সচেতন করে তোলা যেন মুখের রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করা যায় যা বিশ^ব্যাপী ৩.৫ বিলিয়ন মানুষকে আক্রান্ত করে থাকে। ২০২৪ সাল থেকে ২০২৬ সাল পর্যন্ত ওয়ার্ল্ড ওরাল হেলথ্ ডে এর ক্যাম্পেইন থিম বা প্রচারনার বিষয়, “আ হ্যাপি মাউথ.. ইজ আ হ্যাপি বডি” অর্থাৎ সুস্থ মুখে সুস্থ শরীর। সুস্থ মুখ কেবলমাত্র স্লোগান নয় বরং এটি জীবনের চলার একটি দিক নির্দেশনা যা আমাদের সার্বিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। এই প্রচারনার মাধ্যমে মানুষ যেন সুস্থ মুখের সাথে সার্বিক সুস্থ শরীরের যোগসূত্র বুঝতে পারে এবং দাঁত ও মুখ সুস্থ রাখতে উৎসাহিত হয় সেই লক্ষ্যে ২০ শে মার্চ সারা বিশে^ একযোগে ওয়ার্ল্ড ওরাল হেলথ্ ডে পালিত হবে।
মুখ শরীরের আয়না হিসাবে কাজ করে। মুখের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য রিস্ক ফ্যাক্টর বর্জন করতে হবে। নিয়মিত ডেন্টাল চেক-আপ করতে হবে, সার্বিক স্বাস্থ্য এবং জীবনের মান ঠিক রাখার জন্য। আপনার মুখ ও মাড়ির স্বাস্থ্য ভালো রাখলে মাড়ির রোগ থেকে সৃষ্টি হওয়া পেরিওডন্টাল রোগ, ব্যাকটেরিয়াল এন্ডোকার্ডাইটিস, ব্রেন স্ট্রোক থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। ফলে দেখা যাচ্ছে যে, স্বাস্থ্যবান মুখ আমাদের জন্য মঙ্গলজনক। রোগ না থাকলে আর্থিক ব্যয় হয় না বলে জীবনের মানও সুন্দর হয়।
মাড়ি রোগের ব্যাকটেরিয়া ইসোফেজিয়াল ক্যান্সারের সাথে সম্পৃক্ত। তাই মাড়ি এবং মুখের স্বাস্থ্য ভালো রাখলে আমরা এ ধরণের ক্যান্সার এবং নানাবিধ আলসার থেকে রক্ষা পেতে পারি। মুখের রোগ পেরিওডন্টাইটিসের সাথে নন-এলকোহলিক লিভার ডিজিজ, লিভার সিরোসিস এবং হেপাটোসেলুলার কারসিনোমার যোগসূত্র খুজে পাওয়া যায় অথবা এ সব রোগের অবস্থার অবনতি ঘটে থাকে।
গর্ভকালীন সময়ে মুখের স্বাস্থ্যের যতœ নিতে হবে। গর্ভবতী থাকার সময় মাড়ি রোগ থাকলে গর্ভের শিশু নির্দিষ্ট সময়ের আগে জন্ম নিতে পারে। শুধু তাই নয়, ঐ শিশু আকার এবং আকৃতিতে ছোট হবে। গর্ভাবস্থায় মায়েদের খাবারে অরুচি থাকে। পেট ফাঁপা থাকতে পারে অথবা পেট ভরা ভরা লাগতে পারে। এ জন্য একবারে বেশি না খেয়ে বার বার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। একজন মানুষ সাধারণত দিনে ৩ বার খাবার গ্রহণ করে থাকেন। কিন্তু গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে তিনবারের পরিবর্তে পাঁচবার অল্প অল্প করে খাবার দেওয়া উঠিত। কারণ বমি বমি ভাবের কারণে এবং খাবারে অরুচির কারণে অনেক সময় গর্ভবতী মায়েদের কেউ কেউ সামান্য খাবার খান বা একদম খেতে চান না। এসময় দাঁত ও মুখের যতœ স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি নিতে হবে। গর্ভাবস্থায় মা ও শিশুর জন্য ফলিক এসিডের প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে প্রথম তিন মাসে অবশ্যই ফলিক এসিড দেওয়া প্রয়োজন। সবার জানা থাকা প্রয়োজন যে, ফলিক এসিডের অভাব হলে ঠোঁট কাটা এবং তালু কাঁটা শিশুর জন্ম হতে পারে। এছাড়া ফলিক এসিডের অভাব হলে শিশুর গঠন এবং গর্ভবতী মায়ের মুখে আলসার দেখা দিতে পারে। খাবারের পাশাপাশি ফলমূল এবং শাকসবজি খাওয়া প্রয়োজন। গর্ভাবস্থায় প্রোজস্টেরন হরমোন বেশি থাকার কারণে গর্ভবতী মায়েদের কনস্টিপেশন এবং মুখের রোগ দেখা দিতে পারে। এছাড়া মাড়িতে প্রদাহ দেখা দিতে পারে। গর্ভবতী থাকার তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে দাঁতের স্কেলিং করে মাড়ির যথাযথ যতœ নিলে এধরণের সমস্যা দেখা দিবে না। ফলে দেখা যাচ্ছে মুখের ভালো স্বাস্থ্য আমাদের সুখ এবং মঙ্গলের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন।
