সাভার ও আশুলিয়ায় পোশাক শ্রমিকদের একমাত্র বিনোদন স্মার্টফোন

Daily Inqilab রাউফুর রহমান পরাগ

০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:৪২ পিএম | আপডেট: ০৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১২:৪২ পিএম

জাহাঙ্গীর-আনোয়ারা দম্পতি। দুজনেরই গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জে। প্রায় ১০ বছর আগে দুই সন্তানকে গ্রামের বাড়িতে রেখে পেটের দায়ে আসেন শিল্পাঞ্চল সাভারে। এখন দুজনেই আশুলিয়ার একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। ছোট একটি ঘর ভাড়া নিয়ে চলছে তাদের সংসার। দুজন মিলে যা আয় করেন তার অর্ধেক চলে যায় নিজেদের থাকা-খাওয়ার খরচে। আর বাকিটা দিয়ে সন্তানদের পড়াশোনা ও তাদের দৈনন্দিন চাহিদা পূরণ। দুই একদিনের ছুটি পেলেও খরচের ভয়ে সন্তানদের দেখতে যাওয়ার সাহস করে উঠতে পারেন না। আর সাধারণ ছুটিতে বিনোদন বলতে হাতে থাকা স্মার্টফোন।

 

জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, জিনিসপত্রের যে দাম, যা কামাই করি খুব হিসেব করে খরচ করতে হয়। প্রায় প্রতিদিনই বাড়িতে থাকা ছেলে-মেয়ের সাথে ভিডিও কলে কথা বলি। দিনের কাজ শেষে ঘুমানোর আগে এই আমাদের বিনোদন। অফিস দেরি করে ছুটি দিলে অনেক সময় তাও হয় না। ছেলেমেয়েরা ঘুমিয়ে যায়। সকালে ঘুম থেকে উঠে আবার দৌড়। এভাবেই চলছে জীবন। ঈদ গেল বেশ কিছু বাড়তি খরচও হয়েছে। আবার টাকা জমাচ্ছি সামনের ঈদের জন্য।

 

জাহাঙ্গীরের স্ত্রী আনোয়ারা বলেন, সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা ডিউটি। রাতে এসে রান্না-বান্না করতেই তো সময় চলে যায়। ছুটির দিনে কাপড়-চোপড় ধোয়া, বাজার সদাই। এর বাইরে অন্য কিছু তো ভাবতেও পারি না। মাঝে মাঝে আগে ছুটি হলে একটু টিভি দেখি আর নাহলে প্রতিবেশীদের সাথে গল্প-গুজব। এভাবেই কেটে গেল এতগুলো বছর।

 

সাভার-আশুলিয়ায় জাহাঙ্গীর-আনোয়ারা দম্পতির মত এমন হাজারও শ্রমিক দম্পতির অবস্থা একই রকম। শিল্পাঞ্চল সাভার-আশুলিয়ায় প্রায় ১০ লাখ শ্রমিকের বসবাস, যার বেশিরভাগই পোশাক শ্রমিক। অর্থ উপার্জনের আশায় যারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পাড়ি জমিয়েছেন। সাভারের ক্রমবর্ধমান শিল্পব্যবস্থা তাদের রুটি-রুজির ব্যবস্থা করে দিলেও বঞ্চিত করেছে বিনোদন থেকে। কর্মসংস্থান হলেও মানসিক বিকাশ বা অবকাশের যেখানে নেই কোন সুযোগ। লাখ লাখ শ্রমিকের কাছে এখন বিনোদন বলতে বোঝায় হাতে থাকা স্মার্টফোন। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিকে ঘিরে শ্রমিকদের দৈনন্দিন জটিলতা, আর এক ঘেয়েমি জীবনকে অবসাদ গ্রাস করতে পারে শ্রমিকদের বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

বাংলাদেশ বস্ত্র ও পোশাক শিল্প শ্রমিক সংগঠনের একজন নেতা বলেন, শ্রমিকদের তো ঘুরতে যাওয়ার জায়গাও নেই। ছুটি পেলে যে বাড়িতে যাবে সেখানেও খরচের ঝক্কি। একটা শ্রমিক বাড়িতে যাওয়ার আগে বেশ কিছুদিন সময় নিয়ে টাকা জমায় তারপরে বাড়িতে যায়। আবার বাড়ি থেকে ঘুরে এসে ধারদেনা করে চলতে হয়। এছাড়া অফিস ছুটির পর বা ছুটির দিনে তাদের তো আর করার কিছু নেই। অল্প বয়সী যারা তারা হয়ত সাভারের স্মৃতিসৌধসহ এদিক সেদিকে যায়। কিন্তু সেটাও খুবই অল্প অংশ। এর বাইরে শ্রমিকদের বিনোদনের কথা তো কেউ ভাবে না। শ্রমিকদের মানসিক চাপ যে দিন দিন বাড়ছে তা তো দেখার কেউ নেই।

 

ইউনাইটেড ফেডারেশন অব গার্মেন্টস ওয়ার্কার্সের সাভার-আশুলিয়া আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি ইমন শিকদার বলেন, শ্রমিকরা ঘুরতে যাবে টাকা পাবে কোথায়? যা বেতন তা দিয়ে পরিবার নিয়ে টিকে থাকাই তো কষ্ট। আর কম খরচে বিনোদনের তেমন কোন ব্যবস্থা নেই সাভারে। ফ্যান্টাসি কিংডম বা নন্দন পার্কের মত বিনোদন কেন্দ্র সাভারে আছে, কিন্তু সেখানে যেতে যে খরচ একজন সাধারণ শ্রমিকের পক্ষে তা বহন করা সম্ভব না। যাদের হাতে স্মার্টফোন আছে, অবসর সময়ে তারা সেটা নিয়েই পরে থাকে।

বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফেডারেশনের সভাপতি সারোয়ার হোসেন বলেন, অবৈধ ছাঁটাই বন্ধ, শ্রমিকদের জন্য পেনশন স্কিম চালু, গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য রেশনিং সুবিধা চালুসহ আমাদের বেশ কিছু দাবি নিয়ে আমরা সারা বছর কাজ করি। এত বছরেও শ্রমিকরা এসকল সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এর বাইরে বাড়তি কিছু তো আমরা ভাবতেই পারি না। তবে শ্রমিকরা যাতে মানসিকভাবে সুস্থ থাকে, তাদের যেন মানসিক উন্নয়ন হয় এই কাজ তো কেউ করছে না। আমরা মাঝে মাঝে বিভিন্ন দিবসে কিছু কিছু আয়োজন করি। মাঝে মাঝে তাদের ট্রেনিং সেশনের আয়োজন করি। কিন্তু তাতে অংশ নেওয়ারও সুযোগ পায় না সব শ্রমিকরা।


বিভাগ : বাংলাদেশ


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

এই বিভাগের আরও

দোয়ারাবাজারে ভুমিখেকোদের দখলে মৌলা খালের নালা!
সুন্দরগঞ্জে ট্রাক্টরের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত
সেনাবাহিনীর মহড়া দেখতে রাজবাড়ীতে প্রধান উপদেষ্টা
দৌলতখানে বিলুপ্তির পথে খেজুর রস
লামায় ১ জন অপহরণ, ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবী
আরও

আরও পড়ুন

দোয়ারাবাজারে ভুমিখেকোদের দখলে মৌলা খালের নালা!

দোয়ারাবাজারে ভুমিখেকোদের দখলে মৌলা খালের নালা!

মহাত্মা গান্ধী পাকিস্তানের জনক, ভারতের নয়ঃ অভিজিৎ ভট্টাচার্য

মহাত্মা গান্ধী পাকিস্তানের জনক, ভারতের নয়ঃ অভিজিৎ ভট্টাচার্য

দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সর্বদা সেনা সদস্যদের প্রস্তুত থাকতে হবে: প্রধান উপদেষ্টা

দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সর্বদা সেনা সদস্যদের প্রস্তুত থাকতে হবে: প্রধান উপদেষ্টা

যমুনা রেল সেতু দিয়ে দ্রুত গতিতে চলল পরীক্ষামূলক ট্রেন

যমুনা রেল সেতু দিয়ে দ্রুত গতিতে চলল পরীক্ষামূলক ট্রেন

সুন্দরগঞ্জে ট্রাক্টরের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত

সুন্দরগঞ্জে ট্রাক্টরের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত

আমরা বেশি দিন থাকব না, কিছু ভালো কাজের উদাহরণ রেখে যেতে চাই: অর্থ উপদেষ্টা

আমরা বেশি দিন থাকব না, কিছু ভালো কাজের উদাহরণ রেখে যেতে চাই: অর্থ উপদেষ্টা

সেনাবাহিনীর মহড়া দেখতে রাজবাড়ীতে প্রধান উপদেষ্টা

সেনাবাহিনীর মহড়া দেখতে রাজবাড়ীতে প্রধান উপদেষ্টা

দৌলতখানে বিলুপ্তির পথে খেজুর রস

দৌলতখানে বিলুপ্তির পথে খেজুর রস

লামায় ১ জন অপহরণ, ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবী

লামায় ১ জন অপহরণ, ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবী

পাগল করা গারো পাহাড়ের অপরূপ-বৈচিত্র্য টানছে পর্যটকদের

পাগল করা গারো পাহাড়ের অপরূপ-বৈচিত্র্য টানছে পর্যটকদের

সৈয়দপুরে মুক্তা নামে এক গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার, স্বামী রানা আটক

সৈয়দপুরে মুক্তা নামে এক গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার, স্বামী রানা আটক

নগরকান্দায় মাটিতে পোঁতা অবস্থায় মিলল অ্যাম্বুলেন্স চালকের গলাকাটা লাশ

নগরকান্দায় মাটিতে পোঁতা অবস্থায় মিলল অ্যাম্বুলেন্স চালকের গলাকাটা লাশ

মেট্রোরেলের দরজায় আটকা পড়েন নারী

মেট্রোরেলের দরজায় আটকা পড়েন নারী

জাতিসংঘ প্রধান সাইপ্রাস সমস্যার সমাধানে নতুন পথ সন্ধানের আহ্বান জানিয়েছেন

জাতিসংঘ প্রধান সাইপ্রাস সমস্যার সমাধানে নতুন পথ সন্ধানের আহ্বান জানিয়েছেন

নগরকান্দায় গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

নগরকান্দায় গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

কসবায় দুই ভারতীয় চোরাকারবারি আটক

কসবায় দুই ভারতীয় চোরাকারবারি আটক

১১ দিন পর খুলে দেওয়া হলো সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবন

১১ দিন পর খুলে দেওয়া হলো সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবন

শুদ্ধি অভিযানের শুরুতে জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদকের পদ স্থগিত, এখন টপ অব দ্যা টাউনে পরিণত

শুদ্ধি অভিযানের শুরুতে জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদকের পদ স্থগিত, এখন টপ অব দ্যা টাউনে পরিণত

বাশার আল-আসাদের শাসনের পতনের পর উন্মোচিত হলো গোপন সুড়ঙ্গপথ

বাশার আল-আসাদের শাসনের পতনের পর উন্মোচিত হলো গোপন সুড়ঙ্গপথ

কিছু মানুষ ব‍্যক্তিস্বার্থে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহিত করে

কিছু মানুষ ব‍্যক্তিস্বার্থে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহিত করে