ঢাকা   শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারি ২০২৫ | ১০ মাঘ ১৪৩১

সব ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই যেন অব্যাহত থাকে : মাহমুদুর রহমান

Daily Inqilab কোর্ট রিপোর্টার :

২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:১৫ এএম | আপডেট: ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:১৫ এএম

দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেছেন, আমরা যদি প্রথম দিন থেকে প্রতিবাদ করতাম তাহলে ১৫ বছর ধরে ফ্যাসিবাদ সরকারের দ্বারা এতো জুলুম, গুম, খুন, বিচার বহির্ভূত হত্যাকা- হতো না। এভাবে রাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিল্লির কাছে বিসর্জন দেয়া হতো না। জণগণের কাছে আমার আহ্বান, আর কোনো ফ্যাসিবাদি সরকারকে দেশে জায়গা দিবেন না। সব ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই যেন অব্যাহত থাকে।

গতকাল সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে ও তার তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ করে হত্যা ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগে সাজাপ্রাপ্ত মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে করা আপিলের মামলায় রায় ঘোষণার জন্য আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করেছেন আদালত।

এ দিন দুপুরে ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজের বিচারক শেখ তারেক এজাজের আদালতে মাহমুদুর রহমানের সাজার বিরুদ্ধে আপিল বিষয়ে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। আপিল বিষয়ে শুনানি শেষে আদালত থেকে বাহির হয়ে সাংবাদিকদের মাহমুদুর রহমান বলেন, মামলা যখন করা হয় তখন আমি জেলে বন্দি ছিলাম। এ মামলার সঙ্গে কোনো রকম সংশ্লিষ্টতা নেই।

এই মামলা করার সময় আমি পত্রিকা অফিসে বন্দি ছিলাম। পত্রিকা অফিস পুলিশ, র‌্যাব ঘিরে রেখেছিল। এটাতে প্রমাণিত হলো একটা রাষ্ট্র কতটা নির্মম হতে পারে মিডিয়ার কণ্ঠরোধ করতে।

শেখ হাসিনার বিদায় হয়েছে। ফ্যাসিবাদের সঙ্গে আমার দেশের যে লড়াই, সম্পাদক হিসেবে আমার যে লড়াই সেটা অব্যাহত থাকবে। এই মামলাটি হয়েছিল শেখ হাসিনার পুত্র নিয়ে, এমন শতাধিক মামলা আমার বিরুদ্ধে আছে। শেখ হাসিনার বোনের মেয়ে টিউলিপকে নিয়ে ৩৬টি মামলা রয়েছে। এ রকম একটি মামলাতেই আমার ওপর হামলা করা হয়েছিল। আমি আল্লাহর রহমতে জীবিত আসতে পেরেছি। তবে ধরে নিচ্ছি এই যে লড়াই, যতদিন জীবিত আছি এই লড়াই চালিয়ে যাব ইনশাআল্লাহ।

তিনি আরো বলেন, তবে বাংলাদেশের জনগণকে এখান থেকে শিক্ষা নিতে হবে। যেন কোনো ফ্যাসিবাদ সরকারকে ওঠতে দেয়া না হয়। জনগণের প্রথম দিন থেকে প্রতিবাদ করা উচিত। আমরা যদি প্রথম দিন থেকে প্রতিবাদ করতাম তাহলে ১৫ বছর ধরে ফ্যাসিবাদ সরকার দ্বারা এতো জুলুম, গুম, খুন, বিচার বহির্ভূত হত্যাকা- হতো না। এভাবে রাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিল্লির কাছে বিসর্জন দেয়া হতো না। জণগণের কাছে আমার আহ্বান, আর কোনো ফ্যাসিবাদি সরকারকে দেশে জায়গায় দিবেন না। সব ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই যেন অব্যাহত থাকে।

