পুলিশ পাহারায় যুবলীগ নেতার ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ
২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০১ এএম | আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০১ এএম
রাত গভীর হলেই খবর আসে ডাকাতি কিংবা চুরির। রয়েছে কিশোর গ্যাংদের উৎপাত। ঘটে মারামারিসহ পুলিশের ওপর হামলার ঘটনাও। তবে অধিকাংশ সময়ে জনবল সংকটে ঘটনাস্থলেই পৌঁছতেই হিমশিম খেতে হয় পুলিশকে। অথচ যুবলীগ নেতার ব্যবসা বাঁচাতে ব্যস্ত আশুলিয়া থানা পুলিশ। ভোর থেকে পোশাক কারখানার ভিতরে কড়া পাহারা দিচ্ছেন থানা পুলিশের একাধিক উপপরিদর্শক। অভিযোগ রয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে হামলায় অংশগ্রহণ করা যুবলীগ নেতার ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে যেন এতো আয়োজন। গত তিন দিন ধরে চলছে পুলিশ পাহারায় চলছে যুবলীগ নেতার ঝুট স্থানান্তরের কাজ।
জানা যায়, গত ৫ আগস্টের পর পর আশুলিয়ার জামগড়া এলাকার প্রীতি গ্রুপের একটি কারখানার ঝুট ব্যবসা দখলের নেয় ইয়ারপুর যুবলীগেরসহ সভাপতি রনি ভূইয়ার বাবা বকুল ভূইয়া। বেশকিছু দিন ধরে বন্ধ থাকলেও আবার শুরু হয় ঝুট স্থানান্তর কাজ। গত ২১ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় সে প্রক্রিয়া। তিন ধরে চলছে ঝুট লোড আনলোডের কাজ। অন্য কোনো দলের বাধা রোধে উপস্থিত ছিলেন ব্যাপক পুলিশ প্রশাসন।
এ নিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গেল কয়েকমাস আশুলিয়ার শিল্প কারখানায় শ্রমিক অসন্তোষ চলাকালে ব্যপক তৎপরতা ছিল ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ। তার সাথে নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছে যৌথবাহিনীর সদস্যরা। এদিকে থানা পুলিশের অংশগ্রহণ ছিল অনেকটাই নিরব ভূমিকায়। তবে সম্প্রতি একটি কারখানার ঝুট ব্যবসা নিয়ে নিরাপত্তা দিতে ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় থানা পুলিশের। থানার দৈনিক ডিউটি চার্ট থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী গত ২১ ডিসেম্বর ভোর থেকে আশুলিয়া থানার উপপরিদর্শক রমজান আলীর নেতৃত্বে আরো তিন উপপরিদর্শক ও এক সহ উপ-পরিদর্শক। সাথে ছিলেন প্রায় ১৫ জন থানা পুলিশ সদস্য। ২২ ডিসেম্বরও ছিল ৫ জন উপ-পরিদর্শক ও একজন সহ উপ-পরিদর্শক। নিরাপত্তায় ২৩ ডিসেম্বর ছিলেন দুই উপ-পরিদর্শক ও এক সহ উপ-পরিদর্শক। তবে পুলিশের উপস্থিতিতেই গ্রুপের কারখানার সামনেই শিল্প পুলিশের এক গোয়েন্দা সদস্যদের ওপর হামলা হয়। ঘটে যায় ঝুট বোঝাই ট্রাক ছিনতাইয়ের ঘটনাও। মারধরের ঘটনায় দুজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এক ঘণ্টার মধ্যেই উদ্ধার করা হয় ছিনতাই হওয়া ট্রাক। তবে তিন দিন প্রীতি গ্রুপের এস সূহী ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক লিমিটেডের প্রধান ফটকের ভিতরে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত অবস্থান নিয়ে আছে পুলিশ।
এদিকে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, যুবলীগ নেতা রনি ভাইয়া গত ৪ ও ৫ আগস্টে ছাত্র-জনতার ওপর সরাসরি হামলায় দায়ে গ্রেফতার হয় আশুলিয়া থানায়। আন্দোলন দমাতে ব্যবহার করেছেন বিদেশি অস্ত্র। শুধু তাই নয় বিদেশী অস্ত্র র্যাবের হাতে বেশ কয়েকবার গ্রেফতারের তথ্য পাওয়া যায়। এছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলি চালিয়ে হত্যা, হত্যা চেষ্টা, মারধর ও অস্ত্রসহ ১১টা মামলার আসামি সে। এরমধ্যেই ৮টি হত্যাচেষ্টা, একটি সন্ত্রাসী হামলা ও মারধর, একটি অস্ত্র, একটি হত্যা মামলা রয়েছে। এছাড়াও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে রয়েছে অসংখ্য অভিযোগ। সম্প্রতি পুলিশের হাতে গ্রেফতার হলেও জামিনে বের হয়। এরপর থেকে পুনরায় জামগড়া এলাকায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ঝুট ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করছেন কিশোর গ্যাং সদস্যদের। অভিযোগ রয়েছে জনসম্মুখে বিদেশী অস্ত্র ব্যবহারে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক উপ-পরিদর্শক বলেন, ২১ ডিসেম্বর ভোর থেকে জামগড়া এলাকার প্রীতি গ্রুপের কারখানার সামনেই অবস্থান নেয় পুলিশ। থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক রমজান আলীর নেতৃত্বে উপস্থিত ছিলেন সেখানে। তিন ধরে নিয়মিত ডিউটি ছিল। প্রথম দিনে বিপরীত পক্ষের হামলার ঘটনায় শিল্প পুলিশের এক সদস্য আহত হয়েছে। মূলত ঝুট ব্যবসা নিয়ে কোনো অরাজকতা তৈরি না হয় এই জন্যই পুলিশ ছিল।