গবেষণায় দেখা গেছে যাদের পেরিওডন্টাল রোগ আছে তারা এথেরোস্কেলেরোটিক হার্টের রোগের উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। এথেরোস্কেলেরোসিস এমন একটি অবস্থা যখন শরীরের ধমনী আক্রান্ত হয়ে ধমনীর অভ্যন্তরভাগ সরু হয়ে যায়। কারণ ধমনীর প্রাচীরে প্ল্যাক জমা হতে থাকে। এর ফলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গে রক্ত পরিবহন কমে যায়। যদি হৃদযন্ত্রগামী ধমনী বা রক্তনালীতে কোন এথেরোস্কেলেরোসিস বা প্রতিবন্ধকতা হয় তবে বুকে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। এই ব্যথা মাঝে মাঝে বাম হাতে, কাঁধে বা চোয়ালে অনুভূত হতে পারে। কখনও কখনও নিচের চোয়ালের মাড়ির দাঁতে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। এথোরোস্কেলেরোসিস মস্তিষ্কের ধমনীতে হতে পারে। ফলে মাথা ব্যথা, অস্বচ্ছ দৃষ্টি এবং মাথা ঘুরতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল এবং ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের এথেরোস্কেলেরোসিস হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এছাড়া ধূমপান, মোটা হয়ে যাওয়া, স্যাচুরেটেড ফ্যাট খাওয়া ঝুঁকির কারণসমূহের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। যেহেতু পেরিওডন্টাল রোগের সাথে এথেরোস্কেলেরোসিস এর যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যায় তাই আপনার মাড়ির যতœ নিতে হবে।
ভুলে যাওয়া রোগের সাথে মাড়ি রোগের সম্পর্ক রয়েছে। শুধু দাঁতের যতœ নিলেই হবে না পাশাপাশি মাড়ি ও শরীরের বিভিন্ন সমস্যার প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। স্বাস্থ্য সচেতন হতে হবে। আর অবশ্যই মনে রাখবেন পেরিওডন্টাল রোগ হলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। পরিবারের একজনের পেরিওডন্টাল রোগ হলে পরিবারের বাকী সদস্যদের চেকআপ করিয়ে নিতে হবে। মুখের স্বাস্থ্য ভালো না রেখে আপনার সার্বিক স্বাস্থ্য কখনই ভালো রাখা সম্ভব নয়। মুখের স্বাস্থ্য ভালো না রাখলে আপনি বিভিন্ন ধরণের সিস্টেমিক রোগ থেকে শুরু করে জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারেন যার কারণে আপনি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন। তাই আপনার দীর্ঘ ও স্বাস্থ্যবান জীবন লাভের জন্য মুখের যতœ নিন। মুখ আপনার যতœ নিবে। আজীবন হাসির জন্য মুখের স্বাস্থ্যের যতœ নিন। আপনার মুখ ভালো থাকলে আপনিও ভালো থাকবেন।
ডা. মোঃ ফারুক হোসেন
মুখ ও দন্তরোগ বিশেষজ্ঞ
ইমপ্রেস ওরাল কেয়ার, বর্ণমালা সড়ক, ইব্রাহিমপুর, ঢাকা।
মোবাইল ঃ ০১৮১৭৫২১৮৯৭
ই-মেইল ঃ [email protected]
বিভাগ : স্বাস্থ্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
বাংলাদেশের বিপক্ষে যে একাদশ দিয়ে মাঠে নামছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ
কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার কামালসহ তিনজন গ্রেফতার
প্রেসিডেন্টের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধানের সাক্ষাৎ
বেইজিং সংস্কৃতি ও পর্যটন ব্যুরো ও আটাবের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত
উইন্ডিজের বিপক্ষে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
গাজায় যুদ্ধবিরতি ছাড়া বন্দী বিনিময় হবে না : হামাস
শান্তিরক্ষা মিশন মোতায়েন করতে চায় জাতিসংঘ হাইতিতে
চকরিয়ার বিএনপি নেতা আবু তাহের চৌধুরীর মৃত্যুতে সালাহউদ্দিন আহমদ ও হাসিনা আহমদের শোক
পুতিন পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দ্বিধা করবেন না : সার্বিয়া
ক্লাইমেট অর্থায়ন ইস্যুতে দেশগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব
লালমোহনে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত যুবদল নেতা চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
ট্রাম্পের অ্যাটর্নির বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন আটকে গেল
‘ফিলিস্তিনের পর ইরান, সউদী ও তুরস্ক হবে পরবর্তী টার্গেট’
প্রতি বছর ৩ লাখ নথিবিহীন অভিবাসীকে বৈধতা দানের ঘোষণা স্পেনের
প্রেম-ভালোবাসা নিয়ে সবচেয়ে অসুখী দেশ জাপান-কোরিয়া
মুসলিম চিকিৎসক
শীর্ষে দিল্লি
সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সংবর্ধনা
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর বোর্ড অব গভর্নর সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানীকে জমিয়াতুল মোদার্রেসীন ও দারুননাজাত মাদরাসা’র সম্বর্ধনা
বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটানের মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতার আহ্বান