শুস্ক মৌসুমের শুরুতের পদ্মা নদীতে ডুবোচরের কারণে বিঘ্নিত হয় পন্যবাহী জাহাজ চলাচলে। বর্তমানে পদ্মার পানি শুকিয়ে প্রায় তলানিতে চলেগেছে। পদ্মা মরাখালে পরিনত হয়েছে।
এ কারনে শত শত পন্যবাহী জাহাজ যেখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটয়ে নোঙ্গর করে আছে। ঢুকতে পারছে না বন্মাদর ঘাটে।তাই কোন জাহাজ, কার্গো মালামাল নিয়ে যথাসময়ে ভীরতে পারছে না ঘটে। এতে দেশের একমাত্র মাঝারি নৌবনদরটিতে নেমে এসেছে অচল অবস্থা। এতে বড় বড় জাহাজ ঘাটের প্রবেশ মুখে ও আসতে পারছেনা, নদীবন্দর পর্যন্ত। প্রয়োজন জরুরি ড্রেজিং করা। বন্দর ব্যবহারকারীদের দাবী দ্রুত ড্রেজিং করে নাব্যতা না ফেরাতে পারলে বন্দরের সাথে পন্যবাহী জাহাজ চলাচল একেবারেই বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
এতে ব্যবসায়ীরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, তেমনি বিপাকে পড়বেন জাহাজ মালিকসহ বন্দর কেন্দ্রিক ১০ থেকে ১২ হাজার শ্রমিক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে, গত ৯৬ ঘন্টার একটি সামারি রিপোর্ট অনুযায়ী পাউবোর একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র ইনকিলাব কে নিশ্চিত করছেন, দৌলতদিয়া ফেরিঘাট, পাবনা দাসুরিয়া ফেরিঘাট,আরিচা ফেরিঘাট, পাটুরিয়া ফেরিঘাট ও লঞ্চঘাট, মুন্সিজ্ঞে ভাগ্যকুল,মিরকাদিম, লৌহগঞ্জ, সদরপুরের শয়তানখালী,শরীয়তপুরের কাচিকাটার চর,ফরিদপুরের সিএন্ডবি ঘাট, কামারডাঙ্গী, এবং কবিরপুরের মোহনা পর্যন্ত মোট ১৭/১৮ পদ্মার পয়েন্ট পানির হিসেব মতে গত তিন দিনের চেয়ে ঐ সকল পয়েন্ট পানির স্তর কমে, প্রায় চার সেঃমিঃ নিচে নেমে আসছে। আর বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ ইনকিলাব কে বলছেন, বিভিন্ন এলাকায় নাব্যতা সংকট দেখা দেয়ায় সেসব এলাকায় নাব্য্যতা ফেরাতে ড্রেজার পাঠানো হয়েছে। তারা সেখানেও নাব্যতা ফেরাতে রাত দিন কাজ করছেন।
ড্রেজার সংকটের কারণে ফরিদপুর নদী বন্দর অংশের ড্রেজিং কাজ শুরু করতে বিলম্ব হচ্ছে। কিন্ত আগামী ৭ দিনের মধ্যে, ফরিদপুর নৌ বন্দর ঘাট নর্থচ্যনেল ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের অংশে ডিক্রিচড়ের ৪ নং ওয়ার্ডের উপরি ভাগে এবং কামারডাঙ্গির মাঝপদ্মায় জরুরি ভিওিতে ড্রেজিং কাজ শুরু না করলে, ছোট ছোট নৌযানও চলাচলে চরম ব্যাঘাত ঘটতে পারে বলে, ঘাট এলাকার জাহাজ ও ট্রলার কার্ডো ব্যবসায়ীরা ইনকিলাব জানিয়েছেন।
ফরিদপুর নদী বন্দর দিয়ে, কয়লা, বালু, সার, সিমেন্ট, চাল, গরু ও পাটসহ অন্তত ৪০ প্রকারের পন্য আনা নেয়া করা হয়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ছোট, বড় ও মাঝারি আকারের শতাধিক জাহাজ দেশের বিভিন্ন নৌবন্দর থেকে মালামাল আনা নেয়া করে। বন্দর ব্যবহারকারীদের দাবী, নভেম্বরের শুরু থেকেই ডুবো চরের কারণে বিঘ্নিত হচ্ছে বড় জাহাজ চলাচল, ক্রমেই তা তীব্র আকার ধারণ করছে। এরই মধ্যে বড় বড় জাহাজ আসা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে বড় আকারের জাহাজ এখন ঘাট নেই বললেই চলে। বড় জাহাজে মাল পরিবহনে জাহাজ মালিকের ও খরচ পুঁশিয়ে একটু লাভ থাকে। আর ব্যবসায়ীরও লোকসান কম যায়। মোট কথা, কন্টাক্টটার ও জাহাজ মালিকরা উভয়ে ভাল থাকতে পারেন।
ইনকিলাবের সাথে কথা হয়, জাহাজের ফোরম্যান মোঃ মমিন মিয়া, তুহিন,আবজাল,কালু সুমন অন্যান্যদের সাথে, তারা উভয়ে ইনকিলাব কে জানান, মাঝারি আকারের জাহাজ চলাচলেই ১০ থেকে ১২ ফুট গভীরতার প্রয়োজন হয়। কিন্ত উল্লেখিত পয়েন্টের পানি কমে তা ৭/৮ ফুট পর্যন্ত আসছে।
কিন্তু কোথাও কোথায় সেই নাব্যতা না থাকায়, সতর্কতার সাথে নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে ঘাটে আসতে হচ্ছে। এমভি মরিয়ম জাহাজের চুকানি মোঃ মোকলেছুর রহমান ইনকিলাব কে জানান, পদ্মার পানি স্বল্পতার কারনে চাঁদপুর থেকে ফরিদপুর সিএন্ডবি ঘাট আসতে সময় লেগেছে পূর্বের চেয়ে ৪ ঘন্টা বেশি। এতে তেল খরচও যেমন বাড়ছে তেমনি সময় শ্রম ও শ্রমিক খরচও লেগেছে তিনগুন।
এমভি চায়না এন্ড রেশমার সারেং ইনকিলাব কে বলেন, পদ্মার বুকে শতেক খানে ডুবোচর দৃশ্যমান হওয়ায় চাঁদপুর ও চট্টগ্রাম থেকে মালবাহী জাহাজ আসতে আগের তুলনায় ২০/২৫ নটিকেল ঘুরে আসতে হয়। এ অবস্থা চলতে থাকলে সংকট আরো ঘনীভুত হবে। এতে ক্ষতিতে পড়ছে জাহাজ মালিক এবংঘাট ও ব্যবসা পরিচালনাকারী, পরিবহন শ্রমিক ও ঘাটের অন্তত ১০ থেকে ১২ হাজার শ্রমিক। বাড়ছে বেকারত্ব। পাশাপাশি হুহু করে কমছে পদ্মার পানি।
জাহাজ পরিচালনাকারী, শ্রমিকদের কথা বললে তার মধ্যে ইমান আলী, রফিক,আলতাফ ইনকিলাব কে জানান, দ্রুতই পদ্মা নদীর পানি কমে যাওয়ায় জাহাজ মালিক,ঘাট শ্রমিক, ঘাট কর্তৃপক্ষ সকলেই মহা সমস্যার মধ্যে আছি। এখনই কামাই নাই। এক মাত্র বেঁচে থাকার স্হান পদ্মার বন্দর ঘাট তাও শুকিয়ে পানি শূন্য হয়ে যাচ্ছে। বাঁচাইতো মুসকিল।
ফরিদপুর সিএন্ডবি ঘাটের স্হানীয় কয়লা, সিমেন্ট ও পাথর ব্যবসায়ী মোঃ মুজিবর মিয়া,মোঃ আবু ফকির,মোঃ রমজান আলী ইনকিলাব কে জানান, দ্রুততম সময়ের মধ্যে পরিকল্পিতভাবে ড্রেজিং করে নাব্যতা রক্ষা না করা গেলে ক্ষতির মুখে পড়বেন সব ধরনের ব্যবসায়ীরা।
একই সাথে বিরুপ প্রভাবে থমকে যেতে পারে জেলার উন্নয়ন কাজও। বিগত বছরের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে, ব্যাবসায়ী সংশ্লিষ্টদের দাবী, ইতিপুর্বে (বিগত বছরে) শুকনো মৌসুমের শেষ দিকে বিআইডব্লিউ কর্তৃপক্ষ ড্রেজিং কাজ শুরু করায় কাঙ্খিত সুফল আসেনি। তাই এ বছর সংকটের শুরুতেই উদ্যোগ নেয়ার দাবী তাদের। বন্দর দিয়ে পন্য আমদানী কারক ব্যবসায়ী, ও ব্যবসায়ীক সহযোগীরা ইনকিলাব কে জানান, মুল মালিকের ব্যাবসার লোকসন চলছে। সেই প্রভাব আমাদের উপরও পড়ে। পদ্মা নদীর ফরিদপুরের নাব্যতার সংকটের বিষয়টি জ্ঞাত রয়েছেন জানিয়ে ফরিদপুর নদী বন্দরের দ্বায়িত্বে থাকা পোর্ট অফিসার মামুন অর রশীদ মোবাইলে ইনকিলাব কে জানান, বিষয়টি এরই মধ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
ড্রেজার সংকটের কারণে দ্রুত কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। তবে খুব শীঘ্রই ফরিদপুরের অংশে ড্রেজিং কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি। পদ্মা নদীর ফরিদপুরের সিএ্যান্ডবি ঘাটকে ২০১৫ সালে ফরিদপুর নদী বন্দর ঘোষনা করে বিগত সরকার। ২০১৭ সালের ০৮ সেপ্টেম্বর, থেকে নদী বন্দর হিসেবে ইজারা প্রদান করে রাজস্ব আয় করছে সরকার। কিন্তু সরকারের রাজস্ব খাতে নিয়মিত রাজস্ব জমা পড়লেও ঘাটের ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করতে ঘাট কর্তৃপক্ষের আন্তরিকতা খুবই অভাব বলে দাবি করে স্হানীয় জাহাজ ব্যাবসায়ী মোঃ মোকলেছুর রহমান।