প্রীতি গ্রুপের নিরাপত্তাকর্মী ওমর ফারুক দায়িত্বরত ছিলেন সেদিন। তিনি বলেন, আমি সেদিন দুপুরের পর কারখানায় আসি। পরে জানতে পুলিশ এসেছে। গেটের সামনে মারামারি হয়েছে। আমরা তো পুলিশ ডাকেনি। অন্য কেউ ডাকতে পারে। এছাড়া আমরা তেমন পুলিশের পাহারা দেখি নাই।
কারখানার সামনে অবস্থিত বেশ কয়েকটি মুদি দোকান রয়েছে। তাদের সামনেই ঘটেছে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা। গত ৫ আগস্টের পর খুব কম পুলিশ এই কারখানার পিছনের গেইটে এসেছে। সেদিন সকাল থেকে পুলিশ ও আগের দিন রাত থেকে বহিরাগতরা অবস্থান নেন। সকালে একটি লেগুনা করে একদল পুলিশ আসে। তারা এখানে খিচুড়ি খায়। পরে তাদের সাথে যোগ দেয় আরো অনেক পুলিশ। পরবর্তীতে কয়েকটি ট্রাক ভিতরে প্রবেশ করে। এসময় দেশীয় অস্ত্র নিয়ে প্রতিপক্ষ একটি এসে বাধা দিতে চায়। কিন্ত পুলিশ নিয়ন্ত্রণে নিতে সক্ষম হয়। সকাল সাড়ে এগারোটা দিকে পুলিশের ওপর হামলা হয়। এ সময় কয়েকজনকে ধরে নিয়ে যায়। তবে কে ঝুট বের করছে তার নাম বলতে ইচ্ছুক নয়।
এই কারখানাটির একজন কর্মকর্তা তার নাম প্রকাশ না করতে অনুরোধ করেন, সে বলেছেন, গত ৫ আগস্টের পর বকুল ভূইয়া নামে এক ব্যক্তি কারখানা কর্তৃপক্ষের সাথে ঝুট নিয়ে একটি ডিল ফাইনাল করেছেন। সে জন্য গত ২১ ডিসেম্বর সকাল থেকে মালামাল নামানোর কাজ শুরু করে। এ সময় বকুল ভূইয়ার ছেলে রনি ভূইয়া সেখানেই উপস্থিত ছিলেন।
কারখানা কর্তৃপক্ষের চাহিদা অনুযায়ী পুলিশ আনা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা কোনো পুলিশকে খবর দেয়নি। ২১ ডিসেম্বর আগে থেকেই নির্ধারিত ছিল ঝুট আনলোডের। তাই তারাই বহিরাগত ও পুলিশ এনেছে। আমাদের সাথে পুলিশের কোনো কথা হয়নি।
যুবলীগ নেতার ঝুট স্থানান্তরের সময় নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক রমজান আলী সাথে এ বিষয়ে কথা বলতে চাইলে সে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলার অনুরোধ করেন।
এ ব্যাপারে জানতে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
বান্দরবানে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টার নিন্দা, পুড়ে যাওয়া ঘরগুলো নির্মাণের নির্দেশ
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সচিবালয়ের ক্ষতিগ্রস্ত ভবন পরিদর্শনে উপদেষ্টারা
গাজায় যুদ্ধবিরতি বিলম্বে পাল্টাপাল্টি দোষারোপ হামাস-ইসরায়েলের
ফায়ার ফাইটার নয়নের জানাজা বাদ জোহর, অংশ নেবেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
সচিবালয়ের আগুন লাগা ভবনেই উপদেষ্টা নাহিদ-আসিফের মন্ত্রণালয়
সচিবালয়ে প্রবেশ করতে শুরু করেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা
চাঁদপুরে দুই উপজেলার মধ্যবর্তী সেতু ভেঙ্গে পড়েছে
রাজধানীর মোহাম্মদপুরে বাস মালিককে কুপিয়ে হত্যা
মোজাম্বিকে কারাগারে ভয়াবহ দাঙ্গায় নিহত ৩৩, দেড় হাজার বন্দির পলায়ন
কেনাকাটার সময় আমরা সাধারণত যে ভুলগুলো করি
মিরপুরে সাংবাদিকদের ২১ বিঘা জমি এখনও ইলিয়াস মোল্লাহর দখলে!
রংপুরে আওয়ামী লীগ নেতা মিলন গ্রেপ্তার
ইসরায়েলি বর্বরতা চলছেই, গাজায় নিহত বেড়ে প্রায় সাড়ে ৪৫ হাজার
সচিবালয়ের সামনের সড়কে যান চলাচল বন্ধ, নিরাপত্তা জোরদার
সচিবালয়ে আগুনের ঘটনায় তদন্ত কমিটি হবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
৪২ ঘণ্টা পর কর্ণফুলী নদীতে মিলল নিখোঁজ ২ পর্যটকের মরদেহ
পশ্চিম তীরে ইসরাইলের ড্রোন হামলা, নারীসহ ৮ ফিলিস্তিনির মৃত্যু
সরকারকে ব্যর্থ করার ষড়যন্ত্রে জড়িতদের বিন্দু পরিমাণ ছাড় নয়: আসিফ মাহমুদ
ভারতে শঙ্করাচার্যের সাথে সাক্ষাৎ করে হস্তক্ষেপ চাইলেন একদল বাংলাদেশি হিন্দু
অবশেষে সচিবালয়ে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে