দলীয় প্রকাশনায় মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি অবমাননা

জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা না করলে রাজনীতির অধিকার হারাবে শিবির: ছাত্রদল

Daily Inqilab স্টাফ রিপোর্টার

৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:২৭ এএম | আপডেট: ৩০ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:২৭ এএম

ছাত্র শিবিরের দলীয় প্রকাশনায় স্বাধীনতাবিরোধী এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি অবমাননাকর বক্তব্য প্রকাশের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। ছাত্রশিবির যদি এই ন্যাক্যারজনক মুক্তিযুদ্ধবিরোধী বয়ানকে নিজেদের দলীয় প্রকাশনা থেকে প্রত্যাহার করে জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা না করে তাহলে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতি ছাত্রশিবিরের আনুগত্য নিয়ে প্রশ্ন উঠবে, স্বাধীন বাংলাদেশে রাজনৈতিক কর্মকা- পরিচালনা করার নৈতিক অধিকার হারিয়ে ফেলবে বলে জানিয়েছে ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির। গতকাল বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ছাত্রদল নেতৃদ্বয় এসব কথা বলেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, ইসলামী ছাত্রশিবিরের দলীয় প্রকাশনা “ছাত্র সংবাদ” নামক মাসিক পত্রিকার মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের মাস ডিসেম্বর সংখ্যায় প্রকাশিত জনৈক আহমেদ আফঘানি রচিত “যুগে যুগে স্বৈরাচার ও তাদের করুণ পরিণতি” নামক প্রবন্ধে অত্যন্ত আপত্তিকরভাবে বর্ণনা করা হয়েছে, ‘অনেক মুসলিম না বুঝে মুক্তিযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল, এটা তাদের ব্যর্থতা ও অদূরদর্শিতা ছিল। আল্লাহ তায়ালা তাদের ক্ষমা করুন।’ উল্লেখ্য, ছাত্র সংবাদ পত্রিকাটি ছাত্রশিবির প্রকাশিত ও শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি সম্পাদিত একটি প্রকাশনা।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, স্বাধীনতার দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর পরে এসেও নিজেদের দলীয় প্রকাশনায় মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করাকে ভুল ও অদূরদর্শিতা হিসেবে প্রচার করা এবং 'পাপকাজ মনে করে' ক্ষমা প্রার্থনা করা একটি গর্হিত এবং ন্যাক্কারজনক ঘটনা। প্রকৃতপক্ষে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ কোনো ধর্মযুদ্ধ ছিল না। এটি ছিল অত্যাচারী, জালিম, দখলদার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্বিচারে গণহত্যার বিরুদ্ধে মজলুম বাংলাদেশীদের প্রতিরোধের যুদ্ধ। ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে আপামর জনসাধারনের অংশগ্রহণের কারণে মুক্তিযুদ্ধ ছিল একটি সত্যিকারের জনযুদ্ধ। দীর্ঘ চব্বিশ বছরের সীমাহীন অত্যাচার, অবিচার আর অপশাসনের চূড়ান্ত পর্যায়ে পাকিস্তানি প্রশিক্ষিত সামরিক বাহিনী অত্যন্ত নির্মমভাবে রাতের আঁধারে এদেশের ঘুমন্ত নিরীহ জনগনের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে নিরস্ত্র জনতা প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এভাবেই শুরু হয়েছে আমাদের অস্তিত্বের সংগ্রাম, মহান স্বাধীনতা যুদ্ধ। কেউ ভুল করে কিংবা না বুঝে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছে এই বক্তব্য একাত্তরের পরাজিত শক্তি ও তাদের দোসরদের ধৃষ্টতা ও নিজেদের পরাজয়ের গ্লানি চাপা দেওয়ার অপকৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়। ছাত্রশিবিরের এরূপ কা-জ্ঞানহীন প্রচারণার কারণে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের বুদ্ধিবৃত্তিক পুনর্বাসনের প্রেক্ষাপট তৈরি করবে।
ছাত্রদল সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বিবৃতিতে বলেন, ছাত্রশিবির একদিকে স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসে “স্বাধীনতা এনেছি, স্বাধীনতা রাখবো’ স্লোগান দিয়ে র‌্যালি করে, আবার অন্যদিকে নিজেদের দলীয় প্রকাশনায় মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেওয়াকে ভুল ও অদূরদর্শিতা হিসেবে প্রচার করবে, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করবে, এটি সুস্পষ্ট দ্বিচারিতা। এই দ্বিচারিতার ফলে প্রমাণিত হয় প্রকাশ্যে তারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করার কৌশল গ্রহণ করলেও ভেতরে ভেতরে ছাত্রশিবিরের পূর্বসুরী ছাত্রসংঘের মতো মুক্তিযুদ্ধের বিপক্ষের মনোভাবই তারা ধারণ করে। লেখকের ব্যক্তিগত অভিমত বলে ছাত্রশিবির তাদের দলীয় প্রকাশনার মাধ্যমে স্বাধীনতা বিরোধী ন্যারেটিভ প্রচারের দায় এড়িয়ে যেতে পারে না। সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে, ছাত্রশিবিরের প্রকাশনার সম্পাদকীয় নীতিমালা স্বাধীনতাবিরোধী ন্যারেটিভ প্রতিষ্ঠা করার পক্ষে।
তারা ছাত্রশিবিরকে আহ্বান জানিয়ে বলেন, তারা যাতে মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে তাদের দলীয় অবস্থান স্পষ্ট করে। একইসাথে ছাত্রশিবিরকে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী বয়ান প্রচার এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবমাননা করার দায়ে জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।
ছাত্রদল নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে ছাত্রশিবিরকে এই ঘটনায় নিজেদের দলীয় অবস্থান স্পষ্ট করার আহবান জানিয়েছেন। কেন্দ্রীয় নেতৃদ্বয় বলেন, ছাত্রশিবির যদি এই ন্যাক্যারজনক মুক্তিযুদ্ধবিরোধী বয়ানকে নিজেদের দলীয় প্রকাশনা থেকে প্রত্যাহার করে জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা না করে তাহলে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতি ছাত্রশিবিরের আনুগত্য নিয়ে প্রশ্ন উঠবে, স্বাধীন বাংলাদেশে রাজনৈতিক কর্মকা- পরিচালনা করার নৈতিক অধিকার হারিয়ে ফেলবে।###