তিনি বলেন, আশা করি, এই রায়ে আমি ন্যায় বিচার পাবো। কারণ ফ্যাসিবাদের পতন ও বিচারবিভাগ স্বাধীন হয়েছে। ইতোপূর্বে ফ্যাসিবাদের উত্থানের পক্ষে বিচার বিভাগের ভূমিকা রয়েছে। এটা বারে বারে প্রমাণিত হয়েছে। পরবর্তীতে বিচার বিভাগের সহযোগিতায় ফ্যাসিবাদের উত্থান ঠেকানো গেছে। আমি আশাবাদী, আদালতের কাছে ন্যায় বিচার পাবো।
এ সময় আসামী পক্ষের আইনজীবী তানভীর আহমেদ আল আমিন বলেন, এ মামলায় কোন্ সাক্ষ্য-প্রমাণের ওপর ভিত্তি করে দেয়া রায় হয়েছে তা প্রসিকিউসন দেখাতে পারেননি। সাক্ষ্য প্রমাণ বাদেই বিচারক মাহমুদুর রহমানের ৭ বছরের কারাদ-ের রায় দেন। কোন্ চাপে পড়ে বিচারক এ রায় দিয়েছেন তা উত্তর দিতে হবে। সাক্ষ্যের দিন বিচারক সাক্ষী জয়কে গাড়ি করে পৌঁছে দিয়েছেন। এতে বুঝতে বাকি থাকে না এটা পক্ষপাতিত্বমূলক মামলা।

গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার তৎকালীন অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুল হকের আদালতে তিনি আত্মসমর্পণ করে আপীল শর্তে জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত তার জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। ওই বছরের ৩ অক্টোবর পাঁচ দিন কারাভোগ করে তিনি জামিনে মুক্ত হন।

মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরের আগে যে কোনো সময় থেকে এ পর্যন্ত বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাসাসের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনসহ বিএনপি ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটভুক্ত অন্যান্য দলের উচ্চপর্যায়ের নেতারা রাজধানীর পল্টনের জাসাস কার্যালয়ে, আমেরিকার নিউ ইয়র্ক শহরে, যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় একত্রিত হয়ে যোগসাজশে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ও তার সাবেক প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে আমেরিকায় অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্র করেন। ওই ঘটনায় ২০১৫ সালের ৩ আগস্ট ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ফজলুর রহমান বাদী হয়ে পল্টন মডেল থানায় মামলাটি করেন। ২০১৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিক শফিক রেহমানসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। এ মামলায় সজীব ওয়াজেদ জয়সহ ১২ জন সাক্ষ্য দেন।
সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ এবং হত্যাচেষ্টার মামলায় ২০২৩ সালের ১৭ আগস্ট ঢাকার তৎকালীন অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আসাদুজ্জামান নূরের আদালত মাহমুদুর রহমান ও সাংবাদিক শফিক রেহমানসহ পাঁচ জনের পৃথক দুই ধারায় সাত বছরের সশ্রম কারাদ- দেন।

দ-িত অপর তিন আসামি হলেন, জাসাস নেতা মোহাম্মদ উল্লাহ, রিজভী আহমেদ সিজার ও মিজানুর রহমান ভুঁইয়া। আসামিদের দ-বিধির ৩৬৫ ধারায় (অপহরণের অভিযোগে) পাঁচ বছরের কারাদ- ও পাঁচ হাজার টাকা অর্থদ- দিয়েছেন আদালত। অর্থদ- অনাদায়ে তাদের আরো এক মাসের কারাভোগ করতে হবে। এছাড়া একই আইনে ১২০-খ ধারায় (অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র) দুই বছরের কারাদ- ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো এক মাসের কারাদ- দিয়েছেন আদালত। দুই ধারার সাজা একসঙ্গে চলবে বলে বিচারক রায়ে উল্লেখ করেছিলেন।
ছয় বছর নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর দেশে ফেরার দু’দিন পর তিনি ঢাকার আদালতে আত্মসমর্পণ করে দ-ের বিরুদ্ধে আপিল করার শর্তে জামিন চেয়েছিলেন। ওইদিন জামিন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।


বিভাগ : বাংলাদেশ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

মায়ের জানাজায় গিয়ে ছেলের মৃত্যু, একসঙ্গে দাফন
মিটার সংকটে মোরেলগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ অফিস, ভোগান্তিতে গ্রাহক
গাজীপুরে ট্রেনে কাটা পড়ে ২ বন্ধুর মৃত্যু
মীরসরাইয়ে সড়ক দুর্ঘটনার নিহত ১ কলেজ শিক্ষার্থীসহ আহত ৬
চলন্ত ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে এলজিইডি কর্মচারীর আত্মহত্যা
আরও

