নিত্যপণ্যের অস্বভাবিক মূল্য বৃদ্ধি সহ অর্থনৈতিক টানাপোড়েন

হতাশা আর দীর্ঘশ্বাসে ভর করে দক্ষিণাঞ্চলে এবারো ঈদ আসছে

Daily Inqilab নাছিম উল আলম

১৮ এপ্রিল ২০২৩, ০১:৩০ পিএম | আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২৩, ১১:০৬ পিএম

নিত্যপণ্যের অস্বভাবিক মূল্য বৃদ্ধি সহ অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যে আরেকটি ঈদ দরজায় কড়া নাড়লেও এবার সর্ববৃহত এ ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানে দক্ষিণাঞ্চলে উৎসবের আমেজ এখনো অনেকটাই অনুপস্থিত। ঈদের বাজারে করোনা পূর্বকালীন সময়ের চীরচেনা ভীড় এবারো অনুপস্থিত। এমনকি ঈদকে সামনে রেখে বিগত বছরগুলোতে রাজধানী সহ সারা দেশ থেকে সড়ক, নৌ ও আকাশ পথে দক্ষিণাঞ্চলে যেখানে অন্তত ১০ লাখ মানুষের যাতায়াত ছিল নিশ্চিত, আবার তাও অনেকটাই অনুপস্থিত।
নৌপথে যাত্রী সংকটে কোন বিশেষ সার্ভিস দুরের কথা, স্বাভাবিক সময়ের নৌযানের অর্ধেকও যাত্রী মিলছে না। সড়ক পথেও নামি দামী কোম্পানীগুলোর কোন বিশেষ বাস সার্ভিস নেই। এমনকি নামি কোম্পানীগুলো এবার বাড়তি ভাড়ার পরিবর্তে স্বাভবাবিক সময়ের ভাড়াতেও ১৮ এপ্রিল থেকে ঈদের দিন পর্যন্ত টিকেট বিক্রী করতে পারলেও ঈদ পরবর্তি কয়েকদিন এখনো সিট খালি আছে। আকাশ পথেও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স সপ্তাহে ৩দিনের পরিবর্তে ঈদের আগের ৩দিন বিশেষ ফ্লাইট চালালেও বেসরকারী দুটি উড়ান সংস্থা নিয়মিত ফ্লাইটেই সীমাবদ্ধ থাকছে। আর রাষ্ট্রীয় নৌ-বানিজ্য প্রতিষ্ঠান-বিআইডব্লিউটিসি তার ব্যার্থতা ও উদাশীনতার উদাহরন এবারো অব্যাহত রেখেছে। মাথাভাড়ি প্রশাসনের এ সংস্থাটি করোনা সংকটের আগে থেকেই রাজধানীর সাথে দক্ষিণাঞ্চলে নৌ যোগাযোগ সংকুচিত করেছে। গত ২৭ জুন পদ্মা সেতু খুলে দেয়ার আগেই সংস্থটির যাত্রী সেবা প্রায় সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেয়া হয়। এমনকি গত বছর ঈদ উল আজহার সময়ও সংস্থাটি রাজধানীর সাথে দক্ষিণাঞ্চলে যাত্রী পরিবহনে কোন নৌযান নিয়োগ করেনি। নৌযানের কোন সংকট না থাকলেও এবার ঈদের আগে শুধুমাত্র মঙ্গলবার ও শুক্রবার ঢাকা থেকে বরিশাল হয়ে দক্ষিণাঞ্চলের দুটি স্টিমার সার্ভিস পরিচালনা করছে সংস্থাটি। নিয়মিত সব সার্ভিস আগের মতই বন্ধ।
করেনা মহামারীর বৈশি^ক সংকটের রেশ ধরে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষও গত ৩টি বছরের ঈদ পালনে অনেকটা কঠিন সময় পাড় করার পরে গত এক বছরে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নি¤œ-মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের কাছে খুশির পরিবর্তে কষ্টের উৎসবে পরিনত হয়েছে। আয়ের উৎস সংকুচিত হবার মধ্যে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নি¤œ-মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য চরম সংকট সৃষ্টি করলেও তা থেকে উত্তরনের কোন পথ কারো জানা নেই। আর এরই মাঝে প্রধান ধর্মীয় উৎসব এলেও সাধ আর সাধ্যের বিস্তর ব্যাবধানে এবার অভিভাবক মহলে হতাশার সাথে দুঃখকেই চাপা রাখতে হচ্ছে।
রমজানের ইফতারীর প্রতিটি অনুষঙ্গের মূল্য বৃদ্ধি সাধারন মানুষকে যেভাবে কষ্ট দিয়েছে, তা নিকট অতীতেও ছিল অতুলনীয়। কিন্তু এখনো ভোজ্য তেল, চিনি, লবন, পোলাওর চাল, মুরগী এবং গরু ও খাশির গোসত সহ ঈদের খাবারের প্রতিটি সামগ্রীর আকাশ ছোয়া মূল্যবৃদ্ধি সাধারন মানুষকে যথেষ্ঠ দূর্ভোগে রেখেছে। এবার খাবারের যোগাড় করতেই নি¤œ-মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর ঈদ বাজেটের পুরোটাই খরচ হয়ে যাচ্ছে। সেখান পরিবার পরিজনের নতুন পোষাক সহ আনুষাঙ্গিক খরচের প্রশ্ন অনেকের কাছেই অবান্তর হলেও চাপা দুঃখেও পরিনত হয়েছে। বছরের প্রধান ধর্মীয় উৎসবের সময় সন্তান সন্ততির গায়ে নতুন পোষাক না দেখে অনেক বাবা-মাকেও এবার বুক ভরা কষ্ট চেপে রাখতে হবে বলে জানিয়েছেন একাধিক অভিভাবক।
বরিশাল মহানগরীর প্রধান বানিজ্যিক এলাকা চকবাজার, গীর্জা মহল্লা, সদর রোড, ফজলুল হক এভেনিউ ও পুলিশ লাইন্স সড়কের তৈরী পোষাকের দোকানীরা এবারো হতশা আর দীর্ঘশ^াস চেপে রাখতে পারছেন না। চকবাজারের দোকানী সাইফুল জানালেন, গত ৩টি বছর অনেক কষ্টে কাটাবার পরে এবার ভাল বেচাকেনার আশাছিল, কিন্তু জিনিসপত্রের দাম যা বেড়েছে, তাতে সব কিছুই বাদ। খাবার যোগার করতেই সব টাকা শেষ হয়ে যাচ্ছে। ফলে মানুষ খাবে না ছেলে মেয়ের কাপড় কেনবে। ফলে এবারো বেচা বিক্রী গত তিন বছরের খড়া কাটিয়ে উঠতে পারছে না, বলে জানালেন তিনি।
একই চিত্র বরিশাল মহানগরীর সব বিপনি সহ দক্ষিণাঞ্চলের সর্বত্র। ফলে হতশা আর দীর্ঘশ^াসে ভর করেই দক্ষিণাঞ্চলে এবারের ঈদ আসছে। ১৮-৪-২০২৩.

সবচেয়ে বড় ধর্মীয় ও সমিাজিক উৎসব ঈদ উল ফিতর দরজায় কড়া নাড়লেও বরিশালের প্রধান বিপনী বিতান চকবাজারে এখনো ক্রেতাদের লক্ষণীয় ভিড় নেই।


বিভাগ : বাংলাদেশ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

নিউ ইয়ার কাপ গলফ টুর্নামেন্ট

নিউ ইয়ার কাপ গলফ টুর্নামেন্ট

অর্থহীনে যুক্ত হলেন তরুণ গিটারিস্ট মঈন‌

অর্থহীনে যুক্ত হলেন তরুণ গিটারিস্ট মঈন‌

ইন্দোনেশিয়ায় অ্যাপল-গুগল নিষেধাজ্ঞা, প্রযুক্তিপ্রেমীদের হতাশা

ইন্দোনেশিয়ায় অ্যাপল-গুগল নিষেধাজ্ঞা, প্রযুক্তিপ্রেমীদের হতাশা

ধারাবাহিকভাবে আচরণবিধি লঙ্ঘন করছে সকল ক্যাডারের সরকারি কর্মচারিরা

ধারাবাহিকভাবে আচরণবিধি লঙ্ঘন করছে সকল ক্যাডারের সরকারি কর্মচারিরা

নাভাসের অশ্রুসিক্ত বিদায়

নাভাসের অশ্রুসিক্ত বিদায়

লক্ষ্মীপুরে শিক্ষা উপকরণ পেল ৩৫০ মেধাবী শিক্ষার্থী

লক্ষ্মীপুরে শিক্ষা উপকরণ পেল ৩৫০ মেধাবী শিক্ষার্থী

বছরের প্রথম সূর্যোদয় দেখতে সাগরকন্যা কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে হাজার হাজার পর্যটক

বছরের প্রথম সূর্যোদয় দেখতে সাগরকন্যা কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে হাজার হাজার পর্যটক

প্রধান শিক্ষককে মারধরের প্রতিবাদে ছাত্র-ছাত্রীদের মানববন্ধন, শিক্ষকদের কর্মবিরতি

প্রধান শিক্ষককে মারধরের প্রতিবাদে ছাত্র-ছাত্রীদের মানববন্ধন, শিক্ষকদের কর্মবিরতি

স্বাধীনতার ৯ মাস যুদ্ধ করেছি আমরা, কিন্তু স্যারেন্ডার হয়েছে ভারতের কাছে: এবিএম মোশাররফ হোসেন

স্বাধীনতার ৯ মাস যুদ্ধ করেছি আমরা, কিন্তু স্যারেন্ডার হয়েছে ভারতের কাছে: এবিএম মোশাররফ হোসেন

শ্রীলঙ্কায় নতুন নেতা দিসানায়েকের প্রতিশ্রুতি, সংকটময় পরিস্থিতিতে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি

শ্রীলঙ্কায় নতুন নেতা দিসানায়েকের প্রতিশ্রুতি, সংকটময় পরিস্থিতিতে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি

বই উৎসবের নামে গত দেড় দশকে অর্থের অপচয় হয়েছে: এনসিটিবি চেয়ারম্যান

বই উৎসবের নামে গত দেড় দশকে অর্থের অপচয় হয়েছে: এনসিটিবি চেয়ারম্যান

আগামীতে বাণিজ্য মেলা হবে দেশজুড়ে : প্রধান উপদেষ্টা

আগামীতে বাণিজ্য মেলা হবে দেশজুড়ে : প্রধান উপদেষ্টা

চূড়ান্ত বিচ্ছেদে পিট-জোলির সম্পর্ক

চূড়ান্ত বিচ্ছেদে পিট-জোলির সম্পর্ক

আবারও ৪ দিনের রিমান্ডে কামরুল ইসলাম

আবারও ৪ দিনের রিমান্ডে কামরুল ইসলাম

শনিবারসহ ২০২৫ সালে মাদ্রাসায় ছুটি ৭৫ দিন

শনিবারসহ ২০২৫ সালে মাদ্রাসায় ছুটি ৭৫ দিন

বন্ধ ৯ কারখানা খুলছে এস আলম গ্রুপের

বন্ধ ৯ কারখানা খুলছে এস আলম গ্রুপের

বুড়িচংয়ে তারুণ্যের উৎসব উদযাপন উপলক্ষে র‍্যালি ও সমাবেশ

বুড়িচংয়ে তারুণ্যের উৎসব উদযাপন উপলক্ষে র‍্যালি ও সমাবেশ

নারায়ণগঞ্জে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে ৩ বন্ধুকে ছুরিকাঘাত, নিহত ১

নারায়ণগঞ্জে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানে ৩ বন্ধুকে ছুরিকাঘাত, নিহত ১

সাতক্ষীরা-সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরার ২ মাসের নিষেধাজ্ঞা শুরু

সাতক্ষীরা-সুন্দরবনে কাঁকড়া ধরার ২ মাসের নিষেধাজ্ঞা শুরু

নিউইয়র্কের টাইমস স্কয়ারে জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে নতুন বছরের শুরু

নিউইয়র্কের টাইমস স্কয়ারে জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে নতুন বছরের শুরু