তদন্তে কালক্ষেপনে প্রমান লোপাটের চেষ্টা
০৬ জুন ২০২৩, ০৭:৪২ পিএম | আপডেট: ০৬ জুন ২০২৩, ০৭:৪২ পিএম
যখন ইচ্ছে হয় তখন বিদ্যালয়ে আসেন, মন চাইলে বের হয়ে যান। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে প্রকাশ্যে মারপিট করেন। স্কুলের অর্থ নিয়ে করেছেন ব্যাপক নয় ছয়। স্কুল কমিটির সভাপতি স্থানীয় আওয়ামীলীগের ইউপি চেয়ারম্যান রয়েছেন তার সহযোগি হয়ে। এ মুহুর্তে দলের পদে না থাকলেও পদধারী নেতাদের সাথে তার উঠাবসা। তাই প্রতিবাদ করার উপায় নেই। খুলনা বিভাগীয় শিক্ষা অফিসে বিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষক শিক্ষিকারা এক দফা অভিযোগ দিলে তা গায়েব করে দেয়া হয়। এরপর আবার সকল প্রমানাদীসহ অভিযোগ দেয়া হলে উপ পরিচালক তদন্তের নির্দেশ দেন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে। জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তদন্তের নির্দেশ পাওয়ার পরেও তদন্ত শুরু না করে আনীত সকল অভিযোগের প্রমান লোপাটের সুযোগ করে দেন। অন্যদিকে সেই বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও আরেক আওয়ামীলীগের ক্যাডার দু দিন আগে অভিযোগকারী শিক্ষকদের গালিগালাজসহ লাঞ্ছিত করে জোর পূর্বক সাদা কাগজে সই করিয়ে নেন। নিরুপায় হয়ে সাক্ষর দেয়া শিক্ষকেরা থানায় জিডি করেছেন। আলোচিত এই শিক্ষিকার নাম আরিফা আক্তার আলো। তিনি যশোর নিউটাউন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষিকা। বছর দুয়েক আগে তিনি ব্যাপক আলোচিত হয়েছিলেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি অত্যন্ত আপত্তিকর ভিডিওকে কেন্দ্র করে। ওই সময় অনেকেই প্রশ্ন তুলেছিলেন, একজন শিক্ষকের যদি অশ্লীল ভিডিও এভাবে ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে সেই শিক্ষকের এমন মহান পেশায় থাকার নৈতিক অধিকার থাকে কীভাবে ?
সূত্র জানায়, খুলনা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের উপ পরিচালক রুহুল আমীনের দফতরে সহকারী প্রধান শিক্ষিকা আরিফা আক্তার আলোর বিরুদ্ধে ২০২৩ সালের ১২ ফেব্রুয়ারী নিউটাউন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষক লিখিত অভিযোগ দেন। রহস্যজনক কারণে অভিযোগপত্রটি গায়েব হয়ে যায়। এরপর ৫ মার্চ আবার অভিযোগ দেয়া হয়। অভিযোগপত্রটিকে গুরুত্ব দিয়ে উপপরিচালক ২২ মে যশোর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মাহফুজুল হোসেনকে সরেজমিন তদন্ত করে ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন পাঠানোর নির্দেশ দেন। তদন্তের নির্দেশ পাওয়ার পর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা অহেতুক সময়ক্ষেপণ করতে থাকেন। এরই মধ্যে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষিকা সমস্ত প্রমান লোপাটের চেষ্টা শুরু করেন।
তার বিরুদ্ধে আনা ৪০ টি সুস্পষ্ট অভিযোগের মধ্যে রয়েছে, শিক্ষক শিক্ষিকাদের সাথে অসদাচারণ, অনৈতিক কর্মকান্ড, মারপিট, রশিদ ছাড়াই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায়, ইচ্ছেমত ভাউচার তির করে স্কুল ফান্ডের টাকা খরচ, স্কুলের পূরাতন বই খাতাপত্র বিক্রি করে দেয়া, মিনিস্ট্রি অডিটে ঘুষ দেয়ার নামে শিক্ষকদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা উত্তোলন, টেস্টে অকৃতকার্য এসএসসি পরিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জোরপূর্বক টাকা নিয়ে পরীক্ষার সুযোগ দেয়া এবং এ টাকা আত্মসাত করা, সরকারিভাবে নিষিদ্ধ গাইড বই প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা কমিশনের বিনিময়ে স্কুলে পড়ানো, ইচ্ছেমত স্কুলে আসা এবং যাওয়া, অভিভাবকদের সাথে দূর্ব্যবহার, নিজের ইচ্ছেমত ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদের বেছে নেয়া এবং তাদের সহায়তায় অপকর্ম চালিয়ে যাওয়া, শিক্ষক শিক্ষিকাদের আলাদা রুম বাতিল করে এক ঘরে বসার ব্যবস্থা করা, বোর্ড পরীক্ষক হিসেবে এসএসসি পরিক্ষার্থীদের খাতা নিজে না দেখে অন্যদের দিয়ে দেখানো প্রভৃতি। আর্থিক বিষয়গুলো প্রধান শিক্ষকের দেখার কথা থাকলেও তা দেখেন সহকারী প্রধানশিক্ষিকা। তার অপকর্মে সহায়তা করেন স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতি যিনি স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান এবং কমিটির আরেক সদস্য যিনি স্থানীয় আওয়ামীলীগের ক্যাডার হিসেবে এলাকায় পরিচিত।
জানা গেছে, শিক্ষা অফিসে অভিযোগ দেয়ার পর অভিযোগকারীদের হয়রানি করার মাত্রা বহুগুন বেড়ে গেছে। অভিযোগকারীদের কয়েকজনকে এবার এসএসসি পরীক্ষায় ডিউটি দেয়া হয়নি। তাদের বেতনের স্কুলের অংশ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সর্বশেষ গত ৪ জুন স্কুল পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ও সেই ক্যাডার এবং আরো কয়েকজন অভিযোগকারীদের অভিযোগ তুলে নেয়ার জন্য চাপ দেন এবং অপমান অপদস্ত করেন। এক পর্যায়ে জোরপূর্বক অভিযোগকারীদের কাছ থেকে সাদাকাগজে সাক্ষর করিয়ে নেয়া হয়। এ ঘটনায় এই দিনই শিক্ষকেরা যশোর কোতয়ালী থানায় একটি জিডি করেন। জিডি নং ২৮০, তারিখ ০৪-০৬-২০২৩।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযোগকারীরা জানিয়েছেন, আমরা ন্যায় বিচার চেয়ে এখন আতঙ্কে রয়েছি। বিভিন্ন মহল থেকে আমাদের উপর থেকে চাপ দেয়া হচ্ছে। যথাসময়ে তদন্ত শুরু না করায় আমাদের অভিযোগপত্রের সাথে দেয়া সব প্রমান লোপাট করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সাক্ষীদের ভয়ভীতি দেয়া হচ্ছে। আমরা এও শুনতে পেরেছি, আমদের চাকুরীচ্যুত করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। সহকারী প্রধান শিক্ষিকার অপকর্মের প্রতিবাদ করায় বেশ কিছুদিন আগে এক শিক্ষককে তিনি মারপিট করেছিলেন।
এ বিষয়ে যশোর জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মাহফুজুল হোসেন জানান, অনেক ব্যস্ত থাকি আমি। নানা ব্যস্ততায় তদন্ত শুরু করতে পারিনি। দ্রুত তদন্ত শুরু হবে। তিনি আরো বলেন, আমি একদিন ওই স্কুলে গিয়েছিলাম, চা খেয়ে সবার সাথে পরিচিত হয়ে এসেছি। তদন্তে ৭ দিনের সময়সীমার বিষয়ে তিনি বলেন, অফিসিয়াল চিঠিতে ওরকম সময় দেয়া হয়। আমি ধীরেসুস্থে তদন্ত করব।
বিভাগীয় উপ পরিচালক রুহুল আমীন বলেন, শিক্ষা সেক্টরে কোনো অনিয়ম হলে ছাড় দেয়া হবে না। তদন্ত প্রতিবেদন পেলে তা মন্ত্রনালয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পাঠানো হবে।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
উত্তরা পশ্চিম থানার জামায়াতের সহযোগী সদস্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শীতার্তদের পাশে জামায়াত
সালথায় রাতের আঁধারে কৃষকের পুকুরে বিষ প্রয়োগ করে মাছ নিধন
রাণীশংকৈলে মারামারি ও ভাংচুরের মধ্য দিয়ে শেষ হলো জনপ্রিয় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ইত্যাদির শুটিং
ওসি শাহ আলমকে কত টাকার বিনিময়ে ছেড়েছেন, প্রশ্ন হান্নান মাসউদের
দৌলতখানে ছাত্রদলের মাদক বিরোধী র্যালি ও আলোচনা সভা
৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষে লাকসামে বিএনপির জনসভা
এক ট্রলারেই ১৯৫ মণ ইলিশ, ৪০ লাখ টাকায় বিক্রি
শিবচরের পদ্মায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের দায়ে গ্রেপ্তার ২
গার পাহাড় সীমান্তে শাড়ি-লেহেঙ্গা, সানগ্লাসসহ ২ কোটি ৩২ লাখ টাকার ভারতীয় পণ্য জব্দ
ভারতের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে টপকে ওয়ার্ল্ড রেকর্ড করতে যাচ্ছে ইবনে তাইমিয়া স্কুল এন্ড কলেজ
নরসিংদীতে সাদপন্থীদের বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ
ঈশ্বরগঞ্জে শীতার্তদের মাঝে বিএনপি নেতার কম্বল বিতরণ
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে মুচলেকা ও জরিমানার পরও বন্ধ হয়নি ইট ভাটা
ফরিদপুরের জেলার সকল অরক্ষিত রেল ক্রসিংয়ে গেট স্থাপনের দাবিতে ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম
কুষ্টিয়ার মাটির তৈরি হাঁড়ি পাতিল যাচ্ছে বিদেশে
রাণীনগর উপজেলা পরিদর্শনে এসে শীতার্তদের শীতবস্ত্র দিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল
রাজশাহীর চারঘাটে আ.লীগ নেতাকে কুপিয়ে জখম
উন্নতির জন্য ক্রিকেটের বিকেন্দ্রীকরণ চান ফাহিম
দৌলতদিয়া স্রোত ও নদী ভাঙনের কারণে লোকসানের মুখে ঘাট ইজারাদার