ফেনীতে বন্যায় সড়ক-কৃষি ও মৎস্য খাতে ব্যাপক ক্ষতি
১৯ আগস্ট ২০২৩, ১০:২৭ পিএম | আপডেট: ২০ আগস্ট ২০২৩, ১২:০১ এএম
টানা বর্ষণ ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকায় চলতি মাসের প্রথম দিকে ফেনীর ফুলগাজী-পরশুরাম উপজেলায় এবারের বন্যা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছিল। চলতি মৌসুমের এটি ছিল প্রথম দফা বন্যা। দুই উপজেলার ১৫টি গ্রাম প্লাবিত হয়, পানিবন্দি হয়ে পড়ে ৫০ হাজার মানুষ। এতে নদীর তীরবর্তি বসবাসরত মানুষের ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে পানি ওঠে গেলে শিক্ষার্থীরা কয়েকদিন স্কুলে যেতে পারেনি, রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় দুই উপজেলার সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এছাড়াও কৃষকের রোপা আমন ও বীজতলা পানির নিচে তলিয়ে যায়, শতশত পুকুরের মাছ ভেসে যায়, এতে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত ও মৎস্যচাষীরা লোকসানের মুখে পড়েন। সবমিলিয়ে বিপর্যস্ত ছিল বন্যা দুর্গত এলাকার মানুষ।
এক সপ্তাহ আগে বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় এখন ভেসে উঠেছে ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন।
গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মুহুরী নদীতে পানি কিছুটা বেড়েছে। স্থানীয় লোকজন জানায়, গত দুইদিন আগে উজানে বৃষ্টি হলে ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের উত্তর দৌলতপুর এলাকায় নদীর ভাঙাবাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে যায়। পরে রাতে আবার কমে যায়। গত ৬ আগস্ট ভোরে উত্তর বরইয়া ও উত্তর দৌলতপুর অবস্থিত মুহুরী নদীর দুই স্থানে বাঁধ ভেঙে যায়। বন্যার পানি চলে যাওয়ার ১৩ দিন অতিবাহিত হলেও নদীর বাঁধের ভাঙনস্থানগুলো এখনো জরুরি মেরামত করতে পারেনি ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ। নদীর ভাঙনস্থানে কিছু মাটিবর্তী বস্তা, বাঁশ ও গাছ ফেলে রাখা হয়েছে। নদীতে পানি বাড়লে ভাঙা বাঁধ দিয়ে পানি ঢুকে বির্স্তীর্ণ অঞ্চল পুনরায় প্লাবিত হবার সম্ভাবনা রয়েছে। এ নিয়ে চরম দুর্শ্চিন্তায় রয়েছে স্থানীয় এলাকাবাসী।
উত্তর দৌলতপুর গ্রামের বাসিন্দা সিরাজ মিয়া বলেন, বন্যার পানি নেমে গেছে কয়েকদিন হয়ে গেছে কিন্তু নদীর ভাঙা বাঁধ মেরামতের কাজের কোনো অগ্রগতি নেই। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত শেখ রাসেল সড়কটি এ গ্রামের মানুষের চলাচলের একমাত্র রাস্তা কিন্তু এখনো রাস্তাটি জরুরি ভিত্তিতে মেরামত না করায় মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছেন। উত্তর বরইয়া এনামের বাড়ির পাশের বাসিন্দা বৃদ্ধ নুরশাদ আহাম্মদ বলেন, আমি তিনকানি জমিতে এবার আমনের চারা রোপন করেছি, বন্যায় সব নষ্ট হয়ে গেছে। পুকুরে মাছ ছিল সব চলে গেছে। তিনি বলেন, সরকার যেন এ নদীর শাসনের ব্যবস্থা করে এবং নদীর টেকসই বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সেলিম বলেন, বন্যায় আমাদের এলাকায় রাস্তাঘাট, পোল কালভার্ট, কৃষকের কৃষি জমি ও পুকুরের মাছ ভেসে গিয়ে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। নদী শাসন না করা এবং নদীর থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে মূলত নদীর বাঁধে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। যানবাহন ও জনসাধারণের চলাচলের সুবিধার্থে ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তার ছোটখাট জরুরি মেরামত কাজগুলো এলাকাবাসীসহ আমরা করে দিয়েছি, বাকি কাজ এলজিইডি করবে।
উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) সৈয়দ আসিফ মুহাম্মদ ইনকিলাবকে বলেন, বন্যায় ফুলগাজীর দুটি ইউনিয়নে ৯টি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার মধ্যে ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের উত্তর দৌলতপুরে শেখ রাসেল সড়ক, গনিয়ামোড়া-জয়পুর সড়ক, পূর্ব ঘনিয়ামোড়া সড়ক, পূর্ব ঘনিয়ামোড়া সড়ক (কামরুল মিয়া বাড়ি) ফুলগাজী বক্সমাহমুদ রোড, ঘনিয়ামোড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় সড়ক, সমির বণিক হাউজ-এয়ার আহমেদ ডিলার হাউজ সড়ক, ফতেহপুর বসন্তপুর বরইয়া ফুলাগজী সড়ক। আমজাদ ইউনিয়নে উত্তর ধর্মপুর (আরএইচডি রোড) শনির হাট সড়ক ও জগতপুর-মনিপুর সড়ক। এসব সড়কের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ধরা হয়েছে আনুমানিক ৩ কোটি ১৮ লক্ষ টাকা। আমরা সড়কগুলো সম্পর্কে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। দ্রুত সড়কগুলো মেরামতের জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হবে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা উজ্জ্বল বণিক জানান, উপজেলা পর্যায়ে মৎস্যখাতে কোনো ধরনের ত্রাণ সহায়তা বা তহবিল পাওয়া যায় না। সে অনুযায়ী বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মৎস্যচাষীদেরকে পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা দেওয়া যায় না। ফুলগাজী উপজেলায় এবারের বন্যায় ৪৫ হেক্টর আয়তনের ৩৫০টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। এতে বন্যা পরবর্তী মৎস্যখাতে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় আনুমানিক প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাসুদ রানা বলেন, উপজেলায় এবার মোট ৬ হাজার ২১০ হেক্টর আবাদি জমিতে আমনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এবারের বন্যায় ১২০ হেক্টর আবাদি জমিতে রোপা আমনের ক্ষতি হয়েছে। ৫ হেক্টরের মতো সবজি আবাদের ক্ষতি হয়েছে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা রোপা আমনের চারা সংগ্রহ করে পুনরায় রোপন করছেন। কারণ এখন আর নতুন করে বীজতলা তৈরি করার সময় নেই, যে যেখান থেকে পারছেন আমনের চারা সংগ্রহ করে রোপনকার্যে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আমরা কৃষকদেরকে প্রণোদনা দেওয়ার বিষয়ে বলেছিলাম কিন্তু কৃষকরা এ ব্যাপারে রাজি হয়নি।
ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. আরিফুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, ফেনী জেলা প্রশাসক, চীপ ইঞ্জিনিয়ার ও এসি মহোদয়ের পরামর্শক্রমে জরুরি ভিত্তিতে নদীর বাঁধের ভাঙনস্থানের প্রাথমিক মেরামত কাজ গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছে।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন, সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারের ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ অনির্দিষ্টকাল হতে পারে না: ড. মোশাররফ
টিকটক ও ক্যাপকাটকে টক্কর দিতে মোক্ষম চাল মেটার!
৩৩ বছরের পুরনো পত্রিকা ‘ভোরের কাগজ’ বন্ধের ঘোষণা
তারেক রহমান ৩১ দফা দিয়েছে হাসিনার মত স্বৈরাচার সরকার আর যাতে আসতে না পারে - ব্যারিস্টার মীর হেলাল
ফেরার সময় তিন ইসরাইলি বন্দীকে কী উপহার দিল হামাস?
মানুষকে স্বস্তি দিতে অন্তবর্তীকালীন সরকার ব্যর্থ হচ্ছে : আমিনুল হক
পিঠার নাম হৃদয়হরণ, মুখচাহনি
শেরপুরে জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শীতার্তদের মাঝে যুবদলের কম্বল বিতরণ
গুরুদাসপুরে চিরকুট লিখে চুরি হচ্ছে বাণিজ্যিক মিটার
রাজনীতিতে স্লোগান নয়, মেধা ও বুদ্ধির প্রতিযোগিতা চলছে: মির্জা ফখরুল
মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেলেন সৈয়দপুর বিজ্ঞান কলেজের ৫৩ শিক্ষার্থী
হজ ও ওমরাহ যাত্রীদের বিশেষ নির্দেশনা শাহজালাল বিমানবন্দরের
দলে মেধাবীদের দেখতে চান তারেক রহমান
গাজীপুর মহানগর বিএনপির উদ্যোগে শহীদ জিয়াউর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে আলোচনা সভা
শরণখোলায় হোলি কুরআন অ্যাওয়ার্ড ও হিফজুল কুরআন প্রতিযোগীতা অনুষ্ঠিত
ইসরাইল ছাড়া অন্য কোন দেশের জাহাজে হামলা করবে না হুথিরা
ডোনাল্ড ট্রাম্পকে শুভ কামনা জানালেন ড. ইউনূস
সুন্দরগঞ্জে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যা, স্বামীর মৃত্যুদণ্ড
নিকলীতে যুবলীগ নেতা গ্রেফতার