জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করার পর থেকেই পদবঞ্চিত ছাত্রদল নেতাদের কর্মকান্ডে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মনে ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি করে, ব্যাহত হচ্ছে সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশ। টায়ার জালিয়ে বিক্ষোভ, লাঠি সোটা নিয়ে ক্যাম্পাসে অবস্থান ও ক্যাম্পাস অবরুদ্ধ করে রাখাসহ নানা কর্মকান্ডে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব লক্ষ করা যাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। একাধিকবার সাধারণ শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগও উঠেছে পদবঞ্চিত নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবী,' দল তাদের পদ দিবে নাকি দিবে না এটা নিয়ে তাদের দলীয় কার্যালয়ে সমঝোতা করুক। এই ক্যাম্পাস তো কোনো রাজনৈতিক দলের না। পেশী শক্তি দিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর প্রভাব সৃষ্টি করার রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিত করা জুলাই বিপ্লবের অন্যতম দাবী'।
জুলাই বিপ্লবের পর কয়েকটি ছাত্রসংগঠন আত্মপ্রকাশ করে কিন্তু কোনো ছাত্র সংগঠনের কর্মকান্ডই সাধারণ শিক্ষার্থীদের মনে ক্ষোভের সৃষ্টি করে নি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কয়েকটি ফেসবুকে পেজে সাধারণ শিক্ষার্থী সোচ্চার হয়ে ছাত্রদলের এমন কর্মকান্ডে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। পদবঞ্চিত ছাত্রদল নেতারা প্রেসবিজ্ঞপ্তি ও দলটির সাংগঠনিক অভিভাবক তারেক রহমান বরাবর কমিটি বাতিল দাবি করে স্মারকলিপি প্রদান করলেও দৃশ্যমান কোনো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। অন্যদিকে আহবায়ক কমিটির নেতৃবৃন্দের সাথে পদবঞ্চিতদের কোনো ধরনের সংঘর্ষ এড়িয়ে চলতে কমিটির সকলে একসাথে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে নি।
তবে পদবঞ্চিতদের দ্বারা ক্যাম্পাসে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের আহবায়ক কমিটির সদস্য মায়িদ হাসান ক্যাম্পাসে ক্লাস করতে গেলে মেইন গেটের সামনে পদ বঞ্চিতদের কয়েকজন মারধর করে ও ধাওয়া দেয় বলে অভিযোগ উঠে। এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ ব্যাচের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল কর্মী জাকারিয়া হোসেন কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি থেকে বের হওয়ার পর তাকে নানা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে ক্যাম্পাসে না ঢুকতে হুমকি দিয়ে বের করে দেয়। বৃহষ্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেন তারা। এ দিন বিক্ষোভ শেষে তারা প্রক্টর বরাবর অভিযোগপত্র জমা দেন। গতবুধবার বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের নেতাকর্মী দ্বারা মারধরের স্বীকার হয়ে বৃহস্পতিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে বিক্ষোভ করে প্রশাসন বরাবর অভিযোগপত্রে মো. জিহান বলেন, আমি এবং আমার এক বন্ধু আইইআর ভবনের দ্বিতীয় তলায় দাঁড়িয়ে গল্প করতেছিলাম তখন নিচে ছাত্রদলের সদস্যরা নিজের বিষয় নিয়ে বাকবিতন্ত করতেছিল। আমরা উভয় তাদের বাকবিতন্ডা দেখতেছি এবং আমাদের গল্পও করতেছিলাম তখন আমাদের হাতে মোবাইল ছিল। সেই মোবাইল দেখে সবাই আমাদের মারতে আসে যদিও অনেকেই ছিল তারা দৌড়ে সরে গেছে তবে আমি এবং আমার বন্ধু যাইনি। তখন ছাত্রদলের সদস্য রাইয়ান (পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ ১৭তম ব্যাচ) সহ ২০ হতে ৩০ জন আমাদের দিকে এসে আমাকে লাথি এবং থাপ্পর পাশাপাশি গা ধাক্কা দেয়। আমাকে থাপ্পর মারার পূর্বে আমি চিৎকার করে বলতেছিলাম আমি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের স্টুডেন্ট আমি ভিডিও করি নাই, আপনারা আমার মোবাইল চেক করেন লক খুলে দেই" তা না শুনে আমাকে মারতে শুরু করে। এই বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এ সময় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী অভিযুক্ত ছাত্রদল নেতা রায়হানসহ জড়িতদের বহিষ্কার করার জোর দাবি জানান।
এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মনে। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী জিহান হাসান বলেন, 'বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন সফল হলেও সম্পূর্ণরুপে স্বাধীনভাবে ক্যাম্পাস উপভোগ সফল হয় নি। জুলাই বিপ্লবে নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে আন্দোলন করেছি এবং প্রথম সারির অংশগ্রহণকারী ছিলাম। আজ নিজের সাথে এমটা মেনে নিতে পারতেছি না '।
শাহিন মিয়া নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, 'জিহানকে কেন মারা হলো এর বিচার জবি ছাত্রদলের প্রকাশ্যে করতে হবে নয়তো এর পরিণতি ভালো কিছু বয়ে আনবে না'। রায়হান হাসান রাব্বি বলেন,' প্রশাসনের কাছে জবাব চাই কেন এখনও আমার ভাইয়েরা দলীয় লোকদের কাছে মার খায়? ক্যাম্পাসে কেন মারামারি হবে? কেন আমার ভাইদের ভয়ে থাকতে হবে? '
জবি ছাত্রদলের কয়েকজন সাবেক নেতাদের সাথে কথা জানা যায়, পূর্বের নানা ঘটনায় ছাত্রদল কর্মীদের এমন উগ্র আচরণের কারণেই তাদেরকে বর্তমান কমিটিতে রাখা হয় নি। সংগঠন নানা দিক চিন্তা ভাবনা করে কমিটি দিয়েছে। গতিশীল রাজনৈতিক দলের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে মেধাভিত্তিক রাজনীতি চর্চা না করে যারা উগ্রতা ছড়ায় তারা কোনো ছাত্র সংগঠনের জন্যই যোগ্য না। জুলাই বিপ্লবের পর রাজনৈতিক পরিবর্তন এসেছে, ফ্যাসিস্ট আমলের রাজনীতি পুনরায় ফিরিয়ে আনার কোনো সুযোগ নেই। সাধারণ শিক্ষার্থীরা এটা হতে দিবে না।
জবি ছাত্রদলের আহবায়ক মেহেদী হাসান হিমেল বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর কোনো ধরনের সহিংসতা কোনোভাবেই কাম্য নয়। ছাত্রদলের কেউ যদি জড়িত থাকে তাহলে আমরা এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব। পদবঞ্চিতরা আমাদের সহযোদ্ধা ছিলেন। কমিটিতে পদ না পেয়ে তাদের ভিতরে ক্ষোভ আছে এটা স্বাভাবিক। তাদের সাথে কোনো ধরনের সহিংসতা যেন না হয় এজন্য আমরা ক্যাম্পাসে যাচ্ছি না। তবে ক্যাম্পাসে শিক্ষার পরিবেশ বজায় থাকুক, সাধারণ শিক্ষার্থীরা নিরাপদ থাকুক এ উদ্দেশ্যে ছাত্রদল কাজ করছে।
এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. তাজাম্মুল হক বলেন, ভুক্তভোগী আমাদের কাছে অভিযোগ করেছে আমরা পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেবো। এর পূর্বে ক্যাম্পাসে বহিরাগত যেন প্রবেশ করতে না পারে এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্টুডেন্ট আইডি কার্ড সাথে রাখার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।