শিশুদের অপুষ্টি : সতর্কতা প্রয়োজন
১৭ এপ্রিল ২০২৫, ১২:১০ এএম | আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ১২:১০ এএম

শিশুরাই দেশের ভবিষ্যৎ। এই আপ্তবাক্যটি দেশ স্বাধীনতা লাভের পর বিভিন্ন নেতা, উপনেতা, পাতিনেতার মুখে বার বার উচ্চারিত হয়েছে। কিন্তু এই দেশের ভবিষ্যৎ শিশুদের নিয়ে কতটুকু ভাবনা চিন্তা হয়েছে এ প্রশ্ন এসে যাচ্ছে যখন কোনও এক সংবাদের শিরোনাম দেখছি শিশুর মৃত্যুর হার রোধ করতে ব্যর্থ সরকার। ওই সংবাদে ইউনেস্কোর সদ্য প্রকাশিত এক সমীক্ষার উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রাথমিক শিক্ষা সর্বজনীনকরণের পথে সবচেয়ে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে শিশুদের পুষ্টিহীনতা। এ দেশে পাঁচ বছরের অনূর্ধ এক তৃতীয়াংশ শিশুই ভুগছে পুষ্টিহীনতায়। আর এই অপুষ্টির শিকার হয়ে বছরে লক্ষ লক্ষ শিশুর জীবনের কলি ফুল হয়ে ফোটার আগেই ঝরে পড়ছে। ইউনেস্কোর ওই সমীক্ষায় বলা হয়েছে, দেশে অর্থনৈতিক বিকাশের হার এখন উন্নত কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় শিশু মৃত্যুর হার ও পুষ্টিহীনতার ক্ষেত্রে ভারত এবং নেপালেরও পেছনে পড়ে আছে এই দেশ। কিন্তু শিশুদের পুষ্টিহীনতা দূর করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ যেভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে এগোচ্ছে তার পরিণতি শোচনীয় হতেই পারে।
আর তাই যদি হয় তবে দেশের ৯৯ শতাংশ শিশুকে বিদ্যালয়ে ভর্তি করা সম্ভব হলেও অপুষ্টির শিকার এই কঙ্কালসার ছানাপোনারা কি দীর্ঘকাল বিদ্যালয় আলো করে বসে থেকে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবে? তাই ওই সমীক্ষাতেই আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়েছে-উদ্ভূত এ ধরনের পরিস্থিতিতে কোটি কোটি শিশু প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হবে। আর একই সময়ে পাকিস্তানে মাত্র ৩.৭ মিলিয়ন শিশুর প্রাথমিক শিক্ষালাভের পথ এই অপুষ্টিগত কারণে রুদ্ধ হবে।
কিন্তু প্রশ্ন দাঁড়াচ্ছে, চিকিৎসা বিজ্ঞানের অভূতপূর্ব অগ্রগতির ছোঁয়া বাংলাদেশেও এসে পৌঁছার পরও আমাদের সরকার তার সুযোগ নিয়ে শিশুদের এই ব্যাপক পুষ্টিহীনতা রোধ করতে পারছে না কেন? ইউরোপ, আমেরিকা, এমনকী মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতেও আজ শিশুদের সুস্বাস্থ্য উজ্জ্বল চেহারা দেখে আমরা মুগ্ধ হচ্ছি। বলাবাহুল্য, চিকিৎসা বিজ্ঞানের সর্বাধুনিক আবিস্কারের সুযোগ-সুবিধাকে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়েই শিশুদের অপুষ্টি দূর করে ঝলমল স্বাস্থ্যজ্জ্বল করে তোলা সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু আমাদের দেশের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিভাগুলো শিশুদের স্বাস্থ্য নিয়ে যে খুব কমই কাজ করতে পেরেছে, স্বাধীনতার এত বছর পরও দেশের শিশুমৃত্যুর এই ভয়ঙ্কর হার তাই প্রমাণ করছে।
আমাদের দেশে উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে শিশুদের অপুষ্টির এবং শিশুমুত্যুর হার হতাশাব্যঞ্জক। ইউনিসেফ এ দেশের শিশুদের স্বাস্থ্য সম্পর্কিত কর্মসূচিতে ব্যাপকভাবে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া সত্ত্বেও শিশুমৃত্যুর হার উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে চতুর্থ স্থানে রয়েছে। ২০০৭ সালের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, দেশে জীবিত জন্মগ্রহণ করা ১০০০ শিশুর মধ্যে ৬৬ টি শিশুই অকালে মারা যায়। ২০২৫ সালেও এই হার কমা তো দূরে থাকুক, বিশেষজ্ঞদের ধারণা-বেড়েছে। ভবিষ্যতের উজ্জ্বল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হলে আজকের এই অপুষ্টির ভোগা কঙ্কালসার শিশুদের স্বাস্থ্যে ঝলমল করার উদ্যোগে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে নিতে হবে। ইউনেস্কো সেই দৃষ্টিকোণ থেকেই আরও অধিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছে। শিশুমৃত্যুর হার কমাবার লক্ষ্যে জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য অভিযানকে সহায়তা দিচ্ছে তারা। তাদের এই কর্মসূচিতে রয়েছে দেশের ক’টি বড় বড় হাসপাতালে শিশুদের সেবাযতেœর জন্য বিশেষ ইউনিট স্থাপন। এর আগে দেশের মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলোতে ইউনেস্কোর সহায়তায় এই বিশেষ নিউবর্ন চাইল্ড হেলথ কেয়ার ইউনিটগুলো কাজ করছিল। সেগুলোও চালু থাকবে।
ইউনেস্কোর সহায়তায় এই যে নবজাত শিশুদের জন্য বিশেষ কেয়ার ইউনিটের কাজ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলোতে এতদিন চলেছে-সে খবর দেশের অধিকাংশ মানুষই জানেন না। কারণ এ ব্যাপারে গণসচেতনতা গড়ে তোলার জন্য সরকারের যে বিশাল কর্মযজ্ঞের প্রয়োজন ছিল, তা করা হয়নি। ফলে হাসপাতালগুলোতে নবজাতকরা সেসব সহায়তা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এখন দেশের আরও ক’টি বড় হাসপাতালে এই কার্যসূচি সম্প্রসারিত করা হচ্ছে। এখনও যদি সরকার এ ব্যাপারে গণসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য বিশেষভাবে সচেষ্ট না হয় তবে দেশে শিশুদের অকাল মৃত্যুর হার আরও বাড়বে বই কমবে না।
পাশাপাশি এই বিশেষ নবজাতকদের স্বাস্থ্য ও যতœ সম্পর্কিত কর্মসূচি বাবদ যে শত শত কোটি টাকা বরাদ্দ হয়, এ নিয়েও দুর্নীতি চলছে বলে অভিযোগ রয়েছে। যে দেশে শিশুদের দুপুরের আহারের বরাদ্দ চালও কালোবাজারে বিক্রি করে দেওয়া হয়, সে দেশে হাসপাতালে শিশুদের যতেœর টাকা নিয়েও ব্যাপক নয়ছয় তো আরও সহজ-সরল ব্যাপার। এসব দুর্নীতি প্রতিরোধে সরকারকে কঠোর ও বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রয়োজনে দুর্নীতিগ্রস্ত বলে অভিযুক্ত কর্মকর্ত- কর্মীদের ব্যাপকহারে ছাঁটাই করেও সরকারকে অন্তত শিশুদের স্বাস্থ্যোজ্জ্বল হয়ে গড়ে ওঠার পথকে কন্টকহীন করতেই হবে। অন্যথায় অপুষ্টিতে ভোগা কঙ্কালসার আজকের শিশুরাই যদি আগামীতে প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক হয়ে দেশের হাল তবে তা কারও জন্যই মঙ্গল বয়ে আনবে না।
হ আফতাব চৌধুরী
সাংবাদিক-কলামিস্ট।
বিভাগ : স্বাস্থ্য
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন

দুদকের মামলা : আমানউল্লাহ আমান ও তার স্ত্রীর দন্ডাদেশ বাতিল

অন্তর্বর্তী সরকারের ভুল সিদ্ধান্তে অর্থনীতি আরো সঙ্কটে পড়েছে : রিজভী

বাংলাদেশ-মিয়ানমার একমত হলে করিডোর চালু করতে পারে জাতিসংঘ

কলকাতায় হোটেলে আগুন নিহত ১৪

ইউক্রেন খুব শিগগিরই ‘ধ্বংস’ হবে: ট্রাম্প

টঙ্গীতে বকেয়া বেতনের দাবিতে মহাসড়কে অবরোধ

প্রশ্ন : ঈদের বাজারে জীনদের বাজার করা প্রসঙ্গে।

ভ্যান চালক হত্যাচেষ্টা: অভিনেতা সিদ্দিকের ৭ দিনের রিমান্ডে

রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা ছাড়া রাখাইনে মানবিক করিডোর দেয়া থেকে বিরত থাকুন

প্রোটন বাজারে আনল দেশীয় অ্যাসেম্বল এক্স৭০ এসইউভি গাড়ি

হজযাত্রীদের জন্য বাংলাদেশি টাকায় রবির রোমিং প্যাকেজ

উত্তরপ্রদেশে মুসলিম ছাত্রের উপর অমানবিক অত্যাচার

দেশের স্থিতিশীলতার জন্য দ্রুত নির্বাচন চায় বিএনপি: কাজী শিপন

ফেনীতে প্রধান উপদেষ্টার আবাসন পেল বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ১০০ পরিবার

বিএনপির তৃণমূলের কর্মীদের কাছে পরীক্ষা দেওয়া ছাড়া কেউ নেতা হওয়ার সুযোগ নাই: আবুল কালাম

বিরামপুর হাসপাতালে দুদকের অভিযান, পেয়েছে নানা অনিয়ম

মাছ রক্ত,স্মৃতি ও দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়

এই গরমে ত্বকের রোগ

ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে চাই সচেতনতা

পান সুপারি ক্ষতিকর