বিভাগ : বাংলাদেশ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

অপারেশন ডেভিল হান্টে ২৪ ঘণ্টায় ৫২৯ জন গ্রেফতার

অপারেশন ডেভিল হান্টে ২৪ ঘণ্টায় ৫২৯ জন গ্রেফতার

যে আচরণে দিশাহারা ন্যাটো

যে আচরণে দিশাহারা ন্যাটো

ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তনে তুরস্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে

ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তনে তুরস্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে

তৃতীয় দফায় শতাধিক অবৈধ ভারতীয়কে ফেরত

তৃতীয় দফায় শতাধিক অবৈধ ভারতীয়কে ফেরত

সাবেক অধিনায়কদের সাথে বিসিবি সভাপতির বৈঠক

সাবেক অধিনায়কদের সাথে বিসিবি সভাপতির বৈঠক

৮০ বছরের গাজাবাসীর সঙ্গে ভয়াবহ নৃশংসতার তথ্য ফাঁস ইসরাইলির

৮০ বছরের গাজাবাসীর সঙ্গে ভয়াবহ নৃশংসতার তথ্য ফাঁস ইসরাইলির

জিম্মি বিনিময়ের দ্বিতীয় ধাপে বাধা দিচ্ছেন নেতানিয়াহু

জিম্মি বিনিময়ের দ্বিতীয় ধাপে বাধা দিচ্ছেন নেতানিয়াহু

ঈদের পর কঠোর আন্দোলনে নামবে পিটিআই

ঈদের পর কঠোর আন্দোলনে নামবে পিটিআই

‘বিচার ও নির্বাহী বিভাগের কাজ সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত’

‘বিচার ও নির্বাহী বিভাগের কাজ সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত’

ছাগলনাইয়ায় মুজাহিদ মটরস্ এর উদ্বোধন উপলক্ষে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল

ছাগলনাইয়ায় মুজাহিদ মটরস্ এর উদ্বোধন উপলক্ষে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল

খালের ওপর না করে সড়কের ওপর সেতু

খালের ওপর না করে সড়কের ওপর সেতু

কুষ্টিয়ায় বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে বৃদ্ধকে কুপিয়ে হত্যা

কুষ্টিয়ায় বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে বৃদ্ধকে কুপিয়ে হত্যা

যতদ্রুত ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেবেন ততই দেশের মঙ্গল : জহির উদ্দিন স্বপন

যতদ্রুত ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেবেন ততই দেশের মঙ্গল : জহির উদ্দিন স্বপন

বিএনপি ক্ষমতায় এলে তিস্তারপাড়ের কষ্ট লাঘব করা হবে : বরকত উল্লাহ বুলু

বিএনপি ক্ষমতায় এলে তিস্তারপাড়ের কষ্ট লাঘব করা হবে : বরকত উল্লাহ বুলু

খননের নামে বালু বিক্রি!

খননের নামে বালু বিক্রি!

নানা অভিযোগে চার জেলার এসপিকে  পুলিশ সদর দফতরে সংযুক্ত

নানা অভিযোগে চার জেলার এসপিকে পুলিশ সদর দফতরে সংযুক্ত

এমবিএল রেইনবো অ্যাপে যুক্ত হলো আরও নতুন পরিষেবা

এমবিএল রেইনবো অ্যাপে যুক্ত হলো আরও নতুন পরিষেবা

জনগণের প্রত্যক্ষ প্রতিনিধি ছাড়া সংস্কার পূর্ণ বাস্তবায়ন সম্ভব নয় : তারেক রহমান

জনগণের প্রত্যক্ষ প্রতিনিধি ছাড়া সংস্কার পূর্ণ বাস্তবায়ন সম্ভব নয় : তারেক রহমান

ডলার লেনদেনে কড়াকড়ি ইরাকে

ডলার লেনদেনে কড়াকড়ি ইরাকে

পরমাণু কর্মসূচিতে কোনো দুর্বলতা দেখাবে না ইরান

পরমাণু কর্মসূচিতে কোনো দুর্বলতা দেখাবে না ইরান