কক্সবাজারের বাসিন্দা, কাতার প্রবাসী আমির উদ্দীন অভিযোগ করে বলেছেন, কথিত আমেরিকান নাগরিক হারুন আসাদ মির্জা ও তার সহযোগীরা আন্তর্জাতিক নারী পাচারকারী চক্রের সক্রিয় সদস্য। শুধু তাই নয়- চক্রটি তার কলেজ পড়ুয়া মেয়ে অষ্টাদশী সার্জিনা আফরিন আমিরাকে নানান প্রলোভনে খ্রীস্টান ধর্মে দীক্ষিত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুরে প্রবাসী আমির উদ্দীন তাঁর কক্সবাজারের পাহাড়তলির বাসায় এক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, তিনি একজন কাতার প্রবাসী। দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে আসা যাওয়ার মধ্যে প্রবাস জীবন কাটাচ্ছেন। তার স্ত্রীর মাধ্যমে ঘটনার বিষয়ে জানতে পেরে গত ৬ ডিসেম্বর তিনি দেশে ফিরে আসেন। তার প্রথম কন্যা সার্জিনা আফরিন আমিরা (১৮) কক্সবাজার সরকারি কলেজে মানবিক ২য় বর্ষের ছাত্রী। আমিরা গত ২ বছর পূর্ব থেকে অথিস্ট রিপাবলিক গ্রুপের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ করে। ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ করা অবস্থায় অনলাইনর মাধ্যমে পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত নাগরিক হারুন আসাদ মির্জা, কক্সবাজার সদর উপজেলার চৌফলদন্ডীর ফাইজা ইসলাম, নোয়াখালীর বসুরহাটের নাজমুস শাহরিয়ার মাহির সাথে পরিচয় হয়।
অনলাইনে পরিচয়ের মাধ্যমে আসাদ মির্জা তার মেয়েকে বিভিন্নভাবে প্রলোভন দেখিয় আর্থিক সুবিধাসহ ধর্মান্তরিত করার চেষ্টা চালিয়ে যায়। খ্রিষ্টান ধর্মের বিভিন্ন ধর্মীয় চিহ্ন সহ বিভিন্ন বই উপহার হিসেবে তার (কন্যা) ভিকটিমকে পাঠায়। ভবিষ্যতে আমেরিকার উন্নত জীবন যাপন করার আশ্বাস দেয়।
তিনি বলেন, পাকিস্তানী বংশোদ্ভূত আমেরিকান নাগরিক, আন্তর্জাতিক অপরাধ চক্রের সদস্য বাংলাদেশে এসে ফাইজার সহযোগিতায় এবং মাহির যোগসাজসে কক্সবাজারে এসে তারকামানের হোটেল সায়মনে অবস্থান নেয়। ৩/৪ দিন অবস্থানের পর চক্রটি তার মেয়ের সাথে যোগাযোগ করে আমিরাকে অপরহণ করে পাচারের পরিকল্পনা করে। ফাইজা তার মেয়েকে বাড়ী হতে ফুসলিয়ে বের করে। আমেরিকা পাচারের উদ্দেশ্যে গত ৫ ডিসেম্বর ফাইজার সহযোগিতায় বিমানে করে পাচারের উদ্দেশ্যে ঢাকায় নিয়ে যায়।
ঘটনার বিষয়ে সংবাদ পেয়ে তিনি দেশে এসে পুলিশের সহযোগিতায় মোবাইল ট্র্যাক এর মাধ্যমে তার মেয়ে ভিকটিম ও চক্রটির অবস্থান চিহ্নিত করেন। এরআগে ৫ ডিসেম্বর চক্রটির বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরী দায়ের করেন। উক্ত সাধারণ ডায়েরীটি কক্সবাজার সদর মডেল থানা পুলিশের এস.আই সৌরভের মাধ্যমে ধানমন্ডি থানায় হস্তান্তর করলে পুলিশ হারুন আসাদ মির্জার বাসা সনাক্ত করে। আসামীদের ডকুমেন্টপত্র উদ্ধার করেন।
অনলাইনের মাধ্যমে যোগযোগ করে তার মেয়েকে ১০ ডিসেম্বর ব্লাস্ট হতে এস.আই আকিব নুর উদ্ধার করে কক্সবাজারে নিয়ে আসে। পুলিশের তৎপরতা বুঝতে পেরে আসামীগণ দ্রুত ভিকটিমকে ব্লাস্টে হস্তান্তর করে পালিয়ে যায়। ভিকটিমকে উদ্ধারের পর তার মানসিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় চট্টগ্রাম ও ঢাকার বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে তার চিকিৎসা করান। ভিকটিমকে নিয়ে আসার পর জানতে তিনি পারেন আসাদ মির্জা ভুয়া জাল-জালিয়াতি করা কাগজ দিয়ে মামলা হতে রক্ষার কৌশল করে। পরে হিউম্যান রাইটস এর কৌশলী তাসিমিয়া নোহিয়া আহমদ এর মাধ্যমে ভিকটিমকে দাবী করে। মূলতঃ আসামীগণ মানবপাচার চক্রের সক্রিয় সদস্য বলে তিনি দাবী করেন।
ভিকটিম উদ্ধার কালে নগদ সত্তর হাজার টাকা ও ২টি মোবাইল পাওয়া যায়। যার মধ্যে ১টি আইফোন, অন্যটি স্যামস্যাং মোবাইল। চক্রটি তার মেয়েকে আমেরিকা পাচারের উদ্দেশ্যে এ জঘন্য ঘটনা ঘটিয়েছে। এখনো অপরাধীরা তাকে বিভিন্নভাবে হুমকি প্রদান করছে বলে তিনি জানান। তিনি আরো বলেন, যে কোন উপায়ে ওই চক্রটি তার মেয়েকে অপহরণ করে আমেরিকায় নিয়ে যাবে। এমতাবস্থায় তার কন্যার ভবিষ্যৎ জীবনের নিরাপত্তার স্বার্থে আসামীদের উপযুক্ত শান্তি দাবী করেন।
লিখিত বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, চক্রটি ঢাকায় বসে তার পরিবারের বিরুদ্ধে সংবাদকর্মীদের মিথ্যা তথ্য দিয়ে মিডিয়া ট্রায়াল দিচ্ছে। তিনি এসব মিথ্যা ও আজগুবি প্রোপাগান্ডার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন, এডভোকেট শবনম মোশতারী, কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর উসমান সরওয়ার আলম, আমিরার ছোট চাচা সালাহউদ্দিন আহমদ।