শিবালয়ে কলেজ অধ্যক্ষ বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতসহ নানাবিধ দুর্নীতির অভিযোগ
০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:৪৪ পিএম | আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২৫, ০২:৪৪ পিএম
মানিকগঞ্জের শিবালয়ে ‘মহাদেবপুর ইউনিয়ন সরকারি ডিগ্রী কলেজের’ অধ্যক্ষ মো.খলিলুর রহমানের বিরুদ্ধে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম এবং বিল ভাউচারের মাধ্যমে কলেজের টাকা আত্মসাতসহ নানাবিধ দুর্ণীতির অভিযোগ উঠেছে।বিগত আওয়ামী সরকারের সময় রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এসব অপকর্ম করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।বিষয়গুলো নিয়ে কলেজের শিক্ষক ও স্থানীয়দের মাঝে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।দুর্নীতিবাজ অধ্যক্ষের পদত্যাগ দাবী জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষক- কর্মচারী এবং শিক্ষার্থীরা জানান, দীর্ঘদিন আওয়ামী সরকারের দলীয় প্রভাব খাটিয়ে একক আধিপাত্যের মাধ্যমে ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা (বিএম) শাখা, একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির বোর্ড ফি, স্নাতক (সম্মান) ও (পাস) কোর্সের ভর্তি বাবদ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফি অংশ, রোভার স্কাউট, কলেজ উন্নয়ন ফি, স্নাতক (পাস ) কোর্সের ইনকোর্স ও নির্বাচনী পরীক্ষা গ্রহণ না করে ভুয়া বিল ভাউচার, প্রত্যয়ন পত্র ও নম্বর পত্র বাবদ অর্থ গ্রহণ, বিভিন্ন প্রকার ভুয়া বিল ভাউচার , বৃক্ষরোপণ, কৃষি শিক্ষা বাবদ মানি রিসিট বিহীন অর্থ আদায়, কলেজের জায়গায় সিএনজি ওয়াকসপ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন অধ্যক্ষ মো.খলিলুর রহমান।
কলেজটিকে সরকারিকরণের পূর্বে ইচেচ্ছমতো নিয়োগ বাণিজ্য, ভর্তি বাণিজ্যসহ ঢাকায় যাতায়াত দলীয় এমপি, মন্ত্রীদের মোটা অংকের টাকা উৎকোচ দেয়ার বিল-ভাউচারসহ নানাবিধ উপায়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন অধ্যক্ষ।
এছাড়াও কারিগরি বিভাগে বেশী টাকা উত্তোলন করে কম টাকা লিখে মানি রিসিটের মাধ্যমে কম টাকা লিখে ব্যাংকে জমা দিতেন । এভাবে দীর্ঘ ১১ বছরে প্রায় দেড় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি এমন অভিযোগ করেছেন কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাধ্যমে স্নাতক (পাস )ও (সম্মান) কোর্সের ভর্তি ফি ২৫০ টাকা এর মধ্যে কলেজের অংশ বাবদ প্রাপ্ত টাকার পুরোটাই পকেটস্থ করেন তিনি।একাদশ শ্রেণির ভর্তির ক্ষেত্রেও একই কায়দায় অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
জানা যায়, বিগত ১১ বছরে কোনো ইনকোর্স পরীক্ষা হয়নি।ভুয়া মানি রিসিট এর মাধ্যমে উন্নয়ন ফি বাবদ ১০০০ টাকা, রোভার স্কাউট বাবদ ১০০ টাকাসহ ভুয়া বিল ভাউচার এর মাধ্যমে এসব টাকাও পকেটস্থ করেছেন তিনি।
এছাড়া তৎকালিন আওয়ামী সরকারের প্রভাবশালী নেতাদের সহযোগীতায় টাকার বিনিময়ে চরম অনিয়ম ও দুর্ণীতির মাধ্যমে চারজন শিক্ষক নিয়োগ দিয়েছেন অধ্যক্ষ খলিলুর রহমান। এর মধ্যে চিত্তরঞ্জন দে , মোঃ রহিজ উদ্দিন ও মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন একই কায়দায় প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।এছাড়া আমিও কুমার হোড়কে অনার্সের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে এমপিও করান ডিগ্রির তৃতীয় শিক্ষক হিসেবে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে,চিত্ত রঞ্জন দেকে গত ৮ সেপ্টেমবর ২০১৪ সালে মহাদেবপুর ইউনিয়ন ডিগ্রী কলেজে (রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে)প্রভাষক পদে নিয়োগ দেয়া হলেও ২০১৪ সালের নভেম্বর মাসেও কলেজের শিক্ষক হাজিরা খাতায় তার নাম পাওয়া যায়নি।
এদিকে তিনি ২০১৩ সালের ৮ই জুলাই থেকে ২০১৮ সালের ১২ আগস্ট পর্যন্ত একই উপজেলার তেওতা একাডেমিতে কর্মরত ছিলেন, যার ইনডেক্স নাম্বার ৪৮৭৬৮৪ এবং সেলারি একাউন্ট নং ০২০০০০৪৪২৬৪ অগ্রণী ব্যাংক শাখায় উক্ত প্রতিষ্ঠান হতে জুলাই ২০১৮ পর্যন্ত বেতন-ভাতা উত্তোলন করেছেন।এক সাথে দু’টি প্রতিষ্ঠানে কিভাবে চাকরি করেন এটাই এখন সচেতন মহলের জিজ্ঞাসা? চিত্তরঞ্জন দে গত ১২ আগস্ট ২০১৮ তারিখে তেওতা একাডেমী থেকে পদত্যাগ করেন এবং গত ২৪ শে এপ্রিল ২০১৯ সালে কলেজের শিক্ষক তালিকায় ৩৫ নং সিরিয়ালে তার নাম দেখা যায়।যা নিয়ম বহির্ভূত।কারণ ২০১৬ সালের ৩০ শে জুন কলেজ জাতীয়করণ করার পূর্বে কলেজগুলোর যাবতীয় নিয়োগ নিষেধাজ্ঞা ও আর্থিক বিষয়ের ক্ষমতা সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে বন্ধ করে দেয়। এদিকে গত ৫ জুলাই ২০২৩ তারিখে এডহক নিয়োগ পেয়ে বিগত এক বছরে বকেয়াসহ প্রায় ৫ লক্ষ টাকা উত্তোলন করেছেন এবং আরও চার বছরের বকেয়া বাবদ প্রায় ২০ লক্ষ টাকার উত্তোলন প্রক্রিয়া চলছে বলে বিশ্বাস্ত সুত্রে জানা গেছে।এখানেও কলেজ অধ্যক্ষ খলিলুর রহমান চতুরতার আশ্রয় নিয়ে প্রভাষক চিত্তরঞ্জনকে সহযোগীতা করছে বলে শিক্ষকরা জানিয়েছেন।এ নিয়ে শিক্ষক মহলে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।
একই কায়দায় কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক মোঃ রহিজ উদ্দিনকে গত ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১১ সালে নিয়োগ দেখালেও ২০১৪ সালের নভেম্বর মাসেও কলেজের শিক্ষক হাজিরা খাতায় তার নাম দেখা যায়নি।
এখানে উল্লেখ্য যে, তিনি গত ৯ সেপ্টেম্বর ২০০৯ সাল থেকে ১ নভেম্বর ২০১৬ তারিখ পর্যন্ত বাঘুটিয়া রংদারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক হিসেবে চাকরি করেন।
গত ২৪ শে জুলাই ২০১৯ সালের প্রস্তুতকৃত কলেজ শিক্ষক তালিকায় ২৮ নং সিরিয়ালে মোঃ রহিজ উদ্দিন এর নাম উল্লেখ রয়েছে। সরকারি নিয়ম ভঙ্গ করে ব্যাকডেটে নিয়োগ দিয়ে আত্তিকৃত হয়ে বিগত দুই বছরের বকেয়া বাবদ প্রায় ৭ লক্ষ টাকা উত্তোলন করেছেন এবং আরো তিন বছরের প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা উত্তোলণের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
অনুরূপ মহাদেবপুর ইউনিয়ন সরকারি ডিগ্রি কলেজে বিগত ২৬ শে সেপ্টেম্বর ২০১১ সালে নিয়োগ দেখালেও প্রভাষক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন তখন নারায়ণগঞ্জের হাজী বেলায়েত হোসেন ডিগ্রী কলেজে এমপিও ভুক্ত প্রভাষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২০১৩ সাল থেকে মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর উপজেলার তেরশ্রী ডিগ্রী কলেজে এমপিও ভুক্ত প্রভাষক হিসেবে চাকরি করেন তিনি।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ওয়াহিদুজ্জামানর পরিদর্শন রিপোর্টে বিষয়টি সুস্পষ্ট উল্লেখ থাকলেও তথ্য ওঅনুসন্ধানে দেখা যায় ২৬ শে সেপ্টেম্বর ২০১১ সাল থেকে মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনকে কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিষয়ের প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হলেও গত ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সালের শিক্ষক তালিকায় মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনের নাম নেই। অথচ ২৪ শে জুলাই ২০১৯ সালের প্রস্তুতকৃত শিক্ষক তালিকায় ৩৯ নং সিরিয়ালে মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন এর নাম উল্লেখ্য রয়েছে।সরকারিকরণের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য এখনো তোড়জোড় চালিয়ে যাচ্ছেন অধ্যক্ষ।
অপরদিকে কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক অমিও কুমার হোড়কে ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১১ সালে নিয়োগ দেয়া হলেও ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৪ সালের শিক্ষক তালিকায় নাম নেই।অথচ অধ্যক্ষের সহযোগীতায় প্রভাষক হিসেবে আত্তিকৃত হয়ে বিগত দুই বছরের বকেয়া বাবদ প্রায় ৩ লক্ষ টাকা উত্তোলন করেছেন এবং আরো তিন বছরের প্রায় ৮/৯ লক্ষ টাকার উত্তলনের প্রক্রিয়া করছেন।কলেজ শিক্ষক মহলে গুঞ্জন রয়েছে যে, ব্যাকডেটে নিয়োগ দেখিয়ে ৮ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন অধ্যক্ষ মোঃ খলিলুর রহমান।গত ২৪ শে জুলাই ২০১৯ সালের প্রস্তুতকৃত শিক্ষক তালিকায় ৩৮ নং সিরিয়ালে অমিও কুমার হোড়ের নাম রয়েছে।
এখানে উল্লেখ্য যে, ২০১৬ সালের ৩০ জুন তারিখ থেকে সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে কলেজের যাবতীয় নিয়োগ ও আর্থিক বিষয়ের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বন্ধ রাখা হয়।
কলেজের শিক্ষার সুন্দর পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে এবং দুর্নীতিবাজ অধ্যক্ষের অপসারণ সহ শাস্তির দাবি ও দুর্নীতির মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া চারজন শিক্ষকের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী তথা শিক্ষক –শিক্ষার্থীবৃন্দ।
এম,এ রউফ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের সহকারি অধ্যাপক ডিএম নাসিম উদ্দিন বলেন, এক সাথে দু’টি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করার কোন বিধান নেই।এক প্রতিষ্ঠান থেকে পদত্যাগ করে আরেক প্রতিষ্ঠানে যোগদান করতে হবে।
এসব বিষয়ে মহাদেবপুর ইউনিয়ন সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ খলিলুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, কলেজ সরকারিকরণের আগেই এই তিনজন শিক্ষককে নিয়ম মাফিক বিজ্ঞাপন প্রকাশের পর ইন্টারভিউতে যারা ভালো করেছেন তাদেরকেই নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে।সাবজেক্ট খোলা এবং ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির পর অনার্সের শিক্ষকদের কার্যক্রম শ্রুরু হয়। আর উক্ত শিক্ষক আমার সময়ে নিয়োগ হয়নি। আাগেই নিয়োগ হয়েছে। এছাড়া এসব শিক্ষকরা কোন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন বা ছিলেন কিন? তা আমার জানার বিষয় না।
বিভাগ : বাংলাদেশ
মন্তব্য করুন
আরও পড়ুন
শহীদ আবু সাঈদের কবরে তিন উপাচার্যের শ্রদ্ধা নিবেদন
রামগড়ে হত-দরিদ্রদের জন্য বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসা ক্যাম্প উদ্বোধন
লন্ডনে খালেদা জিয়াকে স্বাগত জানালেন তারেক রহমান
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিন নবজাতক জন্ম দিলেন এক গৃহবধূ
একনেকে অনুমোদন পেল ৪ হাজার কোটি টাকার ১০ প্রকল্প
নরসিংদীতে জুলাই ঘোষণাপত্র বিতরণ করছেন সারজিস আলম
বিডিআর জওয়ানদের মুক্তির দাবিতে যমুনা অভিমুখে পদযাত্রা, পুলিশের বাধা
ব্রাহ্মণপাড়ায় ডায়রিয়ার প্রকোপ শীত বাড়ছে মৌসুমি রোগবালাই
এ বছর থেকেই এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলি শুরু : শিক্ষা উপদেষ্টা
স্কুলে না থেকেও বেতন নিচ্ছেন নিয়মিত
সুপ্রিম কোর্ট বার সভাপতি মাহবুব উদ্দিন খোকনের সঙ্গে ফজল আনসারীর সাক্ষাৎ
কম্বলডা পায়া শান্তিতে ঘুমামু
ঈশ্বরগঞ্জে পুলিশের বিশেষ অভিযানে গ্রেফতার ১১
সিরাজদিখানে মাদক নিয়ে দ্বন্দ্ব ছুরিকাঘাতে ২ জন আহত
নিয়োগ দুর্নীতির অভিযোগে ওয়াসার তাকসিমসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা
রাশিয়ার সাইবার ইউনিট পোল্যান্ডে হামলার লক্ষ্যে সক্রিয়: মন্ত্রী গাওকোভস্কি
সিংগাইরে সিসিডিবি'র উদ্যোগে কম্বল বিতরণ
মতলবে গাছ কাটতে গিয়ে গাছ ব্যবসায়ীর মৃত্যু
ট্রাম্পের গ্রিনল্যান্ড-পানামা খালের প্রতি আগ্রহে উত্তেজনা বৃদ্ধি
লক্ষ্মীপুরে জমি দখলের অভিযোগে যুবদল নেতাকে বহিষ্কার