ফ্লোর প্রাইস তুলে দিতে চাই
১১ জুলাই ২০২৩, ১০:২২ পিএম | আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৩, ১২:০০ এএম
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেছেন, তারল্য সংকট পুঁজিবাজারে সমস্যা তৈরি করেছিল। তারল্য সংকট কমতে শুরু করেছে, তাই পুঁজিবাজারেও সমস্যা কমছে। গতকাল রাজধানীর পুরানা পল্টনে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরামের (ইআরএফ) অডিটোরিয়ামে পুঁজিবাজার নিয়ে আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, তারল্য কমে যাওয়ার কারণে ব্যাংকগুলো এলসি খুলতে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ সীমার ২৫ শতাংশের ১২/১৩ শতাংশ নামিয়ে এনেছিল; পুঁজিবাজার থেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। ব্যাংকগুলোতে তারল্য বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে তারা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ বাড়িয়ে আবার ১৬ শতাংশ করেছে। কোনো কোনো ব্যাংকের বিনিয়োগ ১৯ শতাংশ পর্যন্ত উঠেছে। এখন বিদেশি বিনিয়োগুলোও আসছে, আরও আসবে।
তিনি বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমেছিল, আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। কয়েকদিন আগে ৩১ বিলিয়ন ডলারে উঠেছিল। আকুর বিল পরিশোধ করার পর ৩০ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে। আবার বাড়বে। এর প্রভাব বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে পড়বে। ডলারের বিনিময় হার ৮৫ টাকা থেকে ১১০ টাকার কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে, ডলারের সরবরাহ বেড়ে গেলে আস্তে আস্তে ৯০ টাকাতে নেমে আসবে। তখন জিনিষপত্রের দাম কমে আসবে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়বে। পুঁজিবাজারেও এর প্রভাব পড়েবে। বিএসইসি চেয়ারম্যান বলেন, পুঁজিবাজার ওঠানামা করলে লাভের সুযোগ বেশি থাকে। সব সময় যদি ভালো থাকে, তাহলে লাভ হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
প্রফেসর শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম বলেন, বেশিরভাগ বিনিয়োগকারীরা আমার কাছে জানতে চান ফ্লোর প্রাইস কবে উঠবে। আমি বলছি, আমি ফ্লোর প্রাইজের পক্ষে না। কিন্তু ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থরক্ষায় ফ্লোর প্রাইজ আরোপ করেছি। আমি ফ্লোর প্রাইস তুলে দিতে চাই, ফ্লোর প্রাইস যত দ্রুত সম্ভব তুলে দেব। তবে বাজারে ফ্লোর প্রাইস তোলার মতো পরিস্থিতি হতে হবে। বিনিয়োগকারীদের পুঁজি নিরাপদ হলে আমি ফ্লোর প্রাইস তুলে দেব। তিনি বলেন, শেয়ারবাজারের জন্য বিদেশি বিনেযোগ খুবই জরুরি। কিন্ত বিদেশি বিনিয়োগের পথে বাধা নেতিবাচক প্রচারণা ও নেতিবাচক ইমেজ। বিদেশিরা মনে করে বাংলাদেশ ঝড়-ঝঞ্ঝা, বন্যা, রাজনৈতিক অসেন্তাষের দেশ। কিন্তু যখন আমরা রোড শো করেছি তখন বিষয়টি জানার পর তারা বলেছে, বাংলাদেশ সম্পর্কে তাদের ধারণা বদলে গেছে। তারা বলেছে, বাংলাদেশ সম্পর্কে সাম্প্রতিক সময়ের ধারণা নেই।
এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান এস এম পারভেজ তমাল বলেন, সিঙ্গাপুর, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের পুঁজিবাজার, সেই দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের অবদান রাখছে। কিন্তু আমাদের দেশের পুঁজিবাজার সেই তুলনায় অর্থনীতিতে অবদান একেবারেই কম। ফ্লোর প্রাইস নিয়ে সমালোচনা করে তিনি বলেন, বিশ্বের সব দেশের পুঁজিবাজারে ভালো ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত হয় ব্লুচিপ কোম্পানি। আমাদের দেশের পুঁজিবাজারে ভালো ভালো কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করে এখন আমি হতাশ। তিনি বলেন, ফ্লোর প্রাইসের কারণে এই শেয়ারগুলোতে বিনিয়োগ করে আটকে আছি। প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও কেনা-বেচা করতে পারছি না। দেশের অনেক অলস টাকা পড়ে আছে। এই টাকা পুঁজিবাজারে নিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে পারভেজ তমাল বলেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের নিশ্চয়তা পেলে নতুন করে বিনিয়োগকারীরা বাজারে আসবে। সেজন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা সব সবাইকে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের নিরাপত্তা দিতে হবে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান হাফিজ মোহাম্মদ হাসান বাবু বলেন, সামনে জাতীয় নির্বাচনকে উদ্দেশ্য করে আমাদের পুঁজিবাজার যাতে পতনের দিকে না যায়, আমরা উত্থানটাকে যেন সুন্দরভাবে ধরে রাখতে পারি, সেই প্রেক্ষাপটে সবাই কাজ করছি। চেয়ারম্যান বলেন, নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে প্রতিটি দেশে মানুষের একটা চিন্তা থাকে। সামনে রাজনৈতিক একটা অবস্থান রয়েছে। হয়ত বিনিয়োগকারীদের মধ্যে একটা সংশয় থাকে, অনেকে হয়ত দ্বিধাগ্রস্ত থাকেন। তারপরও আমি বলব, বাংলাদেশের ক্যাপিটাল মার্কেট এখনো সুন্দর অবস্থানে আছে। দেশের পুঁজিবাজারে চারটি চ্যালেঞ্জ রয়েছে উল্লেখ করে ডিএসই চেয়ারম্যান বলেন, এর মধ্যে রয়েছে বাজারের গুণগত সম্প্রসারণ নিশ্চিত করা, পণ্য বৈচিত্র্য করা, বিনিয়োগকারী বৈচিত্র্য করা ও সুরক্ষা এবং রেগুলেটরি বিষয়।
অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ড অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট হাসান ইমাম বলেন, পুঁজিবাজার বর্তমানে যে অবস্থায় রয়েছে সে অবস্থা থেকে আগামী ছয় মাস পর ভালো হবে, ঘুরে দাঁড়াবে। এখন দরকার বিশেষ বিশেষ পণ্য দিয়ে বাজারকে সাজানো, আমরা সেই লক্ষ্যে মিউচ্যুয়াল ফান্ড নিয়ে কাজ করছি। তিনি বলেন, লম্বা সময় উত্থান হলে পতন হবে এটাই স্বাভাবিক। ফ্লোর প্রাইস দেয়ার কারণে ভালো ভালো কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেও ব্রোকার হাউজ এবং প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও আটকে আছি। আমরা নির্ধারিত কোম্পানির শেয়ার বিক্রি করতে পারছি না। ফলে তারল্যের অভাবে ওষুধ, ব্যাংক, বিমা কোম্পানির শেয়ারের বিনিয়োগও করতে পারছি না। গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ক্যাপিটাল মার্কেট স্ট্যাবিলাইজেশন ফান্ডের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ইআরএফের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম। এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইআরএফের সভাপতি রেফায়েত উল্লাহ মৃধা। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন ইআরএফ’র সদস্য মুহাম্মদ মোফাজ্জল। আরও বক্তব্য রাখেন সিএসই’র চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহিম।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
মানববন্ধন থেকে অতিরিক্ত ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি খেলাফত আন্দোলনের
মাদারীপুরে আইনজীবীদের শীতকালীন ক্রিকেট খেলা
কমলনগরে হার্ভেস্টার মেশিনের ধাক্কায় শিশু নিহত
পদ ফিরে পেলেন মির্জাপুর উপজেলা কৃষক দল আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর মৃধা
রেস্তোরাঁর নামেও এস আলম ঋণ নেয় ২৩৪ কোটি টাকা
ঝিনাইদহে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় দুই এসএসসি পরীক্ষার্থী নিহত
টিউলিপের পদত্যাগ: এবার তোপের মুখে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী
দৌলতপুরে ইউসুফ হত্যা মামলায় গ্রেফতার ২
চবি প্রশাসনের শুভবুদ্ধি কামনায় 'হেদায়েত' সভা
যুক্তরাষ্ট্রে সরকার পরিবর্তনে আমাদের সম্পর্ক হোঁচট খাবে না: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
বাগমারায় বাঁইগাছা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের মানববন্ধনে হামলা
ভুয়া ‘ব্র্যাড পিট’-এর প্রেমে পড়ে ৯ কোটি টাকা খোয়ালেন ফরাসি মহিলা
কসবায় পাওনা টাকা নিয়ে কথা কাটাকাটিতে কিশোর খুন
সাবেক প্রেমিকের ছুরিকাঘাতে বর্তমান প্রেমিক খুন
ইবি শিক্ষার্থীকে মারধর, গড়াই ও রূপসা পরিবহনের পাঁচ বাস আটক
বেনাপোলে বিজিবি-বিএসএফের সেক্টর কমান্ডার পর্যায়ে সমন্বয় সভা
পুতুলকে ডব্লিউএইচও থেকে অপসারণে অনলাইনে স্বাক্ষর গ্রহণ চলছে, ব্যাপক সাড়া
বরেন্দ্র অঞ্চলে কৃষি, সেচ ও সার্বিক উন্নয়ন বিষয়ক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত
সোনারগাঁও পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গ্রেপ্তার
পুলিশের দুই এএসআই’য়ের মদ্যপ অবস্থায় অশ্লীল নৃত্য ভাইরাল: বিভাগীয় মামলার প্রস্তুতি