আরও পড়ুন

মায়ের জানাজায় গিয়ে ছেলের মৃত্যু, একসঙ্গে দাফন

মায়ের জানাজায় গিয়ে ছেলের মৃত্যু, একসঙ্গে দাফন

মিটার সংকটে মোরেলগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ অফিস, ভোগান্তিতে গ্রাহক

মিটার সংকটে মোরেলগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ অফিস, ভোগান্তিতে গ্রাহক

গাজীপুরে ট্রেনে কাটা পড়ে ২ বন্ধুর মৃত্যু

গাজীপুরে ট্রেনে কাটা পড়ে ২ বন্ধুর মৃত্যু

মীরসরাইয়ে সড়ক দুর্ঘটনার নিহত ১ কলেজ শিক্ষার্থীসহ আহত ৬

মীরসরাইয়ে সড়ক দুর্ঘটনার নিহত ১ কলেজ শিক্ষার্থীসহ আহত ৬

চলন্ত ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে এলজিইডি কর্মচারীর আত্মহত্যা

চলন্ত ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে এলজিইডি কর্মচারীর আত্মহত্যা

ভারতের জন্য ট্রাম্প ২.০ এর আশার সম্ভাবনা কি স্তিমিত ?

ভারতের জন্য ট্রাম্প ২.০ এর আশার সম্ভাবনা কি স্তিমিত ?

ব্যাংককে বায়ুদূষণের কারণে ২০০ স্কুল বন্ধ

ব্যাংককে বায়ুদূষণের কারণে ২০০ স্কুল বন্ধ

দশম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে শহীদ মিনারে প্রাথমিকের শিক্ষকদের সমাবেশ

দশম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে শহীদ মিনারে প্রাথমিকের শিক্ষকদের সমাবেশ

দেশের সব বিভাগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বৈঠক আজ

দেশের সব বিভাগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বৈঠক আজ

ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভূমিকম্প অনুভূত

ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভূমিকম্প অনুভূত

গাজীপুরে টিফিন খেয়ে অর্ধশতাধিক শ্রমিক অসুস্থ

গাজীপুরে টিফিন খেয়ে অর্ধশতাধিক শ্রমিক অসুস্থ

পশ্চিমতীরে অভিযান বন্ধ না করলে ফের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হবে : হুমকি হুতিদের

পশ্চিমতীরে অভিযান বন্ধ না করলে ফের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হবে : হুমকি হুতিদের

শেখ হাসিনার অর্থনীতির উচ্চ প্রবৃদ্ধির বিষয়টি ‘ভুয়া’: ড. মুহাম্মদ ইউনূস

শেখ হাসিনার অর্থনীতির উচ্চ প্রবৃদ্ধির বিষয়টি ‘ভুয়া’: ড. মুহাম্মদ ইউনূস

আজ হাসপাল থেকে তারেকের বাসায় ফিরতে পারেন খালেদা জিয়া

আজ হাসপাল থেকে তারেকের বাসায় ফিরতে পারেন খালেদা জিয়া

হাজারীবাগে ব্যবসায়ীকে গুলি করে ৭০ ভরি স্বর্ণ ছিনতাইয়ের অভিযোগ

হাজারীবাগে ব্যবসায়ীকে গুলি করে ৭০ ভরি স্বর্ণ ছিনতাইয়ের অভিযোগ

ঢাকায় শীত কেমন থাকবে জানাল আবহাওয়া অফিস

ঢাকায় শীত কেমন থাকবে জানাল আবহাওয়া অফিস

সমকামী বিয়ের বৈধতা দিচ্ছে থাইল্যান্ড

সমকামী বিয়ের বৈধতা দিচ্ছে থাইল্যান্ড

জাহাঙ্গীর গেট থেকে আসা যানবাহন বিজয় সরণি মোড় হয়ে ডানে যেতে পারবে না

জাহাঙ্গীর গেট থেকে আসা যানবাহন বিজয় সরণি মোড় হয়ে ডানে যেতে পারবে না

জেনিনে ইসরাইলি হামলায় বেসামরিক নাগরিক নিহত: কাতারের তীব্র নিন্দা

জেনিনে ইসরাইলি হামলায় বেসামরিক নাগরিক নিহত: কাতারের তীব্র নিন্দা

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি বিশ্বব্যাংকের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি বিশ্বব্যাংকের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত