সহকর্মীকে রক্ষায় এগিয়ে যেয়ে সন্ত্রাসীদের গুলিতে প্রাণ হারালেন সিলেটের জনি
২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:০৯ পিএম | আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:০৯ পিএম
আমেরিকার বাফেলো শহরে নিহত দুই জনের মধ্যে একজনের বাড়ী সিলেটে। তার নাম আবু সালেহ মো. ইউসুফ জনি। নিহতের পর তার বাসায় চলছে শোকের মাতম। শোকের ছায়া নেমেছে এলাকায়। কান্না থামছে না পিতা-মাতার। হাসিখুশি মায়াবী মুখের ছেলেটি সুখের সন্ধানে পাড়ি জমিয়েছিলো আমেরিকায়। কিন্তু মৃত্যুই যে আমেরিকায় নিয়ে গিয়েছিলো কে জানতো তা। অপ্রত্যাশিত এ মৃত্যুর ঘটনায় শোকে স্তব্ধ¦ তার গোটা পরিবার। গত শনিবার দিন-দুপুরে দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত দুই বাংলাদেশি আবু সালেহ মোহাম্মদ ইউসুফ এবং বাবুল মিয়ার ঘাতকদের গ্রেফতার দাবিতে গতকাল রবিবার বাফেলোর ৯৫৫ ফিলমোর এভিনিউতে প্রতিবাদ-সমাবেশের ডাক দেয়া দেয়ূ স্থানীয় কমিউনিটি। এর আগে শনিবার দুপুরে নিউইয়র্ক সিটি থেকে ২৯০ মাইল দূরে কানাডা সীমান্ত সংলগ্ন বাফেলোতে বাংলাদেশিদের নতুন বসতিস্থলে নিজ বাড়ি সংস্কারের সময় ওই দুই প্রবাসীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। বাফেলো পুলিশ জানায়, বেলা সাড়ে ১২টায় জিনার স্ট্রিটে (ইস্ট ফেরী স্ট্রিট ও বেলী এভিনির কর্ণারে) একটি বাড়ির সংস্কারের কাজ করছিলেন নিহতরা। সেখানেই গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটে এবং ঘটনাস্থল থেকে এক বাংলাদেশির লাশ উদ্ধার করা হয়। আরেকজন গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে নেয়ার পথে মারা যান। এ হত্যাকান্ডের পর বাফেলোতে বসবাসরত প্রবাসীদের মধ্যে বিরাজ করছে আতঙ্ক। বাফেলোতে বসবাসরত প্রবাসী বাঙালিরা জানিয়েছেন- বাফেলোতে সবসময় ভয়ে থাকতে হয়। ওখানকার অস্ত্রধারীরা নানা অঘটন ঘটনায়। এ কারণে কোথায় কখন কী হয়; এ নিয়ে সবসময় শঙ্কায় থাকতে হয় বাঙালিদের। বাফেলোতে বসবাসরত কমিউনিটি অ্যাক্টিভিস্ট ও সাংবাদিক মতিউর রহমান লিটু বলেন, নিহতদের একজন হলেন সিলেটের কানাইঘাট উপজেলার ইউসুফ (৫৮) এবং আরেকজন কুমিল্লার বাবুল মিয়া (৪৩)। তবে বাফেলো পুলিশ প্রশাসনের পক্ষে সিটি ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট টিমের পক্ষ থেকে পুরো এলাকা ঘেরাও করে রাখা হয়েছে। কমিউনিটির নিরাপত্তা নিয়ে কোনো ধরনের সংশয় নেই বলেও দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
কম্যুনিটি লিডার আবুল বাশার এবং সাংবাদিক মতিউর রহমান লিটু বাফেলো থেকে আরো জানান, এমন হত্যাকান্ডের প্রতিবাদ, দায়ীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানানো হচ্ছে প্রশাসনের কাছে। বাফেলোস্থ ‘স্টপ দ্য ভায়োলেন্স কোয়ালিশন’র নির্বাহী পরিচালক মুরে হোলম্যান স্থানীয় গণমাধ্যমে বলেছেন, বাফেলো সিটিতে বসবাসরতরা শান্তিপ্রিয় এবং কখনো কোনো সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। এমন অবস্থায় কঠোর পরিশ্রমী কমিউনিটি হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশিরা আক্রান্ত হলেন-এটা খুবই দুঃখের ব্যাপার।
অপরদিকে, হত্যাকান্ডের শিকার সিলেটে জনির চাচা শাহাব উদ্দিন আহমদ জানিয়েছেন- ঘটনার ঘণ্টাখানেকের মধ্যে তাদের কাছে আমেরিকা থেকে খবর আসে; দুর্ঘটনায় পড়েছে জনি। কী দুর্ঘটনা সেটি বোঝার আগেই খবর আসে; জনিকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনা শোনার পর থেকে নির্বাক সকলে। তিনি জানান- বাবুল নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে রঙের কাজ করতো জনি। বাবুলকে যখন ওখানকার সন্ত্রাসীরা মারধর করছিলো এ দৃশ্য দেখে তাকে রক্ষায় এগিয়ে আসে জনি। পরে দু’জনকেই গুলি করে হত্যা করে দূর্বত্তরা। ঘটনার খবর শুনে বার বার মূর্ছা যাচ্ছিলেন পিতা নুরুল ইসলাম মেম্বার। ছেলের মৃত্যুর শোকে কাতর হয়ে পড়েছেন তিনি। ক’দিন আগেও কথা হয়েছে ছেলের সঙ্গে। জানালেন; যারা জনিকে খুন করেছে তাদের যেন শাস্তি হয়। তার ছেলে সবসময় হাসিখুশি থাকতে পছন্দ করতো। গোটা পরিবারকে সে একাই সামলে রাখতো বলে জানান তিনি।
নিহত আবু সালেহ মো. ইউসুফের মূল বাড়ি সিলেটের কানাইঘাটের ঝিঙ্গাবাড়ি ইউনিয়নের তিনছটি গ্রামে। তার পিতা নুরুল হক মেম্বার এলাকায় গগন্যমান্য লোক। পরপর দু’বার জনপ্রতিনিধি ছিলেন তিনি। প্রায় ৩০ বছর আগে তারা নগরের ইসলামপুর (মেজরটিলা) এলাকার ডি ব্লকের ১১৯/২ বাসা নির্মাণ করেন। নুরুল হক মেম্বার ও তার ভাইয়েরা মিলে চারতলা ভবন করে চারতলায় চার ভাই পরিবার নিয়ে বসবাস করেন। নুরুল হকের তিন পূত্র এক কন্যা। এরমধ্যে সবার বড় হচ্ছে ইউসুফ জনি। তার বোন সিলেটের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ডাক্তারি পেশায় কর্মরত। তার ছোট ভাই কর্মরত রয়েছে ঢাকার একটি কোম্পানিতে।
পরিবারিক সূত্র জানায়, ই্উসুফ জনি ঢাকায় একটি কোম্পানিতে চাকরি করতো। ওই কোম্পানিতে চাকরিরত অবস্থায় প্রায় বছর খানেক আগে পরিবার নিয়ে আমেরিকা পাড়ি জমান তিনি। সেখানে বাফেলো সিটিতে স্থায়ীভাবে বসবাস করছিলেন। সঙ্গে স্ত্রী ও দুই সন্তান।
এদিকে, কুমিল্লার ছেলে বাবুলের সঙ্গে রঙের কাজের সূত্রে পরিচয় হয় জনির। তার সঙ্গেই বাফেলোতে বসবাস ও কাজ করতেন তিনি। আমেরিকায় যাওয়ার পর থেকে সে আর দেশে আসেনি। তবে বড় ভাই হিসেবে ওখান থেকে পরিবারের সব খবর রাখতেন। ইউসুফ জনির মা নাজিনা বেগম জৈন্তাপুর সরকারি প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা। পরিবারের বড় ছেলে ইউসুফ জনি তার ছিল আদরের ধন। ছেলের মৃত্যুর খবর শুনে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন তিনিও। ছেলের কাছে আবদার ছিল; নাতনিদের নিয়ে দেশে আসার জন্য। জনিও বলেছিলো আসবে। কিন্তু মায়ের সেই আবদার আর রক্ষা করতে পারলেন না জনি। আমেরিকার বাফেলো সিটিতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হয়ে চির দিনের জন্য ছাড়লেন নশ্বর দুনিয়া। পিতা-মাতা একটাই সান্ত¦না ছেলের মুখ একবার হলেও দেখতে চান তারা। দেশে এনে যেন কবর দেয়া হয় জনির। সেই ইচ্ছা তাদের।
হত্যার শিকার ইউসুফ জনি ও বাবুল উদ্দিন বাফেলোর জেনার স্ট্রিটে ১০০ ব্লকে একটি বাসার রঙয়ের কাজে ছিলেন। এ সময় কয়েকজন যুবক চাঁদা দাবি করে বাবুল উদ্দিনের কাছে। টাকা না দেয়ায় তারা বাবুল উদ্দিনকে ছুরিকাঘাত করলে তাকে রক্ষা করতে ইউসুফ জনি এগিয়ে গেলে অস্ত্রধারীরা তাদের দু’জনকে হত্যা করে গুলিতে। মর্মান্তিক এই হত্যার খবর ছড়িয়ে পড়লে বাফেলো বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শোকাহত দুটি পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন বাফেলোর বাঙালি কমিউনিটি ।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
বিশ্বমানের টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সকলকে এগিয়ে আসতে হবে : রাষ্ট্রপতি
রুশ সেনা অগ্রসর হচ্ছে, সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী চলছে: পুতিন
মাদারীপুরে মহাসড়ক অবরোধ করে ইজিবাইক শ্রমিকদের বিক্ষোভ
চট্টগ্রাম বন্দর একটি সময়ে পৃথিবীর অন্য কোন দেশে এর কার্যক্রম পরিচালনা করবে : নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী
রাশিয়া ‘আগ্রহ’ দেখালে ইউক্রেন আলোচনায় বসতে পারে: ব্লিঙ্কেন
কুমিল্লায় স্কুলে যাওয়ার পথে রেল ক্রসিংয়ে প্রাণ গেল শিক্ষার্থীর
আড়াইহাজার থানার মামলায় সাবেক এমপি গিয়াসউদ্দিনের জামিন নামঞ্জুর
‘নো হেলমেট, নো ফুয়েল’ বাস্তবায়নে নির্দেশ পুলিশ কর্মকর্তাদের
সেøাভাকিয়ার প্রধানমন্ত্রীকে গুলি করে হত্যার চেষ্টা ইউরোপকে সহিংসতার প্রান্তে ঠেলছে মেরুকরণের রাজনীতি
রাজশাহীর চারঘাটে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু
পুতিনের এবারের চীন সফর কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
ব্যারিস্টার নাজির আহমদ রচিত গ্রন্থ “যা দেখছি যা ভাবছি” ও “অনুভবের অলিন্দে ইসলাম” গ্রন্থের প্রকাশনা সিলেটে অনুষ্ঠিত
বীমা শিল্পকে ঢেলে সাজানোর পদক্ষেপ নিয়েছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা -সিসিক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান
চিপস কিনে দেননি স্বামী, বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা করলেন স্ত্রী
হারানো জিনিস খুঁজে পাবেন এক চুটকিতে! আসছে নতুন ফিচার ‘গুগল অস্ত্র’
গাজা শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে বাহরাইনে যাচ্ছেন আরব নেতারা
তথ্যপ্রযুক্তির বহুল ব্যবহারের ফলে সরকারি কর্মকান্ডের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়েছে : প্রধানমন্ত্রী
সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা নিশ্চিতে একযোগে কাজ করছে ইমো ও জাগো ফাউন্ডেশন
জাতীয় হেল্পলাইন কল সেন্টারের কর্মপরিধি ও সময়সীমা বাড়াচ্ছে আইন মন্ত্রণালয়
পানির ন্যায্য হিস্যার দাবিতে ৪ জেলার উপর দিয়ে মিছিল