ঢাকা   শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ | ৫ আশ্বিন ১৪৩১

মাদকে নিঃশেষ হচ্ছে পথশিশুরা

Daily Inqilab ইনকিলাব

২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:১৩ এএম | আপডেট: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:১৩ এএম

শহরের রাস্তায় ঠিকানাহীন ভাসমান শিশুদের দেখা যায়। দেশের বড় বড় শহরে তো বটেই, জেলাশহরেও এদের দেখা মেলে। পিতা-মাতাহীন, পরিচয়হীন শিশুরা উচ্ছিষ্ট খেয়ে জীবন ধারণ করে বলে তাদের টোকাই বলা হয়। শহরাঞ্চলে এমন একদল শিশুর উদ্ভব হওয়া আমাদের জন্য কোনোভাবেই মর্যাদার নয়। পথশিশুরা মানুষ হিসেবে বিবেচিত হয় না; তুচ্ছতাচ্ছিল্যের শিকার। যদিও সরকার ও সামর্থ্যবানদের দায়িত্ব এদের দারিদ্র্য ঘোচানো। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও শহরের রাস্তায় এদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। নিজেদের গড়ে তোলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত তারা। লাঞ্ছনার শিকার এসব পথশিশু শুধু নিজেদেরই নিঃশেষ করে দিচ্ছে না; অনেকসময় বৃহত্তর সমাজের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

একটি গবেষণায় জানা যাচ্ছে, পথশিশুরা মাদকের বাহক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর দেশব্যাপী পথশিশুদের ওপর ওই গবেষণা চালায়। এক হাজার ৬০০ পথশিশুর ওপর জরিপ চালানো হয়। জরিপে অংশ নেয়া ৯২৮ শিশু স্বীকার করেছে, তারা মাদক সেবন করে। আর নমুনার ৫৮ শতাংশ শিশু মাদকসেবী। ৫৩ শতাংশ বলেছে, তারা মাদক সরবরাহকারীদের কাছ থেকে সরাসরি মাদক কেনে। ১৪ শতাংশ বলেছে, ১০ বছর বয়স হওয়ার আগে থেকেই তারা মাদক গ্রহণ করছে। এদের মধ্যে আবার ৩৩৬ শিশু জানিয়েছে, তারা মাদকের বাহক হিসেবে কাজ করে। এসব তথ্য থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, পথশিশুদের কিভাবে মাদক কারবারিরা ব্যবহার করছে। তারা শুধু পথশিশুদের ধ্বংস করছে না, তাদের সাহায্যে সমাজে মাদকও ছড়িয়ে দিচ্ছে। গবেষণাটির ফল প্রকাশ হয় ২০২১ সালে। জরিপকাল ছিল এর আগে। অথচ সরকার মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে এ সময়ে প্রায়ই মাদকের বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযান চালিয়েছে। ২০১৮ সালে মাদকের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী সবচেয়ে বড় অভিযান চালানো হয়। এমনকি মাদক ব্যবসার অভিযোগে অনেকে বিচারবহির্ভূত হত্যারও শিকার হয়েছে। মাদকের মূল কারবারিদের যে স্পর্শ করা হয়নি তা নিশ্চিত। বরং নিরাপদে পথশিশুদের সর্বনাশ করছে। মাদক কারবারিরা জাতির বড় ধরনের ক্ষতি করছে।

জরিপে পথশিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ-অনিশ্চিত জীবন নিয়ে আরো কিছু তথ্য উঠে এসেছে। এতে দেখা গেছে, এদের ৫৫ শতাংশ মানসিকভাবে অসুস্থ। ৬৪ শতাংশ নিজেকে পরিচালনার ক্ষমতা রাখে না। এরা আবার সস্তা এবং অপেক্ষাকৃত ক্ষতিকর মাদক গ্রহণ করে। ৩১ দশমিক ৭ শতাংশ গাঁজা সেবন করে। ১৫ দশমিক ২ শতাংশ ক্যান্ডি সেবন করে। এসব সেবনের আরো কারণ হচ্ছে, এমন মাদকে ক্ষুধামান্দ্য হয়। সোজা কথায় খাবার কেনার সামর্থ্য না থাকায় ক্ষুধার অভাব মাদক দিয়ে মেটাচ্ছে। আরেকটি কারণ, নিজেদের লাঞ্ছিত জীবন ভুলে থাকতে মাদক সেবন করছে।

মাদক নিয়ে গবেষণার অংশ হিসেবে পথশিশুদের ওপর জরিপটি হয়েছে। তাদের সার্বিক জীবন সম্পর্কে জানার লক্ষ্যে এটি করা হয়নি। তবে শহরের রাস্তায় প্রতিদিন আমরা এদের দেখে থাকি। দেশের প্রভূত অর্থনৈতিক উন্নয়নের দাবি করা হচ্ছে। মাথাপিছু আয় গণনা করা হচ্ছে প্রায় তিন হাজার ডলার। পথশিশুদের ভাগ্য কোথায় সেই প্রশ্ন সামনে আসছে। একটি পথশিশুর খাদ্য-বস্ত্র-শিক্ষা-বাসস্থানের জন্য তিন হাজার ডলারের প্রয়োজন নেই। সামান্য অর্থ ব্যয় করে এর আয়োজন করা যায়। বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার উদ্যোগে পথশিশুদের পুনর্বাসন চলছে। তা যে প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল এটি রাস্তায় পথশিশুদের সংখ্যা দেখেই বোঝা যায়। আমরা কোনোভাবে এসব শিশুকে লাঞ্ছনার জীবনে ফেলে রাখতে পারি না। তাদের নিয়ে পূর্ণাঙ্গ গবেষণা হলে বোঝা যাবে আরো বিস্তারিত তথ্য। সরকার ও বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে এমন একটি গবেষণা হওয়া সময়ের দাবি। তারপর এদের ন্যূনতম সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। যেন একটি শিশুও হেলায় হারিয়ে না যায়। এ ব্যাপারে দ্রুত কিছু না করলে সামনে সমূহ বিপদ।

মো: লোকমান হেকিম
গবেষক ও কলামিস্ট, মোবাইর- ০১৭১৬-২৭০১২০


বিভাগ : স্বাস্থ্য


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

ইয়ামালের মাইলফলকের রাতে হারের তেতো স্বাদ বার্সার

ইয়ামালের মাইলফলকের রাতে হারের তেতো স্বাদ বার্সার

আর্সেনালের স্বস্তির ড্র,অ্যাটলেটিকোর দারুণ জয়

আর্সেনালের স্বস্তির ড্র,অ্যাটলেটিকোর দারুণ জয়

হেডের বিধংসী শতকে লন্ডভন্ড  ইংল্যান্ড

হেডের বিধংসী শতকে লন্ডভন্ড  ইংল্যান্ড

পয়েন্ট হারিয়েও শীর্ষে আর্জেন্টিনা,অবনতি বাংলাদেশের

পয়েন্ট হারিয়েও শীর্ষে আর্জেন্টিনা,অবনতি বাংলাদেশের

বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি

বিদেশে সাবেক ভুমিমন্ত্রীর আট হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি

ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী

ইউনূস গুড উইলের প্রতিফলন দেখতে চায় জনগণ: রিজভী

সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু

সময় থাকতে হাসিনাকে ফেরত পাঠান : ভারতকে দুদু

রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে

রুশ সেনা কুরস্কের দুটি শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে

বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত

বিমানবন্দর এলাকা হবে শব্দদূষণ মুক্ত

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে

যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান ৭ দিনের রিমান্ডে

বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা

বিচার শুরু হলে হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে : আইন উপদেষ্টা

লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই

লোহাগড়ায় দিনে-দুপুরে বসতবাড়ি পুড়ে ছাই

রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে

রাষ্ট্রীয় কল্যাণে অবদান রাখার সুযোগ দিন আলেমদেরকে

দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা

দুই মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ওপর হামলার ঘটনায় বিএমটিএর নিন্দা

জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ

জিএম কাদের ও মজিবুল হক চুন্নুকে অবিলম্বে আটক করতে হবে : আবু হানিফ

উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী  প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন

উপদেষ্টাদের আয় ও সম্পদ বিবরণী প্রকাশের নীতিমালা অনুমোদন

সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল-এমপি হেনরিসহ ৩ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।

পটুয়াখালী মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতিকে একবছর ,সাধারন সম্পাদককে দুই বছর একাডেমীক কার্যক্রম থেকে বহিস্কারসহ উভয়কে হোস্টেল থেকে আজীবন বহিস্কার।

ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ৫ শিক্ষার্থী গ্রেফতার

ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ৫ শিক্ষার্থী গ্রেফতার

রাজউক চেয়ারম্যানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল

রাজউক চেয়ারম্যানের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল