হানিফ-আতার রাজ্যে কুষ্টিয়াবাসী ছিলেন অসহায়
১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৪৫ পিএম | আপডেট: ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:২৮ পিএম
কুষ্টিয়া আওয়ামী লীগের টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার সুযোগে মাহবুবউল আলম হানিফ আতা হয়ে ওঠেন ক্ষমতাধর নেতাদের একজন। পাশাপাশি গড়ে তুলেছেন সম্পদের পাহাড়। নিজ জেলা কুষ্টিয়া ছাড়াও রাজধানী ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বাগেরহাটে ও গোপালগঞ্জে মাছের ঘের সহ অন্তত ৪টি জেলায় তার সম্পদ ও ব্যবসা-বাণিজ্যে আছে বলে অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে।
উপজেলার নেতা থেকে হানিফ গত দেড় যুগে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম ১৯৯৬ সালে কুষ্টিয়া-২ আসন থেকে মনোনয়ন পান হানিফ। তবে পরাজিত হন। এরপর আরো কয়েকবার দলীয় মনোনয়ন পেলেও বিজয়ী হতে পারেননি। এরপর ২০০৮ সালে মহাজোট গঠনের পর হানিফ মনোনয়ন বঞ্চিত হন। এরপর দল ক্ষমতায় এলে তাকে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী করা হয়। ২০১৩ সালের নির্বাচনে সদর আসন থেকে মনোনয়ন পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন হানিফ। কাউন্সিলে পেয়ে যান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের মত শীর্ষ পদ। এরপর হানিফকে আর পিছে তাকাতে হয়নি। বাড়তে থাকে তার প্রভাব-প্রতিপত্তি। দলে তার অবস্থান সাধারণ সম্পাদকের পদকে পুঁজি করেই সারাদেশে তার জাল ফেলে তৈরি করেন বড় নেটওয়ার্ক। বাগিয়ে নিয়েছেন নানা ব্যবসা-বাণিজ্যে। গড়ে তোলেন বিশাল সাম্রাজ্য। দেশে নানা সম্পদ গড়ার পাশাপাশি কানাডাসহ কয়েকটি দেশে হানিফের সম্পদ ও ব্যবসা আছে বলেও জানা-গেছে। হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর গা ঢাকা দিয়ে আছেন হানিফ। তার সাম্রাজ্যে ভেঙ্গে পড়েছে। তার দোসররাও পালিয়ে গেছে।
মাহবুবউল হানিফের বড় ভাই সাবেক সচিব রাশিদুল আলম শেখ পরিবারের জামাই। সেই সূত্র ধরেই হানিফ কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলায় আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন। উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ছিলেন তিনি।
আরো পাকা পোক্ত হয় একাধিকবার একই পদ পেয়ে যাওয়ার কারণে। মন্ত্রী হওয়ার খায়েস থাকলেও সে আশাপূরণ হয়নি নানা অপকর্মের কারণে। তবে রাজনীতির আড়ালে অর্থ আয় করা ছিল তার নেশা। তিনি দলের নেতা- কর্মীদের পাত্তা না দিলেও বড় বড় ব্যবসায়ীদের সাথে আঁতাত করে চলতেন। কুষ্টিয়াতেও চলতেন টাকা ওয়ালাদের সাথে। এভাবে গত ১৫ বছরে অগাধ সম্পদের মালিক বনে গেছেন হানিফ। হানিফের পুরো পরিবার থাকে কানাডায়। সেখানে তার কয়েকজন ভাই ও বোনেরাও বসবাস করে। হানিফের সেখানে গাড়ি-বাড়িসহ সম্পদ আছে বলে জানা গেছে। হানিফের কপাল খুলে যায় শেখ পরিবারের আত্মীয় হওয়ার সুবাদে। দলের শীর্ষ পদ পাওয়ার পরই তার কাছে লোকজনের আনাগোনা বাড়তে থাকে। দলের পদ-পদবি পাওয়ার জন্য অনেকেই ছুটে আসতেন তার কাছে। এছাড়া ঢাকা তদবিরও কেন্দ্রিক নানা কাজের করতেন হানিফ। দলের পদ- পদবি দেওয়ার নামে যেমন অর্থ বাণিজ্যে করেছেন তেমনি নানা তদবির, টেন্ডার বাণিজ্যে, বড় বড় কাজ বাগিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন শত কোটি টাকা। হানিফের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম কোয়েষ্ট ইন্টারন্যাশনাল বিএমটিসি । কাওরান বাজারে ভবনে তার ব্যবসায়ীক ও রাজনৈতিক অফিস। সেই অফিস ও কুষ্টিয়ার বাসায় বসেই সব কিছু একহাতে নিয়ন্ত্রণ করতেন হানিফ। সর্বশেষ সংসদ নির্বাচনে হানিফ তার হলফ-নামায় আয়ের উৎস হিসেবে ব্যবসা উল্লেখ করেন। সর্বশেষ স্ত্রীর নামে কুষ্টিয়ায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে লাইসেন্স নেন। লালন কলা বিশ্ববিদ্যালয় নামে কার্যক্রম শুরু করেছিলেন জেলা পরিষদের নতুন ভবনে।
জেলা পরিষদ সূত্র জানায়, ৭ম ও ৮ম তলা ভাড়া করেছিলেন। মাসিক ৩ লাখ টাকা ভাড়ায় নেন হানিফ। আর এককালিন দিয়েছিলেন প্রায় অর্ধকোটি টাকা। শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা শেষ হলেও পট পরিবর্তনের কারনে কার্যক্রম আপাতত বন্ধ হয়ে গেছে। প্রতিষ্ঠান সাজাতে বিনিয়োগ করেছিলেন কয়েক কোটি টাকা।
সূত্র জানিয়েছে, দলের একাধিক সূত্র জানি রাজনীতিকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে গত ১৫ বছরে শতশত কোটি টাকা কামিয়ে নিয়েছেন হানিফ। এসব টাকার বড় অংশ পাচার করেছেন কানাডাসহ কয়েকটি দেশে। আর দেশে কয়েকটি বড় বড় কোম্পানির সাথে বেনামে হানিফের ব্যবসা আছে। এছাড়া গাজীপুরে পার্টনারে রিসোর্ট, কক্সবাজারে জমিসহ সম্পদের খবর পাওয়া গেছে। কুষ্টিয়া হানিফের ভাই আতার যে মার্কেট, দোকান ও শপিং-মলে দোকান আছে সেগুলো দুইজনের অর্থে ক্রয় করা বলে জানা গেছে। এর মধ্যে জেলা পরিষদ অফিস সূত্র জানিয়েছে, তাদের নতুন দুটি দোকান নেওয়া আছে কোটি টাকায়।
এছাড়া তমিজ উদ্দিন মার্কেট কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক জানান, খেলার মাঠের পাশে দুই তলা নতুন যে মার্কেট হয়েছে সেখানে ৮টি দোকান আছে তাদের নামে। দোকানের ভাড়াটিয়ারা জানান, প্রতিমাসে হানিফের ভাই আতা টাকা তুলতেন।'
জেলা পরিষদের বটতৈল এলাকায় যে দোকান আছে সেখানে ১২টি দোকানের খোঁজ পাওয়া গেছে। প্রতিটি দোকান ভাড়া দেওয়া আছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী নাজিম উদ্দিন বলেন, মার্কেট নির্মাণ করার পর এখানে হানিফ তার ভাইয়ের নামে ১২টি দোকান নেন। এসব দোকান থেকে মাসে লাখ টাকার বেশি ভাড়া ওঠে।
শহরের বহুতল বিপণী বিতান পরিমল টাওয়ারেও একাধিক দোকান আছে হানিফ ও আতার নামে। মার্কেট কমিটি জানায়, দুটি দোকানের দাম কোটি টাকার ওপরে। ভাড়া দেওয়া আছে দোকান দুটি। ভাড়া ওঠে প্রতি মাসে অর্ধলাখ টাকা। এছাড়া সমবায় মার্কেটের নিচ ও দোতলায় একাধিক দোকান আছে। সেখানে ব্যবসা আছে হানিফ ও আতার। যৌথভাবে এসব ব্যবসা করতেন দুই ভাই।
শহরের হাউজিংয়ে ৫ কাঠার প্লটের ওপর ১০তলা বাড়ি নির্মাণ করা হয় কয়েক বছর আগে। প্রতি তলায় ৪টি করে ফ্লাট আছে। হাউজিং এলাকার বাসিন্দা আনিসুর রহমান বলেন, হাউজিং এর জমির সাথে স্থানীয় একজনের জমি দখল করে এ বাড়ি নির্মাণ করা হয় কয়েক বছর আগে। আতার নামে হলেও পেছনে ছিলেন হানিফ। লোকজনের চোখ এড়াতেই হানিফ এ বাড়ি আতার নামে করেছেন বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
এই বিভাগের আরও
আরও পড়ুন
নাঙ্গলকোটে বিদ্যুৎ স্পৃষ্টে ব্যবসায়ী সজিবের মৃত্যু
মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা ও সুখি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে আমরা দৃঢ় প্রতিজ্ঞ -- মিয়া গোলাম পরওয়ার
বিসিবি চলছে জোড়াতালি দিয়ে: আসিফ মাহমুদ
এমিলির গ্রিফিথসের যন্ত্রণা,বিশ্বজুড়ে নারী স্বাস্থ্যের সচেতনা প্রয়োজন
গোলাপগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের নতুন কমিটি গঠন
সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণ
ভোলা-বরিশাল-লক্ষ্মীপুর নৌরুটে নাব্যতা বাড়াতে ড্রেজিং শুরু করেছে বিআইডব্লিউটি
ঈশ্বরগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় শিশু শিক্ষার্থীসহ নিহত ২
কেরানীগঞ্জে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় দুই সহোদরেরর মর্মান্তিক মৃত্যু
টেকনোনেক্সট সফটওয়্যার লিমিটেড-এ শতাধিক অভিজ্ঞ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দুর্নীতি মুক্তকরণ বাংলাদেশ ফোরামের অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা
"নগ্ন ছবি তুলে তোপের মুখে পরেছেন নির্মাতা অমিতাভ রেজা চৌধুরী"
চন্দ্রঘোনায় সাজাপ্রাপ্ত আসামী গ্রেপ্তার
বিচার না হলে জাতির সঙ্গে অপরাধ করা হবে -ইসলামী আইনজীবী পরিষদ
শিয়াল-কুকুরের দখলে ডিবি হারুনের শতকোটির রিসোর্ট!
ঢাবির হলে আয়োজিত হলো জুলাই বিপ্লবের থিমে দেশের সবচেয়ে বড় বিতর্ক প্রতিযোগিতা
দ্রুত জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে - গয়েশ্বর চন্দ্র রায়
দাউদকান্দিতে জামায়াতে ইসলামের নবনির্বাচিত আমীরদের শপথ গ্রহণ
সেনেগালের নির্বাচন,পরিবর্তনের নতুন অধ্যায়ের আশা
ট্রাইব্যুনালে র্যাব ও পুলিশ কর্মকর্তাসহ ৫